চা- শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা



সেলিম মাসুদ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর একটি জনপ্রিয় স্লোগান হলো 'কেউ পিছনে পড়ে থাকবে না '। সকলকে নিয়েই সবার জন্য টেকসই উন্নয়ন। চা বাগানের অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে তারা এখনো সমাজের মূল ধারা থেকে অনেক পিছিয়ে, এখানে দারিদ্র্যের হারও অনেক বেশি। চা শ্রমিকরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, গর্ভবতী নারীর সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তাসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতে কর্মরত শ্রমিক কম-বেশি পনে তিন লাখ। এ সব শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। এসব নারী চা শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায় এ খাতে কাজ করে থাকে।

চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম, প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন এবং ভারত। বাংলাদেশে নিবন্ধিত চা বাগান ও টি স্টেট রয়েছে ১৬৭টি, এর মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ১২৯টি। চা বাগান করতে গেলে ন্যূনতম ২৫ একর জমি লাগে। সে হিসেবে ৪ হাজার একরেরও বেশি নিবন্ধিত জমিতে চা চাষ হচ্ছে। তবে অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র পরিসরের বাগানের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২১ সালে দেশে মোট চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। চা এর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চা এর চাহিদা প্রায় ১০ কোটি কেজি। আমাদের দেশিও উৎপাদন থেকে চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ হয় না, কিছুটা ঘাটতি থাকে, তা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। দুই দশক আগেও বাংলাদেশ থেকে কম বেশি এক কোটি ৩০ লাখ কেজি চা রফতানি হতো। আর এখন সেখানে খুবই সীমিত আকারে ৬ লাখ থেকে ২০ লাখ কেজি রফতানি করা হয়। কারণ আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ঘাটতি রয়েছে। তাই ২০২৫ সাল নাগাদ সরকার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৪ কোটি কেজি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ইতিমধ্যে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের চা চাষিদের ' ক্যমেলিয়া খোলা আবাশ স্কুলের ' মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিতকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে সমতলে চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষিদের চা উৎপাদন ২০২০ এর থেকে ২০২১ সালে ৪১ শতাংশ বেশি হয়েছে, যা এ খাতের জন্য আশাব্যাঞ্জক। সত্তর দশকে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭৫০ কেজির মতো চা উৎপাদন হতো। আধুনিক প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে চা উৎপাদনের ফলে এখন জমি ভেদে প্রতি একরে কম বেশি ১ হাজার ৫ শত থেকে ৩ হাজার ৫ শত কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে। চা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উঁচু জমি। যেন প্রচুর বৃষ্টি হলেও দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়ে যায়।

নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ ছয় মাস হলো শুষ্ক মৌসুম, এসময় চা এর ফলন ঠিক রাখতে খরা সহিষ্ণু চা এর দুইটি জাত উদ্ভাবন করছে আমাদের চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিরা। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়গুলোর একটি হলো চা। চা পান সর্বপ্রথম শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০০ চীনে। পৃথিবীতে যত ধরনের চা উৎপাদন হয় তার সবই তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস থেকে। এই চির হরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ থেকে পাতা এবং এর কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চা এর মধ্যে উদ্ভিদের ধরনের এবং উৎপাদনের প্রক্রিয়াতে ভিন্নতা রয়েছে।

আঠারো শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রথম চা চাষ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ সালে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা কুন্ডদের বাগান নামে পরিচিত। তারপর ১৮৫৪ সালে মতান্তরে ১৮৪৭ সালে বর্তমান সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোড়ের কাছে মালিনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠা হয়। মূলত মালিনীছড়া চা-বাগানই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান। দেশ স্বাধীনের পূর্বে বাংলাদেশে মূলত দুইটি জেলায় চা বাগান ছিলো। এর একটি সিলেট জেলায়, যা সুরমা ভ্যালি এবং অপরটি চট্টগ্রাম জেলায় যা হালদা ভ্যালি নামে পরিচিত ছিল।

বাংলাদেশ বিশ্বের একটা বড়ো চা উৎপাদনকারী দেশ। চা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের বড়ো দশটি চা বাগান আছে আমাদের দেশে। চা শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং হচ্ছেন। পাশাপাশি একশ্রেণির দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিকদের বছরের পর বছর তাদের জীবনমানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। নারী প্রধান চা শ্রমিক পরিবারের দারিদ্র্যের হার খুব বেশি। চা শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার খুব বেশি। যদিও সরকারি, বেসরকারি এবং এনজিও চা শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে নানা রকম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরই ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাল্যবিবাহের হার কিছুটা কমেছে। তবে তা কোনোভাবেই যথেষ্ট না।

চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। একজন চা শ্রমিক দৈনিক ১২০ টাকা হারে মজুরি পান, এর সাথে রেশন পান। বাগানে সাধারণত একটি পরিবারের দুই তিনজন আয় করে। কিছু সীমিত চিকিৎসা সুবিধা, শিশুদের জন্য লেখাপড়াসহ আরও কিছু সুযোগ সুবিধা আছে। তবে বাগান ভেদে এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চা বাগানের মালিকরা স্থায়ী চা শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে। ৬০ বছর বয়সে অবসরে যাওয়ার সময় তারা একটা এককালীন আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং ১৫০-২০০ টাকা মতো সাপ্তাহিক ভাতা পেয়ে থাকেন। যিনি অবসরে যান তার শূন্য পদে পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়। চা শ্রমিকদের কম বেশি ৬০ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের প্রায় শতভাগ শিশু প্রাথমিকে ভর্তি হয়। চা বাগানগুলোতে ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়াও আছে এনজিওদের নানা রকম শিক্ষা কর্মসূচি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক শিক্ষাভাতা চালু আছে, কিন্তু এনজিও স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন ভাতার ব্যবস্থা নেই। তবে চা বাগানের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ইতিমধ্যে শতভাগ শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এটি একটি চলমান কার্যক্রম।

চা বাগানে ১৯৩৯ সাল থেকে মাতৃত্ব আইন চালু আছে। একজন গর্ভবতী নারী ৮ থেকে ১৬ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন সুবিধা পান। তাদের জন্য প্রশিক্ষিত মিডওয়াইভস, নার্স ও চিকিৎসক রয়েছে। তবে এ সুবিধা শুধু মাত্র নিবন্ধিত শ্রমিকদের জন্য। চা বাগানের অবস্থান প্রান্তিক অঞ্চলে হওয়ায় এ বাগানগুলোর আশেপাশের তেমন কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে নি। চা বাগানে বিশ্রামের জন্য কোন বিশ্রামাগার নেই, পানির ব্যবস্হা নেই। দূষণের কারণে সাধারণত কোন ফসলের পাশে শৌচাগার থাকে না। এজন্য চা বাগানের থেকে শৌচাগার দূরে রাখা হয়। এতে চা বাগানের নারী শ্রমিকদের জন্য সমস্যা হয়ে থাকে। চা শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সরকার ২০১৬ সালে চা শিল্পের জন্য একটি রোড়ম্যাপ করে যা ২০১৭ সালে অনুমোদন পায়। এখানে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের উল্লেখ রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ৫০ হাজার চা শ্রমিককে সরকার প্রতিবছর এককালীন পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও সারা দেশের ন্যায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা,স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী, শিক্ষা উপবৃত্তি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়ন ভাতাসহ সকল সরকারি সুবিধা চা বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলো পেয়ে থাকে।

বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো ২০৩০ এর মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ এ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে চা শিল্পের উন্নয়ন এবং এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন অংশীজনের কল্যাণে চাহিদার ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, গর্ভবতী নারীদের সেবাসহ চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিকদের জাতীয় গড় উন্নয়নের মূল ধারায় সংযুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। এসকল কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বসবাস করবে,এটাই প্রত্যাশা।

   

দৌলতদিয়ায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রখর তাপপ্রবাহের বিরূপ প্রভাবে বিপর্যস্ত প্রকৃতি। কোথাও নেই শান্তি। গ্রীষ্মের রুক্ষতা আর সব ক্লান্তি ছাপিয়ে আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। জানান দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। পাশাপাশি প্রশান্তির বার্তা বয়ে দিচ্ছে জনমনে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায় কৃষ্ণচূড়ার এমন সৌন্দর্য। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া অংশের দুই পাশে শোভাবর্ধন করছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। শত কষ্টের মাঝে এই মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হাজারো পথচারীদের হৃদয়ে প্রশান্তির হাতছানি দেয় এই কৃষ্ণচূড়া ফুল। দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে।এ সড়কে যাতায়াতকারীদের নজর কাড়ছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল।


সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের দু’পাশের গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়ায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বৈশাখের প্রখর রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। এই আগুনেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত পথচারীরা। নিজেদেরকে কৃষ্ণচূড়ার সাথে একাকার করে স্মৃতিময় করে রাখতে ব্যস্ত সবাই।

দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের বাইপাস সড়ক থেকে শুরু করে ক্যানাল ঘাট এলাকার মহাসড়কের দুইপাশে ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ আর পশু পাখি যখন বেসামাল,ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার ফুলে বিচিত্র রূপ নিয়েছে দৌলতদিয়ার মহাসড়ক। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার রঙে মেতেছে সড়কটি। কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরা গাছগুলো নজর কাড়ছে দর্শনার্থীসহ এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পথচারীদের।


স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই দৌলতদিয়া ঘাটের এই অংশটুকুতে (ঢাকা-খুলনা মহাসড়ে) সৌন্দর্য বিলায় কৃঞ্চচূড়া। পুরো এলাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রঙিন হয়ে যায়। প্রখর রোদে মনে হয় যেন প্রকৃতিতে আগুন লেগেছে। পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশের রক্তিম আভায় কৃঞ্চচূড়া মিশে যেন একাকার হয়ে যায়। প্রতি বছর এই সময়ে ঘাটের বাইপাস সড়ক নতুন রূপে সাজে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন ছবি তুলতে।

পথচারীরা জানান, ফুলগুলো দেখলে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। গাছের ছায়া ও বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। প্রখর রোদের মধ্যেও যেন এখানে একটু সবুজের শান্তি পাওয়া যায়।

;

নগরে ফুলের জলসা, গ্রীষ্মের উত্তাপে সৌরভ, স্বস্তি 



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

চারিদিকে খাঁ খাঁ রোদ্দুর। যেন বইছে গনগনে আগুনের ফুলকি। চারপাশের পরিবেশ ফুটন্ত কড়াইয়ে মতো টগবগে। দাবদাহের তেজে ব্রহ্মতালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তাপদগ্ধ চরাচর ক্লান্ত, স্তব্ধ, স্থবির। বৈশাখের রুদ্র রূপে বিপর্যস্ত নাগরিক পরিসর আর জনজীবন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উচ্চারিত গ্রীষ্মের প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর প্রকৃতিতে: 'প্রখর তপনতাপে, আকাশ তৃষায় কাঁপে,/বায়ু করে হাহাকার।’

পরিস্থিতি যখন এমনই খরতাপে পোড়া ও তামাটে, ঠিক তখন একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া ঢাকা নগরীর পথে পথে জাগিয়েছে খণ্ড খণ্ড ফুলের জলসা। গ্রীষ্মের এই রংবাহারের উজ্জ্বলতা এবং সৌরভ; নাগরিক বিড়ম্বনা মুছে বুলিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্য স্বস্তির পরশ।

সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল—দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড/ছবি: নূর এ আলম


নগরের ইটপাথর, কংক্রিটের কংকালের মধ্যে তাপ ও দূষণের সাম্রাজ্যে নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম। কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা। নিয়ে এসেছে রঙের উল্লাস। গন্ধের মাদকতা। ভালোলাগার এক অনির্বচনীয় অনুভূতি।

উচ্ছল জারুল


গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের মধ্যেই শুক্রবার ও শনিবার ছুটির জোড়া দিনে হাতিরঝিলের নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানাল উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া ও সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল। খুব কাছ থেকে দেখলে মনে হাতিরঝিলে ‘সোনাইল ব্লসম উৎসব’ চলছে। আর দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড।

কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা/ছবি: নূর এ আলম


হালকা বাতাসে সোনাইল দুলুনির সমান্তরালে গুঞ্জরিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়' গানের শিহরণ জাগানিয়া আবেশ। হাতিরঝিলের পথে পথে হেঁটে ক্লান্ত হলে ছায়া দিতেও প্রকৃতি তৈরি হয়ে আছে। ফুলে ভরা মেঘশিরীষ গাছ প্রসারিত শাখা ও পল্লবে কাছে টানছে পথিকের মনোযোগ। এখানে জারুলের এমন অপূ্ব রূপ— চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে থমকে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছেন নগরীর মানুষ।

নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম/ছবি: নূর এ আলম


‘কি বলব- এত গরম, সহ্য করার মতো না। আমার বাসা মধুবাগে। প্রায় হাতিরঝিলে বাতাস খেতে আসি। এত ভালো লাগে বোঝাতে পারব না। তার সঙ্গে বাহারি ফুল তো রয়েছেই। অনেক ফুল চিনি না— কিন্তু ব্যাপারটা অসাম’, বলছিলেন হাতিরঝিলের বেঞ্চ বসা ইরাব নামের এক টগবগে যুবক। এখানকার প্রকৃতি যেন অগোচরে ইরাবের মতো অনেক তরুণ-যুবককে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে।

নতুন শহর পূর্বাচলের সড়কে করবী/ছবি: নূর এ আলম


গ্রীষ্মের এই রূপ শুধু ঢাকার পর্যটন-হটস্পট হাতিরঝিলে নয়, প্রাচীন ও রমনীয় রমনা পার্ক, কলোনিয়াল আরবান নস্টালজিয়া মিন্টো রোড, আধুনিক এয়ারপোর্ট রোড, কুড়িল, স্থাপত্যকলার নান্দনিক সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকসহ যেদিকে চোখ যায়- শুধু চোখে পড়ে ফুলের হাসি, রঙের খেলা। ইন্দ্রিয় স্পন্দিত হয় উদ্ভিদজাত গন্ধে ও সৌরভে।

কুড়িলে কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছ্বাস/ছবি: নূর এ আলম


নগরীর সর্বাধুনিক সংযোজন মেট্রোরেলে বা এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে বিস্তৃত রাজধানীর দিকে তাকালে সুবিশাল দালান-কোঠা আর সবুজের ফাঁকে মাথা চাড়া দিচ্ছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া ও গ্রীষ্মকালীন গাছপালার উচ্ছ্বাস। কোথাও কোথাও ছাদবাগানের বিভা। ফুলে ফুলে রঙিন এসব দৃশ্য প্রাচ্যের রোমান্টিক নগরী ঢাকার প্রাচীন স্মৃতি মনে দোলা দেয়। ক্ষণিকের জন্য বর্ণিল ফুলে ছাওয়া এক অন্য ঢাকা হৃদয়ের অলিন্দে জায়গা করে নেয় সুভাষিত আবাহনে।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ/ছবি: নূর এ আলম


সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকে গেলে তো মনে হবে সুনীল আকাশের পানে চেয়ে কৃষ্ণচূড়া বলছে- ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। এখানে চোখে পড়ে লেকের দু’ধারে কৃষ্ণচূড়ার সুদৃশ্য বীথি-  ‘ডাক দিয়ে যায় পথের ধারের কৃষ্ণচূড়ায়।’ বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝরে রঙিন হয়ে ওঠা চলার পথ।

চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে


এমন মনোরম প্রকৃতিতে ক্রিসেন্ট লেকে গরম নিবারণে নেমে পড়েছে একদল ডানপিটে কিশোর। যারা কৈশারকাল উদযাপনে মেতেছে। 

পাশেই চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে। গত রাতে ঝরেছে বহু প্রতীক্ষার বৃষ্টি। দীর্ঘ তাপদাহে পোড়ার পর বৃষ্টির পরশ পেয়ে গাছগুলো যেন- প্রাণ পেয়েছে। চড়া রোদে স্নিগ্ধ হয়ে দেখাচ্ছে সবুজ পাতা। নেতিয়ে পড়া ফুল আড়মোড়া ভেঙে সুভাষ ছড়াচ্ছে। প্রাণবন্ত সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে হরেক রঙ ও রূপের ফুল।

কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়ার স্পর্শ/ছবি: নূর এ আলম


‘শোনো বন্ধু শোনো,/ প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা/ ইটের পাঁজরে, লোহার কাটায়/দারুণ মর্মব্যথা।/এখানে আকাশ নেই,/এখানে বাতাস নেই,/ এখানে অন্ধ গলির নরকে/মুক্তির আকুলতা।/জীবনের ফুল মুকুলেই ঝরে...।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তার গানে নগরীকে তুলনা করেছেন ইটপাথরের প্রাণহীন গলি হিসেবে। যেখানে ব্যস্ততার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে নানা কষ্ট। তবে এমন প্রাণহীন নগরীতে প্রশান্তির গান ধরেছে আগুন ঝরা কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুল। সঙ্গে অফুরান শোভা ছড়িয়েছে ডুলি চাপা, বরুণ, নাগলিঙ্গম, মাধবীলতা ও কাঠগোলাপ। গরমে ওষ্ঠাগত জীবনে ঢাকার প্রকৃতির রূপ-রস মনে শান্তির সু-বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ফুলের নৈসর্গিকতা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময় ছুটির দিন।

হাতিরঝিলের পথে দেখা মেলে কাঠগোলাপের


‘উষ্ণ তাপমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবুজ ও মনোরম পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করতে দেশি ফুলের গাছ দিয়ে সাজালে আরো ভালো হত। পরিকল্পিতভাবে ১০টি প্রধান অ্যাভিনিউকে ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তাহলে শোভা বর্ধনের পাশাপাশি মানুষকে প্রশান্তি দিত- এই নগর।

সোনালুর ছায়া মাখানো পথ/ছবি: নূর এ আলম


মাঝে মাঝে এই ঢাকা, একদিন স্বপ্নের দিন হয়ে, ফুলের জলসার মুগ্ধতা দগ্ধ নাগরিক জীবনের সকল গ্লানি মুছে দিয়ে যায়।  

;

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;