অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে (দুই)



সাঈদ চৌধুরী
অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে

অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাতঃভ্রমণে প্রতিদিন রংধনু থেকে লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগানের প্রান্তসীমা ঘুরে আসি। লাক্কাতুরা চা বাগান সিলেট শহরের বিমান বন্দর সড়কে মনোলোভা পরিবেশে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চা বাগান। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে অবশ্য বেসরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আনন্দ ভ্রমণ আর উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান এটি। বিশাল এই বাগানটি থেকে প্রতি বছর ৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর পাশেই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত মালনীছড়া চা বাগান। এখানে চায়ের পাশাপাশি কমলা ও রাবার চাষ হয়। পাশে রয়েছে নান্দনিক পরিবেশে অবস্থিত সিলেট ক্যাডেট কলেজ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যাডেট কলেজ এটি। চা বাগান বেষ্টিত এই কলেজের সুবিশাল সবুজ উপত্যকা মনোমুগ্ধকর।
দরবেশ হযরত শাহ জালালের (রহ.) সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিনের (রহ.) মাজার সংলগ্ন মসজিদে ফজরের সালাত সেরে আমরা হাঁটা শুরু করি। আমার সাথে ৩ প্রবীণ আর ১ নবীন নিত্যসঙ্গী। সিলেট শহরে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রবীণ মুসলিমলীগ নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরী না আসা পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয় না। সরকারি কর্মকর্তা ও ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফ হোসেন মূলত মাতিয়ে রাখেন দুই ঘণ্টার প্রাতঃভ্রমণ।

মজুমদারি থেকে ডা. আব্দুস শহীদ খান অথবা তার ছোট ভাই সুলায়মান খান মাঝে মধ্যে যুক্ত হন আমাদের সাথে। সেদিন আমরা আম্বরখানা হয়ে দরগার দিকে যাই। ভোর বেলা যানবাহন বিহীন শহরে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। সূর্য ওঠার আগেই অনেক পথ হাঁটা হয়। হাঁটতে হাঁটতে প্রতিদিনই নতুন কিছু দেখি। সিভিল সার্জনের অফিস থেকে আলিয়া মাদরাসার মোড় পর্যন্ত গাছপালাগুলো খুবই ভাল লাগে। উল্টো দিকে অত্যাচারী পলাতক রাজা গৌর গোবিন্দের টিলা দেখে ইতিহাসের অনেক নির্মমতা চোখে ভাসে।

ডা. আব্দুস শহীদ খান সাথে থাকায় আমাদের কথাবার্তা স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক আলোচনায় রূপ নিয়েছে। তিনি বললেন, প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে প্রাতঃকালীন ভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। শরীরে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মন অনেক চাঙ্গা থাকে। রক্ত চলাচল ও হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দের প্রয়োগ ঘটার ফলে শারীরিক ক্লান্তিও দূর হয়। শরীরের ক্যালোরি পোড়ে। ফলে ফ্যাট ঝড়ে। ওজন হ্রাস পায়। হৃদয় ভাল থাকে। ভ্রমণ হৃদরোগ বা স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা করে।

আলাউদ্দিন চৌধুরী বললেন, একসঙ্গে কয়েকজন ভ্রমণ করলে গল্প করতে করতে যাওয়া যায়। ভোরের বন্ধুদের সাথে গল্প করাটাও প্রাতঃভ্রমণের সুবিধার একটা দিক, যোগ করলেন আশরাফ হোসেন। এরই মাঝে চৌহাট্টায় ফুলের দোকান থেকে একটি গান ভেসে আসে, পাগল মন রে, মন কেন কথা বলে? গীতিকার ও সুরকার সম্ভবত আহমদ কায়সার এবং শিল্পী দিলরুবা খান।

আমাদের অবাক করে আশরাফ হোসেন গুন গুন করে সুর তোলেন, ‘কে বলে পাগল/ সে যেন কোথায়/ রয়েছ কতই দূরে/ মন কেন এত কথা বলে।/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এতো কথা বলে।/ মনকে আমার যত/ চাই যে বুঝাইতে/ মন আমার চায়/ রঙের ঘোড়া দৌড়াইতে। পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ আমি বা কে আমার/ মনটা বা কে?/ আজো পারলাম না/আমার মনকে চিনিতে।/ পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে।

আশি তোলায় সের হইলে/ চল্লিশ সেরে মণ/ মনে-মনে এক মন না হইলে/ মিলবে না ওজন।/ পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ কে বলে পাগল/ সে যেন কোথায়/ রয়েছ কতই দূরে/ মন কেন এত কথা বলে।/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এতো কথা বলে।

ছয়মাস ধরে একসাথে বেড়াই, আশরাফ যে এমন সুন্দর গান পারেন তা আমাদের জানা ছিল না। তার গানের গলা যেন মধুঝরা।

প্রাতঃভ্রমণ শেষে যখন ফিরছি, দরগা গেইটে সৌরভের সাথে দেখা। মাত্র একদিনের পরিচয় হলেও সৌরভ আমাকে দেখে এগিয়ে এল। যেন বহু দিনেরে চেনা-পরিচিত। জানতে চাইল আমি কোথায় যাব? বললাম বাসায় যাচ্ছি। আমার সাথে সেও হাঁটতে শুরু করল। আগের দিনের আলোচনা থেকেই আবারো দরগার চালচিত্র নিয়ে কথা শুরু হয়।

আম্বরখানা পয়েন্টে এসে আমরা একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢ়ুকি। পাশেই সুলভ বইঘর। প্রতিদিন এখান থেকে জাতীয় সংবাদপত্র নেই। মাঝে মধ্যে পাশের দোকানের জিলাপি খাই। এখানকার মচমচে জিলাপির জুড়ি নেই। আমাকে তারা একটু আলাদা খাতির করে। ফ্রেস জিলাপি বানিয়ে দেয়। আমার ইচ্ছা ও পছন্দ তাদের জানা আছে।

এই জিলাপির প্রস্তুত প্রণালি অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। একটি বড় বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার ও দই যত্ন সহকারে মিশায়। ভিনেগার ও পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ডো তৈরি করে। এতে সামান্য সোডা দেয় এবং কেচাপের বোতলে ডো নেয়। তারপর প্যানে তেল ও ঘি একসঙ্গে গরম করে। আমার জন্য ৩টি এলাচ ও ১ চামচ লেবুর রস যুক্ত করে। কেচাপের বোতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিলাপির আকৃতিতে প্যানে ডো দিয়ে ভেজে নেয় জিলাপি। চিনির সিরা তৈরি করে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় ভাজা জিলাপি ঢালে এবং ১০ সেকেন্ড পরে পরিবেশন করে।

মচমচে জিলাপিটা সৌরভের খুব পছন্দ হয়। খাওয়ার ফাঁকে আমাকে ধন্যবাদ জানায়। উচ্চ শিক্ষিত সৌরভ তার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, আশা-হতাশার অনেক কথা বলে চলেছে। আমিও তার চিন্তার চারণভূমিতে ঢুকে পড়েছি। নরসিংদী থেকে সিলেট এসেছে একমাসও হয়নি। একটি নতুন ব্যবসায় নেমেছে। সিলেট থেকে কামরূপ ট্যুর। ঢাকায় অন্য কোম্পানির প্রতিনিধি ছিল। এখন নিজেই ট্যুর অপারেশন শুরু করেছে। আপাতত কোন বাসা নেয়নি। তাই দরগায় দর্শনার্থীদের সাথে থাকে। সেখানেই লোকজনকে কামরূপ যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

কামরূপ কামাক্ষা সম্পর্কে অসংখ্য গল্প-কাহিনী শুনেছি। ছোট বেলায় মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরীর সাথে বদরপুর গিয়েছি। বদরপুরের ওয়াজের সময় জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে কোন ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই যাওয়া যেত। তখন কাউকে সাথে পাইনি বলে কামরূপ যাওয়া হয়নি।

আরেকবার ইফতেখার হোসেন শামীমসহ ঝর্ণা, পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া শিলং, চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয় গিয়েছিলাম। তখন কামরূপ যাবার কথা ছিল, শেখ হাসিনা সিলেট আসবেন বলে শামীম ভাই দ্রুত ফিরতে হল। ফলে যাওয়া হয়নি। তাই কামরূপ ঘুরে দেখার আগ্রহ আমার ছিল। শিলং, কলকাতা, বুম্বে, দিল্লি, আগ্রাসহ ভারতের বহু এলাকায় গেলেও কামরূপ যাওয়া হয়নি কখনো। এক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ভারতের এই জায়গাটি।

আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের কামরূপ এলাকায় নীলাচল পর্বতে অবস্থিত কামাক্ষা মন্দির। শুনেছি মানুষ সেখানে যায় যাদু শেখার জন্য। তারা মন্ত্র শিখে শক্তিশালী তান্ত্রিকে পরিণত হয়। সেই জাদুর নগরীতে যাবার পরিকল্পনা করে ফেলি সৌরভের সাথে।

গাঁজা সেবন করছে এক পাগল

পরের সপ্তাহে একটি ট্যুর যাবে। আমিসহ ৭ জনের মধ্যে ৩ জন যাবেন ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে গুয়াহাটিতে। আর বাকিরা মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে আসামে প্রবেশ করতে হবে।

সিলেটের তামাবিল দিয়ে ডাউকি সীমান্তে প্রবেশের পর সেখান থেকে শিলংয়ে যাওয়ার ট্যাক্সি নিলাম। চারজনের জন্য ট্যাক্সি ভাড়া ১৬শ রুপি। এরপর শিলং থেকে গুয়াহাটি যাবার জন্য একটি জিপ নিলাম। জিপের সিট প্রতি ৮০ রুপি দিতে হল। গুয়াহাটির পল্টন বাজার থেকে লোকাল বাসে করেই রহস্যে ঘেরা কামরূপ গিয়ে পৌঁছলাম।

রেল স্টেশন রোডে একটি হোটেলে উঠলাম আমরা। ১ হাজার রুপি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া। অনুষ্ঠান উপলক্ষে হোটেলটি বেশ জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে। রুমের কোনোটির বহির্ভাগ বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজানো, কোনোটির রুমই যেন আস্ত একটা রেকর্ডিং স্টুডিও।

স্টেশন এলাকায় রেস্তোরাঁ গুলোতে ২শ থেকে ৩শ রুপির মধ্যে খাওয়া যায়। সীফুড প্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ রেস্তোরাঁ আছে, যেটি আমার খুব পছন্দ ছিল। সৌরভ বলল, প্রথমে নিরামিষ খাবার, তারপর মাছ এবং সবশেষে মাংস। এতো টাকায় খাবেন, সব খেতে হবে।

কামরূপ কামাক্ষায় দুনিয়ার সব কুসংস্কার আর ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী মানুষের ঢল নেমেছে। ওঝা, বৈদ্য, কবিরাজ, ফকির, সাধু আর সন্যাসীর অভাব নেই। স্থানে স্থানে লালরঙের কাপড় দিয়ে বিশেষ ধরনের পতাকা টাঙিয়ে আস্তানা গেড়েছে তারা। সবাই কামাক্ষার দোহাই দিয়ে তাবিজ কবজ মানুষের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ইচ্ছে মত টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে।

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসেছেন। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন। লন্ডন থেকে আসা একজনের সাথে দেখা হল। নিজের ঘরের মানুষটাকে বিশ্বাস হয় না তার। অথচ বিশ্বাস করছেন গাঁজা নামের সিদ্ধি আর নেশা জগতের এই মাদক সেবনকারীদের।

এখানে দেখা হল মনু পাগলার সাথে। শাহ জালালের (রহ.) মাজার টিলার পশ্চিমে ঝর্ণার কাছে সব সময় তাকে পাওয়া যায়। এই ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে তারা আয় রোজগার করে। ঝর্ণাটি নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তী রূপে এখনও প্রচলিত আছে। ঝর্ণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির সদৃশ বলে এরা মানুষের মধ্যে আবেগ সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ আরোগ্য লাভের জন্য এই পানি পান করে। ঝর্ণার পানি বোতলে করেও বিক্রি হয়।

মনু পাগলা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে। তার হাতের হলদে রঙের পাউডারে আমার সাদা শার্ট রঙিন হয়ে যায়। আমার বিরক্তি বুঝতে পেরে মিনতির সাথে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। তাতেও হলদে রঙ মুখে লেগে আমাকে জোকারের মতো লাগছিলো। কিন্তু মনু পাগলার আন্তরিকতাকে ইগনোর করতে পারিনি।
মজার ব্যাপার হলো, সে আমাকে এমন একটি জিনিস দেখিয়েছে যা আমি আজো ভুলিনি। বলা যায়, কামরূপের আসল রহস্য মূলত মনু পাগলা আমাকে দেখিয়েছে। আমাদের দেশে সাধু-সন্যাসীগণ মানুষের মন জয় করার জন্য যেসব ভুয়া মন্ত্র পাঠ করেন তা সেখানে অর্থের বিনিময়ে সেখানো হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ধর্ম, সংস্কুতি এবং পুরাণ বা মিথের আঙ্গিকে সাজানো ও পড়ানো হয়।

আমাদের দেশে মাজার-মন্দিরে সাধু-সন্যাসীগণ নেশায় ভুত হয়ে নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্রের ধ্বনি দিতে থাকে। তারা কালো চিকার রক্তমাংস থেকে তৈরি বাম তেল, ভাদ্র মাসের মশার রক্ত থেকে তৈরি তেল, আশুক-মাশুক নামক গাছের পাতা, চিনা জুকের মাথা ইত্যাদি সংগ্রহের কথা বলে খরচ নেয়। কথিত ঘোড়ার লোম, বাঘের ছাল, মহিষের শিং আর পুড়ামাটি খাওয়াইয়া বা কবজে ঢুকাইয়া হাতিয়ে নেয় সহজ সরল মানুষের কষ্টার্জিত টাকা-পয়সা।

প্রেমে ব্যর্থ সুন্দরী মেয়েকে বশে আনা, অবাধ্য স্বামীকে বাধ্য করা, মামলা মকদ্দমায় জয়ী হওয়া বা কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অজ্ঞ মানুষজন সাধু সন্যাসীদের চরণে লুটিয়ে পড়ে। স্বপ্ন পূরণের জন্য সাধু বাবারে বিশ্বাস করে। হাজার হাজার টাকা তাদের দান দক্ষিণা দেয়। বিলেতেও এদের ব্যবসা বেশ রমরমা।

মনু পাগলা আমাকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে দেখালো ওঝা, বৈদ্য, কবিরাজ, ফকির, সাধু আর সন্যাসী কেউ পাগল নয়। অন্য পেশার মত এটা এক ধরনের পেশা। বরং বেশির ভাগ অপরাধী পালাতে গিয়ে বা প্রথম জীবনে ব্যর্থ-বিফল হয়ে এই পথে আসে। একসময় অঢেল রুজি ও অবৈধ যৌনাচারের সুবিধা পেয়ে শক্তিশালী তান্ত্রিকে পরিণত হয়। এদের অনেকে জুয়েল আইচসহ নামকরা যাদু শিল্পীদের নানা রকম যাদুর কৌশল ও ইন্ডিয়ান ক্রাইম সিরিজ দেখে সেগুলি রপ্ত করে। এর সাথে মন্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। মন্ত্র শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাব জাগানোর মাধ্যমে ঠকানোর হাতিয়ার মাত্র।

মন্ত্রগুলোর একটি হল- অটকশাহ মটকশাহ/ আমি বড় গনকশাহ/ মাঝে একটা ফাড়া আছে/ দুশমন দুইজন লগে আছে/ দুশমন ছাড়াইতে গেলে- কালা একটা মুরগি লাগব/ সোয়া পাচ আনা পয়সা লাগব/ সাদা একখান ধুতি লাগব।/ ইছিম পাদরনে/ মা কদরনে/ মশাই তরনে/ কালা চিকা বাম তেল, ভাদোমাইয়া মশার তেল/ আশুক-মাশুকের পাতা/ ছয়কুড়ি চিনা জুকের মাথা/ হাটুতে ছুকাইয়া তালুতে ভরন দিতে হবে।/ আল্লাবান, কুরানবান, আয়াতুল কুরছিবান/ ছয়কুড়ি ছয়বান ছাড়িবে/ ইষৎ মহাদেবী যথাচিরি ভূমিতে পড়িবে।

এজাতীয় মন্ত্রগুলি বলার বা আবৃত্তি করার একটা ভন্ডামি স্টাইল আছে, সেটাও তারা শিখিয়ে দেয়। (চলবে স্মৃতির ডাইরি থেকে)

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সাংবাদিক, কবি ও কথা সাহিত্যিক।

   

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!



আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই টাঙ্গাইলের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- টাঙ্গাইলের চমচম।

কথায় আছে, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার টাঙ্গাইল জেলা। জানা যায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এখন পোড়াবাড়ির সে জৌলুস আর নেই।

বর্তমানে ‘টাঙ্গাইল মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শহরের পাচঁআনি বাজরের মিষ্টির দোকানগুলোতেও চমচম তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এখন নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চম চম, স্বাদে সেরা, মানে সেরা, ছবি-বার্তা২৪.কম

এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়। বর্তমানে মিষ্টি শিল্পে টাঙ্গাইলের ঘোষ ও পাল সম্প্রদায় বংশানুক্রমিকভাবে নিয়োজিত আছে। তবে দে, নাগ ইত্যাদি উপাধিধারী অনেকেও মিষ্টান্ন তৈরিতে নিয়োজিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট ভৌগলিক নিদের্শক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ অনুয়ায়ী, চলতি বছরের (৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি চমচম ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত শত শত কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। নিজেদের তৈরি চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কারিগররাও খুশি।

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ভেদে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন মিষ্টির দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই টাঙ্গাইলের মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন হরিপদ সরকার বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন টাঙ্গাইলের মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য পোড়াবাড়ির চমচম। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে। আমাদের পোড়াবাড়ির চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন দোকানগুলিতে ৫ থেকে ১০ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, ছবি- বার্তা২৪.কম 

মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ বলেন, আমি ৪০-৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মিষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের মিষ্টি দেশের বাইরে পাঠাতে পারবো। আমাদের মিষ্টি চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

সরকারের কাছে দাবি, বিদেশে এই মিষ্টি রফতানি করার ব্যবস্থা করলে আমাদের বিক্রি আরোও বাড়বে। তখন আমরা আরো বেশি বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারবো।

টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, সারাদেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। এই মিষ্টি যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে আমাদের ব্যবসা আরো প্রসার পাবে।

তিনি বলেন, আমার বাবা মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমার ছেলেও এই পেশায় আছে। পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। টাঙ্গাইলের চমচম সুস্বাদু হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, গাভির দুধ চরাঞ্চল থেকে আসে। এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

;

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;