২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নে বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের। এই পাবলিক পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এতে থাকবে লিখিত পরীক্ষাও। বর্তমান সময়ের মতো আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্রে মূল্যায়নে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২২ এপ্রিল) মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। এ শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন বা পরীক্ষা কীভাবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছিলেন অভিভাবকরা। সেই কারণে এসএসসির মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায় এসএসসিতে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা রাখাসহ পাঁচ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছে সেই কমিটি। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, লিখিত মূল্যায়নের ওয়েটেজ বা গড় ভারিত্ব ৫০ শতাংশ, আর কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ রাখা। আর পরীক্ষা হবে মোট পাঁচ ঘণ্টার।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রম ভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত (পরীক্ষা) মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। এছাড়া, আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল ভিত্তিক ষাণ্মাসিক (ছয় মাস) ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়ন একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য ‘নৈপুণ্য’ অ্যাপস হালনাগাদ করা, চূড়ান্ত মূল্যায়নে সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা এবং পারদর্শিতার সূচক অভিভাবক ও অংশজনদের অবহিত করারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

আর এসএসসি পরীক্ষা হবে কেবল দশম শ্রেণির বিষয়ের ওপর। অর্থাৎ আগে নবম-দশম এই দুই শ্রেণির ওপর পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির ওপর পরীক্ষা হবে। এই শ্রেণিতে মোট ১০টি বিষয় পড়বে শিক্ষার্থীরা। বিষয়গুলো হলো— বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি।

এ বিষয়ে কমিটি প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণায়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে বেশি কিছু সুপারিশ রয়েছে। এগুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এরপর বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে শিগগিরই প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে। সুপারিশে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখার বিষয়টি রয়েছে। অবশ্য কত নম্বরের পরীক্ষা হবে তা বলতে রাজি হননি তিনি।

নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। এর একটি বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এ তিন শ্রেণিতে হবে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে।

গত ৫ মার্চ গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

   

৪৬তম বিসিএস প্রিলির ফলাফল প্রকাশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। এতে ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিশেষ সভা শেষে এ ফলাফল প্রকাশ করে।

ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্ট (এমসিকিউ) পরীক্ষা ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন কেন্দ্রে চাকরিপ্রার্থীরা অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০০ নম্বরের এ পরীক্ষা হয়।

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা দেননি ৮৩ হাজার ৪২৫ জন। উপস্থিতির হার ৭৫। এ বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০টি পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এ ছাড়া সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। এরপর সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এ ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে।

;

গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি যুদ্ধ শুক্রবার, অংশ নেবেন ৪০১১৬ জন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আগামীকাল শুক্রবার (১০ মে) ‘সি’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘সি’ ইউনিটে মোট ৪০ হাজার ১১৬ জন পরীক্ষার্থী গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

জিএসটি সমন্বিত ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য ইতোমধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) থেকে গুচ্ছভুক্ত যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

‘সি’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের শুক্রবার সকাল ১১টা-১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ‘সি’ ইউনিটভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ হাজার ৬২৯টি আসন রয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল ‘এ’ ও ৩ মে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে দুইটি ইউনিটের ফলাফলও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ‘এ’ পাসের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও ‘বি’ ইউনিটের পাশের হার ছিল ৩৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

উল্লেখ্য, জিএসটিভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাস, ফলাফল, নির্দেশনাসহ অন্যান্য সকল তথ্য https://gstadmission.ac.bd এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

;

মাধ্যমিকের বইয়ে থাকা ভুল তথ্যের সংশোধনী দিল এনসিটিবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণ করা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইয়ে দেওয়া ভুল তথ্যগুলো সংশোধন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিভি)। এতে মোট ৩১টি বইয়ে ১৪৭টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

বুধবার (৮ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে সংশোধনীগুলো দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সব প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের কাছেও তা পাঠানো হয়েছে।

সংশোধনীগুলো হলো:

চলতি বছরের অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ১৬১ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে ৭০০৭৫০-মিলিমিটার। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ৭০০-৭৫০ মিলিমিটার। অন্যদিকে, নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে ‘কৃত্তিম’ বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ...করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ‘কৃত্রিম’ বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ...করে যাচ্ছে।

সংশোধনকৃত বইগুলো হলো: নবম শ্রেণির ইংলিশ, গণিত, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, শিল্প ও সংস্কৃতি, বাংলা, বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা ও খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, গণিত, ইংলিশ, বিজ্ঞান (অনুশীলন বই), ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ইসলাম শিক্ষা এবং খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ইংলিশ ও গণিত। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত, বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবন ও জীবিকা।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরুর পর পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এরপর নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। তাতে বলা হয়, পাঠ্যপুস্তকে কোনো ধরনের ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে কিংবা পাঠ্যপুস্তকের মানোন্নয়নে কোনো ধরনের পরামর্শ থাকলে নিচের ই-মেইল অথবা এনসিটিবি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ঠিকানায় জানালে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতিটি বইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এনসিটিবির উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেন।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি, অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি, সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি, ষষ্ঠ শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১০টি ভুল রয়েছে।

;

প্রাকৃতিক বিরূপতায় শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখা জরুরি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রাকৃতিক বিরূপতায় শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখা জরুরি

প্রাকৃতিক বিরূপতায় শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখা জরুরি

  • Font increase
  • Font Decrease

 

শিক্ষা কার্যক্রম একটি সার্বক্ষণিক বিষয়। মাইনাস ডিগ্রির শীতের মেরুদেশে কিংবা উষ্ণতম মরুদেশেও সর্বক্ষণ শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। বাংলাদেশে বিরূপ প্রকৃতি দেখা দিলেই থমকে দাঁড়ায় শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ। বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও। কিন্তু প্রাকৃতিক বিরূপতার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীলভাবে পরিচালনা করা অতীব জরুরি। আর এজন্য দরকার সঠিক পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদৌ কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় চলতি গরমের পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছিল নানা দোলাচল এবং এক পর্যায়ে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরুরি নোটিশে কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময়েও শিক্ষা কার্যক্রম বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। প্রচণ্ড বর্ষাতেও ব্যাহত হয় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা। বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আবহাওয়া বৈরী হয়ে ভীষণ গরম ও তীব্র শীত কিংবা অতি বা অনাবৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশসহ নানা দেশে। বিরূপ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়াই একমাত্র সমাধান নয়। বরং শিক্ষাক্ষেত্রকে বৈরী প্রকৃতিতে কার্যকর থাকার প্রস্তুতি নেওয়া ও সক্ষমতা অর্জন করাই জরুরি।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রাকৃতিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ ও দক্ষতা অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা সাম্প্রতিক বাস্তবতার পটভূমিতে অস্বীকার করা যায় না। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রাণ, প্রকৃত ও পরিবেশ বিরোধী কার্যকলাপের দরুণ বাংলাদেশের আবহাওয়া যেভাবে ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হচ্ছে, তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের করণীয় নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। যার ভিত্তিতে বিরূপ পরিস্থিতিতেও শিক্ষা কাযর্ক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলেই বন্ধ ঘোষণার পথে না গিয়ে টেকসই হওয়ার দিকেই সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হওয়া অত্যাবশ্যক।

সর্বাগ্রে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্ক ও উদ্দ্যোগী না হই, তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে গরম ও শীত দিনে দিনে তীব্র থেকে তীব্রতর এবং দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবেই। প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করলে কঠিন ফল ভোগ করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। এরই মাঝে নানা রকমের বিপদ এসে হাজিরও হয়েছে এবং ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আরো বিপদ আসার আশঙ্কাও রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, বায়ুমানের অবনতি, পরিবেশ বিপর্যয়, জলস্তর হ্রাস, মরু প্রবণতা, জমির উর্বরা শক্তিহানি, প্রাণ ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের অবলুপ্তি ইত্যাদি। যে কারণে, অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডার মতো চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতিও একদার নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে।

ফলে প্রচণ্ড শীত বা বাড়তি গরম হলেই ছুটি দেওয়া একমাত্র সমাধান হতে পারে না। বাস্তব সমাধানের কথা ভাবাই বরং অতি জরুরি। এজন্য কিছু পরিবর্তন, অদল-বদল বা সংস্কার দরকার। যেমন:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত পরিকাঠামোর উন্নয়ন দরকার সবচেয়ে আগে। যে সব স্কুলের ক্লাসরুমে টিনের ছাউনি আছে, সে সব স্কুলে স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে তাপ-সহনীয় মান বজায় রেখে। প্রতি ক্লাসরুমে ছাত্র অনুপাতে পর্যাপ্ত ফ্যান এবং প্রাকৃতিকভাবে হাওয়া-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। সম্ভব হলে, স্কুলকে ছায়াদায়ী বৃক্ষের আচ্ছাদনে এবং প্রচুর উদ্ভিদের আড়ালে সবুজ, সজিব ও শীতল রাখতে হবে। বৃক্ষ ও প্রকৃতি শুধু গ্রীষ্মের তীব্র গরমই নয়, শীতের ঠাণ্ডা হাওয়াও ঠেকাতে সাহায্য করবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরমে পাখা এবং শীতে হিটারের ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পাওয়ার সাপোর্টের জন্য বা লো ভোল্টেজ আর লোডশেডিং-এর সমস্যা এড়াতে ব্যাটারি, সোলার প্যানেল বা জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দেওয়াও দরকার।

ক্লাসরুমে ভেজা পর্দা, কুঁজো বা মাটির কলসির পানি ব্যবহার, স্যালাইন বা প্রাকৃতিকভাবে শীতল পানির জোগান প্রভৃতি ব্যবস্থা করা যায়। গরমজনিত অসুস্থতা রুখতে প্রশিক্ষণ ও প্রাথমিক কিছু ওষুধের জোগান দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে শরবত বা লেবুর পানি বহনের জন্য প্রণোদিত করতে হবে এবং সব ধরনের প্যাকেটজাত কোমল পাণীয় পান এবং জাঙ্ক ফুট গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের গরম বা আবহাওয়াজনীত অসুখের কবল থেকে নিরাপদ রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের একযোগে কাজ করতে হবে।

স্কুল টাইমিং-এর দিকেও মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছণীয়। ‘মর্নিং স্কুল’ ভাল বিকল্প। বর্তমানে অনেক জায়গায় প্রাথমিকে অনেক সকালের দিকে স্কুল হয়। এতে তাপ ও ভিড় থেকে শিক্ষার্থীরা রেহাই পায়।

স্কুলে লম্বা গরমের বা অন্যান্য ছুটিতে অনলাইনে ক্লাস করার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা যায়। বাড়িতে পড়ানোর জন্য অনলাইনে নজরদারিও বৃদ্ধি করা যায়। শুধু স্কুলেই সব পড়তে হবে, এমন না করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতেও স্কুল ও শিক্ষকদের অনলাইন মনিটরিং-এর আওতায় আনলে তাদের পাঠের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং সিলেবাস শেষ না হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে কেবলমাত্র ‘কাস্টমাইজ়ড ট্যাব বা মোবাইল’ (শুধুমাত্র পড়াশোনার কাজে ব্যবহারযোগ্য) দেওয়া যেতে পারে, যার সঙ্গে থাকবে সুলভ ডাটা প্যাক। এতে তীব্র গরমের বা অনসহনীয় শীতে ছুটি দেওয়ার মাত্রা কমবে এবং ছুটি হলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নির্বিঘ্নে চলতে পারবে।

প্রাকৃতিক বিরূপতায় বন্ধ দিয়ে বা স্থবির হয়ে নয়, কিছু কাঠামো ও নিয়ম-কানুন বদল করে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখাই জরুরি কর্তব্য।

;