একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. বিরূপাক্ষ পাল

‘অর্থের প্রচলনগতি বাড়লে ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ হবে’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিকাশ' বা 'নগদের' মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব সাধন করেছে, এমনটা উল্লেখ করে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, তবে উচ্চ মুনাফার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানগুলোর যে মনোপলি, তা ভাঙতে হবে। এখানে আরও প্রতিযোগিতা আসা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কোর্টল্যান্ডে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল আরও মনে করেন, রেমিট্যান্স খাতকে জনস্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে যে অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেমকেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সে পর্যায়ে উন্নীত করা উচিত। তাতে দেশের অর্থের প্রচলনগতি বাড়বে। তখন ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ হবে।

সম্প্রতি, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সমসাময়িক নানা ইস্যুতে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. বিরূপাক্ষ পাল। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে থাকছে আর্থিক সেবাখাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা, ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং, রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে ড. পালের মূল্যায়ন। কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমেপরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: আর্থিক সেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং প্রযুক্তিগুলো নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও শেষপর্যন্ত সেবা বহুমুখীকরণে প্রযুক্তিই তো ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন...

ড. বিরূপাক্ষ পাল: সেটা তো অবশ্যই। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন মধ্যাহ্নে একজন ভদ্রলোক আসতেন। তিনি মানি অর্ডার নিয়ে আসতেন। তিনশ’ টাকার মানি অর্ডার থাকলে প্রথমে ২০০ টাকা দিতেন, বাকি ১০০ টাকাটা অনেক ভেঙে ভেঙে দিতেন; যাতে তাকে কিছু বকশিস দেওয়া হয়। চারদিকে খবর হয়ে যেতো তার টাকা আসছে।

তখন এত ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিল না। এখন 'বিকাশ' বা 'নগদ' বিপ্লব সাধন করেছে। এ নিয়ে দ্য ইকনোমিস্টে আমার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। এখন একজন রিকশাচালক তাঁর স্বজনদের কাছে টাকা পাঠিয়ে ফোন করে বলে দেন। যদিও রেট (পাঠানোর ব্যয়) এখনও অনেক বেশি। আসলে উচিত হবে, রেটটাকে যেকোনো ভাবে শূন্যতে নিয়ে আসা। অন্য কোনোভাবে তাদের ফ্যাসিলিটি দেওয়া উচিত।

'বিকাশ' এই প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করতে দিচ্ছে। যারা এই প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন করছে; তাদের কাছ থেকে একটা পয়সা নিচ্ছে। আরও কিছু পেমেন্ট সরকার দেখতে পারে। যদি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১০০০ টাকায় ২০ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়, এটা তার জন্য কষ্টের ব্যাপার। সে ২০ টাকা দিয়ে আরেকটা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে। মোবাইল ফাইন্যান্সিং প্রথম অবস্থায় বিকাশের মনোপলির কবলে পড়ে। যখন আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলাম, তখন 'বিকাশ' ৮৫ ভাগ করতো (মোবাইল ফাইন্যান্সিং), তারপর অন্যান্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আসে।

বাংলাদেশে যা হয়, একবার যে মনোপলি তৈরি করতে পারে, সে মনোপলি ভাঙ্গা কঠিন হয়ে পড়ে। বিদেশে উল্টো, যখন কেউ মনোপলি তৈরি করবে, তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কেউ হাইকোর্টের কাছে গেলেই মনোপলি ভেঙে দেবে। দ্বিতীয়তঃ দুই কোম্পানি যদি এক হতে চায়, তখন মনোপলি সৃষ্টি করবে কি না তা আদালত খতিয়ে দেখবে। বিদেশে এন্টি-কম্পিটিশন কমিশন আছে, আমাদের যেটা কম্পিটিশন কমিশন। অস্ট্রেলিয়াতে এর নাম 'এন্টি-কম্পিটিশন কমিশন' (এ সি সি)। মানে এন্টি-কম্পিটিশন কেউ কিছু করলে তারা অ্যাকশন নেবে। যেভাবেই ডাকি না কেন, তারা খুবই অ্যাক্টিভ। আমাদের যে কমিশন আছে, তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। এটা অনেকটা জীবনানন্দের শিশিরের শব্দের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে বানানো হয়। তাদের পুনর্বাসনের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। রিটায়ার্ড আমলারা বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকবে, কম্পিটিশন কমিশনে থাকবে; ব্যাংকিং ডিভশনে থাকবে পরিচালকের বোর্ডে থাকবে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবে। এজন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানের ইনোভেশন ইনডেস্কে খুব দুর্বল। যাঁরা প্রতিষ্ঠান চালান, তারাও র‌্যাংকিংয়ে দুর্বল। আমলাতন্ত্র-ব্যবসায়ীতন্ত্র জেঁকে বসেছে। সবদিকে তাদের উপস্থিতি। পার্লামেন্টই তাদের দখলে থাকে। তবে এখন কম্পিটিশন এসেছে, আরও বেশি আসা উচিত। এখানে অর্থের ব্যাপার থাকা উচিত নয়।

বার্তা২৪.কম: রেমিট্যান্স নিয়ে যে সিস্টেম ডেভেলপ করেছে, অভ্যন্তরীণ মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ে সেটা কেন করা গেল না?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের অতিরিক্ত কিছু দিতে হয় না। তারা কি সার্ভাইব করছে না! অবশ্যই সার্বাইভ করবে। মেজর এজেন্সি সাপোর্ট দিতে হবে। মানুষ যাতে সহজে অর্থটা পায়, অর্থ প্রিন্ট করলে যেমন অর্থনীতিতে অর্থ সৃষ্টি হয়, তেমনি এর প্রচলনগতি যত বাড়ে অর্থাৎ ভেলোসিটি যত বাড়ে, অর্থনীতি তত শক্তিশালী হয়। কয়েকশ বছর আগের ‘কোয়ান্টিটি থিওরিস অব মানিস'-এ একথা বলা আছে। শুধু অর্থনীতিবিদদের ক্ষেত্রেই নয়, জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। ভেলোসিটি যদি বাড়ানো যায়, তাহলে ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ করা যাবে। অর্থনীতিতে অর্থায়ন অর্থাৎ মনিটাইজেশন ইনডেক্স মনে হয় এখন ৫৫ বা সর্বোচ্চ ৬০ হতে পারে। মনিটাইজেশন এখনও দুর্বল অবস্থায় আছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো মনিটাইজেশন বাড়াতে পারে, অর্থের প্রচলনগতি বাড়াতে পারে, মানুষের প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে পারে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে বলবো, আমি এখান থেকে অনুষ্ঠান করি অথচ বাংলাদেশে আমার ভাইয়ের যে অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে অনুষ্ঠান শেষে সেকেন্ডে টাকা পৌছে যায়। একজন রিকশাচালক সারাদিন রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় স্ত্রীর কাছে টাকা পৌছে দেন, যেটাকে বলে 'কনজ্যুমার সারপ্লাস'। কনজ্যুমারের লক্ষ্য কী, ম্যাক্সিমাম সেটিসফেকশন। তারমানে ওভারঅল সেটিসফেকশন যখন বাড়তে থাকে, তখন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বাড়ে। অন্তর্ভুক্তি বাড়ে। সমাজে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। এমন হয়েছে, পরিবারে কেউ অসুস্থ, সময়মতো টাকা পৌঁছেনি বলে স্বজনটি মারা গেছেন। কিন্তু এই ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে কেউ নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। এর মমতাগত দিক আছে। মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে। মাঙ্গলিক দিক আছে এবং অর্থনৈতিক দিক আছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আরও প্রমোট করা উচিত।

বার্তা২৪.কম: সামষ্টিক অর্থনীতির যে লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবো, সেই লক্ষ্য পূরণে ডিজিটাল প্রযুক্তি কতখানি অপরিহার্য হবে?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: প্রযুক্তিগত দিকে তো আমাদের অবশ্যই উন্নত হতে হবে। গ্লোবাল টেকনোলজি ইনডেক্সে আমরা কতখানি পিছিয়ে আছি, তা দেখতে হবে। এখানে পিছিয়ে থাকলে তো আমরা উন্নত হবো না। মাথাপিছু আয় বাড়লেই একটা দেশ উন্নত হয় না। ধরুন, ইয়েমেনে আজ তেল পাওয়া গেল। তারা তেল বেচে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে ফেললো। তাই বলে তো তারা উন্নত দেশ হবে না। সোমালিয়াতে হঠাৎ করে স্বর্ণ পাওয়া গেল। এমনিতেও ওদের খনিজসম্পদ আছে অনেক। স্বর্ণ বিক্রি করে তাদের জিডিপি হঠাৎ বেড়ে গেল আর জিডিপিকে সেদেশের মাথাপিছু আয় দিয়ে ভাগ করলেই তো সে দেশ উন্নত নয়।

কারণ, সোমালিয়ার জনসংখ্যার বড় অংশ জলদস্যু। সেখানে সভ্যতা নেই। অন্যায়, অবিচার, হত্যা-এগুলো এদের পরিচয়ের সঙ্গে মিশে আছে। উন্নত হতে হলে আরও কিছু ইন্ডিকেটর দরকার। ইউরোপে শিক্ষা আছে। সেরকম রেঁনেসা দরকার হয়। চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে একটা বিপ্লব ও বিকাশ দরকার হয়। উন্নত জীবনধারা, পারস্পারিক মমতা, সমীহ, ‘অ্যামপেথি ফর আদার্স’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন এখন সুখের ইনডেক্স করি, সুখ মানে শুধু টাকা নয়। এখানে সোশ্যাল সেফটি নিশ্চিত হচ্ছে কি না, আমার সমাজে একটা মেয়ে সন্ধ্যায় বের হলে যদি নির্যাতনের শিকার হয়, সেটা উন্নতির লক্ষণ না। উন্নতি মানে অধিকার, আদালতের গতি। এগুলোতে যে বাংলাদেশ খুব পিছিয়ে তা না, এগিয়ে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে, এজন্য প্রয়োজন মুক্ত মিডিয়া।

অমর্ত্য সেন বলেছেন, যে দেশে উন্নত মিডিয়া থাকে, সে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না। কারণ, মুক্ত মিডিয়া অনেকগুলো দিক উদঘাটন করে। তারা সংবাদ প্রকাশ করলে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে। দ্বিতীয়তঃ ইকনমিকস অব ইনফরমেশন এখন খুব ভালো। ইনফরমেশনের ওপর কাজ করার জন্য এখন অনেককে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে। তথ্য জানাটা একটা বিরাট ব্যাপার। র‌্যাশনাল একস্পেকটেশন বা যৌক্তিক প্রত্যাশা সৃষ্টি করে।

বার্তা২৪.কম: উন্নত দেশে রূপান্তরের একটি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এর বাস্তবতা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: ২০৪১ সালে উন্নত দেশের ব্যাপারটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি একজন স্বাপ্নিক মানুষ। সবদিক দিয়েই স্বপ্ন দেখেন। সব ইঞ্জিনিয়াররা যখন বললো, পাতাল রেল করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকার সময়ে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে আমিও এ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ইঞ্জিনিয়াররা ‘না’ করলেও তিনি এগিয়ে গেলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশের অনেক উপদেষ্টারা তাকে ভুল উপদেশ দেন বা ভুল তথ্য দেন।

২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশ হতে হবে কেন! এটা কোন ফোরকাস্টিং বা অংক করে পেলেন তারা, এটা আমি অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঝি না। এ নিয়ে আমি পত্রিকাতেও লিখেছি। এতে সরকার পক্ষের অনেকে ভেবেছেন, বোধহয় আমি সমালোচক। এটা সমালোচনা নয়। অর্থনীতির বিষয় কিন্তু রাজনৈতিক উচ্ছ্বাস দিয়ে চলে না। রাজনীতির মধ্যে অনেক ভেগ জিনিস থাকে। ধরুন, যিনি লুটেরা, তিনিও সমাজে জনদরদী হন! তার চরিত্র খারাপ থাকলেও তিনি চরিত্রবান হন। ফুলের মতোন পবিত্র হন, এগুলো বলা যায়!

কিন্তু অর্থনীতিতে এ ধরনের ভণ্ডামির জায়গা নেই। অর্থনীতিতে অংকগুলো খুব সঠিকভাবে আসে। এখন দেশের জিডিপি একটা স্তিমিতভাবের মধ্যে পড়ে গেছে। তিন বছর আগেই হিসাব করেছিলাম, ৯.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি যদি ধরা হয় তবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছানো যেতে পারে। হঠাৎ করে পৌছে গিয়ে বলে দিলাম উন্নত হয়ে গেছি। এটাকে উন্নতি বলে না। উন্নতির আরও কিছু সোশ্যাল ইন্ডিকেটর আছে। এজন্য সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর সিনেমাটা সবার দেখা উচিত।

খানদানি জমিদার আর হঠাৎ করে পয়সা হলো আর আমি জমিদার হয়ে গেলাম, বাঈজী নাচিয়ে পয়সা ছুড়ে দিলাম, এটা হয় না। খানদান অভ্যাস যেটা ইউরোপে বা ভারতীয় সভ্যতাতেও দেখি, সেই আভিজাত্য, মানুষের প্রতি মমতা, দরদ-স্বাস্থ্যগত উন্নতি, মানসিক উন্নতি, অঙ্গীকার, স্বাধীনতাবোধ- এই জিনিসগুলো না থাকলে হঠাৎ করে জিডিপিতে স্পর্শ করে গেলেই আমরা উন্নত দেশ হবো না।

তারমানে আমরা আশা ছেড়ে দেবো! না! ২০৪১ সালে না হলেও অনেক ইন্ডিকেটরে আমরা নিশ্চয়ই পৌছে যাবো। এট দ্য সেইম টাইম উই হ্যাভ লট অব আনসার্টেনিটিস... কোভিড হঠাৎ করে আসলো বা কোনো ডিজাস্টার আসলো, হঠাৎ করে ভূমিকম্প বা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ আসলে, তখন কী হবে? যেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এখন ফেস করছে! ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের আবহাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত। হঠাৎ পকেটে টাকা হয়ে গেলেই কেউ বড়লোক হয়ে যায় না। বড়লোক হতে গেলে মন মেজাজ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সমৃদ্ধ এই জিনিসগুলো আনতে হবে।

এই জায়গাগুলোকে ঠিক মতো নার্চার করা হচ্ছে না। আমরা শুধুমাত্র ‘জিডিপি’ আর ‘পার ক্যাপিটা ইনকামের’ ধাক্কায় পড়েছি। সম্প্রতি, ডিভ্যালুয়েশনে দেখলাম পার ক্যাপিটা ইনকাম কমে গেছে। এখন এটাকে চাপা দেওয়ার জন্য বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) বললো, টাকার অংকে তা প্রকাশ করবে। এভাবে করলে তো হবে না, আন্তর্জাতিক বিচারের বেলায় তো টাকায় আসবে না, ডলারে আসবে।

এই বিচারে আমি বলবো, উন্নতবিশ্ব হতে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুন্দর করতে হবে, যাতে আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা রাখতে পারি। পাসপোর্ট অফিসে গেলে বা রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানে গেলে যাতে আমরা ভরসা করতে পারি যে, আমাদের কাজটা হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা উন্নতি করছি কিন্তু পাশাপাশি দুর্নীতি ভেতরটা খেয়ে দিচ্ছে। তার রিফ্লেকশনটা আয়নায় পড়ছে। গ্রোথ কমে যাচ্ছে, এখন তো কমার কথা নয়। কোভিডের পর আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে সুদের হার বাড়াতে বাড়াতে সর্বোচ্চ করে ফেললো (যা ৩০ বছরে দেখা যায়নি), সেখানেও তো গ্রোথ হচ্ছে ভালো। সব জায়গায় গ্রোথ হচ্ছে ভালো। তারা তখন ১%-২% গ্রোথ সেলিব্রেট করতো। সেই সময় আমাদের ৭-৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল কিন্তু এখন আমরা এত নেমে গেলাম কেন! এখানে দুর্নীতিগুলো ভূমিকা রাখছে। বড় মাপের মানি লন্ডারিং হচ্ছে।

আমি ঘুরেফিরে যে জায়গাতে আসতে চাইছি, ডিজিটাইজেশনকে ফাঁকি দিয়ে মানি লন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে, আমরা ইনভয়েসিং করছি। ওই জায়গাগুলিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। আমি একটি বই লিখেছি, ‘ম্যাক্রো ইকোনমিকস পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন ফর গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’। ইনস্টিটিউশনগুলোকে যদি শক্ত করা না যায়, পলিসি যদি অসামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তাহলে ডিজিটাইজেশনে কাজ দেবে না। সেক্ষেত্রে ডিজিটাইজড চোরকে কাজে দেবে। প্রযুক্তি তো সোমালিয়ার হাতেও আছে। সোমালিয়ার প্রযুক্তি তো পাইরেটদের হেল্প করছে বেশি, র‌্যাদার দেন কমন পিপল। বানরকে ক্ষমতা দিতে হয় না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে একটি জায়গায় আনা দরকার। দুর্নীতি দমন কমিশন যেন কাজ করতে পারে, করাপশন ইনডেক্স থেকে আমাদের নড়চড় হচ্ছে, নলেজ ইকোনমি ইনডেক্সে কীভাবে ওঠা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। ইনোভেশন ইনডেক্স দেখতে হবে। এই ইনডেক্সগলো একাধিক্রমে হেলপ করবে ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন এবং গরিবের ক্ষমতায়ন। রাজনীতিতে আমরা বলি, ‘জনদরদী’, ইলেকশন শেষে এখন তাদের আর পাওয়া যায় না এলাকায়! এই জায়গাগুলিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ইটস লাইক এ প্যাকেজ অব ইওর হেলথ, স্বাস্থ্য সবদিকে দিয়ে ভালো, কিন্তু আঙুলটা কাটা, সব পারফর্ম্যান্স নষ্ট করে দেবে।

বার্তা২৪.কম: আর্থিক সেবাখাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: গ্রামে চায়ের দোকান দিতেও ক্যাপিটাল দরকার। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনটা যে ধাক্কায় শুরু হয়েছিল, সেভাবে কিন্তু কাজ হয়নি। তাকে ক্রেডিটের একসেস দিতে হবে। তারা ক্যাপিটাল মার্কেটে আসবে না। কারণ, সবগুলো ছোট ব্যবসা। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ব্যাংক ইজ দ্য বেস্ট প্লেস। এই জায়গাগুলোতে প্রচুর ঘাটতি আছে। বিভিন্ন এনজিও চেষ্টা করছে। একটি গ্রামে গিয়ে যদি আমরা ৫০ জন লোককে ধরি, তাদের এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরে কাজ করি, তাদের টাকা দিয়ে ৫০ জনে ৪০ জনই দাঁড়াবে। তারা দাঁড়িয়ে একজন আরও ৩ জন করে লোক রাখবে। ৫০ জনের টাকা একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরির লোক একদিনেই মেরে দিলো। এখান থেকে সুফলটা পাওয়া যাচ্ছে না। এই জন্য ফান্ডের অল্টারনেটিভ ইউজগুলো দেখতে হবে। এদেরকে লোটাললি ফান্ড দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দিলেও খুব পার্শিয়াল।

দেখতে হবে, ব্যালান্সশিটে কত পার্সেন্ট বন্ড ইস্যু করেছেন আর কত পার্সেন্ট ইক্যুইটি আছে। এই ফিন্যান্সিয়াল আর্টিটেকচার অনুযায়ী জাজমেন্টে আনতে হবে। ওই লাইনে আমরা এখনও দক্ষতা বিস্তৃত করিনি। নীতি-নিয়মও করিনি। কোনো নিয়ম-নীতি করিনি। কারণ, আমাদের নিয়মগুলো উল্টোদিকে যায়। আমাদের ডিরেক্টরশিপ ল’টা অ্যান্টি ইনক্ল্যুশন।

একটি ব্যাংকের যত ডাইভার্স ডিরেক্টরশিপ থাকবে, তত ভালো। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে আসছি, তখন আমি পত্রিকায় লিখেছিলাম, এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) কী করে ওয়ালমার্টে ডিরেক্টর বডির মধ্যে একজন আর্টিস্ট নিয়েছেন, যাদের ডাইভার্স ডিরেক্টরশিপ থাকে তাদের কাছে এসিমিনেশন অব নলেজ হয়, আইডিয়া হয়-কালচার হয়। যত ডাইভার্সিটিতে যাওয়া যায়, তত মঙ্গল।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শুধু সাদা নেবে না, শুধু কালো নেবে না; শুধু ইন্ডিয়ান নেবে না, শুধু চাইনিজ নেবে না, শুধু মেয়ে নেবে না বা ছেলে নেবে না। আমরা হেমোজিনয়াস সোসাইটির দিকে যাই। বাংলাদেশে উল্টো দেখছি, একটা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সব এক ধরনের মানুষ থাকতে হবে। একটি স্কুলে সব সমমনা রাজনীতির লোক থাকতে হবে। আমরা এন্টি-ডাইভার্সিটি। এই এন্টি-ডাইভার্সিটি আসলে এন্টি-ইনক্লুশন। ইনক্লুশন করতে হলে তো আসলে সব কিছুকে ইনক্লুশন করতে হবে। সব এক মতবাদ হতে হবে কেন! উনি কোনপন্থী, এসব ব্যাপার কাজ করে বাংলাদেশে। অথচ বিদেশে ডাইভার্সিটি খোঁজে। হার্ভার্ডয়ের প্রোডাক্ট হার্ভার্ড নেয় না। অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে আসবে। কালচারাল এসিমিনেশন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেই ঠিক করে রাখে এই ছেলেটাকে আমরা নেবো, অনেকটা ‘ঘর জামাই’। আর এই ‘ঘর জামাই’ তো খুব রিভোল্ট করতে পারে না। ‘ঘরজামাই’ খুব কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারে না।

কালচারাললি যদি জিনিসগুলো ঠিক করা না হয়, তবে কার্যকর ফল কিছু আসবে না। ওয়েস্টার্ন কালচারে বুঝে গেলাম, তাদের টলারেন্স ও ওপিনিয়ন অব ডাইভার্সিটি। আমাকে এসেসমেন্টের সময় কারেক্ট এসেসমেন্ট করবে। আর কারো বিরুদ্ধে যদি আমি বোর্ডরুমে কথা বলি পরের দিন গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে। ওটার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি না।

বিদ্যাসাগর বলে গেছেন, ‘বাঙালি অসার চরিত্র’। আমাদের সিস্টেমের মধ্য দিয়ে আমরা করাপ্ট করে রেখেছি। কম্পিটিশনকে হাতে ধরে ধ্বংস করেছি। বিভিন্ন ধরনের রিফাইনারিগুলো...ইন্ডিয়াতেও বড়লোক ডেভেলপ করে তবে সেখানে একটা কর্পোরেট স্ট্রাকচার গড়ে উঠেছে। তাদের কন্ট্রিবিউশন আছে। অনেক বড় বড়। কিছুদিন আগে বিএটিএ হয়েছে। এরা কত লোককে এমপ্লয়মেন্ট দিয়েছে! 'ডাইভার্সিটি স্ট্রেন্থেন ড্রাইভার্সিটি'! কালচারাল ডাইভার্সিটি, রিলিজিয়াস ডাইভার্সিটি, ওপিনিয়ন ডাইভার্সিটি, জেন্ডার ডাইভার্সিটি-এগুলোর মধ্য দিয়ে শক্তি অর্জন করতে হবে আমাদের।

আমেরিকার শক্তিটা কোথায়! আমেরিকা তো প্রকৃত অর্থে কারোর দেশ না। কালচারাল ডাইভার্সিটি, রিলিজিয়াসস ডাইভার্সিটি-এগুলোর মধ্য দিয়ে শক্তি লাভ করে দেশটি। সব মাইগ্র্যান্টদের দেশ। এই মাইগ্র্যান্টদের মধ্যে যদি ডাইভার্সিটি না থাকতো, তাহলে এত কিছু করা সম্ভব হতো! তাদের শক্তিটা মেধাকে নিয়ে তাদের শত রকম দোষ থাকলেও তারা গ্লোবাল ইনডেক্সে এক নম্বর দেশ। নলেজই তাদের শক্তিমান করেছে।

অর্থনীতিবিদ ডেভিড রোমার বলেছেন, 'এক সময় ধারণা করা হতো ধনীদেশ আর ধনী হবে না। সেচুরেটেড হয়ে গেছে'। কিন্তু তারা আবারও ধনী হয়। কেন হয়! সব কিছুর লেবারে ডেমিনিশন মার্ক আছে। নলেজের কোনো ডেমিনিশিন রিটার্ন নেই।

জ্ঞান মানুষকে যে এত ক্ষমতাশালী করে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকে দৃষ্টান্ত ধরা যেতে পারে। আমেরিকা যখনই কলাপসের মধ্যে পড়ে, তখন দেখা যায় টেক কোম্পানিগুলো তাকে টেনে তুলে ফেলে, অ্যাপল-আমাজন-সিলিকন ভ্যালি তাকে টেনে তুলে ফেলে। কারণ, নলেজ দিয়ে তারা অনেক এমপ্লিফাই করতে পারে। হর্স পাওয়ার অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। ওই জায়গাটাতে চর্চা হওয়া দরকার।

যেটা আমরা বুঝি, তা যেন সততার সঙ্গে করি। দরিদ্রের ক্ষমতায়ন শুধু মুখে বললে হবে না! নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে সমাজে। সেভাবে দরিদ্রের ক্ষমতায়ন হয় না। সেজন্য এক মন্ত্রী বলেছেন, ২৫ হাজার টাকার জন্য কৃষককে আমরা হাতকড়া পরাই কিন্তু ২৫ হাজার কোটি টাকা যে নিয়ে গেল, তার বিচার হয় না। বিচার হতে হতে ১৬ বছর চলে যায়। এই ১৬ বছরে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচার করে দেয়। যেদিন রায় হবে তার আগের দিনে সে বিদেশে চলে যায়। এই হচ্ছে বাস্তবতা!

সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, এডিটর-অ্যাট্-লার্জ, বার্তা২৪.কম

   

ফের বাড়ল সোনার দাম, প্রতি ভরি ১১৯৫৪৪ টাকা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বাজারে ফের বেড়েছে সোনার দাম। এবার এক হাজার ৮৪ টাকা বাড়িয়ে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৪ টাকা।

রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম বাড়ায়, সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দর সোমবার (২০ মে) থেকে কার্যকর হবে।

নতুন দাম অনুযায়ী, হল-মার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১০৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৮০৩ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৮০ হাজার ৮৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, গত শনিবার (১৮ মে) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৬ হাজার ৯১৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৮০ হাজার ১৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এনিয়ে এ বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ২৪ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ১৩ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ১১ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।

;

বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ, ১৭ দিনে এলো ১৩৬ কোটি ডলার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
দেশে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

দেশে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে আবার রেমিট্যান্স প্রবাহে ‍সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। চলতি মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৫ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ডলার।

রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৫ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আর গত এপ্রিল, মার্চ, ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারির প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল যথাক্রমে ১১৪ কোটি ৫৮ লাখ, ১০৯ কোটি ৩১ লাখ , ১২১ কোটি ৭২ লাখ ও ১২২ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে চলতি মাসে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসে ২০০ কোটি ডলার ছুঁতে পারে দেশের প্রবাসী আয়। মূলত আসন্ন কোরবানিকে ঘিরে বাড়ছে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা।

এদিকে মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১২০ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।

এদিকে গত এপ্রিল মাসে দেশে এসেছে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

;

‘সমস্যা আমাদের মতো করেই সমাধান করতে হবে’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প ও সহজলভ্য উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের সমস্যা আমাদের মতো করেই সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

রোববার (১৯ মে) বিদ্যুৎ ভবনে ইনোভেশন শোকেসিং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে ইনোভেশন শোকেসিং-২০২৪ আয়োজন করা হয়। এতে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন দফতর, সংস্থা হতে ২৪টি ইনোভশন উদ্যোগ প্রদর্শন করা হয়।

ভার্চয়ালি যুক্ত হয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশকে সামনে রেখে পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নতুন নতুন উদ্ভাবনকে আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) এখনই অনেক সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে। এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় তত হবে। একই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যও নিশ্চিত হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নিজস্ব প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা ব্যবহৃত প্রযুক্তির নিজস্ব ভার্সন সৃজন করতে হবে।

ইনোভেশন শোকেসিং ২০২৪-এ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস তৈরিকরণ-এ প্রথম স্থান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বেজড ‘স্মার্ট কাস্টমার এসিস্ট্যান্ট- চ্যাটবট” ২য় স্থান, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) জিআইএস বেসড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থপনার আউটেজ ডিজিটালি মনিটরিং এবং লোড ম্যানেজমেন্ট-এ ২য়, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) আন্ডারগ্রাউড ক্যাবল টেস্ট ভ্যান, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) অটোমেটিক ইমার্জেন্সী রেসপন্স টেস্ট অব এসটি ইমার্জেন্সী লুব অয়েল পাম্প থ্রো ডিসিএস ইন্ট্রিগেশন এবং রুরাল পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড (আরপিসিএল) চার্জ এয়ারকুলার এন্ড চার্জ এয়ার রিসিভার ড্রেইন লাইন মডিফিকেশন ফর প্লান্ট আউটেজ রিডাকশন তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান ইনোভেশন কর্মকর্তা নিরোদ চন্দ্র মন্ডেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবির। স্রেডার চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, পিডিবি’র চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, বিআরইবি’র চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্ত্তী, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সহ দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

;

প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত সেভিংস খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সব শ্রেণির জনগোষ্ঠিকে আরো সহজ, ঝামেলাহীন সেভিংস-সেবা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে এবং তাদের মাঝে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে এবার বিকাশ অ্যাপে যুক্ত হলো দুটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমেয়াদী ‘সাপ্তাহিক সেভিংস’। প্রথমবারের মতো দেশে সাপ্তাহিক এই ডিজিটাল সেভিংস সেবা চালু হলো বিকাশ অ্যাপে, যেখানে গ্রাহকরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই ২৫০ থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সাপ্তাহিক কিস্তিতে সেভিংস করতে পারছেন। সেভিংস করা যাচ্ছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংক-এ।

নতুন এই সাপ্তাহিক সেভিংস সেবা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। স্বল্প আয় এবং দৈনিক মজুরি ভিত্তিক পেশাজীবীদের অল্প অল্প করে অর্থ জমানোর সুযোগ করে দিবে, যা তাদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা, কৃষি-ব্যবসায় বিনিয়োগ, শিক্ষা, চিকিৎসা বা অন্য যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে কাজে আসবে।

সাপ্তাহিক সেভিংস-এর পরিমাণ এবং মেয়াদ:

এই সেবার আওতায় বিকাশ গ্রাহকরা সাপ্তাহিক ২৫০, ৫০০, ১০০০, ২০০০, এবং ‌৫০০০ টাকা কিস্তিতে ৬ মাস অথবা ১২ মাস মেয়াদে আইডিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংক-এ সেভিংস খুলতে পারছেন। বিকাশ অ্যাপেই ব্যাংকগুলোর দেয়া তুলনামূলক মুনাফার হারের তথ্য বিবেচনা করে দিনে-রাতে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটেই সেভিংস খোলার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহক।

বিকাশ অ্যাপে সেভিংস করার পদ্ধতি:

নতুন সেভিংস খুলতে বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে ‘সেভিংস’ আইকনে ট্যাপ করে ‘নতুন সেভিংস খুলুন’-এ ট্যাপ করতে হবে। সেভিংস এর ধরন থেকে ‘সাধারণ সেভিংস’ বেছে নিয়ে সেভিংসটি কেনো খুলতে চান সেটি বাছাই করতে হবে। এরপর, সেভিংস-এর মেয়াদ ৬ মাস বা ১২ মাস, জমার ধরন (সাপ্তাহিক) এবং প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা জমাতে ইচ্ছুক ২৫০, ৫০০, ১০০০, ২০০০, বা ৫০০০ নির্বাচন করতে হবে।

পরের ধাপে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের তালিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক বা ঢাকা ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেভিংস-এর নমিনি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। তারপর সেভিংস-এর বিস্তরিত দেখে এবং নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে, বুঝে সম্মতি দিতে হবে। সবশেষে বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখলেই সেভিংস-এর আবেদন সম্পন্ন হবে। প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে বিকাশ ও ব্যাংক থেকে চলে আসবে নিশ্চিতকরণ মেসেজ। বিকাশ অ্যাপ থেকে একাধিক সেভিংস খুলতে পারবেন যেকোনো গ্রাহক।

বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স থাকা সাপেক্ষে নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেভিংস-এর টাকা কেটে নেয়া হবে। সেভিংস-এর মেয়াদপূর্ণ হয়ে যাবার পর বিকাশ অ্যাপেই মুনাফাসহ মূল টাকা পেয়ে যাবেন গ্রাহক যা কোনো খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করতে পারবেন যেকোনো বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট বা নির্দিষ্ট ব্যাংকের এটিএম থেকে। এদিকে, জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তীর আগেই সেভিংস সেবা বন্ধ করতে চাইলে গ্রাহক বিকাশ অ্যাপ থেকেই তা করতে পারবেন।

সাপ্তাহিক সেভিংস প্রসঙ্গে বিকাশ-এর চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, “ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে মাসে বা সপ্তাহে টাকা জমানো বেশ কঠিন। এদিকে দৈনিক বা সপ্তাহ ভিত্তিতে আয় করা মানুষদের জন্য নিয়মিত বিরতিতে ব্যাংকে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব। তাই ব্যস্ত জীবনে সকল পেশার মানুষের জন্য আর্থিক লেনদেনে স্বস্তি এনে দিতেই বিকাশ তার অ্যাপে দুটি নতুন ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক সেভিংস সেবা যুক্ত করেছে। সঞ্চয়ের অভ্যাস ব্যক্তি এবং সমাজের আর্থিক নিরাপত্তাকে যেমন নিশ্চিত করবে তেমনি দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আমরা মনে করি।”

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বিকাশ অ্যাপে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক সঞ্চয় সেবা চালু হয়। এই সেবার জনপ্রিয়তার কারনে স্বল্প সময়ের মধ্যে চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ সেভিংস গ্রহণ করেছেন বিকাশ গ্রাহকরা, যাদের এক-তৃতীয়ংশই নারী। বর্তমানে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক-এর পাশাপাশি ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক সিটি ব্যাংকের মাসিক ‘সিটি ইসলামিক’ সেভিংস সেবা গ্রহণ করছেন গ্রাহকরা।

সেভিংস সেবা নিয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে এই লিংকে– https://www.bkash.com/products-services/savings।

;