তলস্তয়ের “রেসারেকসন” ও আমাদের পাপবোধ



সৈয়দ কামরুল হাসান
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি আমার তীব্র সময়াভাবের মধ্যেও, মুষ্ঠিচালের মতো একটু একটু করে সময় বাঁচিয়ে অবশেষে তলস্তয়ের বিশাল ও মহাকাব্যিক উপন্যাস “রেসারেকসন”-এর পাঠ শেষ করেছি। “রেসারেকসন” প্রগতি প্রকাশনের বাংলা অনুবাদে “পুনরুজ্জীবন”। অনুবাদকের পটুত্বের কথা বলতেই হবে, এ-বিষয়ে তাঁদের কুশলতায় যে কোনো সংশয় নাই সে-কথা প্রগতির অনুবাদে যাঁরা রুশ সাহিত্য ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছেন তাঁরা সকলে কবুল করবেন। কিন্তু তিনখণ্ডে সমাপ্ত সাতশো পৃষ্ঠার বইখানা কেবলমাত্র অনুবাদের গুণে নয়, স্বয়ং তলস্তয়ই আমার মতো ভক্তকে যে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেছেন শেষ অবধি—সেই কথাটা আগেভাগে জানিয়ে রাখছি। সারা বিশ্বের মহাজনদের কাতারে অন্ততঃপক্ষে তাঁর ভক্তকূলের মধ্যে আমিও যে সামিল সে কথাটাও সবিনয়ে বলি; মহাত্মা গান্ধী যেমনটা জানিয়েছেন: “তলস্তয়ের প্রতি আমার সম্পর্ক—একনিষ্ঠ ভক্তের সম্পর্ক। জীবনের অনেক কিছুর জন্যে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।”

“রেসারেকসন” তলস্তয়ের শেষ বয়সে—একটানা দশ বছর ধরে লেখা পূর্ণাঙ্গ রচনা। ইতোমধ্যে ওয়ার এন্ড পিস ও আনা ক্যারেনিনা লিখে কাল জয় করে ফেলেছেন তিনি, তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছে বিশ্বসাহিত্যে সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিকের রাজমুকুট। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বুঝি আরো খানিকটা বাকি ছিল—রেসারেকসন লিখে তা পূর্ণ হলো। সকলেই, নিদেনপক্ষে কষ্ট করে (!) পড়েছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন বইটিতে কী আছে পাতায় পাতায়, পরতে পরতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর রুশীয় সমাজজীবনে এক জমিদার-তনয় প্রিন্স নেখলিউদভ ও “নিম্ন” শ্রেণীভুক্ত এক নারী মাসলোভার অসম প্রেম পরিণতি পায় না। প্রেমিকের প্রগলভতায় ভীরু ও নিরুপায় কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা ও সামাজিকভাবে পরিত্যক্ত হয়ে দেহপসারিণীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়। অপরাধজগতের পাকচক্রে মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত হয়ে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন সাব্যস্ত হয় তার। মাসলোভার বিচারকার্জের অন্যতম জুরি প্রিন্স নেখলিউদভ কাঠগড়ায় মাসলোভাকে দেখে প্রথমে অপরাধবোধ ও পরে তীব্র পাপবোধে আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে তার মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। অনুশোচনায় তাড়িত প্রিন্স মাসলোভাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, নানান মিথ্যা অজুহাতে দণ্ডিত আরো অসংখ্য কয়েদির সঙ্গে পথের কষ্ট-ক্লেশ উপেক্ষা করে মাসলোভার সঙ্গে সুদূর সাইবেরিয়ায় পাড়ি জমায়। মাসলোভার মিথ্যা দণ্ড মওকুবের জন্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে প্রিন্স নেখলিউদভ বিচার ও আইন কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পর্যায় এমনকি খোদ জার সম্রাটের কাছে আবেদনপত্র পেশ করে। নিজের জীবনকেও পাল্টে ফেলে প্রিন্স, নিজ জমিদারীর তাবৎ সম্পত্তি কৃষকদের (প্রজাদের) মধ্যে বিলি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, ত্যাগ করে বিলাস-ব্যসন, চ্যালেঞ্জ করে সমাজের উঁচু তলায় এমনকি নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কও। ওদিকে মাসলোভারও ঘটে পরিবর্তন। “পুনরুজ্জীবন” এই আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের বা বদলে-যাওয়ার গল্প। মোটা দাগে এটুকু ছাড়াও মূল কাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে আরো আরো কাহিনী, আরো অনেক অনেক চরিত্র—তাদের জীবনের পতন কিংবা জাগরণ, সবটা মিলে বহুবর্ণিল এক মানবিক উপাখ্যান।

কিন্তু কেবলমাত্র অসাধারণ কাহিনী-কাঠামোর জন্য নয়, “পুনরুজ্জীবন”-এর জোর বিপ্লব-পূর্ব রুশ সমাজব্যবস্থার যে মঞ্চে এই কাহিনী ও এর কুশীলবরা আবর্তিত হয়েছে সেই সমাজব্যবস্থার স্বরূপ উদঘাটনে। কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারে মিথ্যা সাজায় দণ্ডিত দরিদ্র রুশীয় নারী, পুরুষ ও শিশুর যে অবর্ণনীয় দুর্দশা, তার পশ্চাতে নিয়োজিত খ্রিস্টধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক বাতাবরণে নিরাপদ এক নিষ্ঠুর, পরাক্রান্ত অভিজাত আমলাতন্ত্র—এর প্রায় পুরোটাই তুলে এনেছেন তলস্তয় তাঁর অসাধারণ বর্ণনায়। একই সমান্তরালভাবে বর্ণিত হয়েছে বিশাল রাশিয়ার শোষিত কৃষক সমাজের কায়ক্লেশে বেঁচে থাকার অনুপুঙ্খ আলেখ্য। দেশ-জুড়ে ছড়িয়ে-পড়া নানান ভিন্নমতাবলম্বী বিপ্লবী রাজবন্দীর কাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বিপ্লব-পূর্ব প্রস্তুতির কথাও। কলমের নিপুণ আঁচড়ে মহান শিল্পী যে সম্জাব্যবস্থার বিবরণী তুলে এনেছেন তা যেন যথার্থই অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে বলশেভিক বিপ্লব; বস্তুত এ ছিল এমনি এক সমাজব্যবস্থা যাতে আর সামান্য পরিমাণ ধাক্কা দেওয়া বাকি। প্রলেতারীয় লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি নেখলিউদভের চরিত্রের সঙ্গে স্বয়ং তলস্তয়ের চরিত্রকে একাত্ম করে দেখেছেন। নিজ সমাজব্যবস্থার স্বরূপ উদঘাটনে তলস্তয়ের দেনা স্বীকার করতে গিয়ে বিপ্লবী প্রলেতারীয় লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি লিখেছেন : “প্রিন্স নেখলিউদভ ৬০ বছর ধরে রাশিয়ার বুকে ঘুরে বেড়িয়েছে। ৬০ বছর ধরে ধ্বনিত হয়েছে সুকঠোর ন্যায়ের কণ্ঠস্বর, উদঘাটন করেছে সকলের এবং সবকিছুর স্বরূপ। আমাদের বাদবাকি সমস্ত সাহিত্যসৃষ্টি মিলে রুশ জীবনের যতটা বর্ণনা করেছে প্রায় ততটাই বর্ণিত হয়েছে এতে।”


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


কিন্তু “পুনরুজ্জীবন”-এর অন্বিষ্ট শুধু সমাজব্যবস্থার উত্তরণ নয়; একই সাথে এ হলো ব্যক্তির নৈতিকতার উজ্জীবন, পাপবোধ থেকে এক শুভ্র সমুজ্জ্বল পবিত্র বোধে উত্থান। তলস্তয় উপন্যাসের পরতে পরতে দেখিয়েছেন কী করে তৃপ্ত, ভোগী, সম্রাটের চাটুকার আমলাশ্রেণী, সেনা, পুলিশ বাহিনী ও নতজানু পুরোহিত শ্রেণী নিজেদের কর্তৃত্ব ও ভোগের প্রয়োজনে এই সর্বত্র-জারি বিচার, দণ্ডনীতি ও জমিদারী ব্যবস্থা চালু রেখেছে। প্রাসাদোপম গির্জায় খ্রিস্টধর্মের জাঁকালো আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে ও মহামান্য সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অন্যায্যতা ও পাপ নিয়ত সংঘটিত হয়ে চলেছে; কিন্তু তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ও পাপবোধ তো কোথাও নেই! উপন্যাসে নেখলিউদভ তথা তলস্তয়ের মূল জিজ্ঞাসা সেখানেই। তাঁর মতে মানুষ এই পাপাচারের উর্ধ্বে উঠতে না পারলে তার পুনরুত্থান সম্ভব নয়। ব্যাক্তির নৈতিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধি না ঘটলে সামাজিক মুক্তির স্বপ্নও অলীক, অবান্তর। অবশেষে নিজেকে সব পাপাচার থেকে মুক্ত করে, খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে নেখলিউদভ নিজেকে মুক্ত করার উপায় খুঁজে পায়।

“খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে নেখলিউদভের নিজেকে মুক্ত করার উপায় খুঁজে পাওয়ার” জন্য তলস্তয় সুদীর্ঘ উপন্যাসে মাত্র একটি ক্ষুদ্র অধ্যায় ব্যয় করেছেন—বইটির শেষ অধ্যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে বইটির শেষ অধ্যায় না থাকলেও বইটির যেন খুব ক্ষতি হতো না। লেখকও কি জানতেন সে-কথা? কেন না, মূল কাহিনী ও চরিত্রগুলির স্বাভাবিক পরিণতি লেখক আগের অধ্যায়েই যেন শেষ করেছেন। বইটি পাঠের পর প্যারিস রিভিউ, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, তলস্তয় রিসার্চ সেন্টারসহ নামজাদা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা ঘেঁটে দেখেছি—আরো অনেকে বইটির শেষ অধ্যায়টি কবুল করেননি; এ-ব্যাপারে আমার অভিমতের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খেয়েছে দি ইন্ডিপেডেন্টের আলোচনা ।

২.
“পুনরুজ্জীবন” পড়তে পড়তে আমাকে বারবার খুঁচিয়ে মেরেছে যে-প্রশ্ন তা হলো, প্রায় একই বিষয় ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আমাদের এখানে কেন এমন সাহিত্য রচিত হলো না! কেন আজও রচিত হলো না এই যে আমাদের বিশাল গ্রামীণ সমাজ, মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসে ভীরু কৃষক শ্রেণী, [স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরও] তাদের ওপর চেপে-বসা শ্রেণীশোষণ, মোল্লাতন্ত্র আর তাদের দোসর উঁচুতলার সমাজ যারা কিনা একই ধর্মীয় বিশ্বাসে সামিল, কিন্তু নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পাপবোধে এতটুকু কাহিল নয়—এইসব নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস? এই রকম একটা প্রশ্ন আত্মজিজ্ঞাসার মতো আমাকে নিয়ত খুঁচিয়ে মারে! “পুনরুজ্জীবন”-এর মতো এরকম একটা সহজ ও সাবলীল আলেখ্য আমাদের ভাষায়ও রচিত ও বহুলপঠিত হলে আমরা আপন দর্পণে দেখতে পেতাম নিজেদের চেহারা অর্থাৎ কে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আর তাহলে নিজেদের সমাজ সংস্কারের কাজটাও ঠিক কিভাবে শুরু হতে পারে তার একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত।

আবার পাশাপাশি এটুকু ভেবেও হতাশা বোধ করি—তাৎক্ষণিকতার এই যুগে এত বড় উপন্যাস লেখার দরকারই বা কী আর তার পাঠকই বা কোথায়—সমাজ সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে মিডিয়া তো আসর সরগরম রাখছেই। সত্যি বলতে কী, আমরা তো আর তলস্তয়ের যুগে পড়ে নেই! আমি না হয় প্রথম যৌবনের খোঁয়াড়িতে আটকে আছি বলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গলাধকরণ করছি: রেসারেকশনে তলস্তয় পাতার পর পাতা ব্যয় করেছেন শুধু নেখলিউদভের মনোবিশ্লেষণে, প্রচলিত নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে তার সংঘাত ও সংশ্লেষের বর্ণনায়। প্রতিটি ঘটনা, দৃশ্য ও চরিত্রের জন্য লেখক ব্যয় করেছেন গভীর অভিনিবেশ, শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়েছেন, প্রতিটি চরিত্রকে দিয়েছেন স্বতন্ত্র মর্যাদা। খুঁটিনাটি বর্ননায় তা এমনই জীবন্ত ও বাস্তবানুগ যে একলহমায় তারা এক শতাব্দী পাড়ি দিয়ে, তাদের খিটিমিটি নামের বানান উপেক্ষা করেও কী দিব্যি আমার পড়ার টেবিলের চারিধারে সমবেত হয়েছে আর ঝুঁকে পড়েছে আমার দিকে : “আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি...!”

কিন্তু কারই বা এমন দায় পড়েছে আজকাল অমন ভক্তির—সে-কথার অকাট্য প্রমাণও যে আছে একটা! কিছুকাল আগে এক পাঠিকা বান্ধবীকে পড়ার জন্য ধার দিয়েছিলাম বইটি (অখণ্ড সংস্করণ)। তিনি ক’দিন নেড়েচেড়ে ফেরত দিতে গিয়ে লঘুস্বরে বলছিলেন : আচ্ছা, বইটির একটি সংক্ষিপ্ত রূপও তো লেখক লিখে যেতে পারতেন। এতে সময় যেমন বাঁচত, আমরাও মহান লেখকের সান্নিধ্য সুখ পেতাম!

এই রকম অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমার আক্ষেপ থেকেই যায় : আমাদের সাহিত্যে “রেসারেকসন” বা “পুনরুজ্জীবন”-এর মতো একটি মহাগ্রন্থের অভাবে নিজেদের পাপবোধ থেকে আমরা কত দূরেই না আছি!

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;