মেয়ে, মদ ও কাগজ ফুল



তানিয়া চক্রবর্তী
অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

অলঙ্করণ: কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

কবিতা কী যে নেশাদ্রব্য তার আর বিবরণে, ভনিতায় কাজ নেই। কবিতা খাদ্যদ্রব্যে মিশে যাওয়া অমৃত বা বিষের মতো কিছু! বিষ বলাই ভালো বিশেষত স্লো পয়জন পদ্ধতি যদি এর প্রকৃত গাঢ় রূপের সন্ধান পাওয়া যায় তবে—কারণ এর নির্মাণ জীবন নিয়ে নিয়ে তৈরি, হয়ে সম্ভবত জীবন খেয়ে খেয়ে। আর বলে না যা কিছুই খুব তীব্র তা সন্দেহের ফলে অমৃত না ভেবে তাকে সুস্বাদু বিষ বলাই ভালো। মনের ঘূর্ণিতে খুব একটা বই নিয়ে আলোচনা করিনি বা এমনিতেও সেটা করতে নিজেকে উপযোগী বলে মনেও হয় না। কারণ পড়া, বোঝা আর প্রকাশিত লেখা এই তিনটে ধাপের মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকে—তাকে কায়দায় আনা মুশকিল! নিজের অনুভূতি ও মুহূর্তের যাপন দিয়ে একটি জিনিস বুঝেছি কোনো কবির কবিতা ভালো লাগলে সেই কবিতাকে একটি সিন্দুকে রেখে দেওয়া ভালো। সেই সৃষ্টিকর্তার কাছে পাঠকের আরোই যাওয়া উচিত নয় কারণ স্রষ্টাকে সাধারণ নৈকট্য নিয়ে ধরলে তার শিল্প বা সাহিত্যের প্রতি বিনাহেতুতেই আকর্ষণ লঘু হয়ে যায়—ফলে ভালো লাগাকে সংরক্ষণ করাও একটি দায়িত্ব উপভোগের সঙ্গে।

এই মুহূর্তে কিছু কবিতা নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনা নয় শুধু ভাগ করে নেওয়া। কবির সঙ্গে আলাপ নেই অবশ্য আলাপের প্রয়োজনও নেই ফলে একেবারেই স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি থেকে এই লেখা লিখতে আগ্রহী হলাম। যে কটি বই থেকে আমি কবিতা নিয়ে আলোচনা করব তার নাম মদ, কাগজ ফুল, তিরিশটি প্রেমের কবিতা(ভাষালিপি প্রকাশনী), মেয়ে (শুধু বিঘে দুই প্রকাশনী)।

“স্তন থেকে চোখ তুলে তাকাই চোখের দিকে। দেখি, জল টলমল করে। নৌকা, ভাসাব কিনা ভাবি। তারপর জানালার বাইরে তাকাই। একবার দেখি, বারবার দেখি, মনের গহনে পৌঁছোনোর সুগম নিশ্চিত কোনো পথ আছে নাকি? পাহাড়ের গা বেয়ে, নদীর দু পাড় দিয়ে? নদীর প্রসঙ্গে এসে ফের মনে পড়ে যায় দুটি চোখ। স্তন থেকে কিছুটা উপরে। দেখি জল টলমল করে” (দর্শন, তিরিশটি প্রেমের কবিতা)

এই কবিতা নিয়ে কী বলা যায়—একটি অন্যরকম তীব্র গভীর কবিতা—শুধুই কি তাই? তবে কি একজন নারী লেখক বলে স্তনের চেয়ে চোখের উপমা পেয়েছি বলে অন্যরকম মনে হলো—না, কারণ দুটোর মধ্যে কোনোটাই কোনো নারী পুরুষ একেবারে বাদ দিয়ে চলবে না। তবে চোখ কি খুব সাধু, স্তন কি খুব যৌন তাও নয়—স্তন তীব্র বাৎসল্যের হতে পারে, চোখ তীব্র যৌনতার হতে পারে। বিষয় হলো পথ, বিষয় হলো মুখ—কবিতাটির শুরু ও শেষ স্তন ও চোখের সঙ্গে এক প্রহেলিকা করে খেলেছে। এই চোখ এই যে সবচেয়ে হৃদয়বিদারী অঙ্গ তাকে ছুঁয়ে কবিতাটি অতলের হয়ে গেছে যা পড়ার জন্য এক নির্মোহ মায়া আহ্বান করে চলেছে। এখানেই এই দর্শন নামক কবিতাটি অমৃতরূপী বিষ এবং তীব্র।

“তাঁত বোনে। হয়তো তোমারই গায়ে উঠবে ওই কাপড়ের ডুরে। তুমি কোথায় কত দূরে কোন নদীর ধারের গ্রামে তোমার বাড়ি, জানে না ওই মগ্নতম তাঁতি। আর তুমি, কিশোরীনি, জানো নাতো ঐ যুবাটির নাম। তোমার জন্যই শাড়ি বুনেছে সে, তার ব্যস্ততম হাতে। শুক্র অথবা বুধবারের হাট থেকে কিনে নিয়ে যাবে তোমার বাবা। লণ্ঠনের আলোয় দেখা হবে তোমাদের” (তিরিশটি প্রেমের কবিতা)

কবিতাটির নাম “শাড়ি”, পড়ে দেখুন কবিতাটি একটি জীবনের খুব গূঢ় টানাপোড়েনে পূর্ণ নয় কিন্তু কবিতাটি চূড়ান্ত আলোকিত যখন এই দৃশ্যকল্প ভেসে উঠবে যে এক তাঁতির হাত, দেহ, খটাখট শব্দ একটি যাপনে পূর্ণ নির্মাণে ভরা শাড়ি মেয়েটি লণ্ঠনের আলোয় দেখছে—এই দৃশ্যের অন্তর্নিহিত ভাবের মূল্য এক বুক রক্তের আত্মায় ভরা নয় কি? ঐ “লণ্ঠনের আলোয় দেখা হবে তোমাদের”—কবিতাটির সব রস এনে এই হাঁড়িতে ভরে দিল। একটি শাড়ি একটি জীবন ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেল কোন অনন্তে...

“তবু আমি ফুল। তবু আমি ফুল।/ রাতের আলকাতরায় ঢেকে রেখেছি নিজেকে।/ যেহেতু সৌরভ সুবাস কিছু ছড়াতে পারি না।/ আকর্ষণের কোনো প্রভাই আমাকে দেননি ভগবান।/ তবু আমি ফুল—এটাই সান্ত্বনা।/ পরজন্মে সত্যি কোরো—জানাই প্রার্থনা”

“তুমি আমার গন্ধ পেলে না।/ ঝড়ের মুখে আমার নাচ/ দেখলে ভুলতে না/ অপরিচয়ের ফলে তৈরি/ তোমার মনের বেদনা—/ আমার মর্মে এসে টুকি দেয় যদি/ তোমাকে দেখাবই, দেখাবই/ কুসুমের নদী”...

টুকরো টুকরো ১৪টি কবিতা নিয়ে এই উক্ত কবিতাদের সহযোগিতায় “কাগজ ফুল” বইটি প্রকাশিত হয়েছে ভাষালিপি প্রকাশনী থেকে। কাগজফুলকে কেমন দেখি আমরা? জানি নকল তবু কেন যেন ভালোবাসি, আসল কাগজও ফুলের মতোই সরল ফলে বিকল্প রূপেও সে নিরাময়ের প্রেম যেন। এই উক্ত কবিতাদুটি দেখুন প্রথমটি অভিমানের কবিতা—এ অভিমানে অভিযোগ নেই শুধু নিভৃতের পেলব প্রার্থনা আছে। সেই প্রার্থনা জুড়ে এক অসহায়তা আছে তবু তা অপরাজেয় কিছুতেই ন্যুব্জ নয়—সে ফুলেল মর্মে অসহায় হয়েও সেই জন্ম চেয়েছে আবার—যেন আঁধারের সঙ্গে প্রেম, যেন আঁধারের প্রতি, এ জীবনের প্রতি মায়া। দ্বিতীয় কবিতাটি একটি লুকাচুরি খেলা—এক প্রেমিকের অঙ্গীকার, তার প্রত্যয় অথচ আগ্রাসী নয় যেন খেলাচ্ছলে অনুযোগ অথচ শব্দের আর মুহূর্তের এমন সহবাস যে একবার পড়লে প্রথম দুটি লাইনে মুখের শীর্ষে এসে রাজত্ব করে।

“টান শুধু টান অনুভব করে গেছি আমি/ দূর পাহাড়ের মদ আমাকে ডেকেছে বারবার”—এভাবে কবিতাটি শুরু হয়ে শেষ হয়েছে এভাবে—“এত কাছে কখনো উঠে আসোনি যে/ তোমার ঠোঁটে অবিরাম চুমু খেতে পারি/ মায়াময় কত সন্ধ্যা জোনাকি-নিবিড় কত কত রাত/ মদহীন প্রেমহীন কেটেছে আমার।”

যদিও শুরু ও শেষ দিয়ে মধ্যযামের কিছুই বোঝা যায় না ফলে আগ্রহী পাঠককে কবিতাটি পড়তে হবে। কবিতাটির নাম “পাহাড়ি ঝিঁঝিঁর ডাক”। কখনো যদি গভীর রাতে একা বিছানায় শুয়ে ঝিঁঝিঁর ডাক শোনেন বুঝবেন এর মতো ঘন তীব্র জীব বুঝি আর হয় না! যখন ডাক গভীর থেকে গভীরতর হয় তখন একই সঙ্গে হর্ষ, বিষাদ, রোমাঞ্চ এক তীব্র ঝিলমিলের মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়। এই কবিতাটিও সেইরকম শুরুতে স্বপ্ন, সম্ভোগ শেষে উদাস এই যে কাউন্টার এখানেই কবিতাটি নামে, দেহে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বইয়ের এলগিন রোড, মৃত্যুর পর, আক্ষেপ, কথা, আমার মদ, পুরনো, শুভ জন্মদিন—প্রত্যেকটি তীব্র যাকে বলে ডার্ক , সান্দ্রতায় ভরপুর এবং এর গায়ের গহনা নিরীক্ষণের চেয়ে এর ভাবের কাছে এমনভাবে টেনে নেয় যে পার্থিবরা অসাড় হয়ে আসে।

“কালো দরজা খুলে তুমি বাইরে এসে দাঁড়াতেই, আমি বুঝে গেলাম শেষের সেদিনের আর দেরি নেই, খুলি ফাটিয়ে ঘিলুর রস খাবেই তারিয়ে তারিয়ে, তোমার চারহাত যখন সাঁড়াশির মতো ধরল জড়িয়ে, আমার নশ্বর হাড়সকল ভেঙে গেল তোমার বুকের চাপে, পুরুষাঙ্গ কেটে তুই ভরে নিলি অতিকায় যোনিটির খাপে”

এই কবিতাটির নাম কালী, এছাড়াও আছে লক্ষ্মী, দুর্গা, সরস্বতী এবং বইয়ের শেষে “ডানকুনি-গড়িয়া” বলে একটি কবিতায় একদম ভিন্ন থেকে ভিন্নতরভাবে নারীর যত যত রূপ কবির জীবনে, দর্শনে, ভাবকল্পে এসেছে তাকে বিভিন্ন মহিমায় পাঠক পাবেন এই “মেয়ে” কাব্যগ্রন্ত্রে। কিন্তু এটা ঠিক ঐ নারী তোমার একই অঙ্গে কত রূপের মতো নাটকীয় নয় এবং তা কত মুচড়ে দেওয়া অনুভূতির তা পূর্বোক্ত কালী কবিতাটি পড়লেই বোঝা যায়। যেখানে তুমি থেকে তুই আর জাপটানো সঙ্গম থেকে এক গভীর গ্রাসে পৌঁছে গেল কবিতাটি—একে বলে উজ্জ্বল সমর্পণ!

এবারে যেটা বলার, প্রকৃত ভালো লেগে যাওয়া কবিতাকে নিয়ে কিছু বলা নিতান্ত কঠিন। যেমন লেখা একটু দূরত্বে থাকলে পাঠযোগ্য হয় সেরকম একটু কম ভালো লাগলে ভালো আলোচনা করা যায়। কারণ ভালো লাগা মানে ইন্দ্রিয়ের বশীকরণ হয়ে গেছে এর পর একে নিয়ে বলা যায় না। বইগুলো পড়ে একরকম আচ্ছন্ন অনুভূতি এসেছিল তাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই লেখা রইল। পরিশেষে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলি যাঁর কবিতা নিয়ে আলোচনা হলো সেই কবির নাম বিপ্লব চৌধুরী।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;