আমেরিকান চলচ্চিত্রে বর্ণ-বিদ্বেষ



গ্রেগ গ্যারেট ।। অনুবাদ: মামুনুর রশিদ তানিম
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শার্লটসভিলে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মিছিলের ঠিক বছর এক পরে, ২০১৮ সালের আগস্টের ১০ তারিখে, স্পাইক লি’র সিনেমা ‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়েছিল আমেরিকায়। সিনেমাটির অন্তিম পরিণতিমূলক কিছু দৃশ্যে অনুনাদ পাওয়া যায় ডি. ডব্লিউ. গ্রিফিথের সম্পাদনা স্টাইলের, যিনি কোনো দৃশ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে গল্পের উপাদানসমূহের মধ্যে ক্রস-কাটিং কৌশলের প্রবর্তক ছিলেন। একই স্টাইলে লি-ও আগে-পিছে করে দুটি দৃশ্যের মাঝে সমন্বয় ঘটান যেখানে স্বয়ং গ্রিফিথেরই ১৯১৫ সালের সিনেমা ‘দ্য বার্থ অফ আ নেশন’ একটি মুখ্য ভূমিকা রাখে।

একটি দৃশ্যে দেখা যায়; গ্র্যান্ড উইজার্ড ডেভিড ডিউক (টোফার গ্রেইস) কর্তৃক আয়োজিত কু ক্লাক্স ক্লানের ব্রত অনুষ্ঠান সম্পূর্ণতা পাচ্ছে, আধুনিক ক্লান সৃষ্টিতে মদদ দান করা গ্রিফিথের ওই সিনেমার, হৈ-হুল্লোড়ে পূর্ণ একটি প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। আরেকটি দৃশ্যে দেখা যায়, জেরোমি টার্নার (হ্যারি বেলাফন্তে) ১৯১৬ সালে সংঘটিত, তার বন্ধু জেসি ওয়াশিংটনের আইনবহির্ভূত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করছেন ঘরভর্তি আফ্রিকান-আমেরিকান শিক্ষার্থীদের কাছে। টেক্সাসের ওয়াকো শহরে, যেখানে আমি তিন দশক ধরে শিক্ষাদান করেছি, সেই শহরে ১৬ হাজার মানুষের সামনে জেসি ওয়াশিংটনকে নপুংসক করে, পুড়িয়ে, যন্ত্রণাদায়ক এক মৃত্যু দেওয়া হয়েছিল। জেরোমি ‘দ্য বার্থ অফ আ নেশন’ চলচ্চিত্রটিকেই এমন ভয়ঙ্কর, প্রকাশ্য সহিংসতার কারণ হিসেবে উদ্ধৃত করেন। এবং প্রকৃতপক্ষে তেমনটিই ছিল।

এই দুটি দৃশ্যই প্রমাণ করে বর্ণ, সহিংসতা এবং পরিচিতির ধারণা রূপায়ণে বা নববলে বলীয়ান করতে একটি চলচ্চিত্র কতখানি শক্তিধর হয়ে উঠতে পারে। জেমস বল্ডউইন যেমনটি বলেন, “ক্যামেরার ওই ভাষা, আমাদের স্বপ্নের ভাষা।” এবং অবশ্যই, দুঃস্বপ্নেরও ভাষা।

দ্য বার্থ অফ আ নেশন-এর পোস্টার

কিন্তু লি-র সিনেমায় আমরা এও দেখি; কিভাবে বাঁধাধরা নিয়মের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র আমাদের ধাক্কা দিতে পারে, শক্তির মুখে সত্য বলতে পারে, এবং ঘৃণার দিকে নয় বরং বোধশক্তির সম্মুখে দর্শককে ধাবিত করতে পারে। যদিও এর গল্প বিন্যস্ত হয়েছে ১৯৭০-এ, কিন্তু শেষ দৃশ্যে ব্ল্যাকক্লান্সম্যান তার সহিংসতা এবং বর্ণবাদের সাথে আমেরিকার দূরবর্তী অতীতের সংযুক্ততা এবং তার (চলচ্চিত্রের) বর্তমানের সাথে আমাদের বর্তমানের সংযুক্ততা স্থাপন করে (যেমনটি সমালোচক অলিভার জোনস লিখেছেন, “হ্যাঁ, এটি একটি পিরিয়ড সিনেমা; কিন্তু বিষয়টি হলো সেই সময় এখন, তখন, সামনে এবং সবসময়ই থাকবে।”)। লি আমাদের এও স্মরণ করিয়ে দেন, সিনেমা ভয়ঙ্কর বার্তা যেমন বহন করতে পারে, তেমনি আশার আলোও দেখাতে পারে।

চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য মিডিয়া যে, ধর্মান্ধতা এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তা আমাদের পরিষ্কার চোখেই দৃষ্টিগোচর হয়। আত্মা বিনাশকারী পুরাকথাগুলো চাইলেই আমরা চিহ্নিত এবং প্রত্যাখ্যান করতে পারি। খুঁজে নিতে পারি আত্মার শুদ্ধি ঘটানো পুরাকথাগুলোকে। বর্ণবিদ্বেষী, বাঁধাধরা বা অতি মামুলি উপাদানগুলো চিনেই আমরা একটি সিনেমা দেখতে পারি; এবং ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েই আমরা এমন সকল গল্প খুঁজতে পারি, যেগুলো প্রতিটি চরিত্রের বৈচিত্রতা এবং মানবিকতাকে আলিঙ্গন করে।

ব্ল্যাকক্লান্সম্যান সিনেমায় যেমন, তেমন আমাদের ইতিহাসেও, বর্ণ এবং মিডিয়া ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। গত শতক ধরেই বর্ণবিদ্বেষীরা এই সিনেমা মাধ্যমটিকে ব্যবহার করেছে গৎবাঁধা বিষয়গুলোকে স্থায়ীভাবে জিঁইয়ে রাখতে এবং পক্ষপাতদুষ্ট ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে। তারা শ্বেতাঙ্গ বাস্তবতাকেই একমাত্র বাস্তবতা বলে চিত্রিত করেছে। তবে দ্বিতীয় একটি পর্যায় শুরু হয়, যখন চেতনাসম্পন্ন কিছু শ্বেতাঙ্গ চলচ্চিত্রকারেরা বর্ণবিদ্বেষের প্রবৃত্তিকে চিহ্নিত করে এবং তাদের বলা গল্পগুলোতে পরিবর্তনের উপায় অন্বেষণ করে। বাদবাকি শ্বেতাঙ্গ চলচ্চিত্রকারেরা, কালোদের জীবনকে আরো অর্থবহ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক উপায়ে চিত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে তৃতীয় একটি পর্যায়ের সূচনা করে।

ব্ল্যাকক্লান্সম্যান-এর পোস্টার

পরবর্তীকালে, চতুর্থ পর্যায়ে কালোরা নিজেরাই বলতে শুরু করে নিজেদের গল্প এবং রূপায়ণ করতে থাকে নিজেদের জীবনধারা। পঞ্চম ধাপে, হলিউডের চলচ্চিত্রগুলো হালকাভাবে বহুসংস্কৃতির একটি ধারণা প্রদর্শন করে যেখানে বর্ণ সম্বন্ধীয় ভিন্নতাকে অনিবার্য বলে ধরে নেওয়া হয়। অবশেষে আমরা পৌঁছাই ষষ্ঠ ধাপে, যেখানে, ব্ল্যাকক্লান্সম্যানের মতোই, মূলধারার দর্শকদের জন্য কালোরঙের লোকদের দ্বারা নির্মিত সিনেমাগুলো অতীতের ক্ষতিকর সব পুরাকথাকে উল্টিয়ে দিচ্ছে, আমেরিকান সংস্কৃতির বিপদজনক গল্পগুলোকে অস্বীকার করছে। এমনকি হলিউডের গল্পবয়ানের ধরন এবং কৌশলগুলোকে, সেগুলোর ওপরই বাঁকিয়ে দিচ্ছে যাতে করে ওগুলো সচেতনতা এবং সমন্বয়সাধনের অস্ত্র হিসেবে প্রবর্তিত হয়।

একজন মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ হিসেবে “পুনরুজ্জীবিত” শব্দটির বিশ্বাসযোগ্য ব্যবহার করতে পারাটা বেশ কষ্টসাধ্যই হবে আমার পক্ষে, তথাপি আমাদের বর্তমান সময় এবং জিজ্ঞাসাবাদের যে দায়িত্বভার অচিরেই আমরা নিতে যাচ্ছি তার সংযুক্ততা বোঝার জন্য এটি একটি চূড়ান্ত ধারণা। স্পাইক লি এটি জানতেন। এরিকা বাদু, ট্রেভন মার্টিন এবং কালো জীবন মূল্যবান বাণীর পূর্বেই তাঁর সিনেমাগুলো আমাদের ডাকছিল ঘুম ভেঙে উঠতে। এই ডাকই ‘স্কুল ডেইজ’ (১৯৮৮)-এর শেষ লাইন এবং ‘ডু দ্য রাইট থিং’ (১৯৮৯)-এর প্রথম লাইন। গোটা ব্ল্যাকক্লান্সম্যান জুড়েই এই ডাক প্রতিধ্বনিত হয়।

শুধু আফ্রিকান আমেরিকানগণ নন, সকল আমেরিকানকেই সজাগ হতে বলা হয়েছিল, অভিনিবেশ করতে বলা হয়েছিল, নতুন আতসকাচের মাঝ দিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। আমরা কী দেখতে পছন্দ করি অথবা কী দেখতে আমাদের প্রণোদিত করা হয় তার বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই কী চলছে তা দেখতে বলা হয়েছিল। আরেকজন মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ, ডেভিড ব্রুকস এটিকে নিরূপণ করেন এভাবে: “জেগে ওঠা মানে, আমূলগতভাবে সচেতন হওয়া এবং স্বাভাবিকভাবেই ভীতু হওয়া। জেগে ওঠা মানে, ক্ষমতার গঠনপ্রণালীতে যে পচন পরিব্যাপ্ত হচ্ছে তা নিয়ে অবগত থাকা।” তবে সৌভাগ্যক্রমে, একশ বছরের হলিউড ফিল্মমেকিংয়ের গল্প এবং ছবিগুলোতে বিদ্বেষ এবং ধর্মান্ধতা কতখানি, সে-তদন্ত চালালে আমরা যা খুঁজে পাব, তা শুধুমাত্র পচন নয় বরং এরচেয়ে বেশি কিছু—অগ্রবর্তী হওয়ার একটি পথ।

ফেব্রুয়ারি ২০১৮-তে, ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে ‘গেট আউট’ সিনেমার একটি প্রদর্শনীর পর মঞ্চে বর্ণ, সিনেমা এবং আরোগ্যলাভ বিষয়ক আলাপচারিতার অংশ ছিলাম আমি এবং ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের লেখক ভান নিউকার্ক। সিনেমাটি নিয়ে তার ভূমিকায় ভান কথা বলেন, ক্যাথেড্রালের পালপিটে দাঁড়িয়ে ‘মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রে’র জীবনের শেষ রবিবারের হিতোপদেশ নিয়ে:

“একদিক থেকে এটি ছিল একটি মানসম্পন্ন পারমার্থিক পরীক্ষা। তিনি বাইবেলের একটি শাস্ত্র দিয়েই আরম্ভ করেছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি বলতে শুরু করেছিলেন রিপ ভ্যান উইংকলের গল্প, যেই লোক টানা ২০ বছর ঘুমানোর পর জেগে ওঠে। সে লোক ঘুমিয়ে পড়েছিল যখন আমেরিকা শাসিত হতো একজন ভাঁড় কর্তৃক এবং জেগে উঠেছিল বিপ্লবের পরবর্তীকালে।

কিং জুনিয়র, মহৎ আন্দোলনের সময়ে কী করে সজাগ থাকতে হয় সে-সম্বন্ধে মানুষকে নির্দেশনা দিতে গিয়ে একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ এই উদাহারণটি ব্যবহার করেছিলেন। কিভাবে জাগ্রত থাকতে হবে, তা নিয়ে তিনি কথা বলেছিলেন বলে অনেকেই অভিমত প্রদান করেন। কিন্তু তুমি যদি সজাগ হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকো, তবে কিভাবে তুমি বর্ণ সম্পর্কে সচেতনতার জন্ম দেবে নিজের মাঝে এবং কিভাবে সেই ধাপে পৌঁছাবে যেখানে তুমি তোমার জীবন, বর্ণ এবং অ-বিদ্বেষী হয়ে ওঠার সাথে সংকটপূর্ণভাবেই নিযুক্ত হবে তা নিয়েও কথা বলেছিলেন তিনি।”

১৯১৫ হতে বর্তমানের আমেরিকান সিনেমার বর্ণবিদ্বেষের প্রকৃতিতে অনুসন্ধান চালানো দ্বারা, মঙ্গলকরকে আলিঙ্গন এবং ক্ষতিকর অতিকথাকে অনাবৃত এবং প্রত্যাখ্যান দ্বারা, এই চলচ্চিত্রগুলো কিভাবে বর্ণ এবং কুসংস্কারের প্রয়োজনীয় আলাপের দিকে ধাবিত করতে পারে (এবং করেছে) তা উপলব্ধি দ্বারা, এবং এই গোটা প্রক্রিয়ায় অ-বর্ণবিদ্বেষী হয়ে ওঠার চেষ্টা দ্বারা আমরা আমাদের অতীতের ‘বার্থ অফ আ নেশন’দের এবং বর্তমানের শার্লটসভিলের নিও-নাৎসিদের আত্মশুদ্ধির প্রস্তাব জানাতে পারি।

ডক্টর. কিংয়ের লক্ষ্য ছিল এমন একটি আমেরিকা, এমন একটি পৃথিবী, যেথায় মানুষকে গায়ের রঙ দ্বারা নয় বরং চরিত্রের বিষয়বস্তু দ্বারা পরিমাপ করা হবে—সে-লক্ষ্য অধরাই রয়ে গেল। তথাপি এটি এমন একটি লক্ষ্য যা সর্বোচ্চ অনুসন্ধানের দাবি রাখে, এবং অদ্ভুতভাবেই সত্য, আমাদের প্রায়শই বর্ণবাদী এই সাহিত্য এবং সংস্কৃতি হয়তোবা উন্নতির অভিমুখে এই যাত্রার একটি অংশ হতে পারে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;