থুতুসমগ্র



সরওয়ার মোরশেদ
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্ভবত ২০০৬ সালের ঘটনা। পূর্ব লন্ডনের কোনো এক জায়গা থেকে লুইশামের দিকে যাওয়ার জন্য বাস স্টপের দিকে যাচ্ছিলাম। টের পেলাম আচম্বিতে এক দলা শ্লেষা-মিসাইল আমার হেড অফিসের টার্ফের ওপর এসে অবতরণ করেছে। প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্বতঃস্ফুর্ততায় পিছন ফিরে দেখলাম, এক শ্বেতকায় লোক জগৎ সংসারকে থোড়াই কেয়ার করে আপনমনে আমার পিছন পিছন হাঁটছে। চলন্ত অবস্থাতেই শুভ্র বর্ণের কিন্তু কৃষ্ণ মনের দ্বিপদীর সুরত পড়ে বুঝলাম, এ বান্দা ‘সরি’ বলার চিজ নয়। ক্রুর চেহারায় তার লিখিত আছে কদর্য এশীয়র প্রতি তামাম জাহানের সমস্ত তাচ্ছিল্য বা ঘৃণা। জন্তুটার রক্তহিম করা চাহনি-তাড়িত হয়ে জোর কদমে হাঁটতে শুরু করলাম। শরীরগুলানো অনুভূতি আর বিবমিষাভাব নিয়ে হাঁটার মধ্যেই একরাশ স্বস্তির হিমেল হাওয়া হয়ে সামনে হাজির হলো লন্ডনের আইকনিক ডাবল ডেকার রেড বাস। ‘মাবুদ তুমি সহায়’ জাতীয় বিশ্বাস-জারিত আনন্দ নিয়ে নিজেকে শকটোদরে নিক্ষেপ করে ককেশীয়র ক্রোধ-সুনামি হতে রক্ষা পেলাম।

২.
মুখের তূন থেকে লালা-তীর নিক্ষেপ করে ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ করার এই Paralinguistic habit উত্তর-দক্ষিণ, পুব-পশ্চিম, ঈশান-নৈঋত সর্বত্র বর্তমান। করোনার এই দহনকালে শ্লেষা-শর নিক্ষেপের বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসেছে। যেমন, প্যালেস্টাইনিরা জানাচ্ছে, হালে ইজরাইলিরা তাদের ঘরের দরজার নব বা গাড়ির দরজায় পরিকল্পিতভাবে থুতু লেপন করে আরবদেরকে করোনায় কুপোকাত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আহা! কী ভয়ঙ্কর চরিত্র-বৈপরীত্য! যে জাতি দেখা সাক্ষাতে একে অপরকে Shalom (শান্তি) বলে কথাবার্তা শুরু করে, তাদের দ্বারা অশান্তির এমন সযত্ন চাষবাস সত্যিই পীড়াদায়ক। ইসহাক-সূতদের প্যালেস্টাইনের জলপাই বাগানে এই ঘৃণা-বিষবৃক্ষের সযত্ন পরিচর্যা সম্পর্কে নবনীতা দেবসেন তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে কিছুটা আলোকপাত করেছেন। নবনীতা তাঁর ‘ডেমাস্কাস গেট’ শীর্ষক রচনায় জেরুজালেমের জনৈক আরবের বাড়িতে কফি খেতে গিয়ে দেখেছেন আরবদের বাড়ির দেয়ালে আর দরজায় উৎকীর্ণ ঘৃণা-শব্দ (Hate words)। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা রাতের বেলা সদলবলে এসে আরব পাড়ায় এই গ্রাফিতি-মাস্তানি করে বেড়ায়। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে করোনা ছড়ানোর মহৎ মিশন! অন্যদিকে, ভারতে উগ্রবাদী শিবির অভিযোগ করেছে, মুসলমানরা ফলমূল, দুধ ইত্যাদিতে থুতু ছিটিয়ে বিক্রি করে হিন্দু নির্মূল অভিযানে নেমেছে! ইসলামোফোবিক গোষ্ঠী একে ‘করোনা জিহাদ’ আখ্যায়িত করে টুইটারে বেশ শোরগোল পাকিয়েছে। নিজামুদ্দীনের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই অভিযোগ ভারতের সাধারণ্যেও কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

৩.
রাজনৈতিক বলয়ের বাইরেও থুতুর যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে, বিশেষ করে ফুটবলে, লালার রয়েছে দর্শনীয় দাপট। শাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানের উন্মাতাল ভিডিওতে আমরা ক্রোয়েশীয় এক জাঁদরেল খেলোয়াড়কে মাঠে থুতু ফেলতে দেখি। বাস্তবেও ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের থুতু ফেলা একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার। খেলাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই মহাতারকা মেসি আর রোনালদোও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে থুতু মারার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। আর্সেনালের প্যাট্রিক ভিয়ারাতো ওয়েস্টহ্যামের নেইল রুডককে থুতুসিক্ত করে প্রায় ৬০০০০ ডলার জরিমানা গুনেছিলেন। তবে ফুটবলে সবচেয়ে উর্বর থুতু উৎপাদকের স্বীকৃতি আর রেকর্ডটা এখনো সাবেক লিভারপুল ফরোয়ার্ড, সেনেগালের খেলোয়াড় এল হাজি দিউফের দখলে। আর ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাময় থুতু ছিটানোর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানি বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে। হাই প্রোফাইল এই খেলায় নেদারল্যান্ডসের ফ্রান্ক রাইকার্ড জার্মানির রুডি ভয়েলারকে থুতু মেরে শাস্তি পেয়েছিলেন। পদগোল্লা ক্রীড়ার বাইরে, বেসবলেও আমরা খেলোয়াড়দের থুতু-তাড়িত হতে দেখি। আবার, তুলনামূলকভাবে অভিজাত বা ধ্রুপদী-ঘরানার খেলা, যেমন গলফ এবং টেনিসে থুতুবাজির কোনস্থান সচরাচর দৃষ্ট হয় না। তাহলে কিছু খেলায়, বিশেষ করে, গতিময়, শারীরিক পরিশ্রম প্রধান খেলায় লালা-লীলার শানে নুজুল কী? খেলার মাঠে থুতুকর্ম কি কেবলই রুচি, সামাজিক মর্যাদা বা শ্রেণীর প্রশ্ন? গবেষকরা বলছেন, যেসব খেলায় প্রচুর দৌড়াদৌড়ির ব্যাপার রয়েছে, সেখানে কোনো খেলোয়াড় হঠাৎ পড়ে গেলে বা ট্যাকলের শিকার হলে শারীরবৃত্তীয় কারণে তারা মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। এসময় মুখের ভিতর মিউকাস বা লালা জমে বা অনেক সময় মুখের অভ্যন্তরে শুকিয়ে যাওয়া ভাব হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা বেশির ভাগ সময় থুতু ফেলে। এর অন্যথাও অবশ্য হয়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয়, যেমনটি আমরা ভিয়েরা বা রাইকার্ডের ব্যাপারে দেখেছি।

৪.
ধর্মীয় বা জাতীয়তাভিত্তিক পরিচিতি, মূলধারার ক্রীড়াঙ্গন, জাতিতাত্ত্বিক পরিচিতি, সর্বোপরি রাজনীতি এসব জায়গায় থুতুর সিরিয়াস প্রয়োগ যেমন আছে, ঠিক তেমনি থুতু নিয়ে আছে বেশ কিছু হালকা বিনোদনধর্মী টুর্নামেন্টও। যেমন, মার্কিন মুলুকের মিশিগানে অনুষ্ঠিত হয় ‘Cherry Pit Spitting Competition’। এতে একটি পাত্র থেকে চেরিফল মুখে পুরে নিয়ে নির্দিষ্ট দিকে ছুঁড়ে দিতে হয়। যার চেরি লালা-সান্দ্র হয়ে যত দূরে যাবে, তার পয়েন্ট তত বেশি। এই ট্রাম্পচাচার দেশের দক্ষিণাঞ্চলেই আয়োজিত হয় থুতুভিত্তিক আরেকটি চ্যাম্পিয়নশিপ যার নাম ‘Watermelon Seed Spitting Competition’। নামেই বোঝা যাচ্ছে মুখগহ্বর থেকে সজোরে লালাসিক্ত তরমুজ বিচি উদ্গীরণ ক্রীড়া এটি। আরেকটি বিখ্যাত থুতুক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় যার নাম ‘Kudu Dung Spitting Tournament’। এটি আফ্রিকার নাটাল আর ইস্টার্ন কেপ অঞ্চলে রীতিমতো এক পর্যটন আকর্ষণ! কুডু নামের একধরনের এন্টিলোপের শুষ্ক বিষ্ঠাগোল্লা মুখের অভ্যন্তরে নিয়ে সজোরে ছুড়ে মারাই হচ্ছে এই খেলাটির মূল বিষয়।

৫.
থুতুর সমাজতত্ত্ব (Sociology of spitting) নিয়ে আলোচনায় শিল্প, সাহিত্য আর চলচ্চিত্রকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। থুতু বিষয়ে লেখকদের মনোভাব কী? শেক্সপিয়ারের কথাই ধরা যাক। তার Richard II-তে থমাসকে আমরা বলতে শুনি, “I do defy him and I spit at him/ Call him a slanderous coward and a villain”। থুতুর সার্বজনীন দ্যোতনাকে ধারণ করে এভনরাজের Henry IV (Part1) নাটকে Falstaff-কে বলতে দেখি, “I tell thee what, Hal, if I tell thee a lie, spit in my face”। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কিন রাজধানীতে থুতুর থিকথিক উপস্থিতি দেখে চার্লস ডিকেন্স বলেছিলেন, “Washington can be called the headquarters of tobacco-tinctured saliva”। ইংরেজি ভাষার হালের লেখকদের মধ্যে সালমান রুশদি তার Midnight’s Children এ Spittoon-এর মাধ্যমে থুতুর প্রসঙ্গ এনেছেন। বলা প্রয়োজন, রুশদি এখানে Silver spittoon টিকে, যা আমিনার বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই রুপালী চিলমচি সালিমের করুণ বর্তমানের সাথে হৃত অতীতের সেতু বন্ধন রচনা করেছে।

শিল্প সংরক্ষণবাদীরা থুতু কীর্তনে রুশদির চাইতে বেশ কয়েক কাঠি সরেস। তারা মনে করেন, লালা অতি মূল্যবান ছবি বা বিরল শিল্পকর্মের দাগ দূরীকরণে সবচে কার্যকরী।

আর চলচ্চিত্রে তো থুতুকে Non-verbal communication-এর বেশ শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হিন্দি ছবি ‘শোলে’র কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। ছবিটিতে আমরা কিংবদন্তীতুল্য চরিত্র গব্বর সিংকে দেখি বারবার থুতু ফেলে সমাজের উঁচু শ্রেণীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে।

৬.
তাহলে, সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, থুতু কি শুধুমাত্র হিংসা, ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে? মোটেই না। এক্ষেত্রে থুতু অন্য Non-verbal behaviour থেকে দ্যেতনায় অনেক এগিয়ে। যেমন ধরুন, আপনি ভয় পেলেন, অমনি একটু থুতু বুকে লাগিয়ে ভয় দূর করেন। অনিন্দ্য সুন্দর বাচ্চার কেউ তারিফ করল, সাথে সাথেই মাতৃদেবী বাচ্চার শরীরে প্রতীকী থুতু ছিটিয়ে দেন নজর কাটানোর জন্য। অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য তিনবার থুতু দেওয়ার রীতি প্রাচীন গ্রিকদের মধ্যেও প্রচলিত ছিল। আর কেনিয়ার মাসাই গোষ্ঠীর লোকেরা তো খুব সম্মানিত কারো সাথে করমর্দন করতে গেলে হাতে লালা মালিশ করে নেয়। এটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি বা সৌজন্যের পরিচায়ক! আবার থুতু ছিটিয়ে প্রশংসাও যে করা যায় সেটা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে Punk Movement-এর কর্মীরা। তাহলে দেখুন, সামান্য থুতু কী পরিমাণ দ্যোতনা-ধনী (Connotation-rich)!

৭.
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ‘থুতু’ বিষয়টাকে ‘ওয়াক থু’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার বিশেষ সুযোগ নেই। থুতু, যা কিনা গাঠনিকভাবে ৯৮% পানি আর বাকি ২% মিউকাস, এনজাইম, ইলেকট্রোলাইট, ইমিউনোগ্লোবিউলিন, মানুষের অস্তিত্বের সমার্থক। কারণটা জলবৎ তরলম—লালা তৈরি না হলে মানুষ খাবার খেতে পারত না আর খেতে না পারলে মানুষের অস্তিত্ব কি থাকত?

মানব অস্তিত্বের এরকম প্রধান একটি অনুষঙ্গ অর্থাৎ থুতু এশীয়বাসীদের জন্য একটি বিশাল তোহফা নিয়ে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি Spit personality বা থুতু-ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ আমার আপনার সাথে এই মহাদেশের জল-হাওয়াতেই বসবাস করে! এ বিষয়ে আমাদের মহাদেশীয় অর্জনের আরেকটা স্বীকৃতি মুক্তমুখে দিয়েছেন বৃব্রিটিশ সমাজ বিজ্ঞানী রস কুম্বার। আমাদের সাফল্যে নুতন পালক যুক্ত করে রস সাহেব সরসভাবে বলেছেন—“China, India and Indonesia are global capitals of phlegm”। ঢাকার জন্যও এই সম্মান বয়ে আনতে, তিলোত্তমা নগরীর দেয়ালে দেয়ালে অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্রের মতো থুতু-শ্লেষা-পানের পিকের ত্রয়ী শিল্পকর্মের চির-চলমান প্রদর্শনী দেখে মনে হয়, আমাদের খুব বেগ পেতে হবে না। চলুন, আমাদের আপন মহাদেশীয় থুতু-ভ্রাতৃসংঘে (Spitting fraternity) যোগদান করে থুতুতন্ত্র (Salivocracy) কায়েম করি!

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;