বসফোরাসের সোনালি কোমর জড়িয়ে সুফির চক্রনৃত্য



সরওয়ার মোরশেদ
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রমণ হচ্ছে, লিসা সেন্ট অবিন যুতসই বলেছেন, জীবনের সাথে ছিনালী করা (To flirt with life)। আবার আমাদের অনেকের অত্যন্ত প্রিয় লেখিকা নবনীতা দেবসেন মনে করেন, পর্যটন অনেকটা কৃষ্ণপ্রেম বা মাদকের মতো যার আকর্ষণ উপেক্ষা করা ভক্ত বা আসক্তের পক্ষে অনেকটাই দুঃসাধ্য। পর্যটন বিষয়ে আরেকটা উক্তি মনে পড়ছে—একজন ব্যক্তি যখন বুঝতে পারেন যে, তার জীবন মূল্যহীন, তখন তিনি হয় আত্মহত্যা করেন অথবা দেশভ্রমণ করেন। জীবনের সাথে শেষ ভৌগোলিক ফ্লার্ট করেছিলাম বছরখানেক আগে সিঙ্গাপুর আর ইন্দোনেশিয়া ঘুরে। বছরও ঘোরেনি অথচ এর মধ্যেই গালিভার সিন্ড্রোম মনের ওপর চেপে বসেছে আরব্য রজনীর দৈত্যের মতো—মন-মাঝি আঁকুপাঁকু করছে আবার বৈঠা ধরার। সিদ্ধান্ত নিলাম আত্মহত্যা করব, ঘাবড়াবেন না। অর্থনৈতিক হারাকিরি বা Lucrecide (Financial suicide) করে জগৎ সংসার দেখতে বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছার কথা বলছি।

খেয়াল করলাম, ভ্রমণ পৌনঃপুনিকতায় আমার ট্রাভেল প্রোফাইলে গত কয়েক বছরে প্রাচ্য বেশ এগিয়ে গেছে—যদিও ভূ-পর্যটন শুরু করেছিলাম পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ দর্শন দিয়ে। প্রাচ্যতম দেশ অর্থাৎ জাপানও যখন দেখা হয়ে গেছে, এবার তাই নতুন প্যারামিটার এক্সপ্লোর করতে পছন্দের দেশ প্রতীচ্যের পড়শি তুরস্ক। তুরস্কের বাৎসরিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামের লিস্ট দেখে গবেষণা প্রবন্ধের প্রতিপাদ্যসার পাঠালাম সেলজুক (তুর্কিরা উচ্চারণ করে ‘সেলচুক’) ইউনিভার্সিটিতে। সেলচুক বেছে নেওয়ার কারণ হলো এটা আল্লামা রুমীর শহর কোনিয়াতে অবস্থিত। আর বাড়তি পাওনা হলো গুরু-শিষ্যের (রুমী আর শেমসে তেবরিজ) শহর ইস্তাম্বুল থেকে প্রায় সাতশত কিলোমিটার দূরে। ফলে, চৌদ্দশত কিলোমিটার পথ আসা যাওয়াতেই তুরস্কের একটা বিশাল অংশ দেখা হয়ে যাবে। এই আসা যাওয়ার জন্য, প্রসঙ্গত বলা অসঙ্গত হবে না, বাষ্পীয় রথ বা হাওয়াই রথ নয়, আমার পক্ষপাত সরাসরি স্থল শকট অর্থাৎ বাসের দিকে। যুগপৎ রথদর্শন আর রম্ভা ফেরির চেষ্টা আর কি!

সেলচুক ইউনিভার্সিটি

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সেলচুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণপত্র আসলো। আমার কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিও, এনওসি ইত্যাদি নিয়ে এজেন্সির মাধ্যমে তুর্কি ভিসার জন্য আবেদন করলাম। হাতে সময় একদম কম। এর মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী আটক হওয়ায়, যারা তুরস্ককে তাদের রুট হিসেবে ব্যবহার করেছে, ঢাকাস্থ তুর্কি দূতাবাস আগের মতো আর বৈধ কাগজপত্র থাকলেই ভিসা ইস্যু করছেনা। তারা রয়ে-সয়ে ভিসা ইস্যু করাতে যাত্রার নির্ধারিত দিনের মাত্র দিন চারেক আগে ভিসা পেলাম। এই ফাঁকে তুর্কি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখলাম বাংলাদেশি অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা বিনা ভিসায় (অর্থাৎ ভিসা অন এরাইভাল) দেশটি সফর করতে পারেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন ধরে অফিসিয়াল পাসপোর্ট দাবি করে আসছেন। এ সুবিধাটা থাকলে আমাদের শিক্ষক-গবেষকগণ কত হয়রানি আর অহেতুক বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যেতেন! যেমন, একেবারে শেষ সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাওয়াতে শুধু বিমান ভাড়া বাবদ আমার বাড়তি খরচ হয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা। ভিসা ফিস, এজেন্সি খরচ, হোটেল রিজার্ভেশন ইত্যাদিসহ অহেতুক পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা! অথচ আমার সরকারি পাসপোর্ট থাকলে এই টাকাটা দেশেই থেকে যেত। অবশ্য, সুইস ব্যাংকে যে গরিব দেশের অবৈধ ধনীরা মিলিয়ন-বিলিয়ন পাচার করে, সে দেশের জন্য এ আর এমন কী অর্থ!

যাক, শেষ মুহূর্তে সব প্রস্তুতি তড়িঘড়ি সম্পন্ন করে একুশে অক্টোবর ভোর ছয়টায় টার্কিশ এয়ার লাইন্সে করে ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্য ঢাকা ত্যাগ করি। অনেক বেশি ভাড়া সত্ত্বেও তুর্কি ন্যাশনাল ক্যারিয়ার পছন্দ করার মূল কারণ হলো এতে সরাসরি ঢাকা থেকে সাত ঘণ্টায় ইস্তাম্বুল পৌঁছা যায়। অন্য এয়ার লাইন্স যেমন সৌদি বা কুয়েত এয়ারে অনেক কম খরচে যাওয়া যায় কিন্তু তাতে জেদ্দা বা কুয়েতে ট্রানজিট নিয়ে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে হবে যা বেশ ঝামেলাপূর্ণ আর সময় সাপেক্ষ। তুরস্কে আমার অবস্থানের মেয়াদ ছিল দশদিন। এই সময়ে অফিসিয়াল প্রোগ্রামে উপস্থিতিসহ তুরস্কের মতো একটা বিশাল দেশ দেখা প্রায় অসম্ভব। ইউরোপীয় মানদণ্ডে আন্তঃমহাদেশীয় এই প্রজাতন্ত্র কত প্রকাণ্ড তা ধারণা করতে একটি হিসাব দিয়ে রাখি—তুরস্কের আয়তন ইউরোপের পাওয়ার হাউজ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ডের সমন্বিত আয়তনের চাইতেও বেশি! বিশালায়তন তুরস্ক, আহমেদ দাভোটুগ্লু যথার্থ বলেছেন, একটি ইউরোপীয় দেশ, এশীয় দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ—এটি আবার বলকান আর ককেশীয় অঞ্চলের দেশ, কৃষ্ণ আর কাস্পিয়ান সাগরেরও দেশ। এই বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যপূর্ণভূমিতে দশদিনে যতটুকু বতুতাগিরি করে দর্শনানন্দ লাভ করেছি তা সরলরৈখিকভাবে বয়ান না করে ঘটনাক্রম হিসেবে পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার প্রয়াস রাখছি।

ইস্তাম্বুল গ্র্যান্ড এয়ারপোর্টে
টার্কিশ এয়ারে বেশ আয়েশেই যথাসময়ে ইস্তাম্বুলের ঝাঁ চকচকে নুতন এয়ারপোর্টে অবতরণ করি। দিনটি ছিল রৌদ্রস্নাত। টার্মিনাল থেকে ইমিগ্রেশন, পথ দেখি শেষই হয় না। অবশ্য, বিরক্ত লাগেনি মোটেই। পরে জেনেছি, বারো বিলিয়ন ডলারের এই IGA (Istanbul Grand Airport) যার আয়তন প্রায় ঊনিশ হাজার একর (পনেরোটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সমান!) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দর। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন বিমান বন্দর যার বাৎসরিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ১১০ মিলিয়ন। ২০২৫ সালে IGA এর সবগুলো টার্মিনাল চালু হলে এর ক্যাপাসিটি হবে ২০০ মিলিয়ন! অবশ্য, তুরস্কের আগের প্রিমিয়ার বিমান বন্দরটিও, যার নাম আতাতুর্ক বিমান বন্দর, ৭০ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের একটি ছিল।

এরিয়াল ভিউ : ইস্তাম্বুল গ্র্যান্ড এয়ারপোর্ট

যাক, ওসমানীয় সাম্রাজ্যের মুকুট ইস্তাম্বুলের অর্জনের নূতন পালকটির সুলতানি মাত্রার শানশওকত দেখতে দেখতে ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে চলে আসি। বলে রাখি, এখানেও ‘দরিদ্রভার্যা সার্বজনীন ভ্রাতৃবধু’ নীতির প্রায়োগিক দিকটি পুনঃঅবলোকন করি। ইমিগ্রেশন কাউন্টারের তুর্কি দূহিতা বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে বেশ সতর্কতার সাথে কাগজপত্র নিরীক্ষণ করে, তার সিনিয়রের সাথে কথা বলে পাসপোর্টে সিল মারে। ইতর আদম-হাওয়া ব্যাপারীরা বাংলাদেশের ভালে চিরস্থায়ী কলঙ্ক-তিলক পড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলার নবাবজাদে, ঠিকানা ফিন্দিকজাদে
আল্লাহর অশেষ রহমতে বিশ্বের যেসব দেশে গিয়েছি, প্রায় সবখানেই কিছু উন্নত-হৃদয় মানুষ পেয়ে গেছি যাদের আন্তরিকতায় আমার বিভূঁইয়ে অবস্থান স্বস্তিদায়ক আর স্মরণীয় হয়েছে। যেমন, জাপানে পেয়েছিলাম ড. সুমনকে। সুমন কানাজাওয়াকে আমার জন্য চট্টগ্রাম বানিয়ে ফেলেছিলেন। থাইল্যান্ডে দিদার ভাইয়ের সঙ্গ সফরটাকে একেবারে রমণীয় করে তুলেছিল। কুয়ালালামপুরে অবস্থানকালীন ড. শামীম হামিদী আর তার পত্নীর আতিথ্য-উষ্ণতায় মনেই হয়নি বৈদেশে আছি। আর সিঙ্গাপুরে তো একেবারে ঘরের ছেলে জয়নালের সার্বিক তদারকিতে ছিলাম। শ্বেতদ্বীপের লন্ডনে তো রীতিমতো তারকাপুন্জের (Galacticos) আলোয় উদ্ভাসিত ছিলাম। নেপাল-ভারতে গিয়েছিলাম প্রিয় শিক্ষক, সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের আমুদে দলের সাথে। একমাত্র ইন্দোনেশিয়াতে ঘুরেছি যাকে বলে, Alone, all alone।

তো, তুরস্কেও আসার আগে বেশ কজন দেশি তরুণ তুর্কির সাথে যোগাযোগ করে এসেছি। তাদেরই একজন চটপটে, করিৎকর্মা যুবক হেলালী। IGA থেকেই বেশ চড়া দামে Vodafone-এর দশদিনের একটি ট্যুরিস্টপ্যাকেজ কিনি ফলে যোগাযোগের কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। Havaist Bus-এ চেপে মাত্র পনেরো লিরা দিয়ে চলে আসি আক্সারাই মেট্রো স্টেশন। এত উন্নত বাস আর ততোধিক উন্নত সার্ভিস মাত্র ২৩০ টাকায় বাংলাদেশে কষ্ট-কল্পনার বিষয়। স্টেশনের নাম মনে রাখার জন্য আমার নিমোনিক কোড ছিল ‘মোগলসরাই- আকশারাই’। বেশ খোশ মেজাজে আক্সারাই এসে পেয়ে গেলাম তালেবে এলেম হেলালীকে। সেখান থেকে দৃষ্টিনন্দন একটা পার্ক পেরিয়ে ফিন্দিকজাদে—আমার ডেরা হোটেল ইলচুক আর হেলালিদের তুর্কি-মঞ্জিল।

ইস্তাম্বুলে লেখকের ডেরা হোটেল ইলচুক

হোটেলে ওঠার আগে সামনে বার্গার কিংয়ের আউটলেটে দুজনে উদরপূর্তি করলাম। সত্যিকারের মোগল হয়ে হেলালী আমাকে কার্ডে হাত দিতে দিল না। উপরন্তু, রাতের খাবারও তার বাসায় খেতে হলো। ডিনার শেষে রীতিমতো দলবলের এসকর্ট নিয়ে ইলচুক হোটেলে উঠি। নিজেকে মনে হচ্ছিল হাসান আল বলকিয়ার ক্ষুদ্র ভ্রাত! রাত এগারোটার পর নিশাচর হেলালী হোটেল লবি থেকে কল দিল—স্যার আসেন, আপনাকে রাতের ইস্তাম্বুল দেখাব। আমি যেন এই আহ্বানের ইন্তেজারই করছিলাম। ফলে উৎসাহের উত্তাপে অক্টোবরের শীত চাপা পড়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে, তুর্কি চোষ্য-চর্ব্য আস্বাদন আর বিখ্যাত ‘চায়ে’ পান করে হোটেলে ফিরে রাজসিক ঘুম। এক সুখনিদ্রায় রজনী পার! [চলবে]

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;