এসব শরীরভর্তি আত্মা



তানিয়া চক্রবর্তী
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

“Sex without love is a meaningless experience, but as far as meaningless experiences go it’s pretty damn good.”

“The way you make love is the way God will be with you.”

এক তীব্র স্বর্গীয় অনুভূতির প্রাসঙ্গিকতা থেকেই হয়তো দ্বিতীয় এই বক্তব্যটি রুমি রেখেছিলেন। প্রথম বক্তব্যটি করেছিলেন আমেরিকার বিশিষ্ট পরিচালক উডি এ্যালেন। বিভিন্ন মানুষ তার মনোভাব, শরীরী সক্রিয়তা, হৃদয়, ব্যক্তিচরিত্রের ভিত্তিতে যৌনতা নিয়ে অজস্র কথা বলেছিলেন। ফলত যৌনতা জীবনের সঙ্গে কতখানি সৎভাবে যুক্ত, আদৌ যুক্ত কিনা এসকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি কারণ মানুষের ইন্দ্রিয়সচেতন জীবনে ভালোবাসার ভঙ্গিমার মধ্যে দিয়েই যৌনতা বহুসময়ে ঢুকে পড়েছে; কখনো যৌনতা লালসা ও হিংসা হয়ে গেছে; কখনো যৌনতা জন্মের বাহানা হিসেবে থেকে গেছে—তাই যৌনতা গোল গোল পথেই ঘুরে চলেছে ক্রমাগত।

তবু দূর থেকে যৌনতাকে দেখলে তার স্বরূপের কিছুটা বোঝা যায়—যে সেটা বুঝবে তাকে আবার শরীরী যৌনতাও জানতে হবে অথচ একই দেহ ও শরীরে এ পার্থক্য মন নির্ধারণ করতে অপারগ থাকে। ফলত বলে রাখা ভালো যৌনতার সম্যক রূপ আসলে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। ফলে যা লিখছি তা সিদ্ধান্তমূলক হতেও পারে নাও হতে পারে।

এ মানবশরীর আসলে সে মাংস যা আমরা খাই না—এ ভোগ তবে মহাভোগ। স্পর্শে, কামনায়, ছোঁয়ায় তাকে আস্বাদন করি। তার জন্য কিছু সংকেত, চিহ্ন, অঙ্গ আছে যা এই মাংসল চেতনাকে সমৃদ্ধ করে তোলে। আমরা উপভোগ করি, প্রকৃতি মূলত বাস্তু সামলায়। কারো উদ্দেশ্য সাধনে আমরা অধ্যাসে সুখী হওয়া জীব। শরীর আসলে আকাশের তুল্যমূল্য ক্যানভাস এত অনন্ত যে তাকে যৌন অঙ্গে, যৌনাচারে, যৌনশব্দে ভ্রমে বাঁধা হয়েছে—ফলে আসলে তা ভ্রমেরও মহিমা। আমরা ভাবি অঙ্গজ জনন, যৌন জনন—মানবেতর বেশিরভাগ প্রাণীতে উৎপাদন ও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াই মূল বস্তু। মানুষে আসলে তার মাত্রা চূড়ান্ত বদলে যায়—কারণ বোধের উত্তরণ ও তার অসীম প্রকরণ।

জীবনে যৌনতা কী? যৌনতা কী শুধুই শরীরী মিলন? আসলে তা যত না মিলনের রূপক ততোধিক ভাঙনের রূপক। যেমন আমরা যৌন শব্দের ব্যবহার বলি (স্তন, লিঙ্গ, যোনি) এগুলো তো মায়া, মমতা, জন্ম, রেচন, বর্জ্যের সংকেতেও পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশিত। যদি দেহ এই পৃথিবীর ম্যাপ হয় তবে অঙ্গ তার ভূখণ্ড; সে উৎপাদনশীল না নিষ্কাশনকামী তা আলোচ্য নয়। এই যে যৌন শব্দ তাকে আমরা সর্বজনীন যৌনতার রূপকে যে ভাবি তা আমাদের ত্রুটি। তাই যৌন শব্দের ব্যবহার যৌনতার পরিচয় দেয় না সর্বদা। শরীর তো আসলে অশরীরী কারণ জন্ম থেকে সে ক্ষয় তথা বিয়োগের দিকে যায় তার দেহজ সংযুক্তিও আসলে তার বিযুক্তি! এই দেহ পূর্ণ অস্তিত্ব থেকে অনস্তিত্বে যায় ফলে এই নশ্বর দেহের যৌনতা আসলে খাবারের সঙ্গে জিহ্বার সম্পর্কের মতোই তাৎক্ষণিক গুরুত্বের—আসল উদ্দেশ্য উদরপূর্তির অথচ তার নিরূপণ স্বাদের আস্বাদনেই হয়। দেহ আসলে দেহকে বিয়োগ করে । দেহ শূন্য; আর এই শূন্যের ঘূর্ণিতে যৌনতা হলো মাতাল অবস্থা—এই সাংকেতিক উত্তেজনা আসলে মরীচীকার মতো কারণ কখনো এটি পূর্ণ সমাপ্তির জন্য তৃপ্ত হয় না; পুনরায় জাগ্রত হয়।

উর্দু ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক কৃষণ চন্দরের গল্প ‘জঞ্জাল বুড়ো’ (অনুবাদ - অরুণকুমার মখোপাধ্যায়) গল্পে জঞ্জাল বুড়োর ক্ষয়িষ্ণু জীবনের শেষ মুহূর্ত কেবল মমতা ও স্নেহকে আশ্রয় করে পৃথিবীর এক রোমান্টিক, বিদগ্ধ মুহূর্ত তৈরি করে। জীবনের প্রারম্ভে দুলারী, তার শরীর, তার প্রেম, তার স্বামীসেবা, দুলারীর ফার্মের মালিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া তাতে যে শিরশিরানি তৈরি করা যৌনতার আবেদন ছিল তা জঞ্জাল বুড়োর যন্ত্রণায়, বাৎসল্যে ধুয়ে মুছে ক্ষীণ হয়ে গেল—ভেতরে বায়বীয় আত্মিক অনুভূতি শরীরের বাইরের ভেতরের সকল কিছুকে তছনছ করে দিল।

আবার পাওলো কোয়েলহোর লেখা উপন্যাস ‘এগারো মিনিটে’ (অনুবাদ - সায়ন্তনী নাগ) শরীর অত্যধিকভাবে, পরীক্ষামূলকভাবে, যথেচ্ছাচারে, চূড়ান্ত স্বাধীনতায় বারবার মুক্ত হয়েছে। এখানে শরীর তার প্রতিটি বিন্দুকে, সময়কে উদযাপন করেছে অথচ সেখানেও শেষে শরীর আর থাকেনি। উপন্যাসের প্রথমদিকে নায়িকা মারিয়া তার ডায়েরীতে লিখছে “আমি আবিষ্কার করেছি কী কারণে একজন পুরুষ একজন মহিলাকে টাকা দেয়। সে সুখী হতে চায়। শুধুমাত্র অর্গ্যাজম পাওয়ার জন্য সে এক হাজার ফ্রাংক দেয় না। সে সুখী হতে চায়। আমিও চাই। সবাই চায়। অথচ কেউ সুখী নয়। আমার কী হারাবার আছে, যদি কিছুক্ষণের জন্য আমি ঠিক করি আমি হব একজন ‘…’। ভাববার বা লিখবার পক্ষেও এই শব্দটা এত কী কঠিন! কিন্তু এসো, নির্লিপ্ত হয়ে বলেই ফেলি! আমার কী হারাবার আছে যদি আমি কিছুক্ষণের জন্য এক বেশ্যা হব বলে ঠিক করি? সম্মান। সম্ভ্রম। আত্মমর্যাদা। যদিও আমি যখন ভাবি, দেখি আমার ওসব কিছুই ছিল না। আমার জন্মানোর কথা ছিল না। আমায় ভালোবাসার মতো কেউ ছিল না। এবার জীবন আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিক।” এখানে শরীর তার শরীরী মুহূর্তকে চ্যলেঞ্জ করেছে। আবার এই উপন্যাসের অন্যত্র দেখা যায় অর্থের বিনিময়ে শরীরী খেলায় এমন লোক মারিয়ার জীবনে জোটে তাদের সঙ্গে নগ্ন অবস্থায় সে দেহ নয় দৃষ্টি আদান-প্রদান করে। একটা জায়গায় নায়িকা মারিয়া তার ডায়েরিতে লিখছে “কাল রাতে যখন র্যালফ হার্ট আমার দিকে তাকাল, সে যেন চোরের মতো একটা দরজা খুলল। কিন্তু যখন সে গেল, আমার কিছুই নিল না।—সব মানুষ তার নিজের কামনা অনুভব করে।—এ এক আবেগ যা আমার আত্মা বেছে নিয়েছে। আর এ এমন তীব্র যে আমার চারপাশের সবাইকে, সবকিছুকে সংক্রামিত করে।” এবার উপন্যাসের শেষে পর্যাপ্ত শরীরী মিলনের পর মারিয়া লিখছে “এ কোনো এগারো মিনিট নয়, এ অসীম। যেন আমরা দুজনেই আমাদের শরীর ছেড়ে বন্ধুত্ব এবং বোঝাপড়া নিয়ে আনন্দে হেঁটে চলেছি নন্দনকাননে। আমি নারী এবং পুরুষ, সেও পুরুষ এবং নারী। আমি জানি না এটা কতক্ষণ চলছিল, কিন্তু সবকিছু মনে হচ্ছিল নিঃশব্দ ধ্যানমগ্ন, যেন জগৎ ও জীবনের অস্তিত্ব নেই, তারা বদলে গেছে পবিত্র, নামহীন ও সময়হীন কোনোকিছুতে।”

আরো পড়ুন আলো মাখা পাহাড়

এই বক্তব্যের পরে উপন্যাসে র‌্যালফ তথা মারিয়ার পার্টনারের উক্তি পাই সেখানে, র‌্যালফকে মারিয়া প্রশ্ন করছে “একজন বেশ্যার প্রেমে পড়লে কী করে?” র‌্যালফ উত্তর দেয় “আমার মনে হয় এর কারণ, তোমার শরীর কোনোদিন আমার একার হবে না জেনে আমি মন দিয়েছি তোমার ঐ আত্মাকে জয় করাতে।” মারিয়া প্রশ্ন করে “তোমার ঈর্ষা হয় না?” র‌্যালফ উত্তর দেয় “তুমি বসন্তকে বলতে পারো না, এখানে এসো আর যতদিন সম্ভব থাকো।” এই উপন্যাস আসলে যৌনতাকে চেপে ধরে যৌনতাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। ফলত যৌনতা আসলে যতখানি সুন্দর ও প্রশান্তি ততখানি সে একটা লোভ ও হাহাকার ফলে কামার্ত মানুষ নিজেও তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে।

৫ অগাস্ট দরজা খুলে দেখা গেল মেয়েটি নগ্ন হয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলেছিল ড্রাগের ওভারডোজ নিয়ে আত্মহত্যা। তিনি মেরিলিন মনরো। এই মৃত্যু নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। ছাপোষা সংসার থেকে শরীরের ডাক, শরীরের মাহাত্ম্য, নগ্নতার আবেদন, যৌনতার ভরপুর মন্থন নিয়ে যে মেয়ে নিজেকে স্বেচ্ছায় বাঁচিয়ে রেখেছিল সে শুধু মনের তাগিদে পাগল হতে থাকল! তার পুরুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকল কাহিনীতে, জীবনে—তার চরিত্র, জীবন নিয়ে মানুষের আনন্দ, কুৎসা বাড়তেই থাকল কারণ সে যৌন সে শরীরী—অথচ শরীর তখন মন খুঁজছিল অথচ মানুষ বুঝেছিল শরীর অনর্গল বুঝি নতুন শরীর চায়। এই মননের খোঁজ, এটা সত্য হতে বাধ্য কারণ জীবনের মাত্রা তো এভাবেই আসে—বহু মূল্যবান বস্তুও বহুব্যবহারে লঘু হয়ে পড়ে—ফলে যদি দেহ কেবল দেহ হয় তবে তা কেবলমাত্র বস্তুই।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;