মনুষ্যত্বের দাফন-কাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নৃতত্ত্ব



সরওয়ার মোরশেদ
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ভারতে রেল যোগাযোগ প্রবর্তনের প্রথম দিকে সুন্দর একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ট্রেনের আকৃতি আর সর্পিল চলন দেখে বিহ্বল স্বদেশিদের তন্ময়তা আর কিংকর্তব্যবিমূঢ়ভাব কাটাতে তিনি লিখেছিলেন ‘বাষ্পীয়রথে কিভাবে আরোহণ করিতে হইবে’ শীর্ষক রচনাটি।

গত দিন কয়েক ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি করোনায় মৃতদের লাশ নিয়ে সারাদেশে এক ধরনের বিশ্রী অবস্থা বিরাজ করছে। মুর্দার দাফন কাফন নিয়ে একশ্রেণীর মনুষ্যত্বের দ্বিপদীর বর্বর অবস্থান। এই করোনা উপদ্রুত করুণ উপকূলে আচার্যজী থাকলে হয়তো লিখে ফেলতেন ‘করোনায় লোকান্তরিতগণের কিভাবে সৎকার করিতে হইবে’ শিরোনামীয় প্রবন্ধ। আচার্য দেহ রেখেছেন সেই কবে! রসায়নশাস্ত্রীর অনুপস্থিতিজনিত শোককে শক্তিতে পরিণত করে নাহয় অধমই চেষ্টিত হই কষ্টিত জাতিকে পথ দেখানোর!

২.
কদমরূপী করোনা ‘পদ্মবনে মত্তহস্তী’র মতো তামাম জাহান পদপিষ্ট করছে। এই Microbial Marco Polo এখন আণুবীক্ষণিক চেঙ্গিস খাঁনে পরিণত হয়েছে। আর আমরা বাংলার বীর পুঙ্গবরা রূপ নিয়েছি পলাশীর সিরাজের বাহিনীতে—বিনা জঙ্গে সূচাগ্র মেদিনী না, পুরো বুখারা-সমরকন্দ-ইস্পাহান-সিরাজ ইস্তক লন্ডন-প্যারিসও দিয়ে দিতে রাজি আমরা। তাইতো পারিবারিক বন্ধনদর্পী রঙ্গস্নাত বঙ্গসন্তানগণ লাশ ফেলে পালাচ্ছে, মৃতের অমর্যাদা করছে আর অনেক জায়গায় দাফন কাফনে বাধা দিচ্ছে। এমন ঘোর অমানিশার কালেও চাল নিয়ে চালবাজি করা কুম্ভীলককূলকে প্রতিহত না করে আমরা অলোকদৃষ্ট সাহস দেখিয়ে রুখে দিচ্ছি নিরীহ মুর্দার দাফন কাফন!

কাজেই এখন Grave question হলো, মৃতদের সৎকার কে, কিভাবে করবে? সহজ সমাধান হবে একটা Dying industry দাঁড় করিয়ে ফেলা। একখানা Mortician squad গঠন করা। ‘Ashes to ashes’-এ বিশ্বাসী থেকে শুরু করে Green good bye দিতে ইচ্ছুকসহ সবার জন্য এরা গ্যাঞ্জামবিহীন, Tailor-made চিরবিদায়ের আঞ্জাম দেবে। মৃতের পরিবারকে শুধু সেবাটা কড়ি দিয়ে কিনতে হবে, এই যা। লাশ নিয়ে ভাবনা, আর না, আর না!

৩.
চলুন, আমাদের হঠাৎ ব্যক্তি হতে নৈর্ব্যক্তিক লাশে অবনমিত দেহত্যাগকারীদের শব নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে জগৎ সংসার তন্ন তন্ন করে না খুঁজে একটু সাধারণ পর্যটন করে আসি।

হাওয়াই দাফন (Sky burial)


নামেই এই পদ্ধতি স্বব্যাখ্যাত। পৃথিবীর ছাদে অর্থাৎ তিব্বতে আকাশী সৎকার অনুসৃত হয়। লামার অনুসারীরা তাদের শবগুলোকে অনেক উঁচু পাহাড়ের উপর রেখে আসে যাতে ঈগল, বাজ প্রভৃতি পাখি নরমাংস ভক্ষণ করে জটরানন্দ লাভ করে। তাদের বিশ্বাস, শব দিয়ে উদরপূর্তি করে এসব বিহঙ্গ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে মৃতের আত্মাকে স্বর্গে পৌঁছে দেবে!

জলজ সমাধি (Burial at sea)

অনেক ধীবর বা সমুদ্রতীরবর্তী জনগোষ্ঠী তাদের মৃতদের সমুদ্রেই সমাধিস্থ করে। এ পদ্ধতি আবার মার্কিনীদের হাতে আধুনিকায়িত হয়েছে। ওসামা বিন লাদেনসহ অনেককে স্যামচাচার পালোয়ান পোলাপানরা মাছের পেটে চালান করে দিয়েছে। তাই এটা খাঁটি পেন্টাগন অনুমোদিত পদ্ধতি!

মহাশূন্যে সমাধিস্থকরণ (Space burial)

এটা সবচে আধুনিক, পরিবেশ-বান্ধব আর কিউট একটা পদ্ধতি। এখানে রকেটের মাধ্যমে মৃতদেহকে কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয়। এতে মরহুম একবারে যাকে বলে Body and soul একসাথে নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। ‘পাখি উড়ে যায়, রেখে যায় পালক’ জাতীয় দীর্ঘশ্বাসের উর্ধ্বে এই মহাত্মাগণ। শুনলে ভশ্চার্য হবেন, এ পর্যন্ত সার্ধশত মহাজন Space burial লাভে ধন্য হয়েছেন।

জাপানি উচ্চ প্রযুক্তির সমাধিস্থকরণ

এটা জাপানের Dying industry’র নবতম সংযোজন। জাপানের শব ব্যবস্থাপনা শিল্প ইতোমধ্যে উচ্চ প্রাযুক্তিক সুবিধাসম্পন্ন Alternative Graveyard দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। এই ডিজিটাল গোরস্থানে ব্যাংকের লকারে যেভাবে সোনাদানা রাখা হয় সেভাবেই LED বুদ্ধমূর্তির ভিতরে মৃতের ছাই রাখা হয়। অনেক বাহারি ডিজাইনের, বাহারি রঙের মূর্তি বাছাই করার সুযোগ আছে গ্রাহকদের। মনে করেন, আপনার প্রিয় মানুষটির জন্য আপনি গোলাপী রঙের LED মূর্তি পছন্দ করলেন। তাহলে আপনি যখনই আপনার আপনজনের ডিজিটাল গোরস্থানে যাবেন, আপনার ক্লায়েন্ট কার্ডটি পাঞ্চ করে ভিতরে ঢুকলে হাজারো মূর্তির ভেতর থেকে আপনার মৃত প্রিয়জনের বুদ্ধ মূর্তিটি গোলাপী রঙের আভা ছড়িয়ে আপনাকে অভিবাদন জানাবে। এই গোরস্থান এতই হাইটেক যে, এখানে তারা আপনার সুবিধার জন্য হাওয়াই বন্দরের অনেক সুবিধা যেমন Conveyor belt ইত্যাদির ব্যবস্থাও রেখেছেন। তাই, Death is a high-tech trip in Japan's futuristic cemeteries!

দক্ষিণ কোরীয় পদ্ধতি

If Japan comes, can South Korea be far behind? মোটেই না। দক্ষিণ কোরিয়ার Burial Company-গুলো জাপানিদের সাথে রীতিমত টেক্কা দিচ্ছে। তাদের Death Bead Company-র এক CEO ঘোষণা দিয়েছেন মাত্র ৯০০ ডলারে আপনাকে তসবির দানার মতো গোল্লায় পরিণত করে কাঁচের আধারে পুরে বাড়িতে প্রিয়জনদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। আপনজনদের কাছে ‘আবার আসিবেন’ ফিরে হয়তোবা ইনসান নয়—লাল, নীল হরেক কিসিমের পুঁতির দানার বেশে। আপনার ওয়ারিশগণ কাচবন্দী আপনাকে সকাল, বিকাল দেখবে, অনুভব করবে, অভ্যাগতদের দেখাবে ‘দানাদার’ আপনাকে। আপনি আবার কাচের ঘর থেকে ঢিল ছুঁড়বেন না যেন!

বায়োডিগ্রেডেবল পদ্ধতি

এটা হাড়ে হাড়ে Pro-Green লোকজনের সৎকারের আদর্শ পন্থা। Biodegradable Method-এ পরিবেশ-বান্ধব উপাদান যেমন শক্ত কাগজ, বোর্ড ইত্যাদির তৈরি একটা ভস্মাধারে, যাকে Bios Urn বলা হয়, চাইদের (Big fries) ছাই রাখা হয়। টবের ভিতরে পুষ্টি উপাদান-পুষ্ট মাটির মাঝখানে আগে থেকে গত ব্যক্তির পছন্দের গাছ বা ফুলের বীজ পুঁতে রাখা হয়। পরে সে বীজের উপরে রাখা হয় শরীর-ভস্ম। মৃতের দেহাবশেষ থেকে পুষ্টি নিয়ে অচিরেই জগৎ সংসারে উঁকি মারবে দেহত্যাগীর প্রিয় উদ্ভিদ। মনে করেন, কোনো Big man-এর বেটির মাথায় লাল গেন্ধা ফুল বাইন্ধা দেয়ার মহতেচ্ছা আপনার ছিল, সে আকাঙ্ক্ষা-পাদপে আপনার হয়ে যে কেউ আপনার ভবসাগর পাড়ি দেওয়ার পরও ফুল ফোটাতে পারবে। ইহধাম ত্যাগ করার পরও আপনি মানুষ নয়, হয়তোবা গেন্ধা-গোলাপ হয়ে কোনো কামিনীর কেশপাশ শোভিত করছেন! কী বিপুল, বিশাল সুখ!

ক্রিপোপ্রিজারভেশন

আপনি যদি নেক্টার পান না করেও অমরত্ব লাভের আশা জিইয়ে রাখতে চান, যদি আপনি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষা-জারিত আদমী হয়ে থাকেন, তাহলে দেরি হওয়ার আগেই Alcor Life Extension Foundation-এর সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার ট্যাকে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে তারা নাই-হওয়া আপনাকে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে রাখবে। ফলে, আপনার দেহে পচন ধরবে না। আপনি হয়ে যাবেন লেনিন-মাওয়ের Comrade in corpse! Cryonics practitioner-রা একিন রাখেন যে, ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই মহাত্মাদের পুনর্জীবিত করা যাবে। Doomsday পর্যন্ত ইন্তেজারের খামোখা কী প্রয়োজন!

৪.
এ লেখার শুরুতে কলোনিয়াল ভারতবাসীর লৌহ ঘোটক (Iron horse) অর্থাৎ রেলগাড়ি দেখে হতবিহবল অবস্থার প্রেক্ষিতে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘বাষ্পীয় রথে কিভাবে আরোহণ করিতে হইবে’ শীর্ষক লেখাটার উল্লেখ করেছিলাম। আসলে, নুতন যে কোনো কিছুর প্রতি মানুষের ভয়-সান্দ্র সন্দেহ চিরন্তন। যেমন, একই প্রসঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় ব্রিটেনের কিছু কিছু জায়গার অধিবাসীদের প্রতিক্রিয়া স্মর্তব্য। প্রথম ট্রেন চলার পর বেশ কিছু জায়গার ইংরেজগণ এ বলে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করেন যে, রেলের হুইসেলের বিকট শব্দে তাদের ঘোড়া-গরু-ছাগল ভয় পাচ্ছে। এমনকি Stockton-Darlington Train Service (1825) উদ্ধোধনের দিন মজমা-মচ্ছব দেখতে আসা বেশকিছু লোকজন ট্রেনের কুউউ-ঝিকঝিক ভীমনাদে ভয়ে রীতিমতো মুর্চ্ছিত হয়ে পড়েছিলেন!

করোনার নিষ্করুণ আঘাতে আমাদের অবস্থাও অনেকটা তথৈবচ। কিন্তু ট্রেন যেমন এখন মানুষের যাপিত জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, করোনা-চাপিত (Covid-induced) নতুন শব ব্যবস্থাপনাও নিশ্চয়ই এক সময় আমাদের গা এবং গাঁ সওয়া হয়ে যাবে। এই জাগতিক রঙ্গমঞ্চে, শ্রীযুক্ত হেরাক্লিটাস ঠিকই বয়ান করেছেন, পরিবর্তনই একমাত্র স্থায়ী কুশীলব। একই নদীর জলে আপনি কি দুইবার পদসিক্ত করতে পারেন?

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;