নিজার কাব্বানির কবিতা



ভূমিকা ও ভাষান্তর : সৈয়দ তারিক
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

নিজার তওফিক কাব্বানি ১৯২৩ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কবি, কূটনীতিক, লেখক ও প্রকাশক। তার কবিতা একইসাথে সরল ও শৈলীসম্পন্ন। প্রেম, যৌনতা, নারীবাদ, আরব জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম তার কবিতার বিষয়বস্তুর মধ্যে পাওয়া যায়। আরবি ভাষার সমকালীন কবিদের মধ্যে তার স্থান প্রথম সারিতেই। তিনি সিরিয়ার জাতীয় কবি।

দামাস্কাসেই বড় হন তিনি, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করেন। আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে পড়বার সময়েই তার প্রথম কাব্য প্রকাশিত হয়। প্রেমের কবিতা, তাতে নারীদেহ সম্পর্কে এমন চমকপ্রদ বর্ণনা ছিল যে তাতে দামাস্কাসের রক্ষণশীল সমাজে নাড়া লাগে।

স্নাতক হবার পর কাব্বানি সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। কনসাল বা সাংস্কৃতিক এটাচে হিসাবে বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে কাজ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবার আগে পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তার লেখালেখিও অব্যাহত থাকে। পদত্যাগের পর বৈরুতে একটি প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন তিনি।

কাব্বানির বয়স যখন পনের তখন তার পঁচিশ বছর বয়সী বোন আত্মহনন করেন। তার পছন্দের নয় এমন এক লোকের সাথে বিয়ে হওয়া ঠেকাতেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বোনের অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময় কাব্বানি সিদ্ধান্ত নেন যে সামাজিক এইসব অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তিনি লড়বেন।

তিনি বিপ্লবী কিনা এই প্রশ্নের জবাবে একবার তিনি বলেন, ‘আরব জগতে প্রেম বন্দীদশায় আছে, আমি একে মুক্ত করতে চাই। আমার কবিতা দিয়ে আমি আরবের আত্মা, অনুভব ও শরীরকে স্বাধীন করতে চাই। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর নয়।’ তিনি তার সময়ের সবচাইতে প্রগতিশীল ও নারীবাদী বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত।

তার কবিতায় তার শহর দামাস্কাস বারংবার চিত্রিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে ছয়দিনব্যাপী যে যুদ্ধ হয়েছিল তা তাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। আরবভূমির কান্না তার কবিতায় করুণভাবে চিত্রিত। যৌনতাপ্রবণ কবিতা থেকে তার কাব্যচর্চা ক্রমে রাজনৈতিক ও প্রতিরোধমূলক হয়ে ওঠে।

কাব্বানি শেষ জীবনটা লন্ডনে কাটান পনের বছর ধরে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে পঁচাত্তর বছর বয়সে লোকান্তরিত হন। তার ইচ্ছানুসারে তাকে দামাস্কাসে সমাহিত করা হয়।


গ্রীষ্মে

গ্রীষ্মে
সৈকতে হাত-পা ছড়ালাম
আর তোমার কথা ভাবলাম।
সাগরকে যদি বলে দিতাম
তোমাকে নিয়ে আমি কী অনুভব করছি
তবে সে ছেড়ে আসত তার কূল
তার ঝিনুক-শামুক
তার মাছ,
আর আমার পিছে পিছে চলে আসত।

সাগরে প্রবেশ

অবশেষে প্রেম হলো,
আর আমরা বেহেশতে ঢুকলাম,
পিছলিয়ে
পানির চামড়ার নিচে
মাছের মতন।
আমরা দেখলাম সাগরের দুর্লভ মুক্তাগুলো
আর চমৎকৃত হলাম।
অবশেষে প্রেম হলো
কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই
মাছের সমাধিতে।
সুতরাং আমি দিলাম...তুমিও দিলে
আর আমরা ঠিকঠাক ছিলাম।
অবাক-করা সহজভাবে হলো এটা
জুইঁগন্ধী পানি দিয়ে লেখার মতন
মৃত্তিকায় বসন্তের প্রবাহের মতো।

যখন কেউ প্রেমে পড়ে

যখন কেউ প্রেমে পড়ে
প্রাচীন শব্দ সে কি ব্যবহার করতে পারে?
কোনো মেয়ে কি
চাইবে যে তার প্রেমিক
শুয়ে থাকুক
ব্যাকরণবিদ আর ভাষাতাত্ত্বিকের সাথে?
আমি কিছুই বলি নাই
ওই মেয়েটিকে, যাকে ভালোবেসেছি,
বরং একটি স্যুটকেসের ভিতরে
জড়ো করেছি
প্রেমের যত বিশেষণ আছে সব,
আর সমস্ত ভাষা থেকে পালিয়ে গেছি।

আমার প্রেমিকা জিজ্ঞেস করল

আমার প্রেমিকা আমাকে জিজ্ঞেস করল
‘আমার আর আকাশের মধ্যে
কী পার্থক্য আছে?’
পার্থক্যটা হলো এই :
যখন তুমি হাসো
তখন আমি আকাশের কথা ভুলে যাই।
যখন আমি ভালোবাসি
যখন আমি ভালোবাসি
তখন অনুভব করি, আমি সময়ের রাজা,
পৃথিবী আর এতে যা কিছু রয়েছে সবই আমার,
আর আমি ঘোড়ায় চেপে সূর্যে যাচ্ছি।

যখন আমি ভালোবাসি

তখন আমি তরল আলোয় পরিণত হই
চোখে দেখা যায় না যা
আর আমার খাতায় লেখা কবিতাগুলো
লজ্জাবতী ও পপি ফুলের ক্ষেত হয়ে ওঠে।
যখন আমি ভালোবাসি
আমার আঙুলগুলো হতে প্রবলভাবে পানি নির্গত হয়
আমার জিহ্বায় গজায় ঘাস
যখন আমি ভালোবাসি
তখন আমি সকল সময়সীমার বাইরের সময় হয়ে উঠি।
যখন আমি কোনো নারীকে ভালোবাসি
সবগুলো বৃক্ষ-তরু-গাছ
খালি পায়ে আমার দিকে ছুটে আসে...

প্রেমের তুলনা

আমি তোমার অন্য প্রেমিকদের মতো না,
ও আমার প্রিয়া;
অন্যে যদি তোমাকে মেঘ দেয়
আমি দেই বৃষ্টি,
অন্যে যদি লণ্ঠন দেয়
আমি দেব চাঁদ,
অন্যে যদি তরুশাখা দেয়
আমি দেব বৃক্ষসকল,
আর অন্যে যদি তোমাকে জাহাজ দেয়
আমি তোমাকে ভ্রমণ দেব।

গনক

দুচোখে ভয় নিয়ে বসে ছিল সে
উল্টানো কাপটিতে মনোনিবেশ ছিল তার,
বলল সে, দুঃখ পেয়ো না, বাবা,
ভাগ্যে আছে, প্রেমে পড়বে তুমি।
বাবা রে, যে তার প্রিয়র জন্য
নিজেকে উৎসর্গ করে, সে শহিদ হয়।
বহুকাল ধরে আমি ভাগ্য গুনে আসছি,
কিন্তু তোমার মতো পাঠ করি নাই আগে;
বহুকাল ধরে আমি ভাগ্য গুনে আসছি
তোমার মতো দুঃখ আমি দেখি নাই আগে।
প্রেমের সাগরে চিরকাল পালবিহীন নৌযানে ঘুরে বেড়ানোই পূর্বনির্ধারিত আছে,
তোমার জীবন একটি কান্নার বই হবার জন্য পূর্বনির্ধারিত আছে,
আর পানি ও আগুনের মাঝে বন্দী হয়ে থাকা।
কিন্তু সমস্ত যন্ত্রণা সত্ত্বেও
সকল দুঃখময়তা সত্ত্বেও
ওইটিই আমাদের সাথে আছে দিবানিশি
বাতাস সত্ত্বেও
বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও
সামুদ্রিক ঝড় সত্ত্বেও
ভালোবাসাই, বাপ আমার,
ওইটিই চিরকাল সবচেয়ে ভালো ভাগ্য।
তোমার জীবনে একটি মেয়ে আছে, বাবা,
তার চোখগুলো এত সুন্দর যে তা আল্লাহ তায়ালার রহমত,
তার মুখ আর হাসি গোলাপ ও গানে ভরপুর,
আর তার যাযাবর ও পাগলা জীবনের প্রেম সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায়।
যে মেয়েটিকে তুমি ভালোবাসো সে-ই তোমার সমস্ত জগৎ হতে পারে,
কিন্তু তোমার আকাশ বৃষ্টিময় থাকবে,
তোমার পথে থাকবে বাধাবিঘ্ন,
বাধায় আকীর্ণ থাকবে পথ, বাপ আমার।
তোমার প্রেমিকা একটা পাহারায় ঘেরা প্রাসাদে ঘুমিয়ে আছে,
যে তার বাগানের কাছে যাবে
যে তার ঘরে ঢুকবে
এবং যে তাকে প্রস্তাব দেবে
অথবা তার সাথে মিলিত হতে যাবে
তার হারিয়ে যাবার কারণ ঘটাবে সে,
বাপ আমার, হারিয়ে যাওয়া...
তুমি খুঁজবে তাকে সব জায়গায়, বাবা,
তুমি সাগরের ঢেউরাশিকে জিজ্ঞেস করবে তার কথা,
তুমি সাগরের কূলকে জিজ্ঞেস করবে,
তুমি সমুদ্রসমূহে ঘুরে বেড়াবে,
তোমার অশ্রুরাশি বয়ে যাবে নদীর মতো।
আর জীবনের শেষপ্রান্তে এসে
তুমি বুঝতে পারবে যে যেহেতু তোমার প্রিয়তমার
দেশ নাই, বাসা নাই, ঠিকানা নাই,
তুমি কেবল একটা ধোঁয়ার চিহ্নের পিছে ছুটেছিলে।
এটা কত কঠিন ব্যাপার, বাপ আমার,
এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসা
যার কোনো দেশ নাই,
যার কোনো বাসা নাই।

জেরুজালেম

চোখের পানি না শুকানো পর্যন্ত আমি কাঁদলাম
মোমবাতি নিভে যাওয়া পর্যন্ত কাঁদলাম আমি
মেঝেতে ফাটল ধরা পর্যন্ত আমি হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে থাকলাম
মোহাম্মদ ও যিশু সম্পর্কে জানতে চাইলাম আমি
ওগো জেরুজালেম, নবীদের সৌরভ,
পৃথিবী ও আকাশের মধ্যকার সংক্ষিপ্ত পথ
ওগো জেরুজালেম,
আইনের সভাঘর
অপরূপ এক শিশু যার আঙুলগুলো
পুড়ে কালো হয়ে গেছে আর চোখদুটো আনত
ছায়াময় মরুভূমি তুমি নবীগণ যার মধ্য দিয়ে গেছেন
তোমার সড়কগুলো বিষণ্ণ
তোমার মিনারগুলো শোকগ্রস্ত
তুমি এক কলো পোশাক পরা তরুণী,
কে বাজায় ঘণ্টা যিশুর জন্মের স্মরণে
শনিবার সকালে?
শিশুদের জন্য কে আনে খেলনা
বড়দিনের প্রাক্কালে?
ওগো জেরুজালেম,
চোখে বহমান বিশাল অশ্রু
কে থামাবে আগ্রাসন
তোমার ওপরে, ওগো ধর্মসমূহের মুক্তা?
কে তোমার রক্তমাখা দেয়ালগুলো ধুয়ে দেবে?
কে রক্ষা করবে বাইবেল?
কে উদ্ধার করবে কোরান?
কে বাঁচাবে খ্রিস্টকে?
কে বাঁচাবে মানুষ?
ওগো জেরুজালেম, আমার শহর
ওগো জেরুজালেম, আমার প্রেম
লেবু গাছগুলোয় কাল ফুল ফুটবে
জলপাই গাছগুলো আনন্দ করবে
তোমার চোখ নেচে উঠবে
দেশান্তরী পায়রাগুলো ফিরে আসবে
তোমার ভীতসন্ত্রস্ত ছাদে
আর তোমার শিশুরা খেলবে আবার
পিতাপুত্রের মিলন হবে
তোমার গোলাপশোভিত পাহাড়ে
আমার শহর
আমার শান্তি ও জলপাইয়ের শহর।

সুলতান

আমাকে যদি নিরাপত্তার ভরসা দেওয়া হতো
আমি দেখা করতাম সুলতানের সাথে
বলতাম তাকে: মহামান্য হে সুলতান,
আপনার ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো আমার পোশাক ছিঁড়ে ফেলেছে
আপনার গোয়েন্দারা সারাক্ষণ অনুসরণ করছে;
তাদের চোখ
তাদের নাক
তাদের পা আমাকে তাড়া করে ফিরছে
ভাগ্যের মতো, নিয়তির মতো;
তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে আমার স্ত্রীকে
আর আমার সকল বন্ধুদের নামের তালিকা বানায়।
হে সুলতান!
এর কারণ আমি আপনার বধির দেয়ালের দিকে এগোতে সাহস করি,
আমি প্রকাশ করেছি আমার ব্যথা ও বেদনা,
আমাকে জুতাপেটা করা হয়েছে।
হে আমার প্রভু, হে সুলতান!
যুদ্ধে আপনি দুইবার হেরেছেন,
কারণ আপনার জনগণের অর্ধেকেরই
জিহ্বা নাই।

যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি

যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি
একটি নতুন ভাষা জেগে ওঠে
নতুন নতুন শহর, নতুন নতুন দেশ
আবিষ্কৃত হয়।
ঘণ্টাগুলো কুকুরছানার মতো শ্বাস নেয়,
বইয়ের পৃষ্ঠার ফাঁকে ফলে ওঠে গম,
তোমার চোখ থেকে পাখি উড়ে যায় মধুর খবর নিয়ে,
তোমার বুক থেকে কাফেলা রওনা হয়
ভারতীয় বনৌষধি নিয়ে,
চারপাশে আম ঝরে পড়ে,
বনে শুরু হয় দাবদাহ,
আর দামামা বাজতে থাকে।
যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি
তোমার বক্ষ সব লজ্জা ঝরিয়ে ফেলে,
পরিণত হয় বিজলি ও বজ্রপাতে,
তরবারি ও ধূলিঝড়ে।
যখন আমি তোমাকে ভালোবাসি, আরবের শহরগুলো
জেগে ওঠে, প্রতিবাদ জানায়
নিগ্রহের কালের বিরুদ্ধে,
উপজাতীয় আইনের বিরোধিতায় প্রতিশোধের কালের বিরুদ্ধে।
এবং আমি, যখন তোমাকে ভালোবাসি, তখন
এগিয়ে যাই কুৎসিতের বিরুদ্ধে,
লবণের রাজাদের বিরুদ্ধে,
মরুভূমিকে প্রতিষ্ঠানীকরণের বিরুদ্ধে।
আর আমি তোমাকে ভালোবেসে যাব
যতক্ষণ না বিশ্ববন্যা আসে,
আমি তোমাকে ভালোবেসে যাব
যতক্ষণ না বিশ্ববন্যা আসে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;