সবকো মালুম হ্যায় ম্যায়ঁ শরাবি নেহিঁ

একটি শরাবি গজলের তরজমা ও তাফসির



রূপান্তর সৈয়দ তারিক
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

গজল গীতিকবিতার একটি ধারা। আদিতে আরবি কবিতার একটি রূপকল্প এটি। সপ্তম শতক থেকে আরবি ভাষায় এটি রচিত হতে থাকে। পরবর্তীতে অন্যান্য ভাষাতেও এই রূপকল্পটি গৃহীত হয়। ভারতবর্ষে হজরত আমির খসরু এটির প্রচলন ঘটান। প্রেমের সৌন্দর্য, বিরহ-বেদনা, আনন্দ এইসব সাধারণত এর বিষয়।

জনপ্রিয় একধারার গজলকে শরাবি গজল বলে। এসবের কেন্দ্রীয় বিষয় শরাব বা মদ। পঙ্কজ উদাস এই ধরনের গজলের রাজা। এইরকম গান বিস্তর করেছেন তিনি। একটি গজল ‘লা পিলা দে সাকিয়া’—তে তিনি গাইছেন:

মদ ঢালো, সাকি, বোতলের পর বোতল,
মদ খেয়ে হুঁশ ফিরলে আলাপ হবে,
আরো মদ ঢালো, সাকি।

আর একটি গজল ‘এক তরফ উসকা ঘর’-এর কথাগুলো এমন:

একদিকে ওই গোলাপি রমণী বসে,
আরেক পাশেই মদের বোতল-গ্লাস,
মেয়েটিকে যদি বাদ দিই, যাব কই?
মদঘর ছেড়ে বেরোলেই আমি লাশ।
বড় মুশকিলে পড়ে গেছি আমি আজ,
বলে দাও খোদা কী এখন তবে কাজ?

কিন্তু গানে বা কবিতায় মদ মানে কেবল পান করবার উগ্র পানীয়ই নয়। বিশেষ করে সুফি সাহিত্যে মদ প্রায়শই প্রেমের প্রতীক। তাও সাধারণ জাগতিক নর-নারীর প্রেম নয়, ঐশী প্রেম। অবশ্য জাগতিক প্রেমের রূপকেই সেটা সাধারণত বর্ণিত হয়। ভারতীয় ঐতিহ্যে যেমন রাধা-কৃষ্ণের কাহিনী জীবাত্মা ও পরমাত্মার রূপক, সুফিসাহিত্যেও লাইলি-মজনু, শিঁরি-ফরহাদ, হির-রানজা—এইরকম বিভিন্ন যুগলের প্রেমকাহিনীর রূপকে মানব ও স্রষ্টার প্রেমের বর্ণনা রয়েছে।

অহম বা খুদি হলো জীবাত্মা, এর সীমানা অতিক্রম করতে পারলে নিজের সত্তার ভিতরেই আনন্দময়-প্রেমময়-অনন্ত-অসীম সত্তার সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সত্তার প্রেমে মগ্ন হয়ে থাকাই মদ খেয়ে মাতাল হওয়া। আর সেই সত্তাকে লাভ করবার পথপ্রদর্শক যিনি, সেই মুরশিদ-পীর-গুরুর সাথেও একটি প্রেমখেলার আয়োজন রয়েছে সুফি ভাবধারায়। খোদার প্রতিনিধি বা মানবিক রূপকল্প হিসাবেই গুরুর অবস্থান। নিরাকার আল্লাহর সাথে প্রেম করবার আগে তার সাকার প্রতিনিধির সাথে প্রেম করতে হয়। কোরানও বলছে, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে তার রাসুলকে ভালোবাসতে হবে। মদিনায় রওজানিবাসী নবিজির নুরের অর্থাৎ প্রজ্ঞা ও প্রেমের যারা উত্তরাধিকারী তারাই হলেন ওলি ও মুরশিদ। মুরশিদের সাথে প্রেমের রূপকও ওই মদ। অবশ্য সুফি কবিতায় মুরশিদকে প্রায়শই সাকি বা মদপরিবেশক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

সবকো মালুম হ্যায় ম্যায় শরাবি নেহিঁ—এই গজলটাতে প্রথমে সাদামাটাভাবে মদের কথাই বলা হয়েছে। ‘সবাই জানে আমি মদখোর না, কিন্তু কেউ যদি মদ এগিয়ে দেয় তো আমার কী দোষ?’—মনে হতে পারে যেন খোঁড়া যুক্তি দিয়ে নিজের মদ্যপানের বাসনাকে প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এর পরেই বোঝা যাচ্ছে, এই মদ পানীয় বস্তু নয়, এ হচ্ছে দৃষ্টির মদ। প্রেমাস্পদের চোখে যখন চোখ পড়ে যায় তখন যে ঘটনা ঘটে তা অতুলনীয় এক ব্যাপার। দুজন তরুণ-তরুণী যখন পরস্পরের প্রেমে পড়ে, পরস্পরের সান্নিধ্যে আসে, তখন আসলে কী ঘটে? তখন মস্তিষ্কে একটি রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ হয় যার নাম ফিনাইল ইথাইল অ্যামিন (PEA)। এই পদার্থ স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি অ্যামফিটামিন জাতীয় একটি মাদকদ্রব্য। এর প্রভাবে দেখা দেয় উদ্দীপনা-উত্তেজনা, অকারণ আনন্দ-উল্লাস, পারস্পরিক তীব্র আকর্ষণ, বিচার-বিবেচনাহীন কাজকারবার। প্রেমিক-প্রেমিকা অনেক সময়েই যে বলে, ‘তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার নেশা ধরে যাচ্ছে’—তার নিদান ওই দেহরসই।

সুতরাং গজলটিতে বলা হচ্ছে :

শুধু একবার চোখে যদি চোখ পড়ে
কসম তখন ভেঙে যায় যদি
আমি কী করতে পারি?

প্রেম তো এভাবেই ঘটে যায়। চোখে চোখ পড়ল দুজনের, মনের সাথে মনের যোগ ঘটল, শরীরের ভেতর বয়ে গেল স্নায়বিক প্রবাহ, রক্তধারায় মিশল পি-ই-এ আর কেঁপে উঠল তার বাস্তবতা, আগের যত ওয়াদা-শপথ-সিদ্ধান্ত টলে উঠল সব কিছু।

কিন্তু প্রেমের ভাগ্য কি সবার হয়? প্রেমানন্দে রইতে কি পারে সবাই? এও এক ভাগ্যের খেলা বা চান্স ফ্যাকটরের কারসাজি। আবার কাউকে পছন্দ হলেই যে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়া যাবে, এমনও নয়। প্রেম গড়ে ওঠে প্রেমের যোগ্য হৃদয়-মন থাকলেই। কিন্তু যে জন তার অন্তরে প্রেমিক, সে প্রেমানন্দে থাকে আপন প্রেমের জোরেই :

মদ না খেয়েই উল্লাস যদি জাগে
আমি কী করতে পারি?

ধর্মে বলা আছে বেহেশতের কথা। সেখানে আছে সরাবন তহুরা নামের মদ। সেখানে আছে অনিন্দ্যকান্তি চিরযৌবনা হুর। এইসব বর্ণনাতেই লোভাতুর হয়ে মাতাল হয়ে থাকে অনেকে। তাদের জীবনের লক্ষ্য-আদর্শ-উদ্দেশ্য-মোক্ষই হলো জান্নাতে যাওয়া। এই জান্নাতের লোভেই কত যুবক যে জঙ্গি-খুনি হয়ে ওঠে হায়! তাদের বোঝানো হয়, জেহাদে মরলে সে শহিদ হবে, সরাসরি জান্নাত নিশ্চিত। এই জান্নাতের লোভেই সে আত্মঘাতী হয়ে খুন করে অসংখ্য মানুষ।

জঙ্গি হোক বা না হোক, ধর্মবিশ্বাসীরা বেহেশত-দোজখকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় বলেই মনে করে। ভালো কাজ করলে বেহেশতে যাবে ও অনন্ত সুখ ভোগ করবে, খারাপ কাজ করলে শাস্তি পাবে দোজখে। সুফিরা এইসব প্রলোভন ও ভীতিকে আমলে আনেন না। তাদের চর্চার বিষয় প্রেম। তাপসী রাবেয়া বলতেন, ‘আমি আগুন দিয়ে বেহেশত পুড়িয়ে দেব, পানিতে নিভিয়ে দেব দোজখ; যেন বেহেশতের লোভে আর দোজখের ভয়ে লোকে এবাদত না করে; যেন লোকে আল্লাহকে ভালোবেসে তার প্রেমেই চালায় সকল এবাদতি কার্যক্রম।’

কিন্তু কেউ যদি বেহেশতের লোভেই মাতাল হয়ে থাকে, তা নিয়ে কীইবা করার আছে?

মদ খেলে যেমন বেহুঁশ হয়ে যায়, তাল হারায়, তেমনি প্রেমে পড়লেও মানুষ হুঁশবোধ হারায়। হুঁশ যে হারায় তার চমৎকার একটা বর্ণনা আছে কোরান শরিফে। জুলেখার নামে ইউসুফকে নিয়ে যখন বদনাম ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে, তখন নিজের সখিদের একটা পরীক্ষায় ফেললেন তিনি। সবাইকে একহাতে একটা করে লেবু ও অন্য হাতে ছুরি দিয়ে বসিয়ে দিলেন তিনি, বলে দিলেন, যখন তিনি কাটতে বলবেন ঠিক তখনই যেন কাটে তারা লেবু। তিনি আয়োজন করে রেখেছিলেন ইউসুফের ঘরে প্রবেশের। যেই মুহূর্তে ইউসুফ এসে ঘরে ঢুকলেন তক্ষুণি জুলেখা বললেন, ‘কাটো।’ সখিরা সবাই একযোগে কাটল বটে, কিন্তু অপরূপ সৌন্দর্যবান ইউসুফকে দেখে তারা এমনই বেহুঁশ হলো যে লেবুর বদলে নিজের হাত কেটে ফেলল প্রত্যেকে। এরকমই উচাটন হয়ে পড়তেন রাধা কৃষ্ণের বাঁশি শুনে। কিন্তু আমার ভেতরে যে প্রেমানন্দ বয়ে যাচ্ছে তা তো কেউ ঠাহর করতে পারছে না। তাতে আমি কী করতে পারি?

জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, করণীয় ও পদ্ধতি এইসব নিয়ে কতই না ওয়াজ-নসিহত, কতই না ডিসকোর্স-বিশ্লেষণ, কতই না বাগাড়ম্বর! কিন্তু নিজের অহম-আমিত্ব-ইগো-খুদির পিছনে যে মুক্ত-অনন্ত-শাশ্বত পরমানন্দ রয়েছে, রবীন্দ্রনাথ যার কথা এভাবে বলেছেন :

আপনারে দিয়ে রচিলি রে কী এ
আপনারই আবরণ,
খুলে দেখ দ্বার অন্তরে তার
আনন্দনিকেতন।

তার খবর যদি কেউ না রাখে ও না
খোঁজে—আমি কী করতে পারি?


সবকো মালুম হ্যায় ম্যায় শরাবি নেহিঁ গজলটির রচয়িতা আনওয়ার ফররুখাবাদী। তিনি ফানা ছদ্মনামেও রচয়িতা হিসাবে পরিচিত। তিনি একজন সুফি কবি ছিলেন। গজল, কাওয়ালি, অন্যান্য ধরনের গান ও কবিতার রচয়িতা তিনি। ১৯২৮ সালে জন্ম তাঁর, প্রয়াত হন ২০১১ সালে। কারবালার বিষয় নিয়ে বিখ্যাত মর্সিয়া গান লেখেন তিনি, সামসাদ বেগম সেটি গেয়েছেন। তার লেখা গজল ‘ইয়ে জো হালকা হালকা সরুর হ্যায়’ নুসরাত ফতেহ আলি খান ও অন্যান্য শিল্পীরা গেয়েছেন। বর্তমান গজলটি পঙ্কজ উদাস গেয়েছেন :

সকলেই জানে, আমি মদখোর নই
তবু যদি কেউ বাড়ায় গ্লাস তো
আমি কী করতে পারি?

শুধু একবার চোখে যদি চোখ পড়ে
কসম তখন ভেঙে যায় যদি
আমি কী করতে পারি?

অল্প লোকেই এমন ভাগ্যবান,
দৃষ্টির মদ খেয়ে তারা নেশা করে;
অল্পজনেই অনুমতি দেয় খেতে
মায়া চোখ হতে যেই মদ ঝরে পড়ে।

আমার শপথ যদিও বড্ড কড়া
কিন্তু বলো তো, আমি কী করতে পারি?
মদ না খেয়েই উল্লাস যদি জাগে
আমি কী করতে পারি?

শুধু উল্লেখ আছে রঙ আর নুর
ওমনি জিকির : জান্নাত আর হুর,
আমি করি পান সৌন্দর্যের মদ
বিজ্ঞজনেরা তাতেই নেশায় চুর :
আমি কী করতে পারি?

শুঁড়িঘরে যত মত্তজনেরা ভাবে
তাদের মতন আমিও বুঝি মাতাল,
যেহেতু আমিও তাদের মতন করে
প্রায়শ হারাই তাল।

যদিও আমার শিরায় শিরায় বয়
প্রেমানন্দের ঢেউ
কিন্তু যদি তা বুঝতে না পারে কেউ,
আমি কী করতে পারি?

যদিও কেবল বাকোয়াজি করে যাও—
অহম পেরোলে আনন্দধারা আছে
সেটা না জানতে পাও,
এ জীবন এক মহা আনন্দ, যদি
মদ খেয়ে মজা পেতে না-ই শেখো,
আমি কী করতে পারি?


আরো পড়ুন সৈয়দ তারিকের অনুবাদে বুল্লে শাহ’র কবিতা

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;