নির্দয়রকম নতুন কবিতার ঘ্রাণ



ফারুক আহমেদ
ছবি: মারুফুল ইসলাম / অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

ছবি: মারুফুল ইসলাম / অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

কবিতা কেমন হওয়া উচিত, এর উত্তরে ছন্দ, মাত্রা, অনুপ্রাস, কবিতার অলঙ্কার এইসব নিয়ামক নিয়ে নানারকম টানাহেঁচড়া করা যেতে পারে। কিন্তু কবিতা কেমন, তার উত্তর পাওয়া যাবে না শেষতক। কবিতা কেমন, এর উত্তর আসলে একটাই, তা হলো কবিতার ইতিহাস। বাংলা কবিতার আধার ও আধেয় অনুসন্ধান করতে গেলে এর ইতিহাস, মানে ধারাবাহিক কবিতাপাঠই আমাদের কোনো একটা সিন্ধান্তে পৌঁছে দিতে পারে। এর বাইরে আর কিছু না, না ছন্দ, না অলংকার। এগুলো সবই একটি বৃহৎবৃক্ষের ডালপালা, সৌন্দর্যস্বরূপ।

এখন যদি বাংলা কবিতার ইতিহাসের কথা বলতে হয়, তবে মোটাদাগে কিছু সময় এসে হাজির হবে; সে সময় ধরে কোনো কোনো কবির নামও। বাংলা কবিতার হাজার বছরের ইতিহাসে আমরা না গিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতার উদ্গাতা মাইকেলের নাম স্মরণে নিয়ে, সমসাময়িক ধারার সুত্রপাতকারীগণের স্মরণে নেওয়া যেতে পারে। এই সূত্রপাতকারী পঞ্চপাণ্ডবদের শীর্ষজন জীবনানন্দের নাম স্মরণ করে আরেকটু যদি এগুনো যায়, তাহলে চলে আসে গত শতকের পঞ্চাশ দশক। পঞ্চাশ বা ষাট—এই দুই দশক স্বাধীনতাত্তোর বাংলা কবিতার পথঘাট ঠিক করে দিয়েছে। সেই পথঘাট ধরেই আমরা হেঁটে হেঁটে মুগ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াই। এর মধ্যে হয়তো ভেতরে ভেতরে নতুন পথ তৈরি হয়ে গেছে, অথবা যায়নি। স্বাধীনতাত্তোর কবিতায় প্রবল পরাক্রমে আছেন আল মাহমুদ। পরবর্তী সময়ে আরো অনেকেই আছেন। আবিদ আজাদ নামে এক কবির কবিতা পড়ে, আমরা কিছুদূর পথ হাঁটি বা তারও পরে রিফাত চৌধুরী, সে অন্য একটা ধরন বা কামরুজ্জামান কামু, দিন দিন তীব্র হয়ে ওঠা এক কবি। এমন তো আরো আছেন। তাঁর মধ্যে এমন অনেকে বোধহয় আছেন যাঁদের আমরা জানি না। যেমন জানতাম না, কবি মারুফুল ইসলামকে। মারুফ ভাইকে প্রথম জানলাম, সাবের (মঈনুল আহসান সাবের) ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে। কেননা সাবের ভাইয়ের একটা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে, তাঁর সঙ্গে পরিচয়। এরপর দুয়েকটা কবিতা পড়ে মনে হলো, উনি শুধু সাবের ভাইয়ের বন্ধু নন, উনি একজন কবিও।

তো মারুফুল ইসলাম কেমন কবি—ফাস্টক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস না গৌণ কবি। উনি অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন, বিদ্যার দৌড়ে উনি একজন প্রথম শ্রেণীর বিদ্যান। তো কবিতায়? এর উত্তর নাই। কবির ফাস্ট, সেকেন্ড নাই। আছে মুখ্য এবং গৌণ। এই মুখ্য এবং গৌণতার নির্ধারক কে? অবশ্যই পাঠক। না পাঠক না, অবশ্যই অন্য আরেকজন কবি। একজন প্রকৃত কবি (নকল, গোষ্ঠীকানা নয়) আরেকজন প্রকৃত কবিকে সাধারণত শনাক্ত করতে পারে, অন্য কেউ না। আর আমি পাঠক বলব, মারুফুল ইসলাম একজন নির্দয় কবি, একজন উপমা-চিত্রকল্পের ব্যবসা-বাণিজ্য করা কবি। একই সঙ্গে কবিতার চিরকালের আধেয়- ছন্দ, অনুপ্রাণ এইসব বিরাজমান তার কবিতায়, তিনি তাতে সিন্ধহস্ত। সবচেয়ে বড় কথা, মূল কথা, মারুফুল ইসলাম নতুন কবিতার কবি। যাহোক এই যে একজন নির্দয় কবি, এটাই টেনেছে তাঁর কবিতার প্রতি। শব্দ ব্যবহারে খুব বেশিরকম সচেতন এই কবির কবিতা পড়ে প্রথমে আমার ভেতর একরকম ক্ষোভ জন্মায়, মনে হয়, কী অসুবিধা ছিল, দুটা শব্দ বেশি ব্যবহার করলে? কী অসুবিধা একটু গীতিময়তা থাকলে। প্রকৃতই গীতময় যদি আশা করি, সে গোপন, আবিষ্কার করে নিতে হবে। যখন দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার পড়ি, তখন কিন্তু একটু একটু করে আবিষ্কার করি ভেতরের আনন্দ, ভেতরের ঐশ্বর্য। বহিরাঙ্গে মারুফুল ইসলামের কবিতার শরীর জুড়ে টান টান শব্দই মুখ্য হয়ে আছে। এটা একই সঙ্গে আমার ভেতর ক্ষোভের জন্ম দেন, আবার টেনে নেয় তাঁর কবিতায়। এরকম কবিতা আসলে অনেকদিন পাই না।

অনেক কবির একইরকম কবিতা পড়ে, এসব কবিতা পড়লে মনে হয়, ভেতরে যে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে, তা আসলে নতুন একটা দিকে টেনে নেওয়ারই উপলক্ষ। জীবনানন্দের অজস্র চিত্রকল্প বা আল মাহমুদের কবিতায় বিরোধাভাস যেমন টেনে নেয়, মারুফুল ইসলামের কবিতাও টানে শব্দ ব্যবহারের কৃপণতা এবং বহুবিচিত্র চিত্রকল্পের কারণে। ধরা যাক, তাঁর ‘আয়নাশহর’ কাব্যগ্রন্থের কথা। পৃথিবীর নানা শহর, যেসব শহর উনি ঘুরে বেরিয়েছেন, সেসব শহর ঘিরে এই কাব্যগ্রন্থ। এতে শহর ঘিরে তাঁর যে অনুভূতি সেটুকুতে আবন্ধ থাকেনি। দেখা যায় কবিতার দুটা লাইন ধরে চলে এসেছে সে শহরের ইতিহাস, অথবা শহরটির চরিত্র, বেদনা, আনন্দ—এইসব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে কবিতার শেষে হয়তো। একইসঙ্গে কবিরসঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া, বা শহরের সঙ্গে কোনো একটা সময় কবি যে ভাগাভাগি করেছে, সেটুকু চলে এসেছে এসব কবিতায়। দুটা উদাহরণ দিই, প্রথমত, ‘মাদ্রিদ’ শিরোনামে কবিতার চারটি লাইন—“ধাতব ঝংকারে মূর্তিমতী স্পেনীয় কামনা/তার কণ্ঠে তার ওষ্ঠে তার স্তনে মাদকতার মোহর/তার যোনি মেলে ধরে যামিনীর তৃতীয় প্রহর/তার যোনিলোমে লেগে থাকে আরবীয় ভোগের বিলাস।” কখনো যদি মাদ্রিত যাওয়া হয়, তাহলে আগে থেকে জানা থাকলো মাদ্রিক কখন তার অবগুণ্ঠন উন্মোচন করে। আরেকটি কবিতা, যে শহর ধরে রেখেছে কবির শৈশবের সময়—“প্রথম সিগারেট তুমি, ফেনী/প্রথম চুমু/প্রথম অনুভব প্রেম প্রেম/প্রথম চোখ মেলে দেখতে চাওয়া বয়সের গোপন কুঠুরি”... ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব তাঁর কবিতার কর্মের খণ্ডিত অংশ। এসব কোনোমতেই তাঁর কবিতার প্রতিনিধিত্বও করে না; তাঁর একাধিক কবিতা পাঠই অনুভব করা সম্ভব কবিতার স্বাদ।

আরেকটি ব্যাপার, এই কবির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। একটি কবিতায় অনেকগুলো পথ থাকে। ফলে পাঠক অনেকসময় বিভ্রান্ত হতে পারে, কবিতার মূল কোথায়। অন্য সমসাময়িক কবি থেকে আল মাহমুদকে যে জায়গায় আলাদা করা যায়, তা হলো দুই বা তারো বেশি পথ/সুর তিনি একই কবিতায় যুক্ত করেছেন। একভাবে হয়তো শুরু হলো, অন্য প্যারায় অন্য এক দৃশ্য, সেসব ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য শেষে গিয়ে মিলে যাচ্ছে। অথবা যাচ্ছে না, কিন্তু শেষে একটি দারুণ অনুভূতি বা ঘটনার দ্যোতনা পাওয়া যায়। এই ব্যাপারটা মারুফুল ইসলামের কবিতা মুহূর্মুহ আছে। এত যে, মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হতে হয়, এত পথ এতটুকু জায়গায়, মাত্র কয়েকটি লাইনে ঢুকে গেলে কবিতার পাঠক বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক উৎসমুখ বা পরিসমাপ্তি কোথায় ঘটল। আমাদের কবিতার পাঠক ততদূর যাবে সেই জায়গা এখনো তৈরি হয় নাই। অথবা আমরা সেরকম অনেক কবি এখনো পাই নাই যা হোক, এসব বাদ দিয়ে যদি একটি অভাবনীয় চিত্রকল্প পাই, তবে থামতে হয়। সেটা এই কবির কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়। আর নতুন কবিতা, নির্দয়রকম নতুন কবিতার ঘ্রাণ তাঁর কবিতা পাঠে পাই। পাঠক হিসেবে আমি এরকম কবিতাপাঠেই আগ্রহ বোধ করি।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;