একখানা স্বাদহীন দিবসের তরজমা বটে



এনামুল করিম নির্ঝর
লেখকের নিজস্ব আলোকচিত্র অবলম্বনে

লেখকের নিজস্ব আলোকচিত্র অবলম্বনে

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র বেগে ছুটে আসছে গজব!

গুডজব গুডজব বলে তখন হাততালি দিচ্ছে প্রকৃতি!

কৃতি পাগলেরা তবু কিছুতেই বোঝে না কোত্থেকে আসে তা; কেনইবা কী এমন কারণ তার!

চোখ দুটো ডান হাতের পিঠে ডলতে ডলতে আসেন পর্যবেক্ষক। তাঁর উঁকি দেওয়া অভ্যাস বেহিসেবী বাম হাত, কাৎ হয় রক্ষাকারীর চমকে দেওয়া ধমকে। তার মুঠোর ভেতর জাপটে ধরে রাখা ইবলিশ হ্রস্ব উ-কার! নড়ন-চড়ন বুঝে উড়তে উড়তে ঠিকঠাক বসে যায় গ অক্ষরের পুচ্ছদেশ বেশে!

ব্যাস, শুরু হয় খেলা! গজব গুজব হয়ে ডানা মেলে হুহু ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় বিস্তৃর্ণ তল্লাটে । খাটে বসে থাকা পক্ষাঘতে’র ঘানিটানা যে অর্বাচীন ছায়াব্যক্তি, সে এবার পর্যবেক্ষকের আদলটা বিনাশর্তে ধার নেয় এবং শুরু করে হাঁক-ডাক হৈ হল্লা। কল্লা বাড়িয়ে প্রতিবেশি মজমা নেয় নিচ্ছে বটে, তবে আমল দেয় না তাপে!

ব্যক্তি ডাকছে তার গিন্নীকে, কৈ গো কৈ গো কৈ গো কৈ গো!

স্বাধীন ব্যাংক এবং পরাধীন মগজ সঞ্চয় প্রকল্পের প্রীতি আয়োজনে খিঁচুড়ি উৎসব আজ! আমন্ত্রণ উদ্যোক্তা অউকওআবাচস-অবসরপ্রাপ্ত উন্নয়নকর্মী ও আদর্শবাদী রাজনৈতিক চর্চা সংঘে’র। হঠাৎই বাহারি নিমন্ত্রণপত্রখানা গিন্নী’র ছাপাছাপা শাড়ির মতো মেলে ধরে নিজেকে। ছায়াব্যক্তি ভাবে, তাজ্জব বিষয়! হয় কোনো বিশেষ ঘটনা অথবা কোনো অচেনা টান, খানখান ভাগ্যটা যাবে জোড়াতালি মেরামতে।

বহুবহুদিন পর নিজেকে বিশেষ কেউ ভাবার সামান্য ফুরসৎ পায় ভদ্রলোক...। আসলে এটাই ঘটনা হয়তো, কদিন থেকেই মনে হচ্ছিল, হবে কিছু একটা হবে এবার আলবৎ। তিনি আবার ডাকেন গিন্নীকে, কৈ গো কৈ গো কৈ গো কৈ গো! গোঁয়ার মনটা হুট করে উঠে জ্বলে তার, আগুন আগুন তাপে কাঁপে শরীর সাংসারিক আহলাদে! পাড়ার ঘুম ভাঙ্গা আওয়াজে সাড়া না পেয়ে বেশ গোস্বা গোস্বা কদমে হনহন করে ছুটতে শুরু করেন তিনি।

ভাত বেড়ে কেবল বসা গিন্নী তখন তেড়ে আসে রে রে রে রে করে।

: কানে শোনার মেশিন গিয়েছে পচে, কেনার মুরোদ নাই! খালি দোষ ধরে তেজ দেখাচ্ছো আজ। থামো তুমি, বলো আগে হঠাৎ কে দিল এমন তেল তোমার অবশ শরীরে?

: কেউ না, কেউ না... এএমনি টান

: নিশ্চই আবার দিয়েছো কোনো গুজবে তাহলে

আরে নাহ্, বলে মেলে ধরলেন বাহারি নিমন্ত্রণপত্রখানা তিনি।

: যাই বিশেষ দিবসে যাই কপালটা ঘষে দেখি গিয়ে, দেখি কিছু ঘটে কিনা সাজা ঘিয়ে । বাকি আছে যত দম, আরো যাবে পচে সংকোচে সংকোচে...
: কিন্তু এই বয়সে এমন বেহায়পনা? ছ্যাঁ ছ্যাঁ ছ্যাঁ… এমন ন্যাংটো হয়েই যাচ্ছো তুমি সেথা? অ্যাঁ ?

ব্যক্তি থামলেন, একটু ঘামলেন।

: তাই তো, ছেঁড়া প্যান্টখানা সেলাই করতে দিয়ে বেমালুম ভুলে বসে আছি দেখছি! শার্টটা পরেছি ঠিকই, কিন্তু নীচতলা তো একদম খালি ঘর-বারান্দা হে!

গিন্নী তখনো তাকিয়ে। যা দেখে পাল্টা জোর বেড়ে যায় ব্যক্তির মনের—
সবটাই জোড়াতালি ফালিফালি হাহাকার,
লজ্জা’র ব্যকরণে পড়াশোনা সমাহার!
ঘুরে ফিরে অজুহাত তুমি কে হে সর্দার
সময়ের ন্যাংটামো পরে আছো জামা কার?

: ফিরে তাকানোর সময় নেই আমার একদম। দুনিয়ায় কমবেশি সবই তো উলঙ্গ এখন, সেটা নিয়ে এত ঢং করার আছে! সবাই ন্যাংটা এখন... সবই ন্যাংটা, ন্যাংটো...

বলতে বলতে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা কাগজ মুঠোয় আঁকড়ে ধরে লজ্জা ঢাকে সে । তারপর কদম চলে সাধারণ মানের চেয়ে একটু বেশি গতিতে। যেন কতদিন নিজেকে নিজের মতো মনে হয়নি তার। সর্বস্ব হারানো মানুষের ভেতরেও যে টিকে থাকা সামান্য আঁচ বেঁচে থাকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হবার আশায়! মনে হয় যেন কেউ তাকে কোনোদিন বোঝয়নি মুক্তি শব্দে’র যুক্তিটা আসলে কী! একটা স্বাদহীন স্বাধীনতার রুটি এপাশ ওপাশ করতেই খরচ হচ্ছে শ্বাস। যা হোক, এবার যাওয়া যাক আমন্ত্রণে...

মাঠে তখন মহাআড়ম্বর! খানিকটা থেঁতলে যাওয়া ঘাসের পিঠে বসে মহাসমরোহে বগল বাজায় আম খাওয়া জনগন। কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল এবং রয়েল বেঙ্গল কেন জাতীয় পশু এনিয়ে চলছে চরম কুস্তী বিতর্ক। আশাবাদ ব্র্যন্ডের বাসি পাউরুটির নুয়ে পড়া একেকটা স্লাইস গুঁজে দেওয়া হচ্ছে সকলের পেতে রাখা হাতে। একটা বাচ্চা হাত বাড়িয়েছে দুবার । কেবল কথা বলতে শিখে খিদাটও বেড়েছে খুব তার। আর যায় কোথায়! বিতরণ বাহিনী জ্বলে উঠে হিংস্র জন্তুর মতো। মেজাজ মর্জিতে ঠান্ডা পানি ঢালবেন? কিন্তু পানি কই?

গজব গুজব, গুজব গজব ঢেকুর তুলে চলতি আবহওয়া’র হাতপাখা নাড়েন বিশেষ মহাজন। “তুই আমারে করলি দিওয়ানা” গান গাওয়া গর্ধভটাও হু হু করে বুক ফাঁটা কান্না কেঁদে বলে উঠে, আমরা আসলে ধংসের দারপ্রান্তে! রক্ষা করো মালিক। শালিক সংখ্যা নিয়ে মেতে থাকা তরুণী তখন মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে থাকে। একটা, দুইটা তিনটা...সংখ্যা আসলে কিছুই না। ভাগ্যে মাখন থাকলে এমনিই চকচকে হয়ে যায় সব।

মহাজন হাতপাখা নেড়ে লাথি মারে মাঠের থেঁতলে যাওয়া ঘসে।…নিয়ন্ত্রণ- কন্ট্রোল! ঢোল বাজাও, কিন্তু নিঃশব্দে। খাও, কিন্তু মুখে খাবার-দাবার না দিয়ে। কান্না, রান্না-বান্না, খিদা বা চাহিদা, চলন বলন, মন-মানসিকতা এবং আবেগ বেগের নিয়ন্ত্রণ অতিব জরুরি। চুপটি করে থাকো হে ভাবুক দল, তল থেকে উপর পর্যন্ত যত জিন্দা-মূর্দাছল, জল ফেললে ফেলে দাও। ফাঁকা করো ঘটি বাটি, শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণই হোক পরিপাটি!

এতক্ষণ এলোমেলো দৃশ্য কাঁধে ক্লান্ত ছায়াব্যাক্তি একটু দাঁড়াবেন। পেছন দিকটায় তখন মহড়া চলছে মহামাতব্বরদের! “আসলেই কি আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ” ছায়ব্যক্তি জিজ্ঞাসায় স্বাক্ষী হতে চান মিথ্যে বাস্তবতার। নিয়ন্ত্রণের চাবি, দাবি তোলা ভোলামনে সান্ত্বনা’র মাখন চিবুতে চায় বাদাম ভাজা হয়ে।

স্বচ্ছ হয় ব্যক্তি’র মশকরা শতকরা যত ভাগ। তত রাগ ঢেকে বোঝাই যায়, এই বিশেষ আয়োজনের রুমালটায় নকশা কাটা—হাজার কোটি টাকার বিশেষণ মাত্র।

তিনি তাকালেন ডান থেকে বামে এবং বাম থেকে ডানে। তারপর দিলেন একটা অট্টচিৎকার, ফুটবল কই ফুটবল?

পাশের এক ছাপোষা জনতা ডাবল মশলার পানের পিক্ ফেলে ফিক্ করে হাসে, পাগলটা দেখি ফুটবল আর ক্রিকেটের তফ্যাৎটাই বোঝে না!

: হ... বুইঝ্যা আপনি এক্কেরে আহসান মঞ্জিল কিইন্যা বুড়িগঙ্গার হাওয়া খাইতেসেন এক্কেরে!

ছায়াব্যক্তির চামড়ামোটা অনুভূতির তরমুজ দশা।

দেখে লাল, চেখে লাল। স্বাদ লাগে না ঠোঁটে একটুও! অশ্রাব্য, অকথ্য কোনো কথাই আজকাল লাগে না গায়ে একটুও।

কেবল হাত দু’খানা ক্ষ্যাপা শরীরের পেছন পেছন চুপসে যাওয়া নিতম্ব চুলকায় আর ভাবে, কেন আজ শান্ত স্বভাব অশান্ত পর্বত বেশে নির্বাক আড়মোড়া ভেঙ্গে ডাঙ্গায়, ভাঙ্গায় মোটা অংক নোট চোট খাওয়া অজস্র খুচরো সংখ্যার মতো।

চারপাশে তখন জনস্রোতে ভেসে যাওয়া ঢেউ। মাঠময় হাবাগোবা লোকেরা বসে বসে মুড়ি খায়। ব্যক্তির সুড়সুড়ি লাগে, হাসি পায়। কিন্তু বেরোয় না কিছুই, বরং মন থেকে গলা পর্যন্ত এসে একটা ময়লা ত্যানার মতো কাঁচুমাচু ভাঁজ হয়ে লেপ্টে থাকে শ্বাসে। তাঁর আগ্রহের দুরবিন, ক্ষীণ এক আশাবাদ শলাকা, বলাকা হয়ে মেলে ধরে পাখা।

চারপাশের মুড়িখেকো দর্শকের মাঝখানে বাহারী মঞ্চে শুয়ে বসে কথা কচ্ছেন সুবেশী অতিথিগণ। কথা কচ্ছেন স্বাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহাশয়, স্বাধীন ব্যাংকের অর্থ কী? স্বাধীনভাবে টাকা দিবেন, টাকা নিবেন, টাকা রাখবেন, টাকা নিবেন। একটা স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন ব্যাংক তো এমনই হবার কথা হে, একটা স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন নাগরিকদের এমন চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা দিতে না পারলে সকল শহীদের রক্ত নর্দমার পানিতে ঠাঁই পাবে। শুনেছি আপনারা এটা ওটা কচ্ছেন! শুনেন , ধরেন একটা মাটির কলসে পানি ভরে রাখলেন রাতে বিছানায় যাবার পূর্বে। সকালে উঠে দেখলেন কলস ফাঁকা! হে হে এ তো অতি সাধারণ কাণ্ড। ছাগলও বুঝবে অংক না কষে। মাটির কলস তো ফুটো হবেই, হতেই পারে নাকি? এখন সেইটা নিয়ে ধরেন কিছু মরা ধনেপাতা এইটা-সেইটা কেচ্ছা তো বানাতেই পারে নাকি? গুনা গুনা বুঝেন গুনা, কবিরা গুনা সগিরা গুনা, সব খসে যাবে, কিস্যু থাকবেনা নে। ভাগ্যে’র ওপর কি গরুছাগল চরানো যায়? বলেন...

আরেকজন লিখিত বক্তব্য এনেছিলেন বটে, বার কয়েক চেষ্টাও করলেন চোখে চোখ রেখে ইঙ্গিত করার। আবেগী মনটা হাউমাউ করছে বেশ, এ্যাতগুলো কান একসাথে পাওয়া যায়! কথা তো সবারই আছে কিছু না কিছু। অবশেষে কাগজের ভাঁজটা খুলতেই শালা মাইক হারামজাদা বিগড়ে ক্যাঁও ম্যাঁও ক্যাঁও ম্যাঁও করলো শুরু বিভ্রাটে, তার মধ্যেই চিকন বাঁশির মতো হ্যালো হ্যালো আওয়াজ শোনা যায় ভাঙ্গাচোরা আন্দাজে।

মুড়িখেকো জনগন তখন—স্বাদহীন স্বাদহীন বলে উল্লাশে ভাসে সবাই আশেপাশে।

স্বাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেশ বেপোরোয়া, শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে এক কোয়া রসুন খায় চিবিয়ে। হাতের মুঠোয় নিয়ে অণ্ডকোষ জোড়া খানিক খোঁচাখুচি করে হাসে হে হে হে হে করে। বলে, আপনাদের আরো এক প্যাকেট করে মুড়ি দিতে বলব? খাবেন আপনারা?

উল্লাশে মেতে মুড়িখেকো পাবলিক বলে—স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন, স্বাধীন...

চেয়ারম্যানের খলখল হাসি দেখে ছায়াব্যক্তি ভাবলেন একটু পেচ্ছাপ করা দরকার। কিন্তু একটু পা চালাতেই আবার উটকো ধাক্কা। তাও আবার সেই ছাপোষা জনতার সাথে।

: আরে আপনাকে তো চেনা চেনা লাগছে ভায়া ।

: হ্যাঁ, সেই তো আপনাকে হতভাগা ক্লাবে দেখেছি তো। আহতভাগা আর নিহতভাগা’র ক্যারাম কম্পিটিশিনে আপনি খেলা না দেখে স্যুপ খাচ্ছিলেন ছুপ ছুপ করে। আমি গিয়ে বসলাম আর আপনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো টাকাটা আসলে আমরা কবে কখন পেতে পারি, কোন আন্দাজ? সেদিনও পাশ থেকে একজন ফিসফিস করে বলেছিল, ইনি টাকা হারিয়ে পাগল হয়ে গেছেন পুরোপুরি। আজও আপনাকে তেমন পাগলই মনে হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে সেকারণেই আপনি শোকটা কাটিয়ে উঠেছেন সহজে। ঠিক?

ছায়াব্যক্তি প্রশ্ন শুনে পেছনে তাকালেন, গেলেন পেচ্ছাপের চাপ ভুলে। বিশাল এক মূর্তি দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটছে তাকে। তারপাশে যে রঙিন পাতার গাছ, টুকটুকে লাল বর্ণ ফল ধরে আছে তাতে। জনতা চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ছুটছে সেদিকে । মাইকে চলছে তৎপর চিৎকার—
গুজব গাছের গজব ফল
মনটা করে সমতল
গুজব গাছের গজব ফল
মুছবে এবার চোখের জল
গুজব গাছের গজব ফল
বানায় টাকা হাতের কল
গুজব গাছের গজব ফল
জবর খবর জলদি চল

ততক্ষণে বিনাশর্তে ধার নেওয়া পর্যবেক্ষকের আদলটা ফিরে যেতে শুরু করেছে ঠিক। দেখা যাচ্ছে রাস্তা, ছায়ার পাশে ছায়া। একেকটা রক্তাক্ত সিঁড়ি, বেহায়া সময়ের কবলে পড়ে ধার চাইছে মায়া!

ডান কানে শোনা যাচ্ছে ছাপোষা জনতার বয়ান, ওই যে কোকিলের ভাষা বুঝে ব্যখ্যা দিতে জানত যে প্রকৃত বসন্তের। যার নিঃশ্বাসে ভাসত কবিতা আর বিশ্বাসে প্রেমময় গল্প-আভাস!

: এই লোক কি সেই লোক? আমাদের টাকা পয়সা জমা ছিল যার কাছে?

: টাকা যার কাছে, সেইটা তার! আর শুনেন, এইসব এখন জিগায়েন গুগলরে! ...স্বাদহীনতা মানেই স্বাধীনতা। মানলে মান, নাহলে পাছাটা দে আগায়া...এবং সেটাই আর্থিক সেবা।

বামকানে গিন্নীর ডাক, বেঁচে থাকলে উঠে পড়ো জলদি ।

ভদ্রলোক উঠে পড়েন এবং দ্যাখেন একটা গজব ফল রাখা আছে বিছানার পাশে। টকটকে রং, তাকাতেই এমনভাবে মিষ্টি হেসে ডাকল। কিছুতেই ফেরানো গেল না মনটাকে। হোক স্বাদহীন, দিই একটা কাঁমড়!

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;