অদ্ভুত আঁধার এক...



রুমা মোদক
অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

অদ্ভুত আঁধার এক পৃথিবীতে এসেছে আজ, সত্যিকারের আঁধারে ছেয়ে গেছে আমাদের বর্তমান, আমাদের ভবিষ্যৎ। এমন এক আচমকা অন্ধকার যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না আদৌ। আমরা অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক নিরাপত্তার দিক থেকে যারা তৃতীয় শ্রেণির তারা তো বটেই, প্রথম ও উন্নত বিশ্ব হিমসিম খাচ্ছে এই নতুন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায়।

আমাদের জন্য বছরটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় জীবনে বছরটি ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। বিপুল উদ্দীপনায় জাতি প্রস্তুত ছিল বছরটি উদযাপনের। আয়োজনের ঘাটতি ছিল না। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিশালী এক জীবাণু মুহূর্তে সব তছনছ করে দিয়েছে। এক আদেশে থেমে গেছে সব আয়োজন। শুধু কি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের আয়োজন, রাত পোহালে আমাদের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা দিবস। দৃষ্টি মেলে দেখা, অভিজ্ঞতার আলোতে অভ্যস্ত আয়োজনগুলি এবার আর দেখা যাবে না। প্যারেড গ্রাউন্ডে ব্যান্ডে তাল উঠবে না আমাদের জাতীয় এই গৌরবের দিনটি। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মঞ্চগুলি মেতে উঠবে না কোরাসে—এক সাগরে রক্তের বিনিময়ে... কিংবা তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা...।

এই রোগে মৃত্যুর মিছিল ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা যাচ্ছে না। এটা অনেকখানি নির্ভর করবে, কোন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনা মোকাবেলায় কতখানি প্রস্তুত তার ওপর। যে দেশ যতটা প্রস্তুত সে দেশে মৃত্যুর হার তত কম হবে, আর অপ্রস্তুত দেশে অতিরিক্ত রোগীর চাপে বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবের কারণে মৃত্যুর হার সেটা ৫% বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে। ১০০ জনে ৪ জন (যদি ৪% ধরা হয়), ২০০ জনে ৮ জন, দুই হাজারে ৮০ জন, দুই লক্ষে ৮ হাজার জন; আর যদি দশ লক্ষ মানুষ (মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৬%) সংক্রমিত হয়, তবে মৃতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকবে ৪০ হাজারে!

আমাদের দেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ইউরোপীয় দেশগুলো ধারণা করছে এই ভাইরাস তাদের মোট জনসংখ্যার ন্যূনতম ৬০-৭০% মানুষকে আক্রান্ত করবে। তাই আমাদের দেশে ১০ কেন, ২০ কিংবা ৩০ লক্ষ মানুষের মাঝে এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়াটা খুব বিচিত্র কিছু হবে না। ভাবা যায়! দুই থেকে আড়াই লক্ষ মানুষ শেষ হয়ে যাবে এই সংক্রমণ না প্রতিরোধ না করতে পারলে।

কোভিড-১৯ একজন থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে আমাদের সামাজিক মেলামেশার কারণে—বিদেশ থেকে দেশে, পরিবারের একজন থেকে অন্যজন, এক পরিবার থেকে অন্য পরিবারে, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়, শহর থেকে গ্রামে, এবং ক্রমান্বয়ে সারাদেশে! আমরা যদি কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কাজ না করি তবে এই রোগ সারা দেশের প্রতিটি মানুষকে সংক্রমিত করবে! আমরা যদি এলাকা-ভিত্তিক কোয়ারেন্টিন করার চেষ্টা করি, তা সাময়িকভাবে কিছুটা উপকার করলেও দ্বিতীয় দফায় তা আবারও ছড়িয়ে পড়বে; আমরা যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিই, তাহলে সেটা এলাকা-ভিত্তিক কোয়ারেন্টিনের চাইতে ভালো কাজ করবে। তবে, আমরা যদি ব্যাপকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, তাহলে সেটা সবচেয়ে বেশি সুফল দেবে।

আচ্ছা এমন দিন এমন যাপন কি আমাদের কল্পনায়ও ছিল কোনোদিন? আমাদের সব আয়োজন তো বটেই থেমে যাবে আমাদের প্রাত্যহিক দিনগুলো? আমরা কেবলই বাড়ির ভেতরে, ঘর থেকে ঘরে, আরো কক্ষের ভেতরে বিচ্ছিন্ন হবো আরো। আমরা ঘুমাতে যাব প্রবল অনিশ্চয়তায়, কে জানে কাল ভোরটা দেখব কিনা!

এমন নয় যে, আমরা জানি আমরা অসুস্থ। বরং আমরা আছি এক গভীর আতঙ্কে কখন কোন মুহূর্তে আমাদের ভেতর প্রবেশ করে অচেনা অদৃশ্য ঘাতক। আমরা ঢুকে পড়ি মৃত্যুকূপে। আমাদের সাথে প্রতিদিন মহড়ায় আসে, গলা মেলায়, ভুলগুলো ঠিক করে, মঞ্চে উঠার আগে পা ছুঁয়ে আশিস চায়। প্রতি সন্ধ্যায় বাসায় চা-মুড়ি...তুমুল আড্ডা। এই জায়গাটায় বডি লেঙ্গুয়েজটা ঠিক কেমন হলে বেশি ভালো হতো? কিংবা কণ্ঠের ভেরিয়েশন। প্রতিদিন, প্রতিটি সন্ধ্যা। কয়েকদিন ওরা আসছে না। কাল এসে দরজার বাইরে, ঘরে ঢুকছে না। দিদি, না দেখে আর ভালো লাগছে না, তাই দেখতে এলাম। কে জানে যদি এটাই হয় শেষ দেখা!

এ কেমন দিন,এ কেমন অচেনা যাপন!

বিশ্বের সামনে এ এক নতুন পরীক্ষা, ভয়াবহ পরীক্ষা। যে পরীক্ষার মুখোমুখি পরপর কয়েকটি জেনারেশান হয়নি এর আগে। এ এক লড়াই। নতুন লড়াই। কিন্তু শত্রু দৃশ্যমান নয়। চিহ্নিত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হয়তো সহজ কিছুটা, ঢাল তলোয়ার, অস্ত্র, কিছুটা কৌশল।

কিন্তু শত্রু যখন হয় অদৃশ্য, যার বিরুদ্ধে আমাদের কার্যকর অস্ত্র জানা নেই, জানা নেই কৌশল। জানা নেই এর গতি, স্পষ্ট নয় এর প্রকৃতি। অন্ধকারে দরজা খুললেই মনে হচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই গুপ্ত ঘাতক, আমাদের সামান্য অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়েছে আমাদের দেহে, বিপন্ন করে দিচ্ছে আমাদের জীবন, মানব জীবন...মানব সভ্যতা...।

কখনো নিরপরাধ আমরা। কোনো ক্ষমা প্রার্থনা, ভুল স্বীকার, কোনো অনুশোচনা কিছুতেই মুক্তি নেই আর। যদি না প্রকৃতি আমার ভেতর থেকে আমাকে রক্ষা না করে, কোনো পদক্ষেপই কাজে লাগবে না আর।

ভাবতে পারেন কেমন বদলে গেছে আমাদের চেনা পৃথিবীটা? হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা, পরিপুষ্ট হওয়া, শ্লাঘা করা বিশ্বাসের ভিতগুলো কেমন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়েছে। অতিপ্রাকৃত, সর্বশক্তির আধারের উপাসনালয়গুলো থেকে সরে গেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, স্বীকার করি কিংবা না করি পরোক্ষে এ তো আস্থাহীনতাই।

ভাবতে পারেন, হয়তো আপনার সব প্রয়োজন ফুরিয়েছে! এই উদযাপন, উৎসব সবকিছুর। ভাবতে পারেন আর মেলা জমবে না বটতলা হাটতলায়! প্রয়োজন ফুরিয়েছে পা ছুঁয়ে আশিস নেওয়ার, কোলাকুলিতে সৌহার্দ্য বিনিময়ের, হাতে হাত মিলিয়ে ‘হাউ ডু ইউ ডু’ বলে কুশল বিনিময়ের? এক সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবী এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সামনে।

এখানে থিয়েটার নেই, ম্যুভি নেই, ক্লাব নেই, বার নেই, আড্ডা নেই, চায়ের ঠেক নেই কেবল আছে টিকে থাকার অদম্য অসহায় আশা।

সন্তানের গালে চুমু খেয়ে আমরা ভাবছি, এই কি শেষ চুমু! প্রেমের হাত ছুঁয়ে ভাবছি এই কি অন্তিম ছোঁয়া, এরপর আর গন্তব্য নেই কোনো চূড়ান্তের.....? মাকে ফোন দিয়ে ভাবছি, এই কি শেষ শোনা মায়ের কণ্ঠ?

গানটা মনে পড়ছে—একলা মানুষ মাতৃগর্ভে, একলা মানুষ চিতায়....? কিংবা আবুল হাসানের সেই কবিতা, অবশেষে মানুষ জেনেছে সে তার চিবুকের কাছেও একা...? কিংবা চলচ্চিত্রের সেই মেলোড্রামাটিক দৃশ্যটি প্রতারিত প্রেমিকা চিৎকার করে কাঁদছে—প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও...?

আচ্ছা, বুকে আজ একবার হাত দিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমরা কে একা নই? আমাদের এমন কে আছে যার সাথে জীবনের সব গোপন, সব গ্লানি, সব অপমান, সব প্রতারণা ভাগ করে নিতে পারি? গর্ভধারিণী জননী কিংবা ঔরস দেওয়া জনক, এক ছাদের নিচে কাটানো জীবন সঙ্গী কিংবা কাবিন বিহীন বন্ধু কিংবা নাড়ি ছেঁড়া আত্মজ!

যে নিজের জীবন শঙ্কায় ফেলেছে আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে কিংবা আমি নিজের জীবন শঙ্কায় ফেলেছি যাদের জন্ম দিতে, যে আমার জন্য দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছে লাল কাপড় কেউ কি প্রস্তুত আমার আমিত্বের সকল প্রকাশ্য গোপনের ভাগ নিয়ে আমাকে একাকীত্ব থেকে মুক্তি দিতে? না।

এই যে সামাজিক যত আয়োজন, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক তার অধিকাংশটুকুই কেবল গৌরব ভাগাভাগির, স্বার্থ বিনিময়ের-স্বার্থ শব্দটি সবসময় নেতিবাচক নয়, প্রয়োজনেরও। কখনো দুঃখ কিংবা বেদনা ভাগাভাগিরও। কিন্তু জীবনের প্রতিটি বাঁক উপবাঁকের সত্য বলার মতো একাকীত্বহীন কেউ কি আছে পৃথিবীতে? আসলেই তো মানুষ বড় একা...।

এই নতুন যুদ্ধ আরো ক্রমশ একা হবার যুদ্ধ। কতটা আরো কতটা একা হতে পারে মানুষ, এবার পরীক্ষা তার। মানসিক একাকীত্ব শারীরিক একাকীত্বে স্থানান্তরের পরীক্ষা। তুমি তো একাই ছিলে মানুষ, এবার শুধু বিচ্ছিন্ন হও, সাময়িক বিচ্ছিন্ন হও পুনরায় যুথবদ্ধ হবার প্রত্যাশায়...।

এই একাকীত্বের পরীক্ষায় যত ভালো ফল হবে ততই সম্ভাবনা বাড়বে একটি সভ্যতা বেঁচে যাবার।

মানুষ বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে। সভ্যতা বাঁচলে আবার জমবে মেলা বটতলা, হাটতলা....।আমরা আবার পা ছুঁয়ে ফিরিয়ে আনব প্রিয় মূল্যবোধগুলো, গলাগলির বন্ধুত্বে ফিরে যাব নতুন কোনো মূল্যবোধে। হয়তো আমাদের উৎসব উদযাপনগুলো এই ক্রান্তিকালের সাঁকো পার হয়ে ফিরে আসবে নতুন কোনো পোশাকে। যে পোশাকে থাকবে না প্রকৃতিকর্তৃক নির্ধারিত ভিন্নতা ভিন্ন আর কোনো বৈষম্য!

কে জানে হয়তো সব হতাশার অন্ধকার গুহার পেছনে থাকে একটা সূক্ষ্ম আশার আলোক রেখা।এই মুহূর্তে পৃথিবীর কুড়িটি গবেষণাগারে চলছে নিবিড় গবেষণা। মানুষই নিমগ্ন মানুষকে বাঁচাতে। এর যে কোনো একটির সাফল্য মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে দেবে কয়েক হাজার বছর। স্পেনে, ইটালিতে পৌঁছে গেছে চীন, কিউবার চিকিৎসক দল। হয়তো এই পুলিসেরাতের পুল পার হয়ে আমরা দেখা পাব নতুন এক পৃথিবীর।

যেখানে ‘রাজনৈতিক মেরুকরণ’ এক হাস্যকর শব্দ, ‘বাণিজ্যিক অবরোধ’ শব্দটি হারাবে তার নিজস্ব অর্থ। মানুষের বিজয় বিলীন করে দেবে সমস্ত কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস।

জনহীন লোকালয়ে নিরাপদে হাঁটছে যে ময়ূর, মানুষের মায়াময় জগত ছেড়ে সে আর ফিরে যাবার প্রয়োজন বোধ করবে না, পানি ছেড়ে ডাঙায় উঠেছে যে ডলফিন মানুষই হবে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু।

সব নিরাপদ নিরাপত্তা নিয়ে, সব বুদ্ধি আর মেধা মঙ্গলে নিয়োজিত করে মানুষই হবে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অংশ। মানুষই দাঁড়াবে মানুষের পাশে...। এর জন্য সবার আগে ভাইরাসটাকে পরাস্ত করার জন্য, আমাদেরকে সারাবিশ্বের সমস্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। ভাইরাসের ওপর মানুষের একটা বড় বিজয় হবে এটি। কিভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করতে হবে, সে-ব্যাপারে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করতে পারে। সিঙ্গাপুরের একজন চিকিৎসক যা আবিষ্কার করেছেন আজ তা বিকেল নাগাদ ভারতে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।

দেশগুলো উদ্বুদ্ধ হবে নিজেদের মধ্যে মুক্তভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে এবং পরস্পরের পরামর্শ চাইতে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো টেস্টিং কিট আর শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র, উৎপাদন ও বিতরণের জন্য আমাদের একটি বৈশ্বিক প্রয়াসের প্রয়োজন পড়বে। প্রতিটা দেশ স্থানীয়ভাবে এটা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, এবং হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই মজুদ করছে, এরকম করার চেয়ে একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রয়াসই বরং উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করতে পারবে এবং জীবন-বাঁচানো যন্ত্রপাতি সুষম ভাগ হচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করতে পারবে। ৭১ এর বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে প্রধান প্রধান শিল্পখাতগুলোকে জাতীয়করণ করেছিলেন, তেমনি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন উৎসগুলোর শর্তহীন বিশ্বায়নের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

যেখানে করোনাভাইরাসের স্বল্পসংখ্যক রোগী ধরা পড়েছে এমন দেশগুলোর অনেক বেশি রোগী ধরা পড়েছে এমন দেশগুলোতে তারা যন্ত্রপাতি পাঠাতে পারে। তাদেরকে এই ব্যাপারে বিশ্বাস থাকতে হবে, পরবর্তীতে যখন তাদের নিজেদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে, অন্য দেশগুলো সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রয়াস বিবেচনায় আনতে হবে যেসব দেশ এখনো ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সবচেয়ে খারাপ দশায় থাকা অঞ্চলগুলোতে সেসব দেশ তার স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাতে পারে।
অর্থনৈতিকভাবেও আন্তর্জাতিক সহায়তাটা ব্যাপকভাবেই জরুরি, প্রতিটি সরকার যদি সব ভুলে শুধু নিজের দেশের কথা ভাবে এই গভীর সংকট পার পাওয়া সম্ভব নয়। এ সময় আসলে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার সময় বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সময়। সময় রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সব নতুন করে চেনার। স্বাধীনতা দিবসে এ বছর আমাদের নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নতুন প্রত্যয়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;