বইমেলা ২০২০ : মাই শর্টলিস্ট

একগুচ্ছ গোলাপের সুবাস



ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী
গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিবারের মতো এবারের বইমেলা সম্পর্কেও একটি পর্যালোচনা সংযোজিত হলো। এই লিস্টে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, সীমাবদ্ধতা, রুচি ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়েছে। সব বই আমার একার পক্ষে নিরীক্ষা করা কিংবা স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তবু ঘুরেফিরে যা চোখে পড়ল, অন্যের রিভিউ থেকে চেখে দেখে যা মনে এলো, বিচারবুদ্ধি কী বলল সেই অনুযায়ী একটা লিস্ট তো করাই যায়। এখানে কোনো বিষয়ের ‘উল্লেখযোগ্য’ একাধিক বই থেকে ‘নির্বাচিত’ বই সিলেক্ট করা হয়েছে। ‘উল্লেখযোগ্য’ হলো উল্লেখের যোগ্য, অর্থাৎ নানাকারণে ভালো বই, কিন্তু ‘নির্বাচিত’ বই হলো তাদের মধ্য থেকে বিবিধ কারণে রীতিমত উল্লেখ করার মতো বই।

যেহেতু বইমেলা বিশাল, শত শত স্টল, গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৪৯১৯ (মোট বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকা), এর মধ্য থেকে রিভিউ ছাড়া বই খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এবারের বইমেলা আগের যে কোনো মেলার তুলনায় অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে। পরিসর বেড়েছে। হাঁটাচলায় স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। একইসাথে, দুঃখের বিষয়, প্রচুর বেনোজলও প্রবেশ করেছে।

অধিকাংশ ভালো বই এসেছে মেলার মাসের অর্ধেকেরও পরে। তাহলে আর ১-বা-২ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরুর অর্থই বা কি; কিংবা সাড়া মাস জুড়ে মেলা জারি রাখার অর্থই বা কী? একইভাবে, মেলা বাড়ানোর অর্থই বা কী, কেননা যতই বাড়ানো হোক, শেষদিনের আগে মেলায় বই প্রকাশের অর্থই বা কী?

গ্রন্থমেলায় পাঠকের চেয়ে লেখক বেশি, কাগজের আগাছা বেশি। আমি বলেছি, লেখক তুমি পালিয়ে যাও, সময় এখন পক্ষে নয়। একজন লেখক মন্তব্য করেছেন, বন্যার জল বেরিয়ে যাবে, পড়ে রইবে মননশীল পলি। হয়তো তা-ই। মনে রাখা দরকার, একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ একটি পরিশীলিত, সম্পাদিত, মননশীল শিল্পরূপ। এটা ঝাল-মুড়ির ঠোঙ্গা নয়, রাতারাতি ছাপিয়ে ফেললাম। মেলাটির নামই গ্রন্থমেলা, বইমেলা নয়। সব বই-ই গ্রন্থ হয় না। এবারে খাবারের দোকানগুলো ভালো ছিল। বেঙ্গলের দুধ-চা ছিল সবচেয়ে উপাদেয়। দেখা গেছে, বই কিনুক না-কিনুক, মাংস-লুচি-ফুচকার দেদার উদরং চলেছে।

এবারের বইমেলার একটি বিশেষ ব্যাপার হলো প্রচুর অনুবাদগ্রন্থ এসেছে। প্রচুর। ফিকশনের, অনুবাদ, নন-ফিকশনের অনুবাদ। বিজ্ঞানের অনুবাদ। ব্যাপক অনুবাদ। ফলে অনুবাদ ক্যাটিগরিতে ‘নির্বাচিত’ গ্রন্থের নাম আগেই পেশ করি—

নির্বাচিত অনুবাদ
ক) অনুবাদ-ফিকশন—১. গোলাপের নাম, উমবের্তো একো, অনুবাদ: জি এইচ হাবীব, বাতিঘর।
খ) অনুবাদ-নন-ফিকশন—১. নীরদ সি চৌধুরীর মন, ইয়ান অ্যালমন্ড, হাসান আল জায়েদ এবং রায়হান রহমান, ইউপিএল।
২. নাইন-ইলেভেন, নোম চমস্কি, অনুবাদ: মুহম্মদ গোলাম সারোয়ার, চৈতন্য।
গ) অনুবাদ-বিজ্ঞান—১. সিক্স ইজি পিসেস, রিচার্ড ফাইনম্যান, অনুবাদ: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, প্রথমা।
২. ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল, মিচিও কাকু, অনুবাদ: আবুল বাসার, প্রথমা।
ঘ) অনুবাদ-সাহিত্য—১. তরজমাগুচ্ছ, আলম খোরশেদ, পাঠক সমাবেশ।
ঙ) ব্যতিক্রমী অনুবাদ—১. বিবর্তনবাদী জ্ঞানতত্ত্ব, কার্ল পপার, অনুবাদ: আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, পাঠক সমাবেশ।

নির্বাচিত ভূমিকা
১. সেলিম রেজা নিউটনের ভূমিকা, তদীয় অনুবাদে নোম চমস্কির ভবিষ্যতের সরকার, পেন্ডুলাম।

নির্বাচিত কবিতাগ্রন্থ
১. এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না, আল মাহমুদ, সরলরেখা।
২. দশ মহাবিদ্যা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, বৈভব।
৩. পৃথিবী এলোমেলো সকালবেলায়, মাসরুর আরেফিন, পাঠক সমাবেশ।

উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থ
১. সামান্য দেখার অন্ধকারে, আলতাফ শাহনেওয়াজ, প্রথমা।
২. আমাকে এবার পিছমোড়া করো, কামরুজ্জামান কামু, প্রথমা।

নির্বাচিত কবিতা-সংকলন
১. নির্বাচিত কবিতা, আলফ্রেড খোকন, কবিতাভবন (বাতিঘর)।
২. নির্বাচিত কবিতা, মারুফ রায়হান, ধ্রুবপদ।

নির্বাচিত কবিতা
১. “নুর নুর বলে চমকায় পাখি” কবিতাটি সারাজাত সৌম’র একইনামের (নুর নুর বলে চমকায় পাখি) কবিতা গ্রন্থের নাম-কবিতা, বেহুলা বাংলা।

নির্বাচিত বিজ্ঞান
১. আমাদের মহাজাগতিক পরিচয়, আহমাদ মোস্তফা কামাল, প্রথমা।
২. রোগ জীবাণুর গল্প, সঞ্জয় মুখার্জী, আদর্শ।

পড়ে-রাখা-ভালো বিজ্ঞান
১. শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল, আবদুল গাফফার, অণ্বেষা।

নির্বাচিত শিশুপাঠ
১. মধু শিকারি, অনুবাদ: শামিম আজাদ, ইউপিএল।
২. আজব দেশে অ্যালিস, শিশু-নাট্যরূপ অনুবাদ: আবদুস সেলিম, প্রকৃতি-পরিচয়।

ব্যতিক্রমী কিশোর-বিজ্ঞান
১. অ-পদার্থবিজ্ঞান, রাতুল খান, আদর্শ।

নির্বাচিত কিশোর-ইতিহাস
১. বাংলা ও বাঙালিঃ মুক্তি সংগ্রামের কিশোর-ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ হাননান, ময়ূরপঙ্খি।
২. শেখ মুজিব: কিশোর জীবনী, আহমাদ মাযহার, সময়।

নির্বাচিত নন-ফিকশন
১. কবিতাকলা ভবন, মৃদুল মাহবুব, বৈভব।
২. দূরের জানালা, মাসুদুজ্জামান, পরান-কথা।
৩. ভাষার প্রতিভা, রাজু আলাউদ্দিন, পেন্ডুলাম।

ব্যতিক্রমী নন-ফিকশন
১. চর্যাপদ: কালে কালান্তরে, রাজু আলাউদ্দিন, জার্নিম্যান।
২. বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে, ফাহাম আবদুস সালাম, একাদেমিয়া।

নির্বাচিত প্রবন্ধ
১. চেতনার উত্তরাধিকার, সম্পাদরা: পুলক দেবনাথ ও সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম, অন্যপ্রকাশ।

নির্বাচিত গবেষণাগ্রন্থ
১. দারিদ্র্যের অর্থনীতি, আকবর আলি খান, প্রথমা।
২. দক্ষিণ এশিয়ার ডায়াসপোরা সাহিত্য, মোজাফ্ফর হোসেন, পাঞ্জেরী।

নির্বাচিত গল্পগ্রন্থ
১. এখানে জাদু শেখানো হয়, মুরাদুল ইসলাম, বৈভব।
২. মনোজবাবুদের বাড়ি, হরিশংকর জলদাস, প্রথমা।
৩. বৈদিক পাখির গান, সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম, চৈতন্য।
৪. দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশ, সাগুফতা শারমীন তানিয়া, প্রথমা।

ব্যতিক্রমী ফিকশন
১. হলদে ফুলের বিকেল, পাপড়ি রহমান, পরানকথা।
২. রোদ্দুর খুঁজে ফিরি, ফাহমিদা বারী, চৈতন্য।

নির্বাচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস
১. কাসিদ, জয়দীপ দে, দেশ পাবলিকেশন।

নির্বাচিত জর্নাল
১. কবিতালেখকের জার্নাল, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, চন্দ্রবিন্দু।
২. মা-বেলার ডায়েরি, আনন্দময়ী মজুমদার, বিপিএল।

নির্বাচিত জীবনী
১. বিজ্ঞানসাধক দুই বন্ধু, আলী নাঈম, বিপিএল।
২. অগ্রনায়কেরা, স্বকৃত নোমান, রোদেলা।
৩. ক্লাইভ, আদনান আরিফ সালিম, অন্বেষা।
৪. নভেরা, আনা ইসলাম, জার্নিম্যান ও অন্যপ্রকাশ।

নির্বাচিত সায়েন্স ফিকশন
১. তৃতীয় নারী, মাসউদুল হক, নাগরী।

নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
১. গবেষণার দশানন, (গোলাম মুরশিদের সাথে আলাপ) রাজু আলাউদ্দিন, বিপিএল।
২. শিল্পী হওয়ার সব গুণাবলি নিজেকে অর্জন করতে হয়, শিল্পী রনবীর সাথে আলাপ, রাজু আলাউদ্দিন, পাঞ্জেরী।

নির্বাচিত প্রকৌশল গ্রন্থ
১. পদ্মা সেতু, এনায়েত চৌধুরী, প্রকৃতি-পরিচয়।

বিশেষ নির্বাচিতগ্রন্থ
১. বিনয় মজুমদার নিয়ে মলয় রায়চৌধুরীর প্রবন্ধসমগ্র-১, বৈভব।

এবারের বইমেলায় গল্পগ্রন্থের বেশ জয়ধ্বনি লক্ষ করেছি। সেই তুলনায় উপন্যাস মনে হলো, কিছুটা দাপট হারিয়েছে। তবু কয়েকটি উপন্যাস নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। পাঠ শেষ করতে পারিনি বিধায়, ক্যাটিগরিভুক্ত করতে পারছি না।

বিচারাধীন উপন্যাস
১. আলথুসার, মাসরুর আরেফিন, প্রথমা।
২. দ্যা নর্থ এন্ড, বর্ণালী সাহা, পাঠক সমাবেশ।
৩. জাদুকরী ভ্রম, হামিম কামাল, চন্দ্রবিন্দু।
৪. তিমিরযাত্রা, মোজাফ্‌ফর হোসেন, পাঞ্জেরী।

এবারের মেলার সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রকাশনা হলো বৈভব এবং পেন্ডুলাম। উভয়েই তাদের পরিবেশনা ব্যতিক্রমী রেখেছেন, আচরণ বন্ধুত্বসুলভ রেখেছেন। প্রথমা প্রকাশন সবসময়েই ভালো বই আনে, এবারও কয়েকটিই এনেছে, তবে এবারে তাদের সংগ্রহ আগের মেলার মতো মনোলোভা নেই, বইয়ের প্রোডাকশনও দুর্বল, বিশেষত কবিতার বইগুলো আলাদা মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। এবারে কম হলেও অনেকগুলো নজরকাড়া এবং ব্যতিক্রমী গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন বাতিঘর এবং চৈতন্য। প্রকৃতি-পরিচয় সবসময়েই খুব ভালো বই আনেন, সুলভও, কিন্তু প্রচার পায় নাই। এবারও নাই। তাঁরা প্রচার-বিমুখ শুধু নয়, প্রচার-বিরোধীও।

সৌভাগ্যক্রমে ২০২০ এর মেলায় ঘুরতে ঘুরতে পুরনো তিনটি ভালো বই নজরে এলো। জীবনানন্দ জীবনের ভালো কিছুকেই ‘শালিখ’ বলেছেন, কাজেই এই পুরাতন তিনটি শালিখ হলো—১. গ্রিক উইট, মুরাদুল ইসলাম, স্বরে-অ। ২. আমার গদ্য, ফরিদ কবির, অ্যাডর্ন। ৩. কোয়ান্টাম রাজ্যে ডালিমকুমার, খন্দকার রেজাউল করিম, সূচয়নী পাবলিশার্স। এই দারুণতম গ্রন্থত্রয়ী, পাঠক না পড়লে মিস করবেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ পুরোটা অন্ধকার হয়ে যায় যদি দুটি বই না-আসত। প্রথমটি বঙ্গবন্ধুর লেখা আমার দেখা নয়াচীন, প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। আর দ্বিতীয়টি গোলাম হোসেন হাবীবের অনুবাদগ্রন্থ গোলাপের নাম। আমি প্রিয় হাবীব ভাইয়ের হাতে এবং বঙ্গবন্ধুর পরিজনদের হাতে তুলে দিতে চাই মদীয় ‘অদৃশ্য পুরস্কার’। এর কোনো অর্থমূল্য নাই, কোনো মিডিয়া কভারেজ নাই, কোনো আলাদা দাবি নাই। আছে স্বেদস্নিগ্ধ ভালোবাসা। নিজে মেলায় গিয়ে, নিজে খুঁজে, নিজে কিনে, নিজের বিচারবুদ্ধিতে যাচাইকৃত বই বিশ্লেষণ করে এই পুরস্কার আমি প্রদান করছি। লেখক তুমি ধন্য হও।

এবারের মেলায় আমার দুটি বই একটাই পৃথিবী, প্রকৃতি-পরিচয় এবং অনুবাদ ও সম্পাদিত পরমাণু বিদ্যুতের দিগ্বিজয়, চৈতন্য। প্রথমটি কিশোর-পাঠ্য বিজ্ঞান-গ্রন্থ, দ্বিতীয়টি প্রকৌশল শাখার বই।

এই বইমেলার সবচেয়ে আলোচিত মিম প্রকৃত লেখকের কয়টা মুদ্রণ হয়! লেখক কে—মোটিভেশনাল বক্তা নাকি বাংলা গদ্যের সাথে পরিচয় আছে এমন কেউ? আপনি কী বলেন?
অতএব সাইন আউট বইমেলা ২০২০। তামাম শুদ।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;