প্রেম ও বেদনার মহাকাব্য তাজমহলে



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তাজমহলের সামনে এসে আমি বৃষ্টির সঙ্গে ভেঙে পড়লাম বেদনায়। পৃথিবীর সপ্তমার্শ্চয শ্বেতমর্মরকাব্য নামে পরিচিত তাজমহলও কম বেদনার্ত নয়। যার বুকের উপর দাঁড়িয়ে অনিন্দ্য সুষমাময় তাজ, সেই মমতাজ মহল দেখতে পারেন নি তাজকে। প্রেমে ও আবেগে আপ্লূত নির্মাতা সম্রাট শাহজাহানও বন্দি জীবন কাটিয়েছেন অদূরের আগ্রা দুর্গে, সেখান থেকে তাজের দিকে চেয়ে চেয়ে তার অপলক চোখ হয়েছে অশ্রুসিক্ত।

আরজুমান্দ বানু নামে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর ফুফু ছিলেন মুঘল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান। ১৬০৭ সালে পারস্য বংশধারার এই কিশোরীর প্রেমে পড়েন শাহজাদা খুররম, যিনি পরে পরিণত হন সম্রাট শাহজাহান নামে। প্রেম ও পরিচয়ের পাঁচ বছর পর ১৬১২ সালে আরজুমান্দকে বিয়ে করে শাহজাহান নাম দেন 'মমতাজ মহল' বা 'প্রাসাদের রত্ন'।

সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষে ১৪তম সন্তানের (কন্যা গওহর বেগম) জন্ম দিতে গিয়ে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মমতাজ মারা যান। ব্যথিত শাহজাহান, আরও স্ত্রী থাকার পরেও মমতাজের প্রেম ও স্মৃতি ভুলতে পারেন নি। মমতাজের সমাধিস্থলে তাজমহল নির্মাণ শুরু করেন তিনি।

১৬৩১ সালে মমতাজের মৃত্যুর পরের বছর (১৬৩২) শাহজাহান তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মূল সমাধি ছাড়াও উদ্যান আর অন্যান্য স্থাপনা নিয়ে তাজমহল নামে বিরাট কমপ্লেক্সের মূল নির্মাণ ১৬৪৮ সালে এবং সামগ্রিক নির্মাণ কাজ ১৬৫৩ সালে শেষ হয়।

অনেক শিল্পি ও নকশাকারক ছাড়াও দেশ-বিদেশের ২০ হাজার সুদক্ষ কর্মী জড়িত ছিলেন তাজমহল নির্মাণে। এদের মধ্যে ওস্তাদ আহমেদ লাহোরীর নাম সর্বাগ্রে। এছাড়াও পারস্য থেকে আনা হয় স্থপতি ঈসাকে। বেনারসের পুরু নামের একজন কিছু কাজ করেন। বড় গম্বুজটির নকশা করেন উসমানিয়া সাম্রাজ্য থেকে আগত শিল্পী ইসমাঈল খান। বড় গম্বুজের শীর্ষে স্বর্ণের দণ্ড নির্মাণ ও স্থাপন করেন লাহোরের কাজিম খান। পাথর খোদাইয়ের কাজের নেতৃত্ব দেন দিল্লির ভাম্বর চিরঞ্জিলাল। পারস্যের সিরাজ থেকে এসেছিলেন চারুলিপিকর আমানত খান, যার নাম তাজমহলের প্রবেশ পথের দরজায় প্রত্যায়ন করা হয়েছে। পুরো কাজের রাজমিস্ত্রিদের নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ হানিফ। ইরানের মীর আ. করিম ও মুকার্রিমাত খান সমগ্র কাজের ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক হিসাবের দায়িত্বে ছিলেন।

 
তাজমহল
অপরূপ তাজমহল, ছবি: সংগৃহীত

মোটামুটি এমন কয়েকজনের নাম নানা সূত্রে উল্লেখিত হলেও তাজমহলের পেছনে আরও বহু শিল্পী ও শ্রমিক যে নিয়োজিত ছিলেন তা এর বিরাট এবং সূক্ষ্ম শিল্পসুষমাময় কাজের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। আজকের দিনে এতো বিরাট ও শিল্পমণ্ডিত কাজের কথা ভাবাও যায়না।

তাজমহল কমপ্লেক্সে প্রবেশের তিনটি গেট আছে। যানবাহনের কালো ধুয়া তাজের শুভ্রতা ও সৌন্দর্য ম্লান করছে বলে বেশ দূরে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। আমরা নগরীর রাজপথ ছেড়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তাজে প্রবেশের অপেক্ষাকৃত সরু গলিপথের মুখে আসি। সেখানে বেজায় ভিড়। গাইড, টাঙ্গা, ব্যাটারিচালিত ও মানবচালিত রিক্সার জটলা। আরও আছে হুইল চেয়ারের সারি এবং গাইডের দল। এদের এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াও বেশ মুশকিল। বছরে যাকে দেখতে ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন পর্যটক আসেন, সেখানে ভিড় হবে না তো কোথায় হবে!

তাজের আশেপাশে প্রাচীন মুঘল ধরনের নগর বিন্যাস দেখা গেলো, যদিও পুরনো কাঠামো বদল করে অস্থায়ী দোকান, হোটেল গড়ে উঠেছে সেখানে। জায়গাটির নাম তাজগঞ্জি বা মুমতাজাবাদ। তাজের দক্ষিণ দিকে এলাকাটি নির্মাণ করা হয়েছিল দর্শনার্থীদের জন্য থাকার সরাইখানা ও অন্যান্য প্রয়োজনে। এখন নানা দোকানে গিঞ্জি অবস্থা। এসব ভিড় ঠেলেই গলিপথ ধরে আসতে হলো মূল ফটকের কাছে এবং যথারীতি টিকেট কেটে ঢুকতে হলো ভেতরে।

তাজ আসলে অখণ্ড স্থাপনার মিলনে একটি উদ্যানময় কমপ্লেক্স। মমতাজের মূল সমাধিস্থলই তাজমহল নামে পরিচিতি। তাজমহল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নকশার ভিত্তিতে, যাতে মুঘল, পারস্য, তুর্কি তৈমুর প্রভাব রয়েছে। সমরখন্দে তৈমুর নির্মিত ‘গুর-ই-আমির’-এর প্রভাব এখানে কেউ কেউ লক্ষ করেন। যদিও মুঘলদের দুর্গ, লালকেল্লা, জামে মসজিদ, দেওয়ানে খাস, দেওয়ানে আম ইত্যাদিতে মধ্য এশীয় নির্মাণ ও শিল্পশৈলীর প্রভাব সুবিদিত।

তাজমহলের ক্ষেত্রে ভবন, মিনার, কারুকাজ, লিপি, অলঙ্করণ ইত্যাদির মধ্যে সুসমন্বয় করা হয়েছে বাগানের বিন্যাসে এবং মুঘল, পারস্য, তুর্কি শিল্প ও স্থাপত্য কলাকে একাকার করে। প্রথম দর্শনের সবুজ গালিচাময় পুষ্পিত বাগানের মধ্যে শ্বেত-শুত্র তাজমহল ও পুরো কমপ্লেক্সকে দেখে মনে হয়েছে শান্ত-সমাহিত এমন এক উদ্যান, যা পৃথিবীর কোলাহল ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে একখণ্ড নান্দনিক আরাম।

খুব কাছে নয়, তাজমহলের সামনের চত্বরের বাগান থেকে তাজের সামগ্রিক সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয়ে সবচেয়ে বেশি। বাগানটি চারটি অংশে বিভক্ত এবং একে বলাবহয় চারবাগ বা চারটি বাগান। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুর এমন নকশায় বাগান করার পত্তন করেন ভারতে

চারবাগ বাগানের মাঝখানে স্বচ্ছ জলের চৌবাচ্চা, যেখানে তাজের প্রতিবিম্ব জলে টলমল করে। ভেতরের পুরোটাই সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত, যা পুষ্পিত ও বৃক্ষময়। একেক অ্যাঙ্গেল থেকে একেকটি অপরূপ কৌণিক সৌন্দর্যে তাজকে দেখায় নব নব সুন্দরের প্রতিরূপে।

তাজমহলের চত্বরটি বেলে পাথরের দুর্গের মতো দেয়াল দিয়ে তিন দিক থেকে বেষ্টিত। এতে মমতাজের বড় ও আরও কয়েকটি ছোট সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। এতে লাল বেলে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। সমাধি ছাড়াও দেয়াল, স্তম্ভ ইত্যাদি নান্দনিক অলঙ্করণে সমৃদ্ধ। বরফি-কাটা ঝালর, খিলান, প্রভৃতির জ্যামিতিক বিন্যাস পুরো স্থাপনাকেই শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় উজ্জ্বলতর করেছে। তাজ কমপ্লেক্সে অনন্য সুন্দর একটি মসজিদও রয়েছে।

শুধু ভবন নয়, প্রসারিত দেয়াল আর তাজের গম্বুজ ও মিনারের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে হয়। কেন হাজার হাজার মানুষের এতো বছর লেগেছিল তাজ বানাতে, তা টের পাওয়া যায় শৈল্পিক কাজে। গম্বুজ ও মিনারের সৌন্দর্য ছাড়াও কারুকাজ, জালির কাজ, অলঙ্করণ, হস্তলিপি, খোদাই, সূক্ষ্ম কাট-স্টাইলে দেয়াল বা আচ্ছাদনের ঝলক পুরো আয়োজনকে একটি সামগ্রিক শিল্পকর্ম বা আর্টপিসে রূপ দিয়েছে। দূরের তাজমহল কাছে থেকে দেখলে মনে হয়, রাজকীয় পোশাক পরিহিত তার প্রতিটি অঙ্গ ও অংশ। প্রতিটি স্থানে শিল্পীর নানা রকমের স্পর্শ উদ্ভাসিত হয়ে আছে শিল্প-সৌন্দর্যে । কোথাও পারস্য ইমেজ তো কোথাও তুর্কি চিত্রময়তা কিংবা কোথায় মধ্য এশীয় সমুন্নত রূপ তাজমহলকে করেছে মহীয়ান।

সমাধি সৌধটি ছাড়াও সমগ্র তাজ কমপ্লেক্স প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এতো মানুষের অংশগ্রহণ ও দীর্ঘ সময় ছাড়াও তাজের নির্মাণ সামগ্রী ছিল বিশ্বসেরা উপাদানের তৈরি। নির্মাণ সামগ্রী আনাতে মানুষের পাশাপাশি হাজার হাতি ব্যবহৃত হয়। রাজস্থানের স্বচ্ছ আলো-প্রবাহী পাথর, পাঞ্জারের মার্বেল ও রঙিন পাথর, চীন দেশের সবুজ রত্ন ও স্ফটিক, তিব্বতের ফিরোজা পাথর, আফগানিস্তানের নীলকান্তমণি, শ্রীলঙ্কার বর্ণময় পাথর ও রত্ন তাজমহলের নির্মাণের সময় সৌন্দর্য বিধানের কাজে ব্যবহার করা হয়। আর নির্মাণে খরচ করা হয় তৎকালীন সময়ের আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন রুপি, যা আজকের হিসাবে অকল্পনীয় বিশাল অঙ্ক।

তাজমহল নিয়ে ভাবালুতা ও আবেগ আসা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। নির্মম শাসক ও বহু নারীর স্বামী হয়েও যে প্রেমের প্রকাশ ঘটানো যায়, তাজমহল সে প্রমাণবহ। তাজমহল মুঘল নির্মাণশৈল্পী ও সৌন্দর্যপ্রিয়তার বিশ্বজনীন নিদর্শনও বটে।

প্রেম ও সৌন্দর্যে তাজ এতোই আকর্ষক যে ভারতের সিংহভাগ পর্যটকের প্রায়-সবাই এখানে আসেন, যাদের মধ্যে বিদেশিই বেশি। বৃষ্টির হাল্কা দাপটের মধ্যে আমরা যখন তাজমহল পরিদর্শন করি, তখনো পর্যটকদের কমতি ছিল না। অধিকাংশই ছিলেন বিদেশি এবং নানা বয়সের।

সন্ধ্যার মুখে তাজ কমপ্লেক্স থেকে ফিরে আসার সময় বৃষ্টিভেজা মেঘলা আকাশের কারণে রাতের চন্দ্রালোকে তাজের আরেক মায়াবী রূপ দেখার সুযোগ ঘটেনি। তাজের মূল গম্বুজ আর চারটি মিনার ও কারুময় দেয়াল, খিলান, গম্বুজ, হর্ম্য, ঝালর থেকে পাশের যমুনা নদীতে জোছনা ছুঁয়ে চির শায়িত মমতাজ মহলের বুকচাপা বিষাদ মিশে যাওয়ার ছবিটিও দেখা হয়নি।

বরং নিজের ভেতরে কেন যেন টের পাওয়া গেলো অন্য রকম অচেনা এক তরঙ্গ। উত্তর ভারতের ঐতিহাসিক বাতাসে ভেসে আসা সে তরঙ্গে হাহাকার নয়, প্রেম নয়, বেদনা নয়, আনন্দ নয়, মিলন নয়, ছিল অন্যরকম, অন্যকিছুর পরশ, যা এসে মিশে যাচ্ছিল হৃদয়ের মর্মমূলে, পাওয়া-না-পাওয়ার মাঝখানের গভীর শূন্যতায়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;