ক্যাডট কলেজ ক্লাব

মুগ্ধকর শিল্প আয়োজন ‘বই দেখা’



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম

চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বইদেখা’ শীর্ষক এক সাহিত্য আড্ডা ও চলচ্চিত্র আয়োজনে শুক্রবার দিনভর অভ্যাগতদের মুগ্ধ করে রাখলো ক্যাডেট কলেজ ক্লাব। গুলশানস্থ ক্লাব মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় গল্প অবলম্বনে অস্কারবিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ ছবি প্রদর্শন করা হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শনেরই নাম দেয়া হয় ‘বই দেখা’। ফাঁকে ফাঁকে ছিল স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রকার, শিল্পসমালোচক, লেখক-সাংবাদিকের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত আলোচনা-বিতর্ক। দিনশেষে ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের সভাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন(অব.) মুহাম্মাদ আলমগীর বলেন, আমাদের ক্লাবটি যে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের একটি কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

ক্লাবের পৃষ্ঠপোকষকতায় মূল আয়োজনটি করে ক্যাডেট কলেজ ক্লাব লিটেরেরি সোসাইটি। ক্লাব সদস্যদের জন্য তিনশ আর অতিথিদের জন্য পাঁচশ’ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নাস্তা, চা বিস্কুট, মধ্যাহ্ন আহার, বিকেলে কেক চা দিয়ে অভ্যাগতদের আপ্যায়িত করা হয়। সকাল নয়টায় শুরু হয়ে টানা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। দর্শনীর বিনিময়ে টানা অনুষ্ঠান হলেও আয়োজনে দর্শকশ্রোতার অভাব হয়নি।

নাস্তার পরই বড় পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আধঘণ্টা যেতে না যেতেই আকস্মিক বন্ধ। উদ্যোক্তারা জানালেন, আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে এই ছবি প্রদর্শন করা হবে। ডা. ফাতেমা দোজা পোডিয়ামে এসে মাইক নিয়ে উপস্থাপনা শুরু করলেন। মঞ্চে ডাকা হলো ‘বই দেখা’ সাহিত্য আড্ডার মূল আলোচক সত্যজিৎ গবেষক ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন পিন্টুকে। অনুষ্ঠানে ভ্রমণলেখক শাকুর মজিদ ও ডা. মিরাজুল ইসলামকে খুব তৎপর দেখা গেল। তাঁরা লিটেরেরি সোসাইটির কর্মকর্তা এবং এই অভিনতুন আইডিয়ার নেপথ্য কারুকার। শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে মূল আলোচককে ডাকা হলে তিনি সত্যজিৎ রায়, চারুলতা ছবিসহ নানা বিষয়ে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন। বললেন, সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপায়ন করতে হলে অনেক সংযোজন-বিয়োজন করতে হয়। মূল গল্পে অনেক সময় ভিজ্যুয়ালাইজ করার মতো উপাদানের ঘাটতি থাকে। ঘাটতি মিটিয়ে একে ভিন্ন একটি শিল্প মাধ্যমে রূপান্তর করার দক্ষতা ভাল নির্মাতার থাকে। ‘চারুলতা’, পথের পাঁচালী সহ অসংখ্য ছবিতে সত্যজিৎ রায় এই দক্ষতা দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে নির্মাতাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাহিত্যিক কিংবা সমালোচকদের তীব্র রোষের শিকার হতে হয়। সত্যজিৎও হয়েছেন। তিনি বলেন, আবার সব চলচ্চিত্রায়ণ শিল্পের মানে উন্নীত হয় না। তাই যদি হতো, তাহলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস সবচেয়ে শিল্পসফল চলচ্চিত্র হতো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাষায় অনেকেই এই গল্প নিয়ে ছবি বানিয়েছেন, কিন্তু তা শিল্পমান পায়নি।

লেখক নির্মাতা শাকুর মজিদ

আনোয়ার হোসেন পিন্টুর পর আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক শামীম আকতার। তিনি ‘চারুলতা’ ছবির শিল্প সফলতা তুলে ধরে বলেন, পত্রিকা সম্পাদক স্বামী ভূপতির ব্যস্ততার মধ্যে গৃহবন্দী চারুলতার নিঃসঙ্গ জীবনে তার দেবর অমল এক আশীর্বাদ হয়ে আসে। একে কারা যে পরকীয়ার তকমা পরিয়ে দিয়েছে। তবে একে ঋণাত্মকভাবে না দেখে শিল্পবিবেচনা এবং সামাজিক প্রেক্ষিতের নিরিখে দেখতে হবে।

মূল বক্তা সত্যজিৎ রায় গবেষক আনোয়ার হোসেন পিন্টু

এ পর্যায়ে দর্শকস্তর থেকে আলোচনার ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন আরা জলি বলেন, চারুলতা-অমলের যে প্রেম-দুর্বলতার কথা বলা হচ্ছে, তা মানসিক বন্ধুত্বের পর্যায়ে মাত্র, এখানে জৈবিক বিষয় নেই। এর চেয়ে অনেক বেশি পরকীয়া আমরা বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বুদ্ধদেব বসুসহ অনেকের রচনায় পেয়েছি। পরে আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্রামোদী ডা. মিরাজুল ইসলাম ও চলচ্চিত্রকার শবনম ফেরদৌসী।

মধ্যাহ্ন আহারের পর আলোচনায় আসেন স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম। তিনি ‘চারুলতা’ চলচ্চিত্রের শিল্পসফলতা তুলে ধরে বলেন, সাহিত্য আলাদা শিল্প মাধ্যম, চলচ্চিত্র আলাদা। তাই রবীন্দ্রনাথের নষ্টনীড় গল্পকে চলচ্চিত্রায়ন করতে গিয়ে সত্যজিৎ এমন সব বিষয় সংযোজ বিয়োজন করেছেন, যা মূল গল্পে খুজে পাওয়া যাবে না।

মাহমুদ হাফিজ আলোচনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রশ্ন করছেন

মিথস্ক্রিয়া পর্যায়ে লেখক-সাংবাদিক মাহমুদ হাফিজ প্রশ্ন তোলেন, আজকের আলোচনায় বার বারই ঘুরে ফিরে আসছে সাহিত্য-চলচ্চিত্রে রূপায়ণ নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের পর্যায়ের অস্কারবিজয়ী চলচ্চিত্রকারকেও সাহিত্য ও শিল্পসমালোচকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে চারুলতাসহ সাহিত্য অবলম্বনে ছবি বানাতে গিয়ে। তাহলে সাহিত্য ও চলচ্চিত্র মাধ্যমে অন্তর্গত কোন বিরোধ আছে কিনা? আর চলচ্চিত্র নির্মাতারাই কেন সাহিত্যকে অবলম্বন করছেন, তাদের কাছে কি গল্প নেই ? গল্পটি নিজস্ব হলে তো আর সাহিত্য আর চলচ্চিত্রের যে বিরোধ থাকতো না।

জবাবে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দু্টি ভিন্ন শিল্প মাধ্যম। বিরোধ আছে বলে আমি মনে করি না। রবীন্দ্রনাথই বলে গেছেন, চলচ্চিত্র সাহিত্যের চাটুকারিতা থেকে যতোদিন না বেরুতে পারবে, ততোদিন চলচ্চিত্রের মুক্তি নেই। তারপরও আমরা দেখি অনেক সময় বিরোধ হয়ে যায়। সত্যজিৎ রায়কেও অনেক বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘চাকা’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, নাট্যজন সেলিম আল দীনের ‘চাকা’ নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি একে চলচ্চিত্রে রূপ দিই। প্রথম প্রদর্শনী দেখে অনেকে কিছুই হয়নি বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, তবে সেলিম আল দীন আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। প্রথমদিকে আমার সঙ্গে তাঁর তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। তিনি তাঁর চিত্রনাট্য ও সংলাপ ছাড়া নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করতে দিতে রাজি হননি। আমার অনঢ় অবস্থানের পর তিনি অনুমতি দেন। তিনি বলেন, আমাদের মানতে হবে, চলচ্চিত্র আলাদা শিল্পমাধ্যম। এতে চলচ্চিত্রকার নিজস্ব স্বাধীনতা নেন এবং নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশন দাঁড় করান। তখন বিরোধের তৈরি হতে পারে।

এ পর্যায়ে কবি ও ভ্রমণলেখক কামরুল হাসান প্রশ্ন করেন, বাংলা চলচ্চিত্র মেধাহীন লোকের প্রবেশ এবং বাণিজ্যিক খারাপ ছবির কারণে দিন দিন মানুষ চলচ্চিত্রবিমুখ হতে শুরু করে এবং দেশের সিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আজ আবার চলচ্চিত্র শিল্পের বেশে ফেরৎ আসতে শুরু করেছে মেধাবী নির্মাতাদের হাতে। এটি আমাদের আশাবাদী করে তোলে।

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ

পরবর্তী আলোচকবৃন্দ সাহিত্য-চলচ্চিত্র বিরোধ প্রসঙ্গটিকে কেন্দ্রে রেখেই আলোচনা চালিয়ে যান। মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত নির্মাতা মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, আমাদের কিশোরকালে লোকজন সিনেমা বলতে ‘বই’ই দেখতে যেতো। বই থেকে বই হয়ে যাওয়া চলচ্চিত্র প্রদর্শনকে ‘বই দেখা’ শিরোনাম দিয়ে এই আয়োজনে তিনি উৎসাহিত। তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠেছে সাহিত্য-চলচ্চিত্রের বিরোধ নিয়ে। মোরশেদুল ইসলাম বললেন, বিরোধ নেই। আমি বলবো প্রবল বিরোধ আছে। কারণ সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে গেলে বিরোধ হবেই। আমরা যখন ধ্রূপদী একটি ছবি দেখি তখন সেটি একটি কবিতা বলে মনে হয়। সেটি মূল সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রকারের হাতে কবিতা হয়ে যায়।

চলচ্চিত্রকার তৌকির আহমেদ বলেন, দর্শক কিভাবে বিশেষভাবে গল্পটি শুনতে চায়, চলচ্চিত্রকারকে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। চলচ্চিত্র এবং পোয়েটিকস হাত ধরাধরি করেই চলে। একজন সুসাহিত্যিকের ইতোমধ্যে লেখা গল্পকে চলচ্চিত্রের গল্প হিসেবে নিতে দোষের কিছু নেই।

তবে জীবিত লেখককে সন্তুষ্ট করা খুব কষ্টকর। কারণ লেখক যা সৃষ্টি করেছেন তা তার কাছে প্রিয়। তিনি পরিবর্ধন, পরিমার্জন দেখতে চাইবেন না, নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশনের রূপান্তর দেখতে চাইবেন। এ জন্য জীবিত লেখকের বদলে প্রয়াত লেখকের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র করা অধিকতর শ্রেয়। তৌকির বলেন, তাছাড়া আপনি নতুন যা কিছুই করেন, ওভারল্যাপিং বা অন্যের মতো কিছুটা হতেই পারে।

স্থপতি -চলচ্চিত্রকার তৌকির আহমেদ

নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী আবদুন নূর তুষার বলেন, চলচ্চিত্রায়ণের মতো ভাল গল্পের যোগান আমাদের দেশে খুব কম। সব সময়ই চলচ্চিত্র বিখ্যাত সাহিত্যের কাছ থেকে গল্প নিয়ে থাকে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বসাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই কথা সত্য। জেমস বন্ড, জোরাসিক পার্ক এসব বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র সাহিত্য থেকেই এসেছে। তিনি বলেন, একটি ভাল সাহিত্যকে চলচ্চিত্রায়ণ করতে গেলে যে বাজেট ও রসদ প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছে এখানে। এ ব্যাপারে অতীত ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। যাতে নির্মাতারা শতবছরের পুরনো জিনিসপত্র সহজে পায় এবং চলচ্চিত্রে রূপদান করতে পারে। পশ্চিমাদের ঐতিহ্য নেই বলে তারা এলিয়ন, সুপারম্যানের মতো অতিমানবীয় চরিত্র তৈরি করে তা শিল্প করে তোলে।

লেখক-স্থপতি ও নির্মাতা শাকুর মজিদ বৌদি কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কের টানাপোড়েনের ছায়াপাত নষ্টনীড়ি গল্পটিতে রয়েছে এবং তা চারুলতা অনেক কিছুতে রূপায়ন হয়েছ বলে প্রামাণিক দলিল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজ কলকাতা শহর মানেই সিটি অব টেগোর। আর তা শুরু হয়েছিল ১০ সদর স্ট্রীট থেকে। এ বিষয়েবিস্তর গবেষণা করে তিনি ভ্রমণগদ্য এই নামে বই লিখেছেন বলে উল্লেখ করেন।

পরে অমিত মল্লিক চারুলতা ছবিটিতে মোজার্টের একটি সঙ্গীতভাষ্যকে ফর্ম হিসেবে নিয়ে শিল্পে দাঁড় করিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

পরে শাকুর মজিদ ঘোষণা করেন, ক্যাডেট কলেজের লেখাপড়ার বাইরে সাহিত্য চর্চাটিও জমজমাট ছিল। আজ ক্যাডেট থেকে পেশাদার হয়ে যাওয়া অনেকেই আবার সাহিত্যে ফিরে আসছেন। লিটেরেরি সোসাইটি সাবেক ক্যাডেটদের লেখা সাহিত্য বিকাশের নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;