স্যালুট ইমরান মাঝি, স্যালুট আপনার কবিতা



জিয়া হাশান
নিজ গৃহ আঙিনায় কবি ইমরান মাঝি

নিজ গৃহ আঙিনায় কবি ইমরান মাঝি

  • Font increase
  • Font Decrease

ইমরান মাঝির সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য, তা আমার ভাগ্যে একবারই জুটেছে। তখন আমার এক বান্ধবী তুমুল ছাত্রী। সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে তার বাসায় হাজিরা জরুর। তাই যথাসময়ে তারে বাসায় পৌঁছে দিয়া ফিরতি বাসের অপেক্ষায় স্ট্যান্ডে দাঁড়ায়ে আছি। তখন মিরপুর থেকে ঢাকায় আগমনের মিনিটে মিনিটে বাস সার্ভিসের যুগ সচল হয়নি। বরং ঘণ্টা কিংবা আধাঘণ্টা পার করে তবেই তাদের দুএকটার সাক্ষাৎ মেলার দিনকাল বলবৎ।

সে-ই আদ্দিকালে, সে-ই শীতের সন্ধ্যায় হঠাৎ কোত্থেকে যেন সামনে এসে আর্বিভূত হয় অভিজিৎ দাস, আমাদের হাজারও উদ্দেশেরে ব্যর্থ করে দিয়া আজও যে নিরুদ্দেশ। তারে দেখে আমি চমকে উঠি, ধরা খাওয়ার, বান্ধবীর সাথে গোপন অভিসারের কাহিনী ফাঁস হয়ে যাবার আশঙ্কায় পড়ি। তা থেকে মুক্তির পথে তাই, ও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রশ্ন ছুড়ে দিই—কী খবর! আপনি এখানে?
: এ্যাই তো এলাম। আজ ওর সাথে থাকব।
কার সাথে থাকবে? তাকায়ে দেখি অভিজিতের সাথে আরো একজন। শীতের আধিক্যের কারণে গলা থেকে কোমর অবধি চাদরে ঢাকা তার শরীর। ফলে মাথাটাই কেবল চোখে পড়ে। আর তার উপরিতলে প্রশস্ত ঢাকের রাজত্বকে কোনোভাইে চোখের পক্ষে এড়ানো সম্ভব না। সেটাই সে আমার ভেতরে চালান করে, মনের দুয়ারে পৌঁছে দেয়। তাই তা-ই, তার চেহারা-সুরতের মধ্যে সবচেয়ে পষ্ট হয়ে আমার মনে গেঁথে যায়।

তার পানে ইঙ্গিত করে অভিজিৎ বলে—এ্যাই ইমরান মাঝি। কবিতা লেখে। মিরপুরের একটা কাপড়ের শোরুমে কাজ করে। এ্যাই তো সামনেই ওর বাসা।

কিন্তু তার কবিতা তো আমার কখনো পড়া হয়নি। কোনো পংক্তিতে সায়ের করিনি। এমনকি নামটাও আগে কখনো শুনেছি বলে মনে করতে পারি না। তাই আমার আগ্রহরা মিইয়ে যায়। গলা তোলা থেকে, কোনো রকম কৌতূহল প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। বরং আমার গন্তব্যের বাস এলে ওদের ফেলে রেখে ঝটপট তাতে উঠে পড়ি। সাথে সাথে ইমরান মাঝির সাথে আমার এক ও অদ্বিতীয় সাক্ষাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আর কখনো তার সাথে সাক্ষাৎ না হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তার নামটা আমার কানে সওয়ার হয়। একেবারে আসন নিয়া গেড়ে বসে।

সেবার শাহবাগের লোক প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে এক সাহিত্য সম্মেলন বসে। ওপার বাংলার মোটাসোটা নামের দুচারজন কবি-সাহিত্যিক আসেন। জমজমাট হয়ে ওঠে আসর। সেখানে বাংলাদেশের কবিতা নিয়া আলোচনা করেন মরহুম আব্দুল মান্নান সৈয়দ। নৌকার লগির মতো দীর্ঘ ও ঋজু তাঁর বক্তৃতা। তার এক ফাঁকে তিনি বলেন, দুইজন তরুণ কবির কবিতা তাঁর ভালো লাগে। তাদের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনার বীজ তিনি দেখতে পান।

কিন্তু তাদের নাম নেয়ার সাথে সাথে অন্যরা, যারা নিজেরই নিজেদেরকে বিপুল সম্ভাবনার আধার মনে করেন, তারা ক্ষিপ্ত হতে, কৈফিয়ত তলব করতে, এমনকি তার ওপর কিলঘুষির সদ্বব্যবহারও করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। কেননা বর্তমান কবি-সমাজের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, এমনকি দুএকবার শিকারও। তাই বিপুল সম্ভাবনাময় তার পছন্দের দুই তরুণ কবির নাম উল্লেখ করা থেকে তিনি বিরত থাকেন। মুখে আর উচ্চারণ করেন না।

ফলে দর্শক শ্রোতা, যাদের বেশিরভাগই কবি-সাহিত্যিক-লেখক গোত্রের রথি-মহারথি, তাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়—সৌভাগ্যবান দুই কবি কে কে, যাদের কবিতায় মুগ্ধ আব্দুল মান্নান সৈয়দের মতো বিদগ্ধ সমালোচক। তাদের নাম বের করতে তারা সচেষ্ট হয়ে ওঠেন, কেউ কেউ তো রীতিমতো মারিয়া হওয়ার পথ ধরেন।

বাঙালি আমেরিকা আবিষ্কার করতে পারেনি বটে, কিন্তু অনুক্ত দুই কবির নাম দু মিনিটেই আবিষ্কার করে ফেলে। ব্যাস, দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে সে নাম ঘুরে বেড়াতে থাকে। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা হিসাবে এক সময় আমার কানে এসেও হাজির হয়। আর কী আশ্চর্য! সে দুটো নামের মধ্যে একটা দেখি—ইমরান মাঝি।

আফসোস তখন আমারে ঘিরে ধরে—হায়! সেদিন মিরপুরের বাসস্ট্যান্ডে আলাপটা কেন লম্বা করলাম না। চেনা-পরিচয়রে গাঢ় করে তুললাম না। সে আফসোস আরো চরমে পৌঁছে যখন দেখি আশপাশের সবাই তার কবিতার সাথে চেনা-পরিচয় করা সারা। কারো কারো তো ঘর-গৃহস্থলিও করা—কবিতার নাম-পংক্তি মুখস্থ করে ফেলা।

তবে সে আফসোস অতটা চূড়ায় চড়েনি যে, তারে নামানোর জন্য সাথে সাথে আজিজ মার্কেটে গিয়া ইমরান মাঝির কবিতার বই কিনে ফেলব। তারপর তাঁর কবিতার লাইনে লাইনে হাঁটাহাঁটি করব। বরং তাঁর বইয়ের সাথে সাক্ষাত, তারে ঘরে তুলে নেয় এবং কবিতার সাথে জানা-পরিচয় করা, শেষে আপ্লুত হওয়া—সে আলাদা কাহিনী। আরো অনেক পরে, বছর দেড়েক হবে হয়তো বা, সে কাহিনী পা ফেলে, মানে যাত্রা শুরু করে আর কি।

◤ দুধভাই বইয়ের প্রচ্ছদ ◢


তখন মাসের শুরুর দিকে বইপত্র কেনার যুগ। বেতন পাওয়ার পরপরই টাকা-পয়সা, হাতের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবার আগেই পছন্দের বই, কালো আক্ষরে ছাপানো সাদা কাগজের সুশৃঙ্খল মুঠার কতগুলো কিনে ফেলি। তাতে হাবুডুবু খেয়ে মাসের বাকি দিনগুলো কাটাই। এরকম একদিন আজিজ মার্কেটে থেকে অনেকগুলো কাগজের মুঠা কিনে বগলদাবা করে বাসার পথ ধরব ধরব এমন সময় মনে হয়—কী যেন খুঁত রয়ে গেছে। কেনাকাটা সম্পূর্ণ হয়নি। অসম্পূর্ণতা মুখ বাড়ায়ে আছে।

কী সে খুঁত? অসম্পূর্ণতা কোথায়? খুঁজতে গিয়া দেখি—কেনা মুঠাগুলোর সব মোটা ঘাড়ের গল্প-উপন্যাস কিংবা ভারী দেহের ভ্রমণকাহিনী বা আত্মজীবনী। স্লিম দেহের লাবণ্যময়ী কাব্যগ্রন্থ নাই একটাও। ফলে মনটা খচখচ করে ওঠে—এত বড় খুঁত নিয়া পুরাটা মাস কাটাব কিভাবে? পাঠকের মর্যাদাটুকু ধরে রাখতে হলেও তো মাসে অন্তত একটা নতুন কবিতার বই পড়া দরকার। তাই আবার বইয়ের দোকান পানে ফিরি। হাতের কাছে যেটা পাই তাতেই ঢুকে পড়ি।

তাকে সার বেঁধে খাড়া হয়ে থাকা কবিতার বইগুলো পানে তাকাই। একটার পর একটায় চোখ বুলাতে গিয়া ইমারন মাঝির ‘দুধভাই’-এর দেখা পাই। একই মায়ের দুধ খাওয়া ভাইয়ের সাথে এটাই আমার প্রথম সাক্ষাত। হাতে নিয়া দেখি—মাঞ্জাসুতা নামের এক সংস্থার গর্ভজাত ভাইটির দেহাবয়ব খুবই ক্ষীণ—মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠায় তার পূর্ণাঙ্গ রূপ। দামেও তাই বেশ রেয়াত—মাত্র ৫০ টাকা। তারপর আবার টুয়ান্টি পার্সেন্ট কমিশন। সুতরাং কিনতে আর অসুবিধা কোথায়? বরং খুঁত মোছার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতের মুঠোয় পুরে, ব্যাগের ভেতর চালান করে দিয়া মনের আনন্দে বাসায় ফিরি।

কিন্তু যেহেতু দুচার লাইন গদ্য লিখি তাই তার বইগুলো পানে পক্ষপাত ষোলআনা। তার একটার পর একটায় সায়ের করি—গল্প-উপন্যাস-ভ্রমণকাহিনীতে হাবুডুবু খাই। ফলে তুমুল সংখ্যালঘু গোত্রের পদ্যের বইখানা ‘দুধভাই’ পড়ে থাকে টেবিলের কোণায়, আর সব বইয়ের তলদেশে।

অফিস শেষ করে একদিন বাসায় ফিরে দেখি গদ্যের রফাদফা করা সারা। সদ্য কেনা সবগুলো গল্প-উপন্যাস-ভ্রমণকাহিনী পড়া শেষ। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ‘দুধভাই’রে হাতদাবা করি। খুলে তার পাতায় চোখ মেলে ধরি। আর কী আশ্চর্য! প্রথম কবিতা পড়েই চমকে উঠি—অ্যা! এ কী কবিতার ভাষা! কীরকম কবিতা এ? দেখি তার প্রথম বাক্য—‘নদীর কাছে যারা থাকে মন খারাপ হলে তারা ঢেউয়ের কাছে যায়।’ এরকম কবিতা তো আগে কখনো পড়িনি। এ ভাষা তো চেখে দেখিনি কখনো।

আরো সামনে আগাই। তখন দেখি উরশিতলা, নারকেলের পীড়, চালের ডোলা, মেইরখুটি, পুলি পিঠা, পলাপালি খেলা, তাফাল, নাড়ার চাউলি’র মতো শব্দের ছড়াছাড়ি। কবিতার রগে রগে তাদের উপস্থিতি। রক্তপ্রবাহের সাথে ছোটাছুটি। কিন্তু এগুলো তো আমাদের গ্রামের শব্দ, বাড়ির উঠানের ধ্বনি, ঘরের কোণের কলকাকলি। তাদের এই মহিমান্বিত রূপ, কবিতার অঙ্গপ্রতঙ্গরে সুসমৃদ্ধ করার সামর্থ্য দেখে আমি হা হয়ে যাই। নস্টালজিয়া আমারে জাপটে ধরে। আপাদমস্তক কব্জা করে ফেলে। কেননা রুটি-রুজির ধান্ধায় নগরবাস হলেও আমার কৈশোর-শৈশব কেটেছে গ্রামে। এই সব শব্দের আদরে যতনে। তাদের সাথে উঠবসে।

শব্দ পড়ি দিয়া বাক্যের পিছু ধরি। তাদের আগামাথায় হাঁটি। দেখি অপূর্ব তাদের গঠন—মখমলের মতো যেমন মসৃণ—এতটুকু জটিলতাহীন, দুর্বোধ্যের ঘেরাটোপবিহীন, তেমনি ইস্পাতের মতো দৃঢ়। তাই পাঠমাত্রই হৃদয়ে আসন নেয়। মনে গেঁথে থাকে। সে রকম গাঁথা বাক্যগুলোর একটাতে দেখি আমাদের নিয়তি—‘নদীই মোদের আল্লা-রসুল নদীই মাতাপিতা।’ আরেকটাতে আমাদের গৃহবধূদের দুঃখগাথা—‘বাপের বাড়ি থেকে মাছ এলে বধূরা সব ঘরে ভাগ করে দেয় আর মরা মাছের কাছে জেনে নেয় পিতা ও মাতার খবর।’ আবার কোনোটায় মায়ের আশাভরসা—‘মায়েরা মেয়ের বিয়েতে উঠাবে বলে লেজ কেটে কাৎলা ছেড়ে দেয়।’ কোনোটায় গাছের পাতার করুণ পরিণতি—‘গাছের পাতা নদীতে আত্মহত্যা করে।’ শেষে আমাদের কৃষকভাইয়ের আনন্দ—‘নিজের জমির পাকা ধান আলে দাঁড়িয়ে দেখার একটা হলুদ সুখ আছে।’

এভাবে বইয়ের আপাদমস্তক, ৫৭টা কবিতা জুড়ে আমাদের গ্রামের রূপ, ভাইয়ের সামর্থ্য, বোনের দুঃখ-বেদনা, বাবা-মায়ের বিষণ্ণতার অনুপম চিত্র আঁকা। কিন্তু আমার চাকরি-বাকরি, পিচঢালা রাস্তায় ছোটাছুটি, ক্ষমতার দম্ভ কিংবা প্রতারণার ফাঁদের কোনো কথা নাই। তাই বইয়ের আগাগোড়া খুঁজেও একটা দুটো নাগরিক শব্দ পাওয়া ভার। সুতরাং নগররে পিছে ফেলে, তার পরাজিত করে ধুলায় মিশায়ে নাই করে দিয়া আমাদের গ্রামের এই বিজয় কেতন ওড়ানো, তারে কবিতার পরতে পরতে তুলে ধরা দেখে আমার বুক ফুলে ওঠে, আড়াই হাত প্রশস্ত হয়।

তাই খুঁজে নিয়া একদিন ইমরান মাঝিরে ফোন দেই—আপনার কবিতা বিচারের সামর্থ্য আমার নাই। তার জন্য চোখে অক্ষম পিঁচুটিঅলা অধ্যাপকরা আছেন। তারা তার কৃমিকীট ঘাটবেন। তবে যে কবিতা পড়তে ভালো লাগে, মন ছুঁয়ে যায়, হৃদয় স্পর্শের অনুভূতির জন্ম হয় তারে নিশ্চয়ই ভালো কবিতা বলা যায়। সে বিচারে আপনার কবিতা ষোলআনার চেয়েও দুচারআনা আগানো।

কিন্তু কী আশ্চর্য! এত বড় কম্লিমেন্ট, ভূয়সী প্রশংসার পাওয়ার পরও ইমরান মাঝির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। নেই তার উৎসাহে উদ্বাহু নৃত্য। বরং ধন্যবাদের মতো রসকসহীন শুকনো শব্দ দিয়া কাজ সেরে সে ফোন রেখে দেয়।

তাহলে কী করা? ঠিক করি ‘দুধভাই’ নিয়া লিখব। পুরো বই নিয়া একটা মহারোহী আলোচনা গড়ে তুলব। কিন্তু আজ লিখি কাল লিখি করে আর হয় না। তারপর একদিন দেখি টেবিল থেকে বইটা উধাও। কে যে নিয়া গেছে বা কারে যে দিয়া দিয়েছি কিছুই আর মনে করতে পারি না। মার্কেটে খুঁজি, দেখি সব দোকানেই বিক্রি-বাটা শেষ। কী করা, শেষে ইমরান মাঝির শরণাপন্ন হই। সুবোধ বালকের মতো সে দুদিন পরেই দু কপি ‘দুধভাই’ কুরিয়ার করে।

কিন্তু তারপরও লেখা আর হয় না। সে এক অলীক বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। কিছুতেই আর হয়ে ওঠে না। এভাবে একদিন দুই দিন করে আজ সাত বছর হয়ে গেছে। একটা লাইনও লিখতে পারিনি। এমনকি ফেসবুকে দুএকটা স্ট্যাটাসও দেওয়া হয়নি। তবে এই সাত বছরে ইমরান মাঝির সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগও। কিন্তু সে একবারও আমার ওয়াদার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় নাই। বলে নাই—কই, আপনি লিখবেন বলছিলেন, লিখলেন কই?

টানা সাত বছর ধরে ধৈর্যরে আঁকড়ে ধরা, তারে সাথে নিয়া নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা কিংবা কারো কারো মতে, উদাসীনতারে বগলদাবা করে রাখা, তার সাথে বসবাস করা একজন কবির জন্য অপরিহার্য। চণ্ডীদাসের মতো এমন নিষ্ঠা জরুরি। ইমরান মাঝি তা করতে সক্ষম হয়েছেন। অতএব স্যালুট ইমরান মাঝি, স্যালুট আপনার কবিতা।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;