অনলাইন সাংবাদিকতার আদ্যোপান্ত জানা যাবে যে বইতে

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’


আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
-বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সানজিদা সারমিন

-বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সানজিদা সারমিন

  • Font increase
  • Font Decrease

অমর একুশে বইমেলায় এবার নালন্দা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে সাংবাদিক আশিস বিশ্বাসের লেখা ‘অনলাইন সাংবাদিকতা অনলাইন সংবাদমাধ্যম’ শীর্ষক বই। শুরুতে অনেকের কাছে অনলাইন সাংবাদিকতার ধারণা ও ব্যাপ্তি নিয়ে অস্পষ্টতা এবং কারও কারও কাছে অনাগ্রহ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে নতুন যুগের প্রযুক্তিবান্ধব এই সাংবাদিকতাই এখন মূলধারার সাংবাদিকতা হিসবে আধিপত্য করছে।

বলা চলে প্রিন্ট ও সংবাদভিত্তিক টেলিভিশনগুলোও এখন বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর ওপর। কিন্তু বিকাশমান অনলাইন গণমাধ্যম ও অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে এখনও একাডেমিক পুস্তকের অভাব রয়েছে। প্রায় দেড় দশক অনলাইন সাংবাদিকতায়, বিশেষ করে বার্তাবিভাগে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্বল করে ‘অনলাইন সাংবাদিকতা অনলাইন সংবাদমাধ্যম’ নামে বইটি প্রকাশে উদ্যোগী হন আশিস বিশ্বাস।

বইটি সম্পর্কে জানতে বার্তা২৪.কম কথা বলেছে সাংবাদিক ও লেখক আশিস বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন বইটি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। 

বার্তা২৪.কম : সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখার ভাবনাটা কীভাবে এলো?

আশিস বিশ্বাস: এখানে তিনটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে। প্রথমত, আমি শৈশব থেকে বিবিসি বাংলা শুনতাম। আমাদের ঘরে ফিলিপসের থ্রি-ব্যান্ডের রেডিও ছিল। বিবিসি শুনতে শুনতে সংবাদ ও সাংবাদিকতার প্রতি একধরণের ঝোঁক অবচেতন মনে কাজ করতো। এরপর যখন বিবিসি অনলাইন সার্ভিস চালু হলো তখন অনলাইন সাংবাদিকতার প্রতি প্রচণ্ড টান অনুভব করতাম। এছাড়া শিক্ষা কারিক্যুলাম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের পঠন-পাঠন সামগ্রী লিখতে হতো। এসময় বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ওপর বই লিখতে হতো নব্যসাক্ষরদের জন্য। এটাও ছিল পেশাভিত্তিক কাজ। বিভিন্ন সংস্থার মানুষদের উপকরণ উন্নয়নের জন্য বই কীভাবে লিখতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা ও পরিচালনার কাজ করেছি। তখনও পেশাভিত্তিক বই লেখার প্রতি আগ্রহবোধ করেছি। এছাড়া ছাত্রাবস্থায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রথিতযশা মনীষীদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় আমার। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হাতকলমে অনেক কিছু করতে হয়েছে। এর মধ্যে লেখালেখি তো আছেই। এরপর অনলাইন নিউজপোর্টালে যোগ দেওয়া ছিল আমার জীবনে একটা টার্নিংপয়েন্ট। সাংবাদিকতায় আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। সাংবাদিকতার প্রতি টান ছিল বিধায় দেশ-বিদেশের বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বই, পত্রপত্রিকা সংগ্রহ করতাম। সেগুলো পড়ার পর সাংবাদিকতা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা গড়ে ওঠে। বাংলানিউজ২৪.কমে সংবাদ সম্পাদনায় কাজ করার সময় তৎকালীন এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন আমাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন। সেইসঙ্গে তিনি নিউজ ডেস্ক, রিপোর্টিং ও বিভিন্ন নিউজপোর্টালের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলি মনিটর করতেন। আমাদের সাপ্তাহিক মিটিংয়ে কোন কোন নিউজ আমরা কভার করতে পারিনি, তার একটা তালিকা আমাদের জানাতেন। সেইসঙ্গে নিউজ ডেস্ক ও রিপোর্টিংয়ের সবার কাজ তিনি মনিটর করতেন। তিনি কীভাবে মনিটর (পরিবীক্ষণ) করতেন, সে সময় তা নিজে নিজে বোঝার চেষ্টা করতাম। তখন নিউজরুম পরিচালনা, অনলাইন নিউজপোর্টালের সংবাদকাঠামোর বিস্তারিত অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এরই মধ্যে সম্ভবত ২০১১/২০১২ সালে আমাদের বাঁশখালীর প্রতিনিধি রোকন মাহবুব আমাকে পরামর্শ দেন, আমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেন অনলাইন সাংবাদিকতা বিষয়ে একটা বই লিখি। তখন আমার মাথায় ভাবনাটা এলো যে, বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টালের ধারণাটা একেবারেই নতুন এবং এই ধারণার পথিকৃত হলেন বাংলানিউজের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনলাইন সাংবাদিকতার পাঠ শুরু করেন। এসব কিছু মাথায় রেখে অভিজ্ঞতাভিত্তিক যদি একটি বই লিখি, তাহলে যারা অনলাইন সাংবাদিকতায় আসতে চান, তাদের কাজে আসতে পারে ভেবে পাণ্ডলিপি তৈরি করার ভাবনাটা আসে। সেই চিন্তা থেকেই পেশাভিত্তিক এই বই – ‘অনলাইন সাংবাদিকতা অনলাইন সংবাদমাধ্যম’ পাণ্ডলিপি লিখতে শুরু করি। ২০১৫ সালে পাণ্ডলিপি তৈরি করা শেষ হলেও তা প্রকাশিত হলো ২০২৪-এর বইমেলায়। এর মধ্যে অনলাইন নিউজপোর্টালে আরো অনেক মাত্রা যোগ হয়েছে। সেগুলো নিয়ে পরে কাজ করবার ইচ্ছে আছে, এ বইটির পরের সিরিজ হিসেবে।

সাংবাদিক আশিস বিশ্বাস। ছবি: শাওন দেবনাথ

বার্তা২৪.কম: অনলাইন সাংবাদিকতায় এখনো একাডেমিক বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। আপনার এই বই সেই শূন্যতার কতখানি পূরণ করবে?

আশিস বিশ্বাস : প্রথমেই বলে রাখি, সেটি পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিনিয়ত প্রযু্ক্তির উন্নতি হচ্ছে। তিন বছর আগে যা ছিল, তিন বছর পরে তা আর সেভাবে থাকছে না। তার সঙ্গে আরো নতুন নতুন মাত্র যুক্ত হচ্ছে। অনলাইন সাংবাদিকতা বা অনলাইন নিউজপোর্টালেও অনেক কিছু যুক্ত হচ্ছে। সাংবাদিকতাকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এটি চলমান। সে হিসেবে বলতে হয়, আমার বইটি অনলাইন নিউজপোর্টাল সম্পর্কে একেবারে বেসিক ধারণা নিয়ে লেখা। তবে এটাও বলতে হয়, শুধুমাত্র অনলাইন সাংবাদিকতা বিষয়ে বইয়ের ঘাটতি আছে। কারণ, এটি একেবারে নতুন কনসেপ্ট আমাদের দেশে। শুধুমাত্র নিউজপোর্টাল নিয়ে লেখা বইয়ের ঘাটতি রয়েছে বাজারে। সে বিবেচনায় বইটি একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে মনে করি। বইয়ের পাণ্ডলিপি বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি করা। এখন যদি বইটি লিখতাম,তাহলে পাণ্ডলিপির কলেবর আরো বড় হতো। কারণ, বেসিকের পর আসে অ্যাডভান্স ধারণা। তবে যখন কেউ অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে পড়তে চাইবেন, জানতে চাইবেন কিংবা কাজ শুরু করতে চাইবেন, সেক্ষেত্রে বইটি ভালো একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। বইটিতে সাংবাদিকতার মৌলিক ধারণা যেমন সন্নিবেশিত হয়েছে, তেমনি অনলাইন সাংবাদিকতার মূল ধারণাগুলোও তুলে ধরা হয়েছে এবং সেটি অবশ্যই বৈশ্বিক ধারণার প্রেক্ষিতে। সে হিসেবে বইটির গুরুত্ব আছে বলে আমি মনে করি।

বার্তা২৪.কম: ‘দেশিয় গণমাধ্যম’ ধারণার সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ধারণা কতখানি সন্নিবেশিত করেছেন এখানে?

আশিস বিশ্বাস: প্রথমেই বলে রাখি, অনলাইন নিউজপোর্টালের ধারণাটি অতিসাম্প্রতিক ধারণা। এজন্য একে ‘নিউ মিডিয়া’ বলা হয়। নিউজপোর্টালে আপনি যেমন খবর পড়তে পারছেন, সেইসঙ্গে লাইভ নিউজও দেখতে পারছেন। এটি ছাপা সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনের সমন্বিত রূপ। এখানে আপনি ২৪ ঘণ্টার প্রতি মুহূর্তের খবর জানতে পারছেন। খবরের বা কোনো ঘটনার বিশ্লেষণের ভিডিও দেখতে পারছেন। সেইসঙ্গে চলমান ঘটনার লাইভ সম্প্রচারও দেখতে পারছেন। এই ধারণাটি একমাত্র নিউজপোর্টালের মাধ্যমেই সম্ভব। এটি বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। নিউজপোর্টালের ধারণাটিই আন্তর্জাতিক এবং এর ছোঁয়া বিশ্বের প্রতিটি কোণায় কোণায় পৌঁছে যায় মুহূর্তেই। সুতরাং নিউজপোর্টাল ধারণাটি আন্তর্জাতিক। সে কারণে বদলে যাওয়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কথাই উঠে এসেছে ‘অনলাইন সাংবাদিকতা অনলাইন সংবাদমাধ্যম’ বইয়ে।

বার্তা২৪.কম: বইটিতে মোটাদাগে কোন বিষয়গুলো তুলে এনেছেন?

আশিস বিশ্বাস: বইটিতে অনলাইন সাংবাদিকতার ইতিহাস, অনলাইন নিউজপোর্টালের ধারণা, এর কাঠামো, সংবাদ তৈরি, শিরোনাম লেখাসহ বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সংবাদপত্রবিষয়ক বিভিন্ন আইন বইটিতে গ্রন্থনা করা হয়েছে। একজন সংবাদকর্মী সাংবাদিকতার ধারণার পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনগুলিও জানতে পারবেন।

বার্তা২৪.কম: পাঠকেরা কী কারণে বইটি পড়বে মনে করেন আপনি?

আশিস বিশ্বাস: বিষয়টি উপন্যাস বা গল্পের বইয়ের মতো নয়। এটি একটি রেফারেন্স বই। একেবারেই পেশাভিত্তিক রেফারেন্স। এর পাঠক একেবারেই নির্দিষ্ট। যারা সাংবাদিকতা, যোগাযোগ, গণমাধ্যম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, শুধুমাত্র তাদের প্রয়োজনে আসবে। যারা সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয় বা অনলাইন সাংবাদিকতা সম্পর্কে জানতে চান বা কাজ করতে চান, তাদের মৌলিক ধারণা গড়তে কাজে আসবে। সে দিক থেকে এর পাঠক একেবারেই সুনির্দিষ্ট। কে কীভাবে এ বইটি কাজে লাগাতে চান, তা তার প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করবে।

যাঁরা বইটি সংগ্রহে করতে চান

‘অনলাইন সাংবাদিকতা
অনলাইন সংবাদমাধ্যম’
-আশিস বিশ্বাস
প্রকাশক
নালন্দা প্রকাশনী
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪
প্যাভিলিয়ন : ১৭ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে)
বইমেলায় ২৫% ছাড়ে বইটি সংগ্রহ করা যাবে ৩০০ টাকা।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

  ‘এসো মিলি প্রাণের মেলায়’

;