লেখকদের সমুদ্র অভিযাত্রা: নদীপথে বিশ্বের প্রথম বইমেলা



মাহমুদ হাফিজ
লেখকদের সমুদ্র অভিযাত্রা: নদীপথে বিশ্বের প্রথম বইমেলা

লেখকদের সমুদ্র অভিযাত্রা: নদীপথে বিশ্বের প্রথম বইমেলা

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে: দেশের প্রায় তিনশ’ লেখকের সমুদ্র অভিযাত্রী দল মেঘনা-মোহনা ও বঙ্গোপসাগর পরিভ্রমণ শেষে ডাঙায় ফিরেছেন। বৃহস্পিতবার যাত্রার মেঘনা মোহনা ও বঙ্গোপসাগর পরিভ্রমণশেষে তাঁরা শনিবার রাতে বুড়িগঙ্গায় ফিরে আসেন। বিলাসবহুল জাহাজে তিন দিন দুই রাত অবস্থানের সময় প্রীতি সম্মিলনী, আলোচনাসভা, সমকালীন সাহিত্য বিতর্ক, কবিতাপাঠ, সঙ্গীতানুষ্ঠান, র‍্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে আয়োজন করা হয় ভাসমান জাহাজে পরিভ্রমণরত লেখকদের বই নিয় নদীপথে বিশ্বের প্রথম বইমেলা। অভিযাত্রী দল হরিণের অভয়ারণ্যখ্যাত চর কুকরিমুকরি দ্বীপ, লাল কাঁকড়ার বাসস্থানখ্যাত তারুয়া সমুদ্র সৈকত, ভোলার কচ্ছপিয়া ঘাট ও বেতুয়া টার্মিনাল ভ্রমণ করেন। বিলাসবহুল জাহাজ শুভরাজে এই সমুদ্রযাত্রার আয়োজন করে কবি অনিকেত শামীম সম্পাদিত ‘লোক’ লিটল ম্যাগাজিন। বার্তা ২৪ কম এর প্রতিনিধি  তিনদিনের অভিযাত্রায় শামিল হয়ে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করেছেন।

লঞ্চে বই পড়া

লেখকদের ফি বছর আনন্দ ভ্রমণ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এ বছর ‘লোক’ সমুদ্র অভিযাত্রার পরিকল্পনা করে। কয়েকমাস ধরে আয়োজনের প্রস্তুতি চলে। কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেনকে আহবায়ক, কবি হাসান মাহমুদ ও সাকিরা পারভীনকে যুগ্ম আহবায়ক এবং কবি আহমেদ শিপলুকে সদস্য সচিব করে ভ্রমণ বাস্তবায়নে কমিটি করা হয়। বিভিন্ন বিভাগে লেখক-কবিদের সমন্বয়ক নির্বাচিনকরা হয়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঘুর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের লেখকদের  জলযাত্রায় দ্বৈরথ তৈরি হয়। স্বভাবসুলভ বোহেমিয়ানা আর ভবের পাগল অদম্য লেখকদের কিছুই দমাতে পারেনি। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়প্রভাবিত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিকে সৃষ্টিতে পরিণত করে সারাদেশ থেকে তিনশ লেখক যখন ওয়াইজঘাটের শুভরাজ জাহাজে পৌঁছান, তখন আর কারও বুঝতে বাঁকি ছিল না- এ যাত্রা অদম্য ও অবধারিত।

উন্মুক্ত আলোচনা_ বাক স্বাধীনতা ও লেখকের দায়

জাহাজের প্রবেশমুখে পারভেজ হোসেন ও অনিকেত শামীম এর নেতৃত্বে আহমেদ শিপলু, রিপন আহসান রিতু, মুশতাক মুকুল লেখকদের কেবিন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন- তখন সকলের  মুখে মুখে ভেসে ওঠে সমুদ্রযাত্রার আভাস। এই যাত্রায় শামিল হতে অনেক লেখক দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসে বাংলাবাজারের বিউটি বোর্ডিং ও সদরঘাটের বিভিন্ন হোটেলে পূর্বদিন রাত্রিযাপন করেন। ঢাকা থেকে যোগ দেন সমান সংখ্যক লেখক। জাহাজে নিবন্ধন ও চাবি বুঝিয়ে দেয়ার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিলাসবহুল বহুতল জাহাজটি দেখে সবাই আন্দে মেতে ওঠেন। যাত্রা শুরুর পর আসে সান্ধ্য জলপানের আহবান।

সঙ্গীতানুষ্ঠানের আকৃষ্ট ভিডিওধারী লেখক সাংবাদিকগণ

সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনীপর্ব ও সঙ্গীতায়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমুদ্রমুখো জাহাজযাত্রা। কবি সম্পাদক সঙ্গীতশিল্পী হাসান মাহমুদ এর উপস্থাপনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান সকলের উপস্থিতিতে আনন্দঘন হয়ে ওঠে। এতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন অনেক কবি, বাচিক শিল্পীগণ আবৃত্তি করেন এবং  হাসান মাহমুদ স্বয়ং ভরাট গলায় গানে মাতিয়ে রাখেন সকলকে। পরে ‘বাক-স্বাধীনতা ও লেখকের দায়’ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনাপর্ব অনিকেত শামীম সভাপতিত্ব করেন। কবি নাসির আহমেদ, নাট্যকার মাসুম রেজা, ভ্রমণলেখক শাকুর মজিদ, কবি আরিফুল হক কুমার, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি জাহানারা পারভীন প্রমুখ আলোচনা করেন। সঞ্চালনা করেন কবি জুয়েল মাজহার। ভররাত ধরে চলে সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতাপাঠ, আড্ডা। টানা চৌদ্দঘন্টা অসংখ্য নদী পরিভ্রমণ করে লেখকগণকে বহনকারী শুভরাজ জাহাজ সকাল আটটায় চরফ্যাশনের বেতুয়া টার্মিনালে নোঙর করে।

চর কুকরিমুকরির পাখি

পরদিন লেখকবৃন্দ সকালের নাস্তা সেরে বেতুয়া থেকে শশীভূষণ বাজার হয়ে রিজার্ভ বাসযোগে পৌঁছান কচ্ছপিয়া ঘাটে। কচ্ছপিয়া থেকে বিশেষ ট্রলার ও লঞ্চে চর কুকরিমুকরি, তারুয়া সমুদ্রসৈকতসহ আশপাশের বিভিন্ন দ্বীপ ও বঙ্গোপাসাগর ভ্রমণে যাওয়া যায়। ক্চ্ছপিয়া ঘাট থেকে বিশেষভাবে সজ্জিত তিনটি লঞ্চ ও কয়েকটি স্পিডবোটে লেখকগণ তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পৌঁছান। লাল কাঁকড়ার আবাস আর সৃজিত বন দেখার পর তাঁদের বহনকারী লঞ্চ যাত্রা করে উত্তর বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের প্রান্ত ছুঁয়ে তা পৌঁছে যায় চর কুকরি মুকরি। এখানে ছিল  মধ্যাহ্নারের আয়োজন। মধ্যাহ্ন আহারে ছিল সমুদ্রের তাজা পোয়া মাছের তরকারি, ডাল, সব্জি আর দেশি মোটা চালের ভাত। মধ্যাহ্নারে উদরপূর্তি করে কেউ সমুদ্রে নামেন, কেউ পাশের বনে হরিণ দেখতে চলে যান কেউ ছোটেন প্রকৃতির নীবিড় সান্নিধ্যে। পরে সন্ধ্যার আগে তারা ফের রওয়ানা দেন কচ্ছপিয়া ঘাট হয়ে বেতুয়ায় নোঙর করা জাহাজে।

জাহাজে রাতে স্বরচিত কবিতপাঠ, সঙ্গীতায়োজন ও নদীপথে বিশ্বের প্রথম ব্‌ইমেলার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত লেখকরা স্ব স্ব  বইপত্র প্রদান করে মেলার টেবিলগুলো ভরে ফেলেন। বহু বই বিক্রিও হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পুরোধা অনিকেত শামীম ঘোষণা করেন গুগলে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বাংলায়, এশিয়ায় এমনকি বিশ্বে নদীপথে এটাই প্রথম বইমেলা।

জাহাজের টাইটানিক ডেকে ক্যাম্পিংয়ের সামনে

বেতুয়ায় ভাসমান জাহাজে রাত্রিযাপনের পরদিন সকালে লেখকবৃন্দ ঢাকামুখো যাত্রা করেন। এ সময় অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রযুক্তিযুগে লিটল ম্যাগাজিনের হাল হকিকত’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনা। কথা সাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ এর সভাপতিত্ব ও রাজা সহিদুল আসলামের সঞ্চালনায় আলোচক ছিলেন কবি সম্পাদক সরকার আজিজ, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, চর্যা সম্পাদক কবি আযাদ নোমান, কবি সম্পাদক মারুফুল আলম, কবি সম্পাদক দ্রাবিড় সৈকত, কবি সম্পাদক আহমেদ শিপলু, কবি সম্পাদক আঁখি সিদ্দিকা প্রমুখ। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বর্ষীয়ান কবি আবদুর রাজ্জাক, কবি ফরিদ কবির ও কবি চঞ্চল আশরাফ। বিপুল কবি-লেখকের অংশগ্রহণে বিতর্কটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও শিক্ষণীয়।

র‍্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণী ও বইমেলায় বিক্রিত বইয়ের অর্থ লেখকদের হাতে প্রদানের  মাধ্যমে সমাপণী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সমাপণী পর্ব পরিচালনা করেন  আহবায়ক পারভেজ হোসেন ও সমন্বয়ক কবি রিপন আহসান রিতু। পুরস্কার বিতরণ করেন নাসির আহমেদ, অনিকেত শামীম, মাহমুদ হাফিজ, তারেক রেজা, হাসান মাহমুদ প্রমুখ। র‍্যাফেল ড্র’তে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন কবি ফরিদ কবির। এতে জুয়েল মাজহার, চঞ্চল আশরাফ, ইমরান উজ জামান, রেহানা জামান প্রমুখকে তাঁদের বিক্রিত বইয়ের দাম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

কেবিন জোনে কবি আবদুর রব ও ভ্রামণিক মাহমুদ হাফিজ

সমুদ্র অভিযাত্রার আয়োজক-অংশগ্রহণকারী নির্বিশেষে উদ্দীপনা ছিল উল্লেখের মতো। এতে অংশগ্রহণ করে  কবি আবদুর রব বার্তা ২৪ কম বলেছেন, লেখকরা সৃষ্টি ও আনন্দের কারবারি। এ ধরনের আয়োজন তাঁদের সৃষ্টির প্রণোদনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এরকম ভ্রমণে প্রথম অংশগ্রহণকারী কবি ও গল্পকার রেহানা জামান বলেন, ব্যতিক্রমী আয়োজনে অংশ গ্রহণ এই প্রথম। নদীপথের প্রথম বইমেলায় গল্প ও কবিতার বই নিয়ে উপস্থিত হতে আগ্রহী ছিলাম। তাছাড়া ভ্রমণ ও প্রকৃতি ‌আমার পছন্দ। মূল উদ্যোক্তা অনিকেত শামীম ও আহবায়ক পারভেজ হোসেন জানিয়েছেন, লেখকদের আনন্দ ভ্রমণে দেশের কবি-লেখকদের বিপুল সাড়ায় আমরা অভিভূত। ব্যতিক্রমী সব আয়োজন লেখকদের যেমন সমৃদ্ধ করে, তাদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান ও সম্প্রীতিও বাড়ায়। তাই প্রতি বছর আনন্দ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

সমুদ্র অভিযাত্রা উপলক্ষে ‘লোক’ ম্যাগাজিন কবিদের নাম ঠিকানা সংবলিত বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে বিশেষ ব্যাগ, কলম ও প্যাড উপহার দেয়া হয়।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;