ইটগুলো পরিমিত সিমেন্টে গাঁথা হবে তো?



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বেশ ক’বছর আগে থেকে ‘ব্রিকস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক জোটের নাম নতুন করে শোনা যাচ্ছে। শুরুতে অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবতীর্তে কেউ এটাকে বলছেন রাজনৈতিক জোট, কেউ ভূ-রাজনৈতিক, কেউবা উত্তরের চাপের বিরুদ্ধে দক্ষিণের ঠেকানোর প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক না কেন, বর্তমানে শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ব্রিকস একটি ব্লক বা জোট হিসেবে নব্য আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। ব্রিকস আমাদের দেশে আলোচনায় স্থান পাচ্ছে কারণ, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্রিকস-এর সদস্যপদ লাভ করার জন্য আবেদন করেছে।

বর্তমানে ব্রিকসকে নতুন করে ভাবা হলেও এটার উৎপত্তি ও বিকাশ কিন্তু একবারেই নতুন নয়। তবে এর সম্প্রসারণ চিন্তা নতুন করে ভাবাচ্ছে। সেই ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ব্রিকস ভাবনা শুরু হলেও গোল্ডম্যান স্যাক্সের জিম ওনিল ২০০১ সালে প্রথম ব্রিকস’র প্রতিষ্ঠার ধারণা নিয়ে আসেন। চারটি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন শুধু ‘ব্রিক’নামে ২০০৯ সালে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। তখন এসব দেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের নিরীখে এই জোট গঠন করা হয়। এরপর ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সদস্যপদ দিয়ে ‘ব্রিক’থেকে ‘ব্রিকস’নামের শব্দবন্ধন তৈরি করে জোটটি। এরপর ২০১২ সালে সদস্য দেশগুলোর একজন কূটনীতিবিদ এটাকে ‘আলোচনার মঞ্চ নয়-বরং সমন্বিত হবার মঞ্চ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ব্রিকস-এর ধারণার পর গোল্ডম্যান স্যাক্স উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে থেকে ‘দ্য নেক্সট ইলাভেন’ তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশও স্থান পায়। এরপর ফরাসী আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান কোফেস ২০১৪ সালে ১০টি উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে সম্ভাবনাময় উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে রয়েছে পেরু, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া।

পরবতীর্তে ২০১৪ সালের ২১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের মডেলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ব্রিকস-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনবিডি)। এটি করোনাকালীন সময়ে নতুন সদস্যপদ আহব্বান করলে মিশর, বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উরুগুয়ে এনবিডি-র সদস্যপদ লাভ করে।

মূলত: মার্কিন ডলারের উচ্চমূল্য ও একক আধিপত্য ঠেকাতে ব্রিকস-এর মধ্যে জন্ম নেয় এনবিডি ব্যাংক। মার্কিন ডলারকে টেক্কা দেবার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন এর প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ২০২২ সালে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ-এর উপর সুদের হার আগ্রাসী করার ফলে উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রনীতির উপর নিম্নমুখী চাপ পড়ে। তাই আন্তজার্তিক বাণিজ্যে মুদ্রাবহুমুখীকরণ ছিল এনবিডি-র উদ্দেশ্য। এনবিডি কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির বিকাশে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু চীনের অর্থনীতি ৬ ট্রিলিয়ন থেকে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারে এবং ভারতের ১.৭ থেকে ৩.১ ট্রিলিয়নে উন্নীত হলেও অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

ইতোমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলেও ২০২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন সদস্য রাষ্ট্র প্রতিবাদ করতে সাহস করেনি। এমনকি ২০২৩ সালে জুলাই মাসেও ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত থাকায় ব্রিকস—এর ক্রমাগত নীরবতা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি শুরু করেছে।

ব্রিকস-এর প্রভাবশালী সদস্য প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রতিবেশী ভাইয়ের সাথে জেদ করে ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। আরেক সদস্য ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের নিধন করার জন্য পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট লী শিনপিংকে স্বৈরাচার আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউক্রেনে আক্রমণ বা যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা একবারেই নিশ্চুপ। বরং তাদের হয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ করে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ। এছাড়া একটু গভীরে আলোকপাত করলেই স্পষ্ট যে, নতুন সদস্যলাভে আগ্রহী দেশগুলোর সিংহভাগ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেদের দেশের মধ্যে অন্তর্কলহ ও অশান্তির মধ্যে কালাতিপাত করে চলেছে। এসব দেশের অনেকের রাজনৈতিক মতাদর্শের অবস্থানের দোদুল্যমানতা অবলোকন করে মার্কিন ভিসানীতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া শত শত চেষ্টা তদ্বির করে গত তিন যুগেও বাংলাদেশ ভারতের নিকট থেকে আন্তজার্তিক তিস্তা নদীর পানির ন্যায্যতা পায়নি। ইইউ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা দিলেও চীন—ভারত এখনও সেই বাণিজ্যসুবিধা দিতে আগ্রহী নয়।

অন্যদিকে চীনের আগ্রাসী নয়াচীন নীতি, চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা,বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ও রোহিঙ্গা সমস্যা ও বিশ্বের আরো অনেক জটিল সমস্যার প্রেক্ষিতে ব্রিকস কোন মতামত প্রকাশ করেনি। এতে মনে করা হচ্ছে ব্রিকস কোন বৈশ্বিক রাজনৈতিক সংকট নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তার মোকাবেলায় একটি অর্থনৈতিক জোট হিসেবেও ব্রিকস—এর কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

অধিকিন্তু, যুদ্ধবহুল বৈশি^ক সংকটকে পাশ কাটিয়ে শুধু মার্কিন ডলারের আধিপত্য রুখতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক দুর্বল দেশকে ব্রিকস-এর সদস্যপদ দেবার যে প্রচেষ্টা চলছে তা সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটকে আরো কোন কঠিন গহ্বরে ঠেলে দিতে যাচ্ছে তা বেশ বড় চিন্তার বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

এরই মাঝে ব্রিকস-এর আরো ২০ টি নতুন সদস্য দেশের অন্তর্ভূক্তির আবেদন জমা হয়েছে। বাংলাদেশও আবেদন করেছে এবং আগামী আগষ্টে ব্রিকস-এর সম্মেলনে নতুন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তিলাভ আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বলেছে, ‘ইউএসকে বাইপাস করে আমরা ব্রিকস-এ যোগদান করছি না।’বাংলাদেশের লক্ষ্য ভবিষ্যতে ব্রিকস থেকে এনবিডি-র মাধ্যমে বড় ঋণ পাওয়া ।’

কারণ, ব্রিকস-কে ভবিষ্যতের ‘গেম চেঞ্জার’হিসেবে মনে করে সরকারকে কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ আবার এটাকে বাংলাদেশের জন্য ‘ব্রেকথ্রু’ বা হঠাৎ সুযোগের সাফল্য হিসেবে মনে করছেন।

কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ব্রিকস বাংলাদেশের জন্য ততটা ইতিবাচক মনে হচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশ পশ্চিমাদের নানাবিধ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে রয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, ‘এই মুহুর্তে বাংলাদেশ পাশ্চাত্যের বড় দেশগুলোর সংগে সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছে।’ ‘ব্রিকস-এর একটি দেশ রাশিয়া যার সংগে বিশ্বের অনেক দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে লিপ্ত।’আমেরিকায় বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আমারা তাদেরকে যেভাবে ভাবি তারা এখনও আমাদেরকে সেভাবে ভাবে না।’

তাহলে বাংলাদেশ কোনদিকে যাবে? এসব বিশ্লেষণকে মোটেও হেলফেলা হিসেবে মনে করার উপায় নেই। আমাদের বৈদেশীক নীতি হলো ‘সবার সংগে বন্ধুত্ব, কারো সংগে বৈরিতা নয়।’কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পরস্পর বৈরী দেশগুলোর জোটের সংগে সদস্যপদ লাভ করে কোন দেশ বা জোটের বিরাগভাজন হতে চাওয়াটা এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়ে গেছে। ফলত: বৈরী কোন দেশে বাড়ি গাড়ি কিনে, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার পরিজন রেখে তাদের সাথে রাজনৈতিক শত্রুতা শুরু করা কি নিছক আরো নতুন হঠকারীতা নয়?

আমরা তো ব্রাজিলে বা আফ্রিকার কোন দেশে বাড়ি কিনতে চাই না। মনে মনে বিশ্বাস করি, ভালবাসি রাশিয়া কিন্তু বৈদেশিক নীতির দোহাই দিয়ে সুখের সন্ধানে যাই আমেরিকা, কানাডায়। এখনও সন্তানকে শিক্ষালভের জন্য রাশিয়ায় না পাঠিয়ে মার্কিন বা ইউরোপ মুল্লুকে পাঠাই। জাপানী গাড়ি বা ট্রেন কিনে চড়ে বেড়াতে পছন্দ করি। আমাদের পছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ও মধ্যে কৌশলগত বিচক্ষনহীনতা ও দূরত্ব তৈরির প্রবণতা সবসময় কাজ করে থাকে। এসব বৈপরিত্য আমাদের জাতীয় চরিত্র।

এজন্য হন্যে হয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে বেশি তৎপরতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করাটা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর হয় না। আমাদের প্রতি সন্দেহ ও বৈদেশিক চাপ বেড়ে যায় নিজেদের শূন্যতায় ও বোকামীতে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশের জনগণ। যেমনটা হয়েছে নতুন ভিসানীতি আরোপের ফলে।

স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানে আশায় সাধারণ মানুষ উন্মুখ। এজন্য ‘সংবিধানের আওতায় কোনো গ্রহণযোগ্য সংস্কারের প্রস্তাব থাকলে তা নিয়ে আলোচনাও কি হতে পারে না?... জনগণের রায় নিতে ভয় কীসের?’ (জাগোনিউজ ২৭.৬.২০২৩)। নিজের ঘরে কেন অশান্তির আগুন জ¦লে সেদিকে নজর দেয়াটা এখন বড় কাজ। আন্তজার্তিক মহলের মধ্যে এসব কথা আরো বেশী ঘাটাঘাটি করার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা আর প্রদর্শণ করা ভাল নয়।

কোন কোন বিশ্লেষক বলেছেন, ব্রিকসে যোগদান আমাদের জন্য ইতিবাচক। তবে সেটা কবে কখন কিভাবে ইতিবাচক হতে পারে তার বিশ্লেষণ দেননি। ব্রিকসের সদস্যদের অভিলাষ বড় কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে ভাল সমঝোতা নেই। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যস্ফীতিকে চেপে রাখার প্রবণতা বহুদিনের। এটা আরো বেশীদিন চেপে রাখার প্রচেষ্টাকে নিম্নআয়ের মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করছেন না। কারণ সামান্য মরিচ-পিঁয়াজের মতো মশলার ঘাটতি বা বার বার ভয়ানক ডেঙ্গুর মতো নাজুক পরিস্থিতি ওই যুদ্ধের কারণে হচ্ছে না। ব্রিকস-এর কাঙ্খিত নতুন ২০ সদস্যে দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মতো কারো ততটা বেশি উন্নয়ন লিপ্সা বা তৎপরতা নেই, অভ্যন্তরীণ জটিলাবস্থাও নেই। তাই ঘরের বেসামাল অবস্থাকে সামাল না দিয়ে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে সমাজ-দার্শনিক প্রতিপক্ষ তৈরি করে, অর্থনৈতিক বন্ধু হারিয়ে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করার প্রয়োজন কি?

উঠতি অর্থনীতির মিশ্র, মডারেট চিন্তাধারা প্রসূত আধুনিক বাংলাদেশ সবার সংগে থেকে উন্নতি করতে চায়। কিন্তু বৈরী জোটের বিরুপাক্ষের মধ্যে পড়ে ঘূর্ণি খেতে শুরু করলে কারো কারো ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আশা করা অমূলক। যা আমাদের
আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে দ্রুত থামিয়ে দিতে পারে। এজন্য আমাদেরকে সামনের যে কোন শুরু থেকে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;