ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-৮



মাহফুজ পারভেজ
ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-৮

ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-৮

  • Font increase
  • Font Decrease

[অষ্টম কিস্তি]

“এই ছবিতে তুমি যে ঘাসের ওপর থেকে রংধনু শুরু করলে, কী করে তা বাস্তবের কাছাকাছি হবে?”

ম্যারির প্রশ্ন শুনে পল্লবী মাথা ঝুঁকিয়ে তার হাতের পেনসিলটা কাগজে এলোমেলো ঘষতে থাকে। কোনো উত্তর দেয় না। ক্যাম্পাসে পড়তে আসা দক্ষিণ এশীয় তরুণীটির দিকে অপলক চেয়ে থাকেন ম্যারি। পল্লবী মাথা ঝুঁকিয়ে রেখেই একসময় বিড়বিড় করে, “আমি তো কখনো সত্যিকারের রংধনু দেখিনি!”

ম্যারি চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রায় অর্ধস্ফুটে বলেন, “বুঝেছি। তবে আর কী।”

কথাটা বলে ম্যারি নিজের মনে ভাবলেন, মেয়েটিকে এভাবে বলা ঠিক হয় নি। পল্লবী আহত হতে পারে কিংবা তার মধ্যে না-পারার হতাশা আসতে পারে। এটা ঠিক কাজ নয়। শিক্ষার্থীর গুণ জাগ্রত করা তার দায়িত্ব। কোনো কিছু করার এবং পারার পথ দেখানো কর্তব্য। না-পারার বিষয়গুলো মনে করিয়ে তাকে আটকে দেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি।

নিজের ভুল বুঝতে পেরে পল্লবীর পাশে বসে হাসতে হাসতে ম্যারি বলেন, “সব সময় বাস্তবকে হুবহু আঁকার দরকার নেই। দেখা জিনিস হুবহু আঁকতে নেই। স্বপ্ন, কল্পনা আর ইচ্ছে মিশিয়ে আঁকতে হয়। তবেই সেটা তোমার একান্ত নিজের সৃষ্টি হবে।”

পল্লবীর ঠোঁটের কোণ বেঁকে উঠতে উঠতেও ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার খুশির সঙ্গে শোনা যায় হাতের চুড়ির রিনিঠিনি শব্দ। ম্যারি সন্তর্পণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন।

অন্য ছেলেমেয়েগুলোর ড্রয়িং খাতা চেক করে ম্যারি খানিকটা আশাহত হন। কিন্তু তিনি সেটা নিজের মনেই লুকিয়ে রাখেন। এদের দোষ দেওয়ার কিছু নেই। সত্যি সত্যি রংধনু তারা দেখে নি। বইয়ে দেখা কিংবা ইউটিউবের রংধনু দেখে দেখে যতটুকু আঁকতে পেরেছে, সেটাই বেশি।

একটি বিষয় দেখে ম্যারি খুবই বিস্মিত হন। রংধনু পৃথিবীর সর্বত্র একই রকম হবে, এটাই বিজ্ঞানের সূত্র। কিন্তু ছেলেমেয়েদের রংধনুতে তেমন ছাপ নেই। আফ্রিকা থেকে আসা সারাহ রংধনু এঁকেছে কালচে আকাশের প্রেক্ষাপটে। চীনের ছেলে লি লালচে আকাশের পটভূমিতে যে রংধনু চিত্রিত করেছে, তাতে সাতটি রঙ স্পষ্টভাবে খোলে নি। ম্যারি টের পান, সবার মনে আলাদা আলাদা আকাশ, যা তারা কল্পনা করেছে নিজের দেশ ও পরিবেশের প্রভাবে। তাই পল্লবীকে আলাদাভাবে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। তার রংধনু তারই নিজস্ব পরিবেশ ও অনুভূতির ফসল, যা তিনি এই প্রথম একেকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একেক রকমের দেখলেন। রংধনু অভিন্ন হলেও মানুষের মন আর কল্পনা যে সেটাকে আলাদা অবয়ব দিয়েছে, সেটা দিব্যি প্রকাশ পায় ম্যারির কাছে।

ড্রয়িং খাতাগুলো নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত রইলেন ম্যারি। সবাইকে একটিই কমেন্ট করলেন তিনি, “গুড ওয়ার্ক, ট্রাই এগেইন।”

ম্যারি কিন্তু ঠিকই টের পান, ছেলেমেয়েগুলোর কাজে অবচেতনভাবে একটি বার্তাই ভেসে ওঠে, তা আসলে তাদেরই সঙ্কুল পরিস্থিতির প্রতিফলন। যে কারণে তাদের ছবির আকাশগুলো বদলে গিয়েছে। কোনও একটি হয়েছে কালচে, কিছু লালচে কিংবা পিঙ্গল। চোখের সামনের আর্থসামাজিক বাস্তবতাই তাদের অনুভতি ছুঁয়ে ভিসুয়াল রিপ্রেজ়েন্টেশনের গভীরে বিশেষ ভাবে নিহিত রয়েছে। উত্তাল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে যার জন্ম, তার ছবির আত্মদর্শী চৈতন্যের মধ্যে সেই বীজমন্ত্র লুক্কায়িত থাকবেই।

চিত্রকর্ম বোঝার ও বিশ্লেষণের আলাদা চোখ আছে ম্যারির। কারণ, একসময় ম্যারি নিজেই ছিলেন ক্যাম্পাসের চলমান শিল্প আন্দোলনের অন্যতম হোতা। শিল্পকে মানুষের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার সেই অবিরত প্রচেষ্টার ফসল তুলেছিলেন তিনি আর তার সঙ্গে এক জেদি যুবক, ক্যাভিন। তাদের চাঞ্চল্যে ক্যাম্পাসের গথিক স্থাপত্যের গম্বুজওয়ালা ভবনগুলো ছুটির দিনের বৈকালিক আড্ডায় গমগম করত। এক শিল্পশোভিত ক্যাম্পাসের উদ্ভাস হতো কবি-সাহিত্যিক-চিত্রকর-ভাস্কর-গায়ক-সমালোচক-সম্পাদকদের ভিড়ে। সঙ্গে থাকতো আর্ট, পত্রপত্রিকা ও বই বিষয়ক আড্ডা। চলতো আবৃত্তি, কবিতাপাঠ, গান ও গল্পপাঠের মশগুল আসর।

প্রায়ই মহান শিল্পীদের ছবির প্রদর্শনী, নতুন উদীয়মান শিল্পীদের কাজ সংগ্রহ, মার্কিন দেশের লিথো প্রেসগুলোর সন্ধান, পুরনো ছাপচিত্রের খোঁজে অহর্নিশ অন্বেষণ ইত্যাদি ছিল তার যাপনের অবিচ্ছেদ অংশ। শিল্প ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ তখন থেকেই তাঁর অবচেতনে তৈরি করে ফেলেছিল চিত্রকর্মের এক মহার্ঘ মিউজ়িয়াম।

একবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সহায়তায় তিনটি কক্ষ নিয়ে ম্যারির কাজগুলোর একটি প্রদর্শনীর পরিকল্পনা ও আয়োজন করেছিল তাঁরই সাথী ও বন্ধুসম ক্যাভিন। প্রায় দেড়শোটি নানা মাধ্যমের কাজ ও বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সে এক মহাযজ্ঞ! এই উপলক্ষে তাঁর শিল্প নিয়েই একটি ডকু-ফিল্ম রিলিজ় করে বন্ধুরা। সমালোচকরা বলেছিলেন, অভিনবত্বে একটি আলাদা মাত্রার সংযোজন ঘটেছে ম্যারির কাজে। যেন রূপবন্ধ নতুন ভাবে পুনর্বিন্যাসের ফলে সিম্ফনি ও স্টাইল, বক্তব্য ও বর্ণনা, কম্পোজ়িশন ও ক্যাজ়ুয়ালিটি, মেসেজ ও মেটাফর একে অপরের পরিপূরক হয়ে প্রকাশিত হয়েছে ম্যারির আঁকা ছবিগুলোর পরতে পরতে।

হবে না কেন? ড্রয়িং, ছাপচিত্রের রঙিন পুনর্নির্মাণ, জলরং, ইঙ্ক, তেলরং, গ্রাফিক্স, মিশ্র মাধ্যম, রঙিন পেন্সিল, উডকাট, লিনোকাট, সেরিগ্রাফ, নিউজ পেপার ম্যাটে মিশ্র মাধ্যম, অ্যাক্রিলিক, এচিং, ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য— কী করেননি ম্যারি? শিল্পের যাবতীয় নিরীক্ষায় সৌন্দর্যের সবগুলো পথ পেরিয়ে এসেছেন তিনি। তারপর এক সময় নিঃসঙ্গ ও একেলা হয়ে পড়েছেন নিজেরই অজান্তে।

রংধনু নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টে ব্যস্ত ছেলেমেয়েদের ছবিগুলোর সঙ্গে মেতে ম্যারির চাপা-শিল্পীসত্তা গুপ্ত লাভাস্রোতের মতো বের হয়ে এলো। সবাই চলে যাওয়ার পর তিনি আলাদাভাবে পল্লবীকে নিয়ে বসলেন। মেয়েটির সঙ্গে তিনি একটি অদ্ভুত নিবিড়তা অনুভব করেন। সবার চেয়ে বেশি সখ্যতাও তিনি বোধ করেন পূর্বদেশের এই মেয়েটির সঙ্গে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মার্কিন দেশের ক্যাম্পাসে পড়তে আসা বেশকিছু ছেলেমেয়ের মধ্যে পল্লবী নামের এই তরুণীর জন্য কেন ম্যারি অনেক বেশি নৈকট্য অনুভব করেন, তা তিনি নিজেও ঠিকঠিক জানেন না। এই মেয়েটি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নানা বিষয়ে তার সঙ্গে এসে কথা বলে। তার প্রশ্নের ধরণ, জিজ্ঞাসার তীব্রতা ও কথা বলার আন্তরিক সুর ম্যারিকে মুগ্ধ করে। প্রাচ্য দেশের সংস্কৃতিতে বড় হওয়া মেয়েটির মধ্যে অপার কৌতূহল। গান শুনতে আর বই পড়তেও ভীষণ ভালোবাসে সে। ম্যারি প্রায়ই তাকে একমনে লাইব্রেরিতে পড়তে দেখে। বিচিত্র সব বই ইস্যু করে পড়ার জন্য বেছে নেয় পল্লবী। জানাশোনা কিছুটা গভীর হলে পল্লবী কিছু গান প্রেজেন্ট করে ম্যারিকে। গানের কথাগুলো বাংলায় কিন্তু সুর হৃদয়-ছোঁয়া। বিশেষ করে একটি গান ম্যারিকে আচ্ছন্ন করে প্রবলভাবে। গানটির প্রথম লাইন “তোমারও পরাণ যাহা চায়।”

ম্যারি একবার জিজ্ঞেস করেছিল পল্লবীকে, “এতোজন থাকতে তুমি আমাকে তোমার দেশের তোমার ভাষার গান উপহার দিলে কেন?”

“তোমাকে খুব দুখী ও বিষণ্ন মনে হয় আমার। গানগুলো শুনলে তোমার ভালো লাগবে।” কালবিলম্ব না করেই জানিয়েছিল পল্লবী।

ম্যারি ভীষণ অবাক হন। তারুণ্য ও যৌবনের সন্ধিক্ষণের সঙ্কুল পরিস্থিতিতে রয়েছে এই মেয়ে। অথচ কেমন করে তার মনের গভীরে ডুব দিয়েছে মেয়েটি। অলক্ষ্যে আপন হয়ে যাওয়া এমন একটি মেয়েকে মন থেকে ভালো না বেসে পারেন না ম্যারি।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে ম্যারি বাস্তবে ফিরে আসেন। পল্লবীর আঁকার সরঞ্জাম গুছিয়ে দিতে দিতে বলেন, “তোমার যেমন ইচ্ছে হয়, তেমনভাবেই আঁকো তোমার রংধনু। আমি সেই ছবির নাম দেবো ‘পল্লবীর রংধনু’।"

উচ্ছ্বল ঝরণার মতো আনন্দে উজ্জ্বল হয় পল্লবীর সমস্ত মুখমণ্ডল। পল্লবী হাসতে হাসতে উঠে পড়ে। আঁকার খাতা আর রঙের বাক্স দু’হাতে নিয়ে সে রওনা দেয় নিজের হোস্টেলের দিকে। যেতে যেতে বলে,

“মিস, আমি তোমাকে একটা চমৎকার রংধনু উপহার দেবো, যা আমি শুধু তোমার কথা ভেবে আঁকবো। আমি নিশ্চিত, তুমি খুবই পছন্দ করবে আমার রংধনু।”

পল্লবীর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে ম্যারি একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। পথের শেষে অদৃশ পল্লবীর ছায়াও আর নেই। সেখানে মনে হয় আবছায়ায় দেখা যাচ্ছে ক্যাভিনকে, যে লোকটি জীবনে প্রথম তাকে রংধনুর রঙের অরণ্যে পাগল করেছিল। ম্যারি তার একান্ত ভাবনায় ছেদ টেনে আকাশের দূর দিগন্তে তাকান। তারপর নিজেকে কিছুটা ঘুরিয়ে পশ্চিম আকাশে দৃষ্টি দেন তিনি। ক্যানভাসের মতো রংবহুল আকাশে তখন প্রদোষের আবিরমাখা উল্লাস। এখনই দিবাবসানে হাত ধরে শুরু হবে অন্ধকার রাতের।

ম্যারি অস্তগামী রশ্মির দিকে তাকিয়ে একাকী কি যেন চিন্তা করেন। তার ঘটনাবহুল জীবনের কোনো খণ্ডাংশের ছায়াপাত কি দেখতে পান তিনি আকাশের উদার শরীরে? তার স্থির ও অবিচল দৃষ্টি আটকে যায় অস্তাচলের দূর দিগন্তে। এক সময় তিনি অস্পষ্ট শব্দের মায়াজালে কোনক্রমে উচ্চারণ করেন, “তাঁর জীবনে অস্তবেলার রঙ-টা অন্যরকমও হতে পারত।”

পরবর্তী কিস্তি আগামী শুক্রবার।

আরও পড়ুন: ধারাবাহিক উপন্যাস 'রংধনু'-৭

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;