'প্রকাশকদের উচিত সম্পাদকের মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি যাচাই করা'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রচ্ছদ ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রচ্ছদ ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

  • Font increase
  • Font Decrease

 

একহাতে অবিরাম অনুবাদ করছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু। ওরিয়ানা ফালাসি থেকে খুশবন্ত সিং, এম জে আকবর হয়ে ইতিহাস, রাজনীতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যের বহু নন-ফিকশান প্রপঞ্চ বাংলাভাষী পাঠকের সামনে উন্মোচিত করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শেষে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ ও অনুবাদ সাহিত্যের নানা বিষয়ে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে উপস্থাপিত হলো।

প্রশ্ন: এবারের বইমেলায় রাজনীতিবিদ গান্ধী ও জিন্নাহর ধর্ম বিষয়ক অবস্থান মূল্যায়ন করে এম জে আকবরের বই অনুবাদ করেছেন। বইটির মূল বৈশিষ্ট্য কি?

উত্তর: বইমেলাকে উপলক্ষ করে আমি কোনো বই অনুবাদ করি না। আমি সারা বছর কাজ করি, প্রকাশকরা মেলাকে বই প্রকাশের উপলক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন। এম জে আকবরের ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স ইসলাম’ বইটি পাঠ করার সুযোগ হয় ২০২০ সালে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমাকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিকাশ, ভারত বিভাজন ইত্যাদির নিবিড় পাঠ করতে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়েও ব্যক্তিগত আগ্রহ ও সাংবাদিকতার পেশাগত কারণেই উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো, বিশেষ করে যে বিষয়গুলো আমাদের আবেগ-অনুভূতিকে স্পর্শ করে, তা পাঠ করতে আগ্রহী হই। এম জে আকবর তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন, যা বিতর্কিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকরা বিতর্কের মধ্য দিয়ে সত্যে উপনীত হবেন - এই দার্শনিক তত্ত্বকে সামনে রেখে আমি বইটি অনুবাদ করার প্রয়োজন অনুভব করেছি।  

বইটির বৈশিষ্ট হলো, এম, জে আকবর ভারতের অখণ্ডতা গান্ধীর কাছে কেন প্রয়োজন ছিল এবং ভারত বিভাগ জিন্নাহ’র কাছে কেন মুসলিম মুক্তির সমার্থক ছিল, তা দলিলিকভাবে তুলে ধরেছেন। তার দৃষ্টিকোণ থেকে গান্ধীর ধর্মনিষ্ঠা, মানবতা ও মহত্বের বিপরীতে জিন্নাহ ছিলেন ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারকারী, ক্ষমতালোভী ও একগুঁয়ে। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে, জিন্নাহ’র মগ্নতা ছিল পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান সৃষ্টির কারণে উপমহাদেশের মুসলমানদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এবং শুধু মুসলিম অধ্যুষিত হলেই তারা চিরশান্তিতে থাকবে, এমন রাজনৈতিক চিন্তা ও দ্বি-জাতিতত্ত্ব যে ভ্রান্ত ছিল তার প্রমাণ ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করার ঘটনা। তার মতে, জিন্নাহ’র সেরা সাফল্যই ছিল তার সবচেয়ে চরম ব্যর্থতা। বইটিতে আরেকটি সত্য তুলে ধরা হয়েছে যে, গান্ধী তার অহিংস আন্দোলন ও সত্যাগ্রহের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সংঘাত থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা চালালেও ভারতকে অখণ্ড রাখতে সফল হননি, অপরদিকে জিন্নাহ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তার রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সফল করেছেন। উভয়েই যার যার মতো ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। আমার কাছে আকবরের এ কথাগুলো বস্তুনিষ্ঠ বলে মনে হয়েছে।

প্রশ্ন: কেন এর অনুবাদে আকৃষ্ট হলেন?

উত্তর: এম জে আকবরের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় সত্তরের দশক থেকে। ভারতে বিভিন্ন মুসলিম ইস্যুর ওপর তিনি যা লিখতেন তা ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করতো। কিন্তু আমি তার যেকোনো লেখা পাঠ করতাম। ২০২০ সালের প্রথম দিকে আমি প্রথমবারের মতো গান্ধীর ওপর এম জে আকবরের একটি নিবন্ধ অনুবাদ করি এবং সেটি  বাংলাদেশের মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। লেখাটি ছিল শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বিচারের শুনানি ও রায়ের ওপর এইচএলও গ্যারেটের ‘দ্য ট্রায়াল অফ বাহাদুর শাহ জাফর’ গ্রন্থের ভারতীয় সংস্করণের ভূমিকা। আমি আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার অনূদিত লেখাটি বাংলাদেশের একটি সূত্রের মাধ্যমে এম জে আকবরের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। তাছাড়া খুশবন্তু সিং এর অধিকাংশ বই আমি অনুবাদ করেছি বলে আমার পরিচয় জেনে আকবর তার ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স বইটি অনুবাদ করার জন্য আমাকে অনুরোধ করতে বলেন। আমাকে তার অনুরোধ পৌছানো হলে বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সচেতন পাঠকদের পাঠ করা প্রয়োজন ভেবে আমি অনুবাদ করতে সম্মত হই।

প্রশ্ন: আগেও আপনি মুঘল ইতিহাস-ঐতিহ্য অন্বেষী বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। কেন এই বিষয় বেছে নিলেন?

উত্তর: মুঘল ইতিহাস-ঐতিহ্য বলতে আমি মূলত শুধু শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ওপর লেখা বেশ কয়েকটি বই অনুবাদ করেছি। সামগ্রিকভাবে মুঘল শাসন অথবা অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের নিয়ে কোনো বই অনুবাদ করিনি। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ওপর একাধিক বই অনুবাদ করেছি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ভারত বিভক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতাসহ উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থেকেই এসব বই অনুবাদ করেছি।

প্রশ্ন: কোন কোন বইয়ের অনুবাদ আপনাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে? কেন?

উত্তর: আমি একটি বইয়ের কথা না বলে তিন সংস্কৃতির তিনটি বইয়ের কথা উল্লেখ করবো, যে বইগুলো আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। একটি খুশবন্ত সিং এর বিখ্যাত উপন্যাস 'ট্রেন টু পাকিস্তান', যার বিষয়বস্তু হলো ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ফলে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষের গণ-স্থানান্তরের বা ব্যাপক ও জোরপূর্বক অভিবাসনের সিদ্ধান্তের কারণে উদ্ভুত মানবিক সংকট। এই মানবিক সংকটের মধ্যেও এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে এক শিখ যুবকের প্রণয়ের ঘটনা বইটি মূলবিন্দু। প্রেমিক যখন জানতে পারেন যে তার মুসলিম প্রেমিকাকে যে ট্রেনে তুলে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নাশকতাকারীরা একটি রেলসেতুতে রশি বেঁধে দিয়েছে যাতে ট্রেনের ছাদে আরোহীরা রশির আঘাতে ছিটকে পড়ে, ট্রেনের গতিরোধ হয় এবং তারা ট্রেনের সকল মুসলিমকে হত্যা করতে পারে। নাশকতাকারীদের হাতে সে তার প্রেমিকার মৃত্যুর কথা ভাবতে পারে না। সন্ধ্যার পর ট্রেন আসার আগে সে সেতুতে ওঠে রশি কাটতে শুরু করে, নাশকতাকারীরা তাকে দেখতে পেয়ে গুলি করে। সে আহত হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রশি কাটতে সফল হয়ে সে পড়ে যায়, ট্রেনটি তার প্রেমিকাকেসহ নিরাপদে পাকিস্তানে চলে যায়।

দ্বিতীয় বইটি সার্বিয়ার নোবেল বিজয়ী লেখক আইভো অ্যানড্রিচের ইতিহাস ভিত্তিক 'দ্র ব্রিজ অন দ্য দ্রিনা'। সার্বিয়া তথা বৃহত্তর যুগোস্লাভিয়া বা বলকান অঞ্চলে তিনশ’ বছরের অটোম্যান যুগে ওইসব এলাকায় তুর্কি প্রশাসন ছাড়াও তুর্কি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। সার্বিয়ার একটি নদী দ্রিনা, সেই নদীর পাশে ভিশেগ্রাদ শহরকে অপর পাশের এলাকার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করে তুর্কিরা। পার্বত্য নদীর ওপর সেতু দেশের দুই অঞ্চলের বিকাশে ভূমিকা রাখে। তিনশ’ বছর ধরে সেতুটি ছিল ভিশেগ্রাদের মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। লেখক সেতুকে কেন্দ্র করে তিনশ বছরের অটোম্যান শাসন তুলে ধরেছেন। এটি অসাধারণ এক সাহিত্যকর্ম।

তৃতীয় বইটি হচ্ছে আরবি সাহিত্যে একমাত্র নোবেল বিজয়ী মিশরের ঔপন্যাসিক নাগিব মাহফুজের 'কায়রো ট্রিলজি'। প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠার তিন খণ্ডে কায়রোর একটি পরিবারের তিন প্রজন্মের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে নিপূণভাবে। এর মধ্যে পরিবার, সমাজ, রাজনীতি সবই আছে। লেখক বইটি লিখতে ছয় বছর ব্যয় করেছেন, আমি অনুবাদ করতে চার বছর ব্যয় করেছি। ধৈর্য্য শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পাঠকের আগ্রহ টেনে রাখার মতো উপন্যাস বলে আমি অনুবাদ শেষ করতে সফল হয়েছি। 

প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় অনুবাদ সাহিত্য সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

উত্তর: বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ভাষার বই প্রচুর অনুবাদ হচ্ছে। আমার বিশ্বাস মৌলিক বই এর চেয়ে অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে অনেক বেশি। আমি দেশের বাইরে থাকি বলে কার অনুবাদ কেমন তা বলা সম্ভব নয়। আমি নিজেও কতটা ভালো অনুবাদ করি তা পাঠকদের সঙ্গে আমার সরাসরি ইন্টার‌্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া নেই অথবা মতবিনিময় হয় না বলে বুঝতে পারি না। নিষ্ঠাবান পাঠক বা কট্টর অনুবাদ-সমালোচকের পাল্লায় পড়লে আমার অনুবাদ হয়তো আরো উন্নত হতে পারতো। আমরা যে ভাষাগুলো থেকে অনুবাদ করি, সেগুলো কোনোটাই আমাদের মাতৃভাষা বা প্রথম ভাষা নয়। আমি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করি, অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় কোনো বাক্যে একটি শব্দের উপযুক্ত বা যে মর্মার্থ হওয়া উচিত তা খুঁজে না পেয়ে আক্ষরিক অনুবাদ করে ফেলি, সেক্ষেত্রে পাঠক হোঁচট খাবেন। সেজন্য যারাই অনুবাদ করছেন, পাকা অনুবাদক হোক বা নতুন অনুবাদক হোক, প্রকাশকদের উচিত সম্পাদকের মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি যাচাই করার ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন: মানসম্মত অনুবাদে ক্ষেত্রে কোন কোন বৈশিষ্ট্যকে আপনি বিশেষ গুরুত্ব দেবেন?

উত্তর: অনুবাদের বিষয়বস্তু কী এবং কে অনুবাদ করবেন তার ওপর নির্ভর করে মানসম্মত অনুবাদ। যিনি প্রাচীনকালের দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিষ্টটল, মিলেটাস, এপিকুরাস, ডায়োজেন, পিথাগোরাস, প্রোটাগোরাস, জেনো থেকে শুরু করে আধুনিককালের দার্শনিকদের কঠিন বই অনায়াসে অনুবাদ করবেন, তার পক্ষে উপন্যাস বা কবিতার মতো সাহিত্য অনুবাদ করা সহজ হবে না। অনুবাদের ক্ষেত্র হওয়া উচিত অনুবাদকের মন ও মনন অনুযায়ী। অনেকে থ্রিলার অনুবাদ করছেন, আমি থ্রিলার অনুবাদ করতে গেলে পুরোপুরি ব্যর্থ হবো। যেহেতু অনুবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কাঠামোর অস্তিত্ব নেই সেজন্য যিনি অনুবাদ করবেন তার উচিত নিজের ভাষার ওপর ভালো দখল থাকার পাশাপাশি যে ভাষার বই অনুবাদ করবেন শুধু সেই ভাষায় ভালো দখল থাকা নয়, বইটিতে যে সমাজ ও সংষ্কৃতি, এমনকি স্থানে বর্ণনা রয়েছে সেই সমাজ, সংস্কৃতি ও স্থান সম্পর্কে কিছুটা জানা। ‘কায়রো ট্রিলজি’ বইটি অনুবাদ করতে গিয়ে আমি দু’জন শিক্ষিত মিশরীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। একজন আমার ডেন্টিস্ট, আরেকজন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক। জায়গার বিবরণ বা আরবি শব্দের মিশরীয় উচ্চারণ জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কারণ মধ্যপ্রাচ্যে একই আরবি শব্দের অর্থ অভিন্ন হলেও উচ্চারণ ভিন্ন ভিন্ন।

প্রশ্ন: মার্কিন প্রবাস জীবনে লেখালেখি করতে কেমন সুবিধা পাচ্ছেন বা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন?

উত্তর: প্রবাস জীবনে আমি নবীন হলেও বয়সে প্রবীণ। যুক্তরাষ্ট্র কোনো ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যাণ রাষ্ট্র নয়। প্রত্যেককে কাজ করে জীবিকা সংস্থান করতে হয়। যারা দীর্ঘদিন কাজ করেন তারা সোস্যাল সিকিউরিটি বেনিফিট নিয়ে হয়তো একটি সময়ের পর কাজ করেন না, নিজের সৃজনশীল কাজ করেন। আমাকে রুটিরুজির ব্যবস্থা করার পর অনুবাদের কাজ করতে হয়। সেজন্য বাংলাদেশে থাকতে অনুবাদে যে গতি ছিল এখানে আসার পর তা মন্থর হয়েছে। কাজের বাইরে যতটা সময় পাই, সাধ্যমত অনুবাদ করি। পরিস্থিতির চাপ উপেক্ষা করেও আমি সানন্দে আমার লেখালেখি চালিয়ে যেতে কোনো শৈথিল্যকে স্থান দিই নি আমার জীবনে, এখনো এটাই আমার মূলমন্ত্র। 

প্রচ্ছদ ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;