সৈয়দ শামসুল হক: তিনি আছেন পরানের গহীন ভিতরে



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক

  • Font increase
  • Font Decrease

সব্যসাচী কথাটার অর্থ হচ্ছে যার দুই হাতই সমানভাবে কাজ করে। আর সব্যসাচী লেখক মানে যিনি সাহিত্যের সকল শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেন। এমন প্রতিভা খুব কম মানুষেরই থাকে। সৈয়দ শামসুল হক সেই বিরল ভাগ্যবান লেখকদের মাঝে অন্যতম একজন। মাত্র এগারো বছর বয়সেই তিনি ছড়া লেখার চেষ্টা করেছিলেন। গদ্যকার হিসেবেই তিনি বাংলাসাহিত্যে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৫১ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে ‘অগত্যা’ নামে ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা গল্প প্রথমবার প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পের বই ‘তাস’। যদিও গদ্যকার হিসেবেই সাহিত্যে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, পরবর্তীতে সাহিত্যের অন্যতম প্রধান শাখা কবিতাতেও তিনি বিশেষ স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, গীতিকার, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, শিশুসাহিত্যিক। তবে এখানে আমরা তাঁর কাব্যভাবনা বিষয়েই বিশেষভাবে আলোচনা করবো।

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার বৈশিষ্ট্যে আমরা কখনো পেয়েছি অন্তর্মুখীস্বভাব আবার কখনো পেয়েছি বহির্মুখীস্বভাব। তিনি সকলরকম ছন্দেই কাব্যচর্চা করেছেন। কবিতায় তিনি বারবার নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে চেয়েছেন। এজন্যই হয়তো তাঁর প্রথম জীবনের কবিতায় আমরা তাকে তেমন আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারি না। কারণ তিনি সেই সময়কার সমসাময়িক কবিদের রচনাশৈলীকেই অনুসরণ করেছিলেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি বারবার নিজের রচনাশৈলীর পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কবিতায় তিনি কখনো গদ্যরীতি ব্যবহার করেছেন, আবার কখনো পয়ার, কখনো অক্ষরবৃত্তে অন্ত্যমিলের চর্চা করেছেন।

তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। তবে এতে তিনি নিজেকে তেমন উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। দীর্ঘকবিতা, কাব্যনাট্যে এবং আঞ্চলিক ভাষার সফল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হক নিজের প্রজ্ঞা'র বিশেষ পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম দীর্ঘকবিতার বই ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’। এই রচনাটিতে আমরা তাঁর অন্তর্মুখীস্বভাবকে বারবার পাই। এখানে কয়েকটা পঙক্তি থেকে পাঠ করলে আমরা অন্তর্মুখীস্বভাব বা আত্মকেন্দ্রিকতার ব্যাপারটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবো।

“এমন বিশ্বাস ছিল শুধু কবিতায়,/ প্রথমে করব জয় সুরূপা, বিরূপা;
তারপর পরিবার, যারা রোজ বলে,/ ‘কবিতার সরোবরে ফোটে অনাহার,

ছেঁড়া চটি, শস্তা মদ, আসক্তি বেশ্যায়’;/ তারপর বাংলাদেশ এশিয়া আফ্রিকা;

ফর্মায় ফর্মায় ক্রমে বেড়ে উঠে হবে/ কবিতার সংকলন খদ্দরে বাঁধানো,

যে কোনো ঋতুতে যে কোনো উৎসবে/ পাটভাঙ্গা পাঞ্জাবীতে লম্বমান যুবা

পড়বে সে বই থেকে; বাংলার তারিখে/ আমার জন্মের দিন হবে লাল ছুটি।”

অসম্ভব স্বপ্নগ্রস্তের মতন তিনি নিজের স্বপ্নের কথা বলে গেছেন কবিতার এই অংশটুকুতে। কবিতার যেই সময়টাতে দীর্ঘকবিতার দিন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, ঠিক সেই সময়েই তিনি এরকম ২৪ পৃষ্ঠা দীর্ঘ কবিতাচর্চা করেছিলেন। যদিও রচনাশৈলীর দিক থেকে এবং ভাষাশৈলীর দিক থেকে এরকম সংযোজন নতুন কিছু ছিল না। তবে দীর্ঘকবিতার কথা ভাবলে বলতে হয়, তিনি নিজেকে ঠিক এই জায়গাটাতেই ভেঙে গড়েছেন।

লেখক আনিসুল হক তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি যদি অন্য সব বাদ দিয়ে দুটো বই লিখতেন ‘পরানের গহীন ভেতর’ এবং ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’ তাহলে এ দুটো বই তাকে অমর করে রাখত। তিনি যদি শুধু তার কাব্যনাট্যগুলো লিখতেন ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ তাহলেও আমরা চিরদিনের জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যে স্মরণ করতে বাধ্য থাকতাম। তাঁর কবিতা-নাটক-কলাম সবটা মিলিয়ে যে ব্যক্তিত্বটি দাঁড়ায় তা তুলনারহিত।”

আনিসুল হক সাহেব তাঁর সম্পর্কে এদিক থেকে খুব বেশি বাড়িয়ে বলেননি। প্রচুর সংখ্যক লেখার মধ্য দিয়ে এবং নিজেকে বারবার ভেঙে-গড়ার মধ্য দিয়েই হয়তো তিনি তাঁর এই অনন্য সৃষ্টিকর্মগুলো রচনা করতে পেরেছিলেন। ‘পরানের গহীন ভিতর’- সৈয়দ শামসুল হকের জনপ্রিয় বইগুলোর একটি। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে। এই বইটি ৩৩টি সনেটগুচ্ছ নিয়ে সাজানো। মানভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষার সংমিশ্রণে লেখা কবিতাগুলো ভাষা-শৈলীতে অনন্য। যদিও কবিতার বিষয়বস্তু গ্রাম্য-সংসারী জীবনের প্রেম, হিংসা, মান-অভিমান এবং বাস্তবতার বিষয়ে- বলা যায় প্রায় একরকম আত্মমগ্নতারই কথা। তবে এই কবিতার বইয়ের বিশেষ ভাষা-শৈলী এবং গ্রামবাংলার মানুষের অনুভূতির বিন্যাসে লেখা কবিতাগুলো পাঠকের মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল জায়গা করে নিয়েছে। একইসাথে বাংলাসাহিত্যে এই বইটি একটি অনুপম সৃষ্টিকর্ম। বইটি থেকে আমরা একগুচ্ছ পঙক্তির পাঠ নিতে পারি।

“মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রোদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেব বিবিসি বাংলায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “আমাদের সাহিত্যিকদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক ভাষার ব্যবহার নিয়ে যে লিখেছেন 'হৃৎকলমের টানে' বা 'কথা সামান্যই' এগুলো কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি একইসঙ্গে একজন সৃষ্টিশীল লেখক এবং ভাষার ব্যবহারে ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।”

ভাষার ব্যবহারে সৈয়দ শামসুল হক যে ভীষণ সচেতন ছিলেন তা আমরা তাঁর সৃষ্টিকর্মের দিকে নজর দিলেই বুঝতে পারি। কেননা প্রথম জীবনে তিনি অন্যান্য সমসাময়িক লেখকদের মতন কলকাতার মানভাষা ব্যবহার করলেও, পরবর্তীতে তিনি ভাষার ব্যবহারে আরো সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। যে কারণে আমরা ‘পরানের গহীন ভিতর’ কিংবা ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ এর মতন সৃষ্টিকর্ম তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি।

যদিও কবিতা নিয়েই আমাদের আলোচনা তবুও কাব্যনাট্য নিয়ে কথা না বললে আসলে কথা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। আধুনিক যুগে যেখানে কবিতাও গদ্যের দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে, সেখানে সৈয়দ শামসুল হক কাব্যনাট্যে মনোযোগী হয়েছিলেন। আর কাব্যনাট্য নাটক হলেও তো তা কাব্যেই লেখা। তাঁর প্রথম কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা এই কাব্যনাট্য'কে আমরা বৈচিত্র্য এবং বিন্যাসের দিক থেকে বাংলাসাহিত্যে অন্যতম সংযোজন বলতে পারি। আঞ্চলিক ভাষা-শৈলীতে এবং মৈমনসিংহ-গীতিকা'র ঢঙে লেখা এই কাব্যনাট্য মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস ও মানব-মনের অন্তর্গত অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে। পাঁচ অঙ্কে লেখা এই কাব্যনাট্যে গ্রামীণ ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাকে ফুটিয়ে তুলতে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামীণ-মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মাতবর চরিত্রে। গ্রামের মাতবর যে-কিনা পাকিস্তানিদের সাথেই হাত মিলিয়েছিল। যে মাতবর দেশের জন্য কালসাপ। যে মাতবর দেশের শত্রু। দেশের মানুষের শত্রু। এই কাব্যনাট্যের মধ্য দিয়ে আমরা সৈয়দ শামসুল হকের ইতিহাস-সচেতনতার দিকটি জানতে পারি। এই রচনাটিতে রাজাকারই কেন্দ্রীয় চরিত্র কিংবা অন্য অর্থে নায়কও বলতে পারি,যে মানুষ কিনা নিজের মেয়েকে নিজেই পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতে চায়। এই দিক থেকে আমরা দেখতে পাই, একজন লোভী-সুবিধাবাদী-অসৎ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন। আর একইসাথে জানতে পারি যুদ্ধ বিজয়ের পর গ্রামের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনস্তত্ব।

কাব্যনাট্য বিষয়ে আলোচনা করলে কোনোভাবেই আমরা ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ কাব্যনাট্যকে বাদ রেখে আলোচনার সমাপ্তি ঘটাতে পারি না। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ফকির-বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত এই কাব্যনাট্য আমাদেরকে প্রায় ভুলতে যাওয়া ইতিহাসকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুলদীন ফকির-আন্দোলনের একজন নেতা। আসলে নুরুলদীনকে আমরা অসাম্প্রদায়িক বিপ্লবের চেতনাও বলতে পারি। যে কিনা নতুন দিনের আশায় অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছে।

১৭৭১ সালের ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ হচ্ছে বাংলার মাটিতে প্রথম সংগঠিত বিপ্লবের নাম। যে বিপ্লবীদের ব্রিটিশরা দস্যু নামে অবিহিত করেছিল। ব্রিটিশরা ও জোতদারেরা যখন তীর্থে যাবার সময়েও সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে কর আদায় করতে চেয়েছিল, জমিদারেরা যখন ঋণ দেবার নাম করে চড়া সুদে সাধারণ গ্রামীণ-চাষীদের জমি কেড়ে নিচ্ছিল, নীল-চাষে বাধ্য করছিল, ঠিক তখন ফকির-সন্ন্যাসীরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।

এই কাব্যনাট্যে নুরুলদীনের প্রথম সংলাপই হচ্ছে, ‘জাগো বাহে-এ, কোনঠে সবা-য়’। মানে নুরুলদীন আপামর জনগণকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে বলছে। বিপ্লবের চেতনায় জেগে উঠতে বলছে। সংগ্রামী হবার স্বপ্নের কথা বলছে। অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কথা বলছে। যে নুরুলদীন নবাব হতে চায় না, দেবতাও হতে চায় না। কেবল এবং কেবলমাত্র বিপ্লবীই হতে চায়। সে কেবল তার চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চায় সবার মাঝে।

নুরুলদীন ছাড়া এই কাব্যনাট্যে আছে লালকোরাস, নীলকোরাস, আম্বিয়া, আব্বাস এবং কয়েকটি ব্রিটিশচরিত্র। এখানে লালকোরাস আদতে বাঙলার আপামর শোষিত শ্রেণীর কণ্ঠস্বর। যারা বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে চায়। নীলকোরাস হচ্ছে শোষকের কণ্ঠস্বর। যারা বিপ্লবকে দুমড়েমুচড়ে নিঃশেষ করে দিতে চায়। আব্বাস হচ্ছে নুরুলদীনের বন্ধু এবং একইসাথে সমাজের পিছুটানের রূপক প্রকাশ। এবং আম্বিয়া হচ্ছে নুরুলদীনের ভালোবাসার নাম। তাঁর স্ত্রী। তাঁর সংসার। যে সংসার সবসময় মানুষকে মায়ার বাঁধনে বেঁধে পিছুটানের সৃষ্টি করে। যাকে নুরুলদীন বিপ্লবের জন্য ত্যাগ করেছে। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে এবং পটভূমির গুরুত্বে এই রচনা বাংলাসাহিত্য একটা বিশেষ সংযোজন।

অনেকেই তো অনেক রকম কথা বলে থাকেন। অনেকে বলেন, সৈয়দ হক বারবার নানানভাবে প্রভাবিত ছিলেন। কখনো তিনি তাঁর সমসাময়িক লেখকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন আবার কখনো বিশ্বসাহিত্যে প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু প্রভাব ছাড়া তো কোনো লেখকই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। নিজেকে যে যতভাবে যতবার ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে পারেন তিনিই তো হয়ে উঠেন শক্তিশালী লেখক। আর সৈয়দ শামসুল হক সেই কাজটাই করতে পেরেছেন। এবং বাংলাসাহিত্যে বাঙালির মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মনস্তত্বে তাঁর যা সংযোজন; সেজন্যই তিনি হয়তো বহুযুগ ধরে পাঠকের পরানের গহীন ভিতরে থেকে যাবেন।

এক নজরে জীবনপঞ্জি:

জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সাল
জন্মস্থান: কুড়িগ্রাম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত।
মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সাল
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলে যা, পরানের গহীন ভিতর, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদীনের সারাজীবন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমি(১৯৬৬), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক(১৯৮৪)।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;