স্বাধীনতার ৫০ বছর: কতদূর এগুলো বাংলাদেশের সাহিত্য?



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মানে বিরাট ব্যাপার। আর আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের স্বাদ পাচ্ছি। স্বাধীন দেশ মানে অন্য অনেক অধিকার অর্জনের সাথে সাথে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও লাভ করা। আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পেলেই কেবল একটা দেশের শিল্প-সাহিত্য সমৃদ্ধ হতে পারে। যত বেশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়া যায় তত বেশি সমৃদ্ধ হয় দেশের সাহিত্য।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সাহিত্য গত ৫০ বছরে কতটুকু সমৃদ্ধ হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব আসলে এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে। কেন বাংলাসাহিত্যের কথা না বলে আমি বাংলাদেশের সাহিত্যের কথা বলছি? প্রথমেই এই বিষয়টা পরিষ্কার করে নিতে চাই। কারণ ঐতিহাসিক দিক থেকে অঞ্চলগতভাবে বাংলাসাহিত্যে একটা স্পষ্ট বিভাজন আছে। ৪৭-এর সেই দেশবিভাগের কূটকৌশলে এই বিভাজন সৃষ্টি হলো।

আর আমরা এক শাসকের থেকে মুক্তি পেয়ে আরেক শাসকের হাতে শৃঙ্খলিত হলাম। তবে আমরাই সেই জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। এটা আমাদের অহংকার। আর এই বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা চাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন একটা ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা পেলাম এই বাংলাদেশ।

এখন আমরা বাংলাদেশের সাহিত্যের দিকে তাকালে এর বিচিত্র সম্ভাবনাকে খুঁজে পাবো। যদিও দশকের চিন্তা থেকে কোনো সাহিত্যকে কিংবা সাহিত্যিককে বিশ্লেষণ করা বিশেষ কার্যকরী বিষয় নয়। তবে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এই দশকের চিন্তা ধরেই এগোবো। এবং সবশেষে আমরা একটা সামগ্রিক চিত্র পাবো।

যেহেতু সত্তরের দশকেই বাংলাদেশের জন্ম তাই তার পরবর্তী দশকগুলোকেই আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্য বলা উচিত। কিন্তু এখানেই দশকের হিসাবে গন্ডগোলটা বাঁধে। কেননা সত্তরের দশকে বাংলাদেশের জন্ম হলেও পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকের শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকদের অমর সৃষ্টিগুলোকে আমরা বাংলাদেশের সাহিত্য থেকে বাদ দিতে পারি না।

তাঁদের সাহিত্যের অন্তর্দৃষ্টিতে সমাজের ঐসময়টাকে আমরা প্রকটভাবে দেখতে পাই। তাঁদের বহুমাত্রিক সাহিত্যপ্রতিভা এই দেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল উত্তাল। বারবার ক্ষমতার পটপরিবর্তন, মানুষের স্বপ্নের অতৃপ্তি আর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সমীকরণগুলো বাংলাদেশকে সেসময়ে একরকম দুঃস্বপ্নের দেশে পরিণত করেছিল। আর সেই উত্তাল সময়কে আমরা আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যের মাঝেও দেখতে পাই।

একরকম নির্মোহ বয়ানে সেই সময়টা লেখকদের লেখায় চিত্রিত হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সত্তরের দশকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-নির্ভর কোনো কাজ তখন প্রকাশিত হয়নি। মানে কোনো সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার বয়ানে কোনো কথাসাহিত্য সেই দশকে কেন হয়নি তা প্রশ্নবিদ্ধ। পরবর্তী সময়ে যদিও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এই সময়কার কবিতায় সবচেয়ে যে বৈশিষ্ট্যটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তাহলো কবিতার শ্লোগানধর্মীতা। এই সময়ের কবিতাগুলোই একেকটি শ্লোগান হয়ে উঠেছিল। কিংবা বলা যায় শ্লোগানই হয়ে উঠেছিল কবিতা।

তবে ৮০'র দশকে বাংলাদেশের কবিতায় একটা নতুন ভাবনার বিকাশ ঘটে। এই দশক থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের উত্থান ঘটে। গাণ্ডিব, অনিন্দ্য, পেঁচা, দামোদর, পূর্ণদৈর্ঘ্য, ফু, প্রসূন এবং আরো অনেক লিটল ম্যাগাজিনের উত্থান ঘটে এই সময়ে। যার ফলে বাংলাদেশের সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এসময়ে সাহিত্যে নানানরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিনের কল্যাণে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা'র তাত্ত্বিক আবহাওয়া এসময় খুব জনপ্রিয়তা পায়।

যদিও বর্তমানে লিটল ম্যাগাজিনের সেই প্রতাপ এখন ম্লান হয়ে গেছে। তবে এখনও কালি ও কলম, চিরকুট,মেঘফুল, দেশলাই, বিন্দু, ড্যাস এবং আরো অনেক লিটলম্যাগ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ৮০'র দশককে লিটল ম্যাগাজিনের দশক বলা হলেও এর প্রকৃত সূত্রপাত হয়েছিল ৬০'র দশকে। সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য লিটলম্যাগগুলো হচ্ছে স্যাড জেনারেশন, সপ্তক, স্বাক্ষর, না, বহুবচন প্রভৃতি।

৯০'র দশকে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যের আরো একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এবং এই দশকের পরবর্তী সময়ে মানে একবিংশ শতকের শূন্য দশক এবং তারপরের দুই দশকে এদেশের সাহিত্যে নানানরকম সংযোজন শুরু হয়।

শ্লোগানধর্মীতা থেকে কবিতা ধীরে ধীরে উত্তরাধুনিককালে উন্নিত হয়। এবং কবিতার বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি বিমানবিকতার দিকে ধাবিত হয়েছে। কবিতার মাঝে গল্পধর্মী পরাবাস্তববাদী এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায় বর্তমান সময়ে। এছাড়া কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রেও নানানরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান আছে। কথাসাহিত্যে সুররিয়ালিটির ব্যবহার দেখা পাওয়া যায় এসময়ে।

এছাড়া ইতিহাস-নির্ভর কথাসাহিত্যও প্রবলভাবে বিকশিত হয়েছে এই সময়ে। ইতিহাস-নির্ভর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে নিষিদ্ধ লোবান, মা, দেয়াল, রাইফেল রোটি আওরাত, জীবন আমার বোন, হাঙর নদী গ্রেনেড, আমার বন্ধু রাশেদ, জোছনা ও জননীর গল্প, ক্রাচের কর্নেল ইত্যাদি।

গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রভাব-বিস্তারকারী কাজ সেই তূলনায় অপ্রতুলই রয়ে গেছে। যে কারণে মৌলবাদীতার নীল দংশন থেকে আমাদের স্বপ্নের দেশ এখন বাস্তবের রূপ দেখতে পায়নি। আমাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন যতটা হবার কথা ছিল, সেই তুলনায় হয়েছে সামান্যই। সমাজতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক যে সমাজের স্বপ্নের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল, তা রয়ে গেছে অধরাই।

সত্তর, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে আমরা প্রকৃত মুক্তমনা সাহিত্যিকদের দেখা পেলেও একবিংশ শতকের শূণ্য, এক এবং দুইয়ের দশকে তেমন সাহিত্যিকদের কাজ পেয়েছি খুব কম। একটা দেশের মননকে সমুন্নত করতে মুক্তমনা সাহিত্যের যে পরিমাণ সহযোগিতা দরকার ছিল, তা আমরা সেই চাহিদা মতো পাইনি। বাংলাদেশের সাহিত্যে মননশীল পাঠক তৈরির জন্য যে অনমনীয় দৃষ্টান্ত থাকা উচিত ছিল, এই সময়ের চাটুকার সাহিত্যের জয়জয়কারে তা বিঘ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনগণ জ্ঞান অর্জন করে মননশীল ও সৎ-মানুষ হবার চেষ্টার দিকে না গিয়ে, একপ্রকার ছা-পোষা কেরানি হবার স্বপ্নের দিকে ধাবিত হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই বাংলাদেশের সাহিত্যিকগোষ্ঠী এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে নিতে হবে। কেননা তাঁরা সেই রকম প্রভাববিস্তারকারী কাজ করতে পারেনি।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব গুণী কবি-সাহিত্যিকদের বাংলাদেশের সাহিত্যে পেয়েছি তাঁরা হলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, সৈয়দ শামসুল হক, আবুল হাসান, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, আবিদ আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, হুমায়ুন আহমেদ, শহীদুল জহির, প্রমুখ।

এছাড়া আরো অনেকেই আছেন যাদের নাম নিতে গেলে আসলে নামের তালিকাটা দীর্ঘ থেকে আরো দীঘর্তর হবে। আগেই বলেছিলাম সাহিত্য কিংবা সাহিত্যিক কাউকেই দশকের হিসেবে বিশ্লেষণ করাটা কঠিন এবং কখনো কখনো অচল ব্যবস্থাও বলা যায়।

এখন কথা হচ্ছে আমাদের দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আসলে কতটা কার্যকরী হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবটা সন্ধান করা খুবই জরুরি। কারণ সমৃদ্ধ সাহিত্যের জন্যই এই স্বাধীনতা থাকাটা খুব জরুরি। এবং সাহিত্য যত সমৃদ্ধ হবে তত বেশি মানুষের মাঝে তা প্রভাববিস্তার করবে।

৫২'র ভাষা আন্দোলনে তো আমরা স্বাধীনভাবে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারার অধিকারের জন্যই প্রাণ দিয়েছিলাম। এই ইতিহাস যেমন আমাদের জন্য গৌরবের, সেরকমই আমাদের দেশে এই মতপ্রকাশের অধিকার যে এখনও প্রশ্নবিদ্ধ; এই প্রশ্নবিদ্ধতাও আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।

এই বিশ্লেষণ থেকেই কি আমরা বলতে পারবো বাংলাদেশের সাহিত্য গত পঞ্চাশ বছরে সমৃদ্ধি'র চরম শিখরে পৌঁছে গেছে? না, একেবারে এত মোটা দাগে বলা মুশকিল। যেহেতু এখনও আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যের আন্তর্জাতিক কদর সেরকম অর্থে আমরা বৃদ্ধি করতে পারিনি। এবং অনুবাদ সাহিত্যে আমরা কাঙ্খিত সফলতা পাইনি।

সাহিত্যের আন্তর্জাতিক কদর বৃদ্ধি করতে চাইলে আমাদেরকে অনুবাদ-সাহিত্যে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের সকল উল্লেখযোগ্য বইকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হলে প্রয়োজন ভালো অনুবাদের ব্যবস্থা করা। আর এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সাহিত্যের বিচিত্র সম্ভার বিশ্বের মানুষের দরবারে পৌঁছে যাবে ও সমৃদ্ধি পাবে।

সকলরকম প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশ শেষ হলে আমরা একটা কথা খুব দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে কেবল বাংলাদেশের সাহিত্যই টিকিয়ে রাখতে পারবে। যদিও অনেকে মনে করেন ঔপনিবেশিক ভাষাগুলোর প্রভাব বাংলা ভাষাকে দূষণ করছে, তবে এই দূষণকে আমরা শাপে-বর বলতে পারি। কেননা ভাষা তো চিরকাল প্রবহমান। পরিবর্তনই তার ধর্ম।

আর পরিবর্তনের জন্য অন্য ভাষা থেকে গ্রহণটাও বাংলা ভাষার জন্য পুষ্টিকর। তবে অধিক আহার গ্রহণ করা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হতে পারে, সেরকমভাবে অন্য ভাষার অধিক প্রভাবও ভাষার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।

তাই বাংলাদেশের সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আর আমরা প্রচন্ডরকম আশাবাদী; এই সকল প্রশ্ন এবং জবাবের মধ্য দিয়ে, বাংলা ভাষার দীর্ঘদিন টিকে থাকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবে।

 

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;