ঘোর লাগা ভোর



টোকন ঠাকুর, অতিথি লেখক
অলংকরণ: রুদ্র হক

অলংকরণ: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

আমি এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল গল্পের পাশে জেগে উঠে ভোর দেখছিলাম। ভোর আমাকে দোর খুলে বাইরে নিয়ে গেল। ভোর আমাকে বড় মাঠের শিশির প্রান্তরে নিয়ে গেল। ভোর, ঘোর উন্মোচন করে দিল। আমি দেখলাম, ঘাসের ওপরে হাঁটতে হাঁটতে পা ভিজে যায়, মাথা ভিজে ওঠে, সমস্ত শরীর ঢেকে যায় কুয়াশায়। কুয়াশা আসে দিগন্তপ্লাবনে। কুয়াশা আসে সুহাসিনী থেকে, সুহাসিনী সেই শহর, যেখানে স্থাপত্য নেই।

সুহাসিনী সে রকম এক শহর, একদিন ছিল, এখন নেই। সুহাসিনী তবে অতীতের বিলুপ্ত নগরী! শুধু এক পরিত্যক্ত রেলস্টেশন- চুপচাপ, স্তব্ধতার রহস্যে রেলস্টেশনটি রোল প্লে করে চলেছে। স্টেশনে যাত্রী নেই, কুলি নেই, স্টেশন মাস্টার নেই, কোনো ওয়েটিং রুম নেই। সমগ্র স্টেশনই একটি শহর হয়ে আছে, খাঁ খাঁ হয়ে মনের মধ্যে ছাপচিত্রের শহর হয়ে আছে।

সেই শহরের ভোর, সেই শহরের ঘোর আমাকে ঘুম ভাঙিয়ে ডেকে তোলে। ঘোর বলে, আজ তুমি বসে আছ পরিত্যক্ত স্টেশনে, আজ তুমি একা এক যাত্রী। কিন্তু কোনো ট্রেন আসবে না এই স্টেশনে, কোনো শব্দ হবে না, কোনো হুইসেল বাজবে না। তাহলে তুমি কোথায় যাবে? অব্যবহৃত প্লাটফরমে বসে আছ কেন, একা?

দূর থেকে দেখি, কুয়াশায় শাদা হয়ে আছে সমস্ত শহর। এই শহরের নামই সুহাসিনী। সুহাসিনী, তোমাকে আমার মনে পড়ে, একদিন তুমি মুখর মুখর ছিলে। একদিন, তুমি ছিলে অপেক্ষা, ছিলে গগনবিস্তারী রহস্য-বাস্তবতা, শাদা শাদা। আজ ভোর সেই রহস্য-বাস্তবতার সামনে ডেকে এনেছে আমাকে। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ভূমি-দিগন্ত আকাশ মিলে মিশে গেছে। বুঝতে পারছি না, এই ঘোর রহস্য বাস্তবতা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়! আমাকে কী কুয়াশা প্রান্তরে বিলীন হতে হবে আজ? ভোর বলল, ঘোর বলল, তুমি বসে আছ, একা। আমি তোমার জন্যই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছি আজ, পুব আকাশে আলোর সংকেত।

অবশ্যই এই কুয়াশার মধ্যেই উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকপাখি, পাখিরা কি জানে, আজ তুমি আমার জন্য বসে আছ পরিত্যক্ত স্টেশনে, একা! ঘাসের শিশির জেনেছে, আমি কেন হেঁটে যাচ্ছি পা ভিজিয়ে। আমার মাথায় জমে যাচ্ছে শিশির। আমার সমস্ত শরীর জমে যাচ্ছে হৈম হাওয়ায়। কাঁপতে কাঁপতে, হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে, এক মহাকাল ইতিহাস ভাবতে ভাবতে আমি তোমার কাছে যাচ্ছি। শীত ভোরে তুমি অপেক্ষা করছ আমার, আমি অপেক্ষা করেছি গোটা একটা জীবন। এই জীবন আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?

চলে এসেছি নদীপাড়ে। এ নদীর নাম কী? নদীর ওপরে এমনভাবে জমেছে কুয়াশা, মনে হয়, নদী বলে কিছু নেই। সবই সমতলের মাটি। মাটি বলে কিছু নেই, শাদা শাদা শূন্যতা। আমি শূন্যতার ভেতর দিয়ে হেঁটে এসেছি বহু পথ, বহু জনপদ। বহু মানুষের সঙ্গে কি আমি কথা বলিনি? বহু মানুষের চোখের দিকে কি আমি তাকাইনি? কিন্তু আমি আজ শুধু তোমার সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি, আজ আমি তাকিয়ে দেখতে চাই শুধু একজোড়া চোখ, তোমার চোখ।

তোমার চোখের ভেতর দিয়ে আমি প্রবেশ করতে চাই সেই সময়ের মধ্যে, যেখানে আরও আরও ভোর সব জমে আছে, অজস্র ভোর একত্রিত হয়ে আছে। তোমার চোখের ভেতর দিয়ে আজ আমি ঢুকে পড়ব সেই ভোরসমগ্রে, শুনেছি সেখানে আজও ফাঁকা পড়ে আছে কুঁড়েঘরের রাজপ্রাসাদ, স্বপ্নভূমির অট্টালিকা। আমি সেই স্থাপত্যের ভেতরে ঢুকব। কী দেখব, কী পাব সেখানে?
তার আগে, এখন এই ভোরনদীর কুয়াশার ওপারে যাব কী করে?

ভোরনদী। ভোরমাঠ। ভোরস্টেশন। ভোরশহর। ঘোরশহর। আমি ঘোরশহরের গলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে কাটিয়ে দিয়েছি অনেক বছর। তোমাকে পাইনি। তোমাকে নিয়ে তেপান্তরের ঘোড়সওয়ারে যাব, যাওয়া হয়নি। তোমাকে নিয়ে নদীর ধারে গ্রামীণ মেলায় যাব, যাওয়া হয়নি। আমি সারারাত, অজস্র রাত, আদিগন্ত রাতসহস্র জেগে থেকেছি ভোরে তোমাকে দেখব বলে। ভোরের প্রথম রোদে চিকচিক করে উঠবে তোমার মুখ, আমি সেই মুখ দেখব বলে আমারই চোখের মধ্যে রাতসহস্রের ইতিহাস গ্রন্থনা করেছি। আমি রাত্রির কালো খোড়লে বসে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মতো প্রহর গুনেছি। আমি জানতাম, একদিন অন্ধকার পরাজিত হবে, একদিন অপেক্ষার সমাপ্তি হবে, একদিন ভোর হবে। ভোরের আলোয় তোমাকে দেখব অনেক।

ভোরের শিশিরে তোমাকে নিয়ে হাঁটব বহু দূর। ভোরের রেললাইন আমাদের ডেকে নিয়ে যাবে। আমরা কেবলই সামনে এগিয়ে যাব, পেছনে ফিরব না। মানুষ তো পেছনে ফিরতে পারে না। মানুষের পেছনে ফেরার কোনো রাস্তা নেই। মানুষের কেবল সামনে এগিয়ে চলা। মানুষ ফেরে না। মানুষ শুধু সামনে যায়। সময় শুধু সামনে ধায়।

মানুষই কি সময়? কত জন্ম, কত গ্রহণসাপেক্ষে তবে আজ এই ভোরে আমি শিশিরে পা ভিজিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, আমি কিংবা সময় এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি কালপর্বের একেকটি অধ্যায় : এই মহাশীতকাল পাড়িয়ে যাচ্ছি। আমি জানি, তুমি এই ভোরে একা অপেক্ষা করছ, সুহাসিনী স্টেশনে। তুমিও কি জেগেছিলে রাত? করেছ প্রতীক্ষা, প্রহরের পর প্রহর, আমার জন্য! সময়ের জন্য! আজ আমরাই সেই সময়। তাহলে সময়ই অপেক্ষা করেছে, সময়ের?

সারারাত ঝরে ঝরে পড়েছে ফুল। টুপটুপ করে ঝরেছে শূন্যতার অশ্রু। ঝিরঝির করে ঝরেছে জলের হিমকণা। শুকনো বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে, আমি নদী পেরিয়ে এলাম। পৃথিবীতে এত ভোর আছে, কোনোদিন জানা হয়নি। পৃথিবীতে এত অপেক্ষা আছে, কোনোদিন বুঝতে পারিনি। পৃথিবীতে এত ভালোবাসা আছে, এত ঘোর আছে, এত স্বপ্ন আছে_ কোনোদিন টেরই পাইনি। এখন আমার মধ্যে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে প্রেম, স্বপ্ন, ছুঁয়ে ফেলার ঘোর। টের পাচ্ছি, ঘোর আমাকে গ্রস্থ করে ভোরবেলা ডেকে নিয়ে এলো, বলল, তুমি একা বসে আছ।

দেখতে পাচ্ছি, মাঠতক শর্ষে ফুলের হলুদ সংসার। কুয়াশার শাদা ভেদ করে হলুদের চিত্রিত লেপন। আমি এই হলুদ মাঠ পাড়ি দিয়ে যাই। মাঠের পরে আরও আরও মাঠ। ইলেকট্রিকের পিলারগুলো স্থির, পাহারা দিচ্ছে সৈনিকের মতো। মাঠের মধ্য দিয়ে চলে গেছে মহাসড়ক। মহাসড়ক আবৃত কুয়াশায়। দূরে, গ্রাম প্রান্তের শ্যামলরেখা আর চোখে পড়ে না। ঝাপসাতিঝাপসা। আমি তবু জানি, আমাকে পৌঁছুতে হবে তোমার কাছে।

তুমি কি জানো, আমি তোমার কাছেই ছুটে আসছি? একমাত্র তোমাকেই পাব বলে আমাকে আজ ঘোরগ্রস্থ ভোর ডেকে নিয়ে এত দূর এই মাঠ পেরুনো মহাসড়কে নামিয়ে দিয়েছে। আর তুমি অপেক্ষা, আর তুমি প্রতীক্ষা, আর তুমি পাবার নেশা, আর তুমি ছোঁবার নেশা, আর তুমি জীবন নেশা, তুমি মরণ নেশার মতো আমাকে টান দিয়ে ঘর থেকে বের করে এনেছ। কী বলব তোমাকে, প্রথম দেখায়?
কেমন আছ?
তুমি এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সেই কবিতার পংক্তি- 'তোমাকে এমন বিদীর্ণ করল কে?'
বলব, চলো।
কোথায়?
আরও কিছু দূর।
কোন দিকে?
যে কোনো দিকেই।
এখনই? এত ভোরেই?
হ্যাঁ। এই ভোর আমাদের নিয়ে যাবে গগনতলার দিকে, আমরা গগনতলায় যাব। আমরা আকাশের নিচে ছাদ বাঁধন না। আমরা সুহাসিনী স্টেশনের প্লাটফরম থেকে হাঁটতে হাঁটতে আবার বেরিয়ে পড়ব। এবার আর আমি একা নই, তুমিও একা নও। এখন আমরা দু'জন। দু'জনে মিলেই শুধু বহু দূর যাওয়া যায়। দু'জনে মিলেই পাখি হওয়া যায়। দু'জনে মিলেই উড়ে যাওয়া যায়। দু'জনে মিলেই পাহাড়ে যাওয়া যায়। দু'জনে পাহাড়ের চূড়ায় ঘর বাঁধা যায়। দু'জনে মিলে বাঁচা যায়। সব হাহাকার বিদায় হয়ে যায়_ দু'জনে মিলে গেলে। চলো, মিলি আমরা দু'জন।
চলো।
চলো তবে।
কোথায়?
যেখানে মিলেছে নদী, যেখানে মিলেছে ট্রেনলাইন।
ট্রেনলাইন কি মিলেছে কোথাও?
মিলেছে। ঐ যে, দূরে, দেখতে পাচ্ছ না?
চোখের সীমানা নয় তো?
তা কি না তা দেখতে তবে হেঁটে যাই চলো।
তারপর তুমি তাকাবে, আমি দেখব তোমার চোখ। তোমার চোখের ভেতর সেই কুঁড়েঘরের স্থাপত্য।

হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাব আমরা। তুমি কি জানতে চাইবে, কেমন করে গেল এতকাল, এমন একাকী? তুমি বুঝতে চাইবে, কীভাবে কাটল এত এত বছর? এত দিন-রাত? নিঃসঙ্গতার মাইল মাইল চরাচরে কেমন লেগেছে একা একা হেঁটে বেড়াতে? নিস্তব্ধতার বিছানায় শুয়ে আমি এত বছর ঘুমিয়েছি কি-না_ তা কি তুমি জেনে নেবে একবার, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে? বহু ধ্বংস, বহু বিপ্লব-বিদ্রোহে ক্লান্ত আমার চোখের মধ্যে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত, তুমি কি তা এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেবে না? তুমি কী আমার খুব কাছে এসে একবার বলবে না, যা হয়েছে আর না, আর কোনো রাত নেই, আর কোনো অন্ধকার নেই, আর কোনো বিভ্রান্তি নেই_ এখন শুধু ভোর!

আমি হাঁটছি তোমার দিকে, এ জীবনে আমার কাটবে না ঘোর!


লেখক: কবি ও নির্মাতা

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;