আমার বাবা ভাবতেন অধিক বইপড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: উইলবার স্মিথ



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট বার্তা ২৪.কম
উইলবার স্মিথ

উইলবার স্মিথ

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ১৩ই নভেম্বর মারা গেলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক উইলবার স্মিথ।

ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায় তাঁর ছিল সিদ্ধহস্ত। তাঁর বইগুলো মূলত অ্যাডভেঞ্চার এবং নেচার জনারের অন্তর্ভুক্ত। সাংবাদিকতা পেশাকে ভালোবেসে তিনি সাংবাদিক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার মন রক্ষা করতে প্রথম জীবনে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট হিসেবে পেশা শুরু করেন। অ্যাকাউন্টেট থাকাকালীন সময়ে অফিস ছুটির পর তাঁর হাতে থাকতো প্রচুর সময়। তাই তিনি তাঁর প্রিয় শখের কাজ লেখালেখি করে সন্ধ্যার পরের সময়টা কাটাতে শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে স্টিভেন লরেন্স ছদ্মনামে 'আর্গোসি' ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘অন ফ্লিন্ডার্স ফেস’ প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি আরো উৎসাহ বোধ করেন। এবং তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দ্যা গডস ফার্স্ট মেইক ম্যাড' লিখতে শুরু করেন।

এই উপন্যাস ২০ জন প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। এতবার প্রত্যাখ্যানের কারণে তিনি দমে যান এবং একজন সাধারণ অ্যাকাউন্টেট হিসেবে জীবনযাপন করতে থাকেন। এরপর একদিন উরসুলা উইলিয়ামস নামে তাঁর লন্ডনের এক এজেন্ট টেলিগ্রাম করেন। টেলিগ্রামে তিনি উইলবার স্মিথের প্রথম উপন্যাস কতটুকু লেখা হলো জানতে চান। এই ঘটনায় উইলবার স্মিথ আবারো উজ্জীবিত হন এবং নতুন আরেক উপন্যাস লিখতে শুরু করেন।

আগের উপন্যাস লেখায় তিনি যে ভুলগুলো করেছিলেন, সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করেন। যেসব বিষয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি জানেন, সেইসব অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করেই তিনি লিখেন 'হোয়েন দ্যা লায়ন ফিডস'। এই বই সারাবিশ্বে পাঠকপ্রিয়তা পায়। একইসাথে সাউথ আফ্রিকাতে বইটি নিষিদ্ধও হয়। এরপর থেকে তিনি পুরোপুরি লেখালেখিতেই মনোনিবেশ করেন। তাঁর লেখা বই সারাবিশ্বে ১৪০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র আত্মজীবনীমূলক বই ‘অন দ্যা লিওপার্ড রক: অ্যা লাইফ অফ অ্যাডভেঞ্চার’। সেই বই থেকে কিছু কিছু অংশ পাঠকদের জন্য এইখানে অনুবাদ করা হলো।



আমার কৈশোর কালটা মোটামুটি করুণ সময় ছিল। বইপড়া আমার জন্য একটা গোপন আনন্দের ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে রান্নার কাজে এবং ঘর গরম রাখতে কাঠ ব্যবহার করা হতো, এবং তখন আমার প্রধান কাজ ছিল একদল লোকের সাথে ট্রাক্টর এবং ট্রেলার নিয়ে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাওয়া আর সেই কাঠ বোঝাই গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা। তখন আমি সবসময়ই একটা বই আমার শার্টের ভিতরে লুকিয়ে নিয়ে যেতাম, এবং মাথায় হ্যাট পরে ট্রাক্টরের উপরে বসে বসে দুপুরবেলাতেও বই পড়তাম। আমার বাবা কোনোদিনই আমাকে ধরতে পারতো না, কারণ তার গাড়ির আওয়াজ পেলেই আমি বই লুকিয়ে ফেলতাম।


যদিও বাচ্চা ছিলাম তবুও আমি নিজের মতোই থাকতাম, আর সময় পেলেই বই পড়তাম। যখন থেকে আমি পড়তে শিখলাম তখন থেকেই বিগলস এবং উইলিয়াম নামের ছোটদের সিরিজ বই পড়তে শুরু করি। শীঘ্রই আমি সি এস ফরেস্টার'র লেখা 'হোরাসিও হর্নব্লোয়ার' অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের দুনিয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। প্রায় ৮০০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত বুলাওয়েইয়ো শহরের গণগ্রন্থাগারকর্মীর সাথে আমার মায়ের বন্ধুত্ব ছিল, তাই প্রতি মাসেই মালবাহী ট্রেনে আমার জন্য এক প্যাকেট অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের বই আসতো। তখন থেকেই আমার সংগ্রহে ভালো ভালো বই থাকতো। মৃত্যু, শঙ্কা, সাহসিকতা এবং বর্বরতার এই মহাদেশের গল্পগুলোতে আমি বুঁদ হয়ে যেতাম। আমি আফ্রিকার রোমাঞ্চকর গল্পগুলোকে ভালোবাসতাম।


ষোল বছর বয়সে আমি একটা ভয়ংকর বোর্ডিং স্কুলে বন্দী হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, সেই অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। আমার বয়স তখন ১৮, সাউথ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের শহর গ্রাহামস্টোনে অবস্থিত রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জন্য স্বর্গের দরজা খুলে গিয়েছিল। হঠাৎই খেয়াল করলাম সেখানকার মেয়েরা জিমস্লিপস পরে আর পরিচ্ছন্নভাবে সরীসৃপের মতন এঁকেবেঁকে গির্জায় যায়। এর আগে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি মেয়েরা কতটা কমনীয়, উষ্ণ আর মোহনীয় সৃষ্টি।


বোর্ডিং স্কুলে ভালো স্মৃতি বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো একজন প্রভাববিস্তারকারী ইংরেজি শিক্ষকের সাথে আমার সখ্যতা। তিনি সাধারণত আমার সাথে আমার পঠিত বইগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। একটা গল্প লেখার জন্য আমাকে কোন বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে তিনি তাই আমাকে বোঝাতেন। তিনি সাধারণত গল্প লেখার ক্ষেত্রে ধ্রুপদী নিয়ম পছন্দ করতেন; যে লেখায় শুরু থাকবে, মধ্যভাগ থাকবে এবং শেষ থাকবে। আইডিয়াটা এরকম, গল্পটা শুরু হবে সাধারণভাবে এবং চলতে থাকবে। এরপর গল্পের মাঝামাঝি পয়েন্টেও একইরকম চলবে। আর গল্পের শেষে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা থাকবে। গল্পের প্রথমেই কাহিনিকে বেশি টানা যাবে না। ধীরেধীরে গল্পের চরিত্রগুলোকে গঠন করতে হবে। রহস্যটাকে গল্পের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। এটাই ছিল আমার শিক্ষকের ফর্মূলা। অবশ্যই তোমাকে এই পদ্ধতিতেই আগাতে হবে এবং তার পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে হবে। এই পদ্ধতির মাঝেই লেখালেখির সকল প্রতিভা লুকিয়ে আছে।


আমি খুবই ভাগ্যবান কারণ আমি অসাধারণ দুইজন বাবা-মা পেয়েছিলাম। আমার বাবা খুবই কর্মঠ লোক ছিলেন আর মা শিল্পমনস্ক ছিলেন; তিনি খুবই নম্র স্বভাবের ছিলেন এবং বই পড়তে আর ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসতেন। আমার কাছে এখনও তাঁর আঁকা ছবি আছে। আমার বাবা আমাকে বাস্তব জীবনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। আর মা আমাকে সঙ্গীত এবং বইয়ের মাধ্যমে জীবনের আয়নায় অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। খুব ছোট বয়সে যখন আমি পড়তে পারতাম না তখন মা আমাকে প্রতিরাতে বই থেকে গল্প পড়ে শোনাতেন। আমার বাবা ভাবতেন অধিক বইপড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাবা সাধারণত নন-ফিকশন বই পড়তেন; সেই বইগুলোর বেশির ভাগই যন্ত্রপাতি সারাইয়ের ম্যানুয়াল ছিল।


১৯৬২ সালে আমার বয়স তখন ২৯। একটা ব্যাচেলর বাসায় থাকি। আমার লেখা প্রথম উপন্যাস 'দ্যা গডস ফার্স্ট মেইক ম্যাড'। এই উপন্যাসটাকে আমি আমার সেরা কাজ ভেবেছিলাম। ২০ জন প্রকাশক পান্ডুলিপিটাকে প্রত্যাখ্যান করে। ২০ তম বার প্রত্যাখ্যাত হবার পর আমার বিছানায় বসে বসে প্রত্যাখ্যানপত্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেইটাকে আমি হাতের মুঠোয় দুমড়েমুচড়ে ফেলি। আর মনস্থির করি আমার এজেন্টকে ঐ পান্ডুলিপিটা আর কোনো প্রকাশকের কাছে জমা দিতে না করে দেব। আমি তখন খুবই হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, আমার বাবাই হয়তো সঠিক। বই মানে আসলে সময়ের অপচয়ই। কয়েকবছর পর আমি আবার আমার প্রিয় কাজ লেখালেখি শুরু করি এবং তারপর থেকে আর পিছুপা হইনি।


আমার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'হোয়েন দ্যা লায়ন ফিডস' কেউ একজন অপরিচিত পাঠক বসে বসে পড়ছে এমন দৃশ্য আমি দেখেছিলাম; সেই ঘটনা আমার মনে আছে। ১৯৬৪ সালে হিটথ্রো'তে ডিপার্চার লাউঞ্জে বসে আছি। লন্ডনের বেদনাদায়ক ভ্রমণের পর বুঝতে পারলাম মাত্র একটা বই প্রকাশ করে আমার পক্ষে সফলতার লালগালিচা অর্জন করা সম্ভব নয়। সেখানে দেখলাম একজন আকর্ষনীয় মহিলা বসে বসে আমার বই পড়ছে। আমি যারপরনাই খুশি হলাম। এবং তার কাছে গিয়ে বললাম, “এক্সকিউজ মি, আপনি আমার বই পড়ছেন।” সে আমার দিকে তাকিয়ে বইটা নামিয়ে রাখলো এবং বললো, “আমি দুঃখিত, কেউ একজন বইটা এখানে রেখে গিয়েছিল।”


মাঝেমাঝে মনে হয় আমার ১৬ বছর বয়সের আমি যদি বর্তমানের আমাকে দেখে তাহলে হয়তো সে নিজে থেকে ভাববে, এটা কোথা থেকে সম্ভব হলো! আমার এই নিজের নিয়মে লেখার ব্যাপারটা দেখে হয়তো সে খুবই খুশি হবে। সে হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে বলবে, তুমি তো ভাগ্যদোষে ভাগ্যবান! আমার জন্যেও কিছু জমিয়ে রেখো!


তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা, নিজের স্বপ্নের প্রতি যত্নশীল হও। সফলতাকে বড়শিতে আটকানোর জন্য যদি তোমার কাছে মাংসের টুকরা না থাকে, তাহলে যাও অন্য কারো জন্য কাজ কর। সমালোচনা আর নিজেকে সন্দেহ করার মতন অনিশ্চয়তা তোমাকে গিলে খাবে। আমি অনেক অনেক ভুল করেছি। দূর্ভাগ্যবশত ভুলগুলোই শেখার একমাত্র উপায়। ব্যর্থ হও ; ভালোভাবে ব্যর্থ হও। তারপর আবার শুরু কর; শেখো।

সূত্র: দ্য বিগ ইস্যু


এক নজরে উইলবার স্মিথ
তাঁর পুরো নাম উইলবার এডিসন স্মিথ। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৩ সালে ৯ জানুয়ারিতে। জন্মস্থান: ব্রোকেন হিল, রোডেশিয়া। তিনি সাউথ আফ্রিকা'র কেপ টাউনে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বরে মারা যান। প্রকাশিত বই ৪৯ টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম দ্যা সানবার্ড, ঈগল ইন দ্যা স্কাই, শাউট এট দ্যা ডেভিল, ডেজার্ট গড, রিভার গড, ওয়্যার লক ইত্যাদি। তাঁর লেখা প্রায় সকল বইই বেস্ট সেলার তকমা পেয়েছে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;