স্মৃতির আয়নায় আবু বকর চৌধুরী ও পিয়ারট্রি লেন



সাঈদ চৌধুরী
আবু বকর চৌধুরী

আবু বকর চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার শশুর আবু বকর চৌধুরী ছিলেন একজন সংস্কৃতিবান, সত্যবাদি ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। পরোপকারকে যিনি কর্তব্য মনে করতেন। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। অন্যের আনন্দে আনন্দিত হতেন এবং অন্যের ব্যথায় ছিলেন ব্যথিত। আত্মমর্যাদাগত দিক দিয়ে অভিজাত শ্রেণির হলেও খোলামনে সবাইকে ভালোবেসে, সবার ভালোবাসায় ধন্য ছিলেন। গতকাল রাতে (০৯.১১.২০২১) তিনি চলে গেছেন মহান মাবুদের দরবারে। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউ-ন। মরহুমের রুহের মাগফেরাত ও জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি। সেই সাথে শোক সন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন সবাইকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেন।

আবুবকর চৌধুরী কেন জানি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসার নজির স্থাপন করেছেন। সিলেট শহরে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিন থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা অটুট ছিল। তাঁর মেয়ের জন্য আমাকে যখন পছন্দ করে বিয়ের কার্ড ছাপতে দেন, তখন আমি বিনীত ভাবে বারণ করেছিলাম, মেয়ের পছন্দ নিশ্চিত হবার জন্য। সেদিন আমার কথা তিনি রেখেছেন। এরপর এই পরিবারের সব কিছুতে শশুর মহোদয় আমাকে যে অগ্রাধিকার দিতেন তাতে মাঝে মধ্যে আমি বিব্রত বোধ করতাম। কারণ তাঁর একমাত্র ছেলে ও তিন মেয়ের সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং অত্যন্ত যোগ্যতা সম্পন্ন পদস্থ কর্মকর্তা। দুই মেয়ের স্বামী তথা আমার ভায়রা দুজনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারী আমি লন্ডন এসে পৌছি। দিনটি ছিল বুধবার। আকাশ ছিল খুবই পরিচ্ছন্ন। রোদেলা বিকেল। প্রিয়তমা স্ত্রী সহ আমার শশুর বিমান বন্দরে আমাকে স্বাগত জানালেন। হিথ্রো থেকে ইস্ট লন্ডন। পথের দুপাশে সারি সারি বাড়িঘর। মাঝে মাঝে ছায়াঘন বৃক্ষরাজি। দুষ্প্রাপ্য শ্যামলিমা। গোধুলী বেলায় নদী তীর হয়ে আসার পথে ঠান্ডার আমেজ অনুভব করেছি। তিনি আমার গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে দিলেন।

সূর্য তখন মালদহি আমের রঙ ধরেছে। আগের দিন নাকি কনকনে ঠান্ডা ছিল। গন্তব্যে পৌছে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। দেশ থেকে নিয়ে আসা হালকা উপহার সামগ্রী বের করতে গেলে উপস্থিত সকলে তাজ্জুব! তাদের চক্ষু যেন চড়ক গাছ! ব্যাগেজে সিলেট শহরের সাহিত্যিক-সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সমাজসেবিদের শত শত ছবি! উপস্থিত অনেকে রহস্য না বুঝলেও আমার শশুর বিষয়টি ঠিকই বুঝেছেন। তিনি আমাকে ভাল সাংবাদিক জেনে প্রথম দেখাতেই জামাতা হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। ছবিগুলো মনে হল তার পছন্দ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি যেন আমার এই পেশায় সম্পৃক্ত থাকি।

এখানে আমার প্রথম ঠিকানা ছিল ইস্ট লন্ডনের পিয়ারট্রি লেন। শ্যাডওয়েল বেসিনের পার্শ্ববর্তী সুবিশাল লেক সংলগ্ন বাসা। বৃহদাকার বাউন্ডারি সমৃদ্ধ। চমৎকার নৈসর্গিক পরিবেশ। বাসার নীচ তলায় বৈঠকখানা। দু’তলায় থাকেন আমার শশুর। আমি ৩য় তলায়। ঘরে বসে মনে হত সমুদ্রবর্তী কোথাও অবস্থান করছি।

আবুবকর চৌধুরী সুনামগঞ্জ দরগাপাশার পুরাতন জমিদার পরিবারের সদস্য। সিলেট শহরের কুমারপাড়ায় স্থায়ী বসবাস। বিলেত এসেছেন স্বাধীনতার আগে। এখানকার বাঙ্গালি কমিউনিটির সমৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. হারিছ আলী প্রমুখ বেশ ঘনিষ্ট ছিলেন।

আমাকে ভালোবেসে বাড়ি কেনার পূর্ব পর্যন্ত কোন ভাড়া বাসায় যেতে দেননি। একসাথে থাকতে বাধ্য করেছেন। আমার সহধর্মিনী পেশায় একাউন্টেন্ট। তার একান্ত প্রয়াসে ২০০৩ সালে আমরা নিজস্ব বাসায় চলে আসি।

পিয়ারট্রি লেনে থাকাবস্থায় বাসার ঠিক সামনে শ্যাডওয়েল বেসিনের সবুজ মাঠে প্রায় প্রতিদিন তাঁকে নিয়ে ব্যায়াম ও পায়চারি করতাম। রোদেলা দিন হলে মাঠের শেষ প্রান্তে টেমস নদীর তীরে বসে সাহিত্য রচনা করতাম। যে স্থানটিতে বসে আমি লেখি, সেটিও এক ঐতিহাসিক জায়গা। ম্যাড্জ ডার্বি (MADGE DARBY) তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ওয়্যাপা’স পিপল্স (WAEPPA’S PEOPLE) লিখেছিলেন ঠিক এই জায়গায় বসে। আমার অনেকগুলো ভালো কবিতা ও গল্প টেমস তীরে এই নান্দনিক পরিবেশে লেখা হয়েছে।

শ্যাডওয়েল বেসিন ঘনিষ্ঠভাবে ওয়াপিংয়ের সাথে এবং বৃহত্তর অর্থে লন্ডনের ইতিহাসের সাথে আবদ্ধ। জো স্পেন্সার তার ব্রিফ হিস্ট্রি অফ ওয়াপিং গ্রন্থে (ZOE SPENCER’S BRIEF HISTORY OF WAPPING) লিখেছেন, ওয়াপিং মূলত একটি স্যাকসন বন্দোবস্ত ছিল। এটি ছিল টেমস নদীর পার্শ্ববর্তী একটি জলাশয়। ওয়াপল অর্থ বুদবুদ বা ফেনা (‘WAPOL’ MEANING ‘BUBBLE’)। এর থেকেই ওয়াপিং নামকরণ হয়েছে। ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত এটি বাগান সমৃদ্ধ নৌঘাট ছিল। ওয়াপিংয়ে সমুদ্র সংশ্লিষ্ট দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৫৪৬ সালে লাইমহাউস থেকে যাত্রা করার আগে স্যার ওয়াল্টার রেলিহের (SIR WALTER RALEIGH) জাহাজটি ওয়াপিংয়ে সজ্জিত হয়েছিল। তরুণ জেমস কুক ওয়াপিংয়ের বাসিন্দা ছিলেন। ক্যাপ্টেন ব্লাইও ওয়াপিংয়ে বহু বছর বসবাস করেছেন।

নদী পথে মালামাল পরিবহনের ঘাট হিসেবে এটি ব্যবহৃত হত। আমার জন্মভূমি সিলেট সদর উপজেলার বাদঘাটের সাথে একটা অদ্ভুত মিল আমি খুঁজে পাই। ভারত থেকে নদীপথে সিঙ্গেরখাল নদী দিয়ে মালবাহী স্টিমার এসে বাদাঘাট এলাকায় থামত। আর এখানে এশীয় অঞ্চল থেকে চাল, তামাক ইত্যাদি পণ্য নিয়ে লন্ডনে আগত জাহাজগুলী আনডাউন হয়। কেন জানি ইতিহাসের চোরাবালিতে আমাদের জাহাজি শ্রমিকদের ছোঁয়া আমি অনুভব করি।

প্রায় ৪০০ বছর ধরে টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালির বসবাস। জাহাজের নাবিক কিংবা শ্রমিক হিসেবে তারা প্রথম এসেছিলেন। বিভিন্ন দেশ হয়ে এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া ডক কোম্পানিতে কাজ নিয়ে এসে ওঠেন পূর্ব লন্ডনের ওয়াপিং ও শ্যাডওয়েল এলাকায়। এদের মাধ্যমেই টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালির বসতি শুরু। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে সীমিত সংখ্যক উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছেন। তবে ভাওচার ভিসায় ব্যাপকভাবে ব্রিটেনে আসা শুরু হয়। আমার শশুর তাদের অন্যতম।

আবুবকর চৌধুরীর বর্ণনা মোতাবেক, শ্রমিক ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষা আন্দোনের সূতিকাগার ছিল এই এলাকা। ১৬৬৬ সালে নাবিক ও শ্রমিকদের স্বল্প বেতনের বিরুদ্ধে ডিউক অব অ্যালবামার (DUKE OF ALBEMARLE) নিরাপত্তা কর্মিদের সাথে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা এখানেই ঘটেছে। ১৮০০ সালে ডক আইন (LONDON DOCK ACT) পাস হয় এবং এখানে লন্ডন ডক স্থাপিত হয়। তখন দরিদ্র জনগনকে ন্যূনতম মূল্য দিয়ে বিনা ক্ষতিপূরণে তাড়িয়ে দেয়া হয়। আজকের এই অভিজাত ভবন সমূহের নিচে চাপা পড়ে আছে অনেক গরীব মানুষের বাড়িঘর ও ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাবতে কষ্ট হয়!

সে যাক, একসময় ওয়াপিংয়ে নৌবাহিনীর সৈনিকদের বসবাস ছিল। এখান থেকেই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হত। নদীপথে নাবিকদের সাথে প্রায়ই জলদস্যুদের রক্তাক্ত লড়াই সংঘটিত হয়। নিরাপত্তার জন্য চোর-ডাকাত প্রতিরোধে তখন প্রতিবছর ব্যয় ছিল প্রায় অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড। দণ্ডপ্রাপ্ত বিদ্রোহী ও জলদস্যুদের সাউথওয়ার্কের মার্শালিয়া জেলখানা থেকে ওয়াপিংয়ে এক্সিকিউশন ডকে নিয়ে আসা হয়। এখানে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তাদের দেহগুলি তখন খাঁচায় ফেলে রাখা হয়।

১৭৯৮ সালে লন্ডনে নদী পুলিশ বাহিনী (RIVER POLICE FORCE) প্রতিষ্ঠা করা হয়। থেমস পুলিশ সদর দফতরটি (THAMES POLICE HEADQUARTERS) আজও ওয়াপিংয়ে অবস্থিত। বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রেনিংয়ে আশা চৌকস পুলিশ অফিসারগন এখানে এসে অভিজ্ঞতা নিয়ে যান।

শ্যাডওয়েল বেসিনের উভয় প্রান্তে স্টিলের সেতুগুলি বেশ চমৎকার। ব্রিজগুলি ওয়াপিংয়ের ভিতর এবং বাইরে অ্যাক্সেসের একমাত্র মাধ্যম। শ্যাডওয়েল বেসিনটি ওয়াপিং ডকগুলির সর্বশেষ স্থাপনা। ডার্টমুর কারাগারের (DARTMOOR PRISON) স্থপতি ড্যানিয়েল আলেকজান্ডার (DANIEL ALEXANDER) লন্ডন ডক ডিজাইন করেছিলেন। তার ক্লাসিকাল নকশা এখনো প্রশংসিত। এখানে হাউজবোট এবং লিভ-ইন ইয়টও পাওয়া যায়।

শ্যাডওয়েল অঞ্চল উন্নয়নের প্রাণপুরুষ টমাস নেল (THOMAS NEALE) ১৬৫৬ সালে শ্যাডওয়েল বেসিনের সেন্ট পলস চ্যাপেলটি তৈরি করেছিলেন। এটি ১৮২১ সালে পুন:নির্মাণ করা হয়। এখানকার প্রায় আবাসস্থল ছোট কাঠের ফ্রেমে ইট দিয়ে পূর্ণ ছিল। পেলিকান সিঁড়ির দিকে যাওয়ার জন্য একটি ছোট্ট এলি রয়েছে। যখন নদীর জোয়ার কম হয় তখন নীচের দিকে যাওয়া যায়। হাইওয়ে এবং নদীর মধ্যবর্তী এ জায়গাটি ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনের অন্যতম সংযোগস্থল।

১৯৮৬ সালে রূপার্ট মারডোকের নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (RUPERT MURDOCH’S NEWS INTERNATIONAL) এর মুদ্রণ কাজ এখান থেকে শুরু হয়। অবশ্য ২০০৮ সালে নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রিন্টিং অপারেশন হার্টফোর্ডশায়ার চেশান্টে স্থানান্তরিত হয়েছে।

শ্যাডওয়েল বেসিনের সাথে ভাল পরিবহণ সুবিধা রয়েছে। ওয়াপিং ওভারগ্রাউন্ড স্টেশন এবং শ্যাডওয়েল ডিএলআর ও শ্যাডওয়েল আন্ডারগ্রাউন্ড সহজে ইস্ট লন্ডন এবং সাউথ লন্ডনের সাথে সংযুক্ত। এছাড়া নিকটবর্তী টাওয়ার হিল আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ডিস্ট্রিক এবং সার্কেল উভয় লাইন যাতায়াত করে।

বর্তমানে এই এলাকায় বাংলাদেশী সহ বহু জাতিক মানুষ বাস করেন। শ্যাডওয়েল বেসিন আউটডোর একটিভিটিজ সেন্টার এখানে বেশ সক্রিয়। তারা দক্ষতার সাথে জল ভিত্তিক দুঃসাহসিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করে। সুযোগ সুবিধা এবং সরঞ্জামের ব্যবহার সাশ্রয়ী রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত ক্রিয়াকলাপ জাতীয়ভাবে স্বীকৃত যোগ্যতর কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রটি আরওয়াইএ এবং বিসিইউ দ্বারা অনুমোদিত শিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত। অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত।

লন্ডনে যাপিত জীবনের প্রথম ঠিকানা পিয়ারট্রি লেন। আমার শশুরের প্রিয় পছন্দের জায়গা। এটি লন্ডনের সমস্ত নদীর তীরবর্তী একটি জায়গা। ওয়াপিং চেলসির বিলাসবহুল বাঁধ, লন্ডন ব্রিজের চকচকে টাওয়ার এবং সাউথ ব্যাংকের সাংস্কৃতিক হাব বেষ্ঠিত অঞ্চল। আমার অনেক কবিতার জন্ম হয়েছে এই টেমস তীরে। স্পন্দিত এই পিয়ারট্রি লেন থেকে স্মৃতির ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে অনেক গল্পমালা।

আজ পিতৃতুল্য আবুবকর চৌধুরী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যিনি নিজের চিন্তা না করে আমাদের চিন্তা করতেন। সারাটা জীবন অন্যের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন। ভালো কাজ এবং মানুষের সেবা ও আতিথেয়তার মাঝে তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের দেশটাকে আরো সুন্দর দেখতে ব্যাকুল ছিলেন। তাঁর অন্তর ছিল সদা দ্যূতিময়। কোন ভয় ভীতি ছিলনা। অনায়াসে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারেন। সকলকে সেবাদান ও সম্মান করেই হয়েছিলেন সম্মানিত। মহান আল্লাহ তাঁকে মমতার চাদরে আবৃত করুন।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;