শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু, দ্বিশত বর্ষে বোদল্যার



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
কবি, কথাশিল্পী, চিন্তক মহীবুল আজিজ

কবি, কথাশিল্পী, চিন্তক মহীবুল আজিজ

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান ব্যক্তিত্বের কালজয়ী জীবন ও কর্ম কালান্তরে প্রবহমান। বছর, দশক, শতক পরিয়েও তারা জনজীবনের মানসপটে দেদীপ্যমান। তাঁদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কালপঞ্জি ঘিরে সে কারণেই বহুমাত্রিক সমীক্ষা ও নিরীক্ষামূলক চর্চা আবর্তিত হয়।

এখন যেমন চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। চলছে ফরাসি প্রতিভা শার্ল বোদল্যারের দ্বিশত জন্মবর্ষ। সদ্যই অতিক্রান্ত হয়েছে অনন্যতায় উজ্জ্বল বাঙালি প্রতিভা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধু ও বোদল্যারকে নিবিড় সমীক্ষার মাধ্যমে কবি, কথাশিল্পী, চিন্তক মহীবুল আজিজ রচনা করেছেন 'বঙ্গবন্ধু, বোদল্যার ও অন্যান্য' শিরোনামে চিন্তাউদ্দীপক গ্রন্থ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ বিভিন্ন সেমিনার ও ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব পবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন, গ্রন্থে সেগুলোই স্থান পেয়েছে। বার্তা২৪.কম'কে তিনি বলেন, 'গ্রন্থের মূল ফোকাস বঙ্গবন্ধু। তবে বোদল্যার ও অন্যান্য কিছু বিষয়ের প্রবন্ধও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে।'

প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে 'মুজিব বর্ষ' উপলক্ষ্যে নানা মাত্রার আয়োজন হয়েছে। উৎসবমুখরতার মধ্যে নিবিষ্ট গবেষণার বিষয়টি যাতে চাপা না পড়ে, আমার মূল বিবেচনা সেটাই। কারণ রাজনীতির পরিসরের মহীরুহ-সম বঙ্গবন্ধু ব্যাপকার্থে বাঙালি মনন চিন্তা এবং সৃজন ধারার অবিচ্ছেদ অংশ।'

'বৃহত্তর বাঙালি সংস্কৃতির মূলস্রোতের কথা বঙ্গবন্ধু ছাড়া কল্পনা করা যায় না। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক মনীষার অঙ্গনেও আলোকিত ব্যক্তিত্ব স্বরূপ', বলেন তিনি। তাঁর মতে, 'বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধ্যয়ন ও চর্চায় বহুমাত্রিকতার উন্মেষ যেমন ঘটাতে, তেমনিভাবে তাঁর বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতার বিষয়গুলোকেও আমাদের শনাক্ত করতে হবে গভীর গবেষণার মাধ্যমে।'

বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শিক রাজনীতির অন্যতম নেতা হিসেবে কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ চট্রগ্রাম শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন ফোরামে সামনের কাতারে রয়েছেন। একজন বরিষ্ঠ শিক্ষাবিদ রূপে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা বিকাশে পথে নিষ্ঠাবান কাণ্ডারি। মুক্তিযুদ্ধের মতাদর্শিক লড়াই-সংগ্রামের শৈল্পিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে তিনি সর্বজনমান্য ভ্যানগার্ড।

ছাত্র জীবনের প্রখর মেধাবী  প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে  কৃতিত্বপূর্ণ পেশাজীবনের জন্য স্বীকৃতি একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর সৃজন জগৎ বহুমাত্রিক ও বর্ণময়। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণায় ভরপুর তাঁর রচনাসম্ভার। বার্তা২৪কম'কে তিনি বলেন, 'প্রতিটি মুহূর্ত সৃষ্টিশীল থেকে জীবনকে উপভোগ করতে চাই। প্রতিক্ষণ আমি তাই ভাবনা ও লেখার মধ্যে থাকি।'

মহীবুল আজিজ বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি চমৎকার ফারসি জানেন। শিক্ষক লাউঞ্জের আড্ডায় সহজে বুঝিয়ে দিলেন ফারসি শব্দ ও বাক্য গঠন কৌশল। বললেন, 'আমার বাবা ফারসি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। পারিবারিকভাবেই ভাষাটি আমার আয়ত্তাধীন। বাংলায় যে হাজার হাজার ফারসি শব্দ আছে, সে ভাষাটি জানা জরুরি।'

মহীবুল আজিজ জানান, 'বাংলা শব্দভাণ্ডারে সবচেয়ে বেশি শব্দ গৃহীত হয়েছে ফরাসি ভাষা থেকে। ধর্ম পালন, কোর্ট-কাচারি ও দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা ফারসি শব্দ ব্যবহার করছি।'

ফারসি ছাড়াও ইংরেজিতে মহীবুল আজিজের দখল রয়েছে। বাংলা ভাষার বিদগ্ধ শিক্ষক হয়েও ইংরেজিতে তিনি পারঙ্গম। যে কারণে অনুবাদে তিনি সিদ্ধহস্ত।

দূরপ্রান্তের চট্টগ্রামে অবস্থানকারী মেধাবী-লেখক মহীবুল আজিজ বিশ্ববরেণ্য ইতালো ক্যালভিনোর অসাধারণ গল্পগুলোর অনবদ্য অনুবাদ করেছেন। ইতালো ক্যালভিনো হলেন সেই লেখক, যাকে চিহ্ণিত করা হয়, ‘লেখালেখির কাঠবেড়ালি’ নামে। কারণ, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও মননশীলতাকে অকাতরে ঢেলে দিয়ে অকল্পনীয় সৃজনী ক্ষমতা দেখাতে ক্যালভিনোর মতো খুব কম লেখকই পেরেছেন। তিনি মানব অনুভূতির অতলে ডুব দিয়ে তুলে এনেছেন অদেখা মানবিক বোধ ও অনুভবের জগৎ। সমাজ ও মানুষের এমন কিছু প্রপঞ্চ ক্যালভিনো এঁকেছেন, যা তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে প্রায়-অসম্ভব। সেই মণিকাঞ্চন বাংলা ভাষার পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের কৃতিত্ব মহীবুল আজিজের।

মহীবুল আজিজ জানান, কিউবার সান্তিয়াগো শহরের দ্য লাসভেগাসে ইতালো ক্যালভিনোর জন্ম ১৯২৩ সালের ১৫ অক্টোবর। আর মৃত্যু ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ সালে। কৃষিবিদ পিতার সঙ্গে তিনি নিজের দেশ ছাড়াও তাবৎ দক্ষিণ আমেরিকা চষে বেড়িয়েছেন। উদ্ভিদ বিজ্ঞানি মায়ের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন প্রাণবৈচিত্র্যের নিখুঁত পরিচয়। দুজনের প্রভাব তাঁর গল্পে স্পষ্ট। তিনি কৃষি ও বনানীময় মানুষের কথাগুলোকেই বলেছেন চরম অভিনব চমকের মাধ্যমে। গল্পের বুনন ও আঙিকের দিক থেকে তিনি তাঁর অসাধারণ পটুত্ব দিয়ে এখনো মাতিয়ে রেখেছেন বিশ্ব কথাসাহিত্যের পুরো দুনিয়াটিকেই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্যালভিনো ছিলেন ইতালির তুরিনে। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের বিরোধিতায় তথন তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে মনোদার্শনিকভাবে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের দশ বছরের মাথায়, ১৯৫৭ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক হাঙ্গেরিতে আগ্রাসনের প্রতিবাদে তিনি দল ছেড়ে দেন এবং নিজের লেখালেখির অঙ্গনেই স্থিত হন।

পূর্ণকালীন লেখক জীবনে ক্যালভিনো তিনটি উপন্যাস ও অসংখ্য ছোট গল্প রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে দ্য ক্রো কামস লাস্ট, দ্য ব্যরন ইন দ্য ট্রিজ, কসমিকোমিকস, দ্য হোয়াইট সুনার, দ্য ইয়ুথ ইন তারিন অন্যতম। জীবন পরিচালনার জন্য মাঝে মাঝে সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণকারী ক্যালভিনোর অভিনবত্ব দেখানোর জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। একটি গল্প তিনি শুরু করেছেন এভাবে: ‘একটি শহর ছিল, যেখানে সবাই নিষিদ্ধ। শুধু একটি বিষয় নিষিদ্ধ ছিল না, আর তা হলো ডাঙ্গুলি। ফলে সবাই শহরের পেছনের বড় মাঠে জড়ো হতো। আর দিন পার করে দিত ডাঙ্গুলি খেলেই।’

চমৎকার রূপক আর চিত্রকল্প দিয়ে ক্যালভিনো একটি অবরুদ্ধ জনপদকে কয়েক লাইনেই বুঝিয়ে দিতেন। এমন উদাহরণ একটি নয়, অসংখ্য রয়েছে তাঁর আখ্যানের ভাঁজে ভাঁজে। বাংলা ভাষার পাঠক তাঁর গল্পের হাত ধরে শিহরণ জাগানো জগতের সন্ধানে ছুটে যাবেন। অনাস্বাদিত বিষয়ের আনন্দ পাবেন।

মহীবুল আজিজ ঝরঝরে ভাষায়, গভীর তথ্য বিন্যাসে অনুবাদের সঙ্গে ক্যালভিনোর যে জীবনালেখ্য দিয়েছেন, সেটি নিঃসন্দেহে একটি মূল্যবান পাওনা। ক্যালভিনোর এমন গল্পগুলোকেই তিনি অনুবাদের জন্য বেছে নিয়েছেন, যা সমাজের অনেক লুকনো ক্ষতকে উন্মোচিত করে এবং ঘুঁনে ধরা সমাজের পাটাতন ধরে তীব্র নাড়া দেয়। ‘গ্রন্থাকারে এক জেনারেল’, ‘একটা কিছু কর’, ‘বিড়াল এবং পুলিশ’, ‘বিবেক’, ‘শত্রুর চোখ’, ‘আকাশমুখো নৃগোষ্ঠি’ ইত্যাদি গল্পে স্বাধীনতা, মানবিকতা, নৈতিক স্বাতন্ত্রিকতার অমল মাত্রায় ক্যালভিনো ব্যক্তিসত্তার অচলায়তন ভেঙে মুক্তির দরোজায় কড়া নাড়িয়েছেন।

মহীবুল আজিজের মতে, উত্তরাধুনিক বা বিশ্বায়নের মানুষের একক ও সার্বভৌম জাগৃতির গান ক্যালভিনোর গল্পের অন্তর্গত মূলস্রোত। প্রথা, প্রতিষ্ঠা, দর্শনের নামে মানবসত্তার বন্দিত্বকে অস্বীকার করে মানবমুক্তির অলংকারে পরিণত করার কৃতিত্বের জন্যে ক্যালভিনোর গল্পগুলো পাঠকের মনের গভীরে অমোচনীয় দাগ রেখে যায়।

মহীবুল আজিজ বলেন, শুধু নিজের জন্মদিনেই নয়, প্রতিটি দিনই আমি নিজস্ব লেখার নিভৃতিতে কাটাই, যেখানে বঙ্গবন্ধু, বোদল্যার,  ক্যালভিনো, চিনুয়া আবেচে, আর. কে. নারায়ণ থাকেন সরব উপস্থিতিতে, যাদের কাউকে কাউকে আমি পেয়েছিলাম ক্যামব্রিজে অবস্থানকালীন দিনগুলোতে। 'বর্ণ সন্তান' উপন্যাসে আমি বিলাতে দেখা সুপ্ত রেসিজম আর বাঙালি ডায়াসপোরাকে তুলে এনেছি। আমাদের এক্সোডাসে আখ্যান বিশ্বায়নের এ যুগেও আমরা ছেঁকে বের করতে পারনি, অথচ স্থানীয় সমাজের মতোই বৈশ্বিক বাঙালি সমাজ আমাদের নিরীক্ষা ও মনোযোগ দাবি করে।

মহীবুল আজিজ বিশ্বাস করেন, এক জীবনের মহার্ঘ আয়োজনে একজন মানুষের জন্য কণা পরিমাণ সময়ও অলসতা বা হতাশায় অপচয় করা শুধু ভয়ঙ্কর অপরাধই নয়, মারাত্মক পাপ। আমাদেরকে আমাদের কাজের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই জীবন কাটাতে হবে। একমাত্র কাজের তুল্যমূল্যের নিরিখেই প্রতিপন্ন হবে একজন মানুষের প্রকৃত সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা।

সর্বসাম্প্রতিক সময়ে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য-সম্ভার বীক্ষণে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধুর মহাজীবনের নানা দিক এবং এর সমকালীন প্রাসঙ্গিকতার বিষয়েও অনুসন্ধান করছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কৃতিত্বের সমান্তরালে তাঁর দার্শনিকতার হিরন্ময় পরিসরকে বৈশ্বিক বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলে তুলনামূলক সমীক্ষায় পর্যালোচনা করতে তিনি এখন গবেষণায় মগ্ন।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;