সর্বপ্রথম নজরুলের ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়



সোমঋতা মল্লিক
সর্বপ্রথম নজরুলের ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়

সর্বপ্রথম নজরুলের ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়

  • Font increase
  • Font Decrease

কাজী নজরুল ইসলামের একক সম্পাদনায় ২৬শে শ্রাবণ, ১৩২৯ (১১ই আগস্ট, ১৯২২) শুক্রবার সপ্তাহে দুবার প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতু পত্রিকার আত্মপ্রকাশ হয়। অধিকাংশ সংখ্যাই শুক্রবার ও মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে, পত্রিকার পৃষ্ঠার আকৃতি ছিল ক্রাউন ফোলিও (১৫ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি)। প্রথম সংখ্যা ছিল ১৬ পৃষ্ঠার। প্রতি সংখ্যার দাম ছিল ১ আনা। দেশবাসীকে স্বাধীনতা ও মানবতার বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত করাই ছিল পত্রিকাটির লক্ষ্য।

চট্টগ্রামের হাফিজ মাসউদ আহমদের অর্থানুকূল্যে প্রকাশিত এ পত্রিকার সম্পাদক, সারথি ও স্বত্বাধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। প্রথম থেকে সপ্তম সংখ্যা পর্যন্ত সম্পাদক হিসেবে, অষ্টম সংখ্যা থেকে সারথি হিসেবে এবং ছাব্বিশ সংখ্যা থেকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নজরুলের নাম মুদ্রিত হয়। পত্রিকার মুদ্রাকর ও প্রকাশক আফজাল-উল হক, কর্মসচিব বা ম্যানেজার ছিলেন শান্তিপদ সিংহ। ঠিকানা ৩ নং কলেজ স্কয়ার, কলিকাতা, সপ্তম সংখ্যার পর অফিস চলে যায় ৭ প্রতাপ চাটুজ্যে লেনে।

ধূমকেতুতে নজরুল মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাস্বর করে দুরন্ত আবেগে যেসব সম্পাদকীয় নিবন্ধ, বিবৃতি ও কবিতা লিখেছিলেন তা পাঠক সমাজকে আলোড়িত করেছিল। ধূমকেতুতে প্রকাশিত নজরুলের গদ্য রচনাগুলো পরে 'দুর্দিনের যাত্রী' ও 'রুদ্র মঙ্গল' গ্রন্থে এবং কবিতা গুলো 'বিষের বাঁশী' ও 'ভাঙার গান' কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়।

'নজরুলের ধূমকেতু' গ্রন্থে সেলিনা বাহার জামান সম্পাদকীয়তে লিখেছেন-

"প্রথম পৃষ্ঠায় কাগজের ওপর দিকে সৌরমন্ডলের ছবি, তাতে ধূমকেতু আঁকা। সবই কালো কালিতে ছাপা। তার নীচে বড় হরফে লেখা সম্পাদক - কাজী নজরুল ইসলাম। আফজালুল হক কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছিল ধূমকেতু। ছাপা হয়েছিল মেটকাফ প্রেসে, যার ঠিকানা-৭৯ বলরাম দে স্ট্রিট, কলিকাতা।

ধূমকেতুর বয়স হয়েছিল ৫ মাস ১৬ দিন। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২২ সালের ১১ আগস্ট, বাংলা শ্রাবণ ১৩২৯।

শেষ সংখ্যা ধূমকেতুর তারিখ ১৩ মাঘ ১৩২৯ সাল, ২৭ জানুয়ারি, ১৯২৩। ধূমকেতুর মোট ৩২টি সংখ্যা বের হয়েছিল।

ধূমকেতু নানা কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

১. ধূমকেতু নজরুল সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা যার উদ্যোক্তা এবং মালিক নজরুল নিজে।

২. ধূমকেতু পত্রিকায় বাংলা ভাষায় নজরুলই প্রথমে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করেন।

৩. ধূমকেতু পত্রিকার ১২ নম্বর সংখ্যায় অর্থাৎ ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯২২ 'আনন্দময়ীর আগমনে' নামক একটি প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হয়। এই কবিতা লেখা ও ছাপার জন্য পুলিশ ধূমকেতু কার্যালয়ে হানা দেয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২২। আর নজরুল গ্রেফতার হন ২৩শে নভেম্বর,১৯২২ শহর কুমিল্লায়। কবি কারারুদ্ধ হবার পর অমরেশ কাঞ্জিলাল ধূমকেতু বের করেন।"

ধূমকেতুর প্রথম সংখ্যায় 'সারথির পথের খবর' - এ প্রকাশিত হয়-

"আমার এই যাত্রা হল শুরু

ওগো কর্ণধার,

তোমারে করি নমস্কার!"

"মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে" "জয় জয় প্রলয়ঙ্কর" বলে ধূমকেতুকে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য। আমি প্রথমে আমার যাত্রা- শুরুর আগে আমার সত্যকে সালাম জানাচ্ছি-নমস্কার করছি। যে পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ ছাড়া আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়। রাজভয় - লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যেতে পারবেনা। আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, তা হলে বাইরের যদি আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই আমার কিছু করতে পারবেনা। যার ভিতরে ভয়,সেই তার ভয় পায়। আমার বিশ্বাস, যে নিজেকে চেনে, তার আর কাউকে চিনতে বাকী থাকেনা। অতএব যে মিথ্যাকে চেনে সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করেনা। যার মনে মিথ্যা, সেই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা আপনি এত বড়ো একটা জোর আসে, যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারুকখে কুর্ণিশ করেনা- অর্থাৎ কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারেনা। এই যে নিজেকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথ-প্রদর্শক, কাণ্ডারী বলে জানা এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারেক্তি..."

২৬শে আশ্বিন,১৩২৯ সালে (১৩ই অক্টোবর, ১৯২২) ধূমকেতু পত্রিকায় 'ধূমকেতুর পথ' - এ কাজী নজরুল ইসলাম লেখেন: "অনেকেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছেন, ধূমকেতুর পথ কি? সে কী বলতে চায়? এর দিয়ে কোন্ মঙ্গল আসবে ইত্যাদি।

নীচে মোটামুটি ধূমকেতুর পথ-নির্দেশ করছি। প্রথম সংখ্যার ধূমকেতুতে 'সারথির পথের খবর' প্রবন্ধে একটু আভাষ দিবার চেষ্টা করেছিলাম, যা বলতে চাই, তা বেশ ফুটে ওঠেনি মনের চপলতার জন্য। আজও হয়ত নিজেকে যেমনটি চাই তেমনটি প্রকাশ করতে পরবোনা, তবে এই প্রকাশের পীড়ার থেকেই আমার বলতে-না পারা বাণী অনেকেই বুঝে নেবেন-আশা করি। পূর্ণ সৃষ্টিকে প্রকাশ করে দেখাবার শক্তি ভগবানেরও নেই, কোন স্রষ্টারই নেই।

মানুষ অপ্রকাশকে আপন মনের পূর্ণতা দিয়ে পূর্ণ করে দেখে।

সর্বপ্রথম, ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়।

স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা ও কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমানু অংশও বিদেশীর অধীন থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা-রক্ষা, শাসন-ভার, সমস্ত থাকবে ভারতীয়ের হাতে। তাতে কোনো বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এদেশে মোড়লী করে দেশকে শ্মশান-ভূমিতে পরিণত করছেন, তাঁদেরে পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা পুঁটুলি বেঁধে সাগর-পাড়ে পাড়ি দিতে হবে। প্রার্থনা বা আবেদন নিবেদন করলে তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের অতটুকু সুবুদ্ধি হয়নি এখনও। আমাদেরও এই প্রার্থনা করার, ভিক্ষা করার কুবুদ্ধিটুকু দূর করতে হবে।

পূর্ণস্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে সকল-কিছু নিয়ম-কানুন-বাঁধন-শৃঙ্খল-মানা-নিষেধের বিরুদ্ধে। আর এই বিদ্রোহ করতে হলে-সকলের আগে আপনাকে চিনতে হবে। বুক ফুলিয়ে বলতে হবে, 'আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্ণিশ'! বলতে হবে, 'যে যায় যাক সে আমার হয়নি লয়'!..."

ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আশীর্বাণী নিয়মিত ছাপা হয়:

কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু

আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,

আঁধারে বাঁধ্ অগ্নিসেতু,

দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে

উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!

অলক্ষণের তিলক রেখা,

রাতের ভালে হোক না লেখা,

জাগিয়ে দে রে চমক্ মেরে'

আছে যারা অর্দ্ধচেতন।

২৪ শ্রাবণ

১৩২৯                                               শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় তৎকালীন বহু গুণী মানুষের শুভেচ্ছাবাণী প্রকাশিত হয়:

অরবিন্দ-বারীন্দ্রের ভগিনী বিদূষী শ্রীযুক্তা সরোজিনী ঘোষ লিখেছিলেন:

ভাই নজরুল!

তোমার ধূমকেতু বিশ্বের সকল অমঙ্গল, সমস্ত অকল্যাণকে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলুক-তোমার ধূমকেতু যা কিছু মিথ্যা, যা কিছু মেকী, যা কিছু অসুন্দর তা ধ্বংস করে সত্য সুন্দর ও মঙ্গল প্রতিষ্ঠার সহায়তা করুক। তোমার ধূমকেতু মানুষে মানুষে মিলনের সকল অন্তরায় চূর্ণ করে দিয়ে মহামানবের সৃষ্টি শক্তি ও সামর্থ্য এনে দিক!

                                                                                             তোমার

                                                                                        সরোজিনী দিদি

                                                                                 ২৩শে শ্রাবণ,১৩২৯ সাল

সাহিত্য-সম্রাট শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন:                                                

                                                                                                     ২৪শে শ্রাবণ

                                                                                                        শিবপুর

পরম কল্যাণীয়বরেষু,

তোমার কাগজের দীর্ঘজবন কামনা করিয়া তোমাকে একটিমাত্র আশীর্বাদ করি, যেন শত্রু মিত্র নির্ব্বিশেষে নির্ভয়ে সত্য কথা বলিতে পার। তারপরে ভগবান তোমার কাগজের ভার আপনি বহন করিবেন।

                                                                                                      তোমাদের-

                                                                                              শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাঙালার প্রলয় ধূমকেতু বারীন দা লিখেছিলেন:

 

                                                                                            পণ্ডিচারী আর্য্য আফিস

                                                                                               ৮ই শ্রাবণ, ১৩২৯

ভাই পাগল,

তুমি ধূমকেতু বের করছো শুনে সুখী হলুম। ধূমকেতুর জন্যে আমার আশীর্ব্বাদ চেয়েছ, এ রকম নি-খরচা আশীর্ব্বাদ করার জন্য আমি হাত উুঁচিয়েই আছি! আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু দেশের যারা মেকী, তাদের গোঁফ ও দাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু দেশের যারা সাঁচ্চা সোণা তাদের খাদ ময়লা পুড়িয়ে উজ্জ্বল করে তুলুক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু বাঙালীর মেয়ের মুখে জহরব্রতা রাজপুতানীর সতী-স্ত্রী দেবী-গর্ব্ব ফিরিয়ে আনুক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু যতুগৃহ জ্বালিয়ে দিক,স্থির-মণি হয়ে বঙ্গমাতার স্বর্ণ সিংহাসন সাজিয়ে নিক, ভগ্নধ্যান শিবের চক্ষু দিয়ে বেরিয়ে এসে এ কামুক জাতির কাম দেবতাকে পুড়িয়ে ফেলুক আর কামিনী উমাকে করুক শান্তজ্যোতি তাপসী। আত্মজয়ের তপস্যার মধ্য দিয়ে বাঙলার মেয়েরা বাঙলার নব- জাগ্রত শিবসেনাকে পূর্ণ জীবনে মুক্তির স্বর্গে ফিরে পাক।

আমার ও হেমন্তের বড় সাধ ছিল একত্রে 'মুড়ো ঝ্যাঁটা' নাম দিয়ে কাগজ বের করব। বহুযুগের আবর্জ্জনা-ভরা বাঙলায় তথা ভারতে ঝ্যাঁটার বড় দরকার। আশাকরি ধূমকেতু আগুনের ঝ্যাঁটা হয়ে বঙ্গমাতার দেউলখানি সাফ করে দেবে।

                                                                                                                                             ইতি-

                                                                                                                                     তোমার বারীন দা

শ্রী যতীন্দ্রমোহন বাগচী লিখেছিলেন:

সেদারোপম শ্রীমান কাজী নজরুল ইসলাম প্রিয়বরেষু-

প্রলয়াত্মিকা প্রোজ্জ্বল শিখা সর্ব্বনাশের সাথী

জ্বালুক বন্ধু ধূমকেতু তব বিশ্বদহন বাতি

চক্ষে তাহার যে বিপুল জ্বালা বক্ষে যে কালানল

পুচ্ছে জ্বলিছে অভিশাপরূপে যে মহা অমঙ্গল

এক সাথে তাহা হানুক মিলায়ে ভীষন বজ্র বেগে

পাপ খান্ডব যাক্ জ্বলে তারি উল্কা ফুল্কি লেগে

দেশভরা যত অধস্ম যতু পুড়ে হোক ছারখার

যত অসত্য ভস্মের মাঝে হোক্ সমাপ্ত তার

তব প্রদীপ্ত সংমার্জ্জনা অত্যাচারের ভালে

শেষ লেখা তার লিখে দিয়ে যাক্ চিতার বহ্নিজালে

                                                                                        তোমার স্নেহমুগ্ধ

                                                                                    শ্রী যতীন্দ্রমোহন বাগচী

শ্রী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন:

কাজী ভায়া,

রুদ্ররূপ ধরে ধূমকেতুতে চড়ে তুমি দেখা দিয়েছ-ভালই হয়েছে। আমি প্রাণ ভরে বলছি-স্বাগত। আজ ধ্বংসের দিন, বিপ্লবের দিন, মহামারীর দিন, দুর্ভিক্ষের দিন, সর্ব্বনাশের দিন-তাই রুদ্রের করাল রূপ ছাড়া আর চোখে কিছু লাগেনা।

সৃষ্টি যারা করবার তারা করবে; তুমি মহাকালের প্রলয় বিষাণ এবার বাজাও। অতীতকে আজ ডোবাও, ভয়কে আজ ভাঙ্গ, মৃত্যু আজ মরণের ভয়ে কেঁপে উঠুক।

ভয়ঙ্কর যে কত সুন্দর, তা তোমার ধূমকেতু দেখে যেন সবাই বুঝতে পারে।

                                                                                        অভিন্নহৃদয়

                                                                               শ্রী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

ধূমকেতুর প্রথম সংখ্যায়, ১৯২২-এর ১১ আগস্ট ‘মায়ের আশিস’ শিরোনামে মুদ্রিত হয়েছিল স্নেহশালিনী বিরজাসুন্দরী দেবীর এই লেখাটি:

গগনে ধূমকেতুর উদয় হলে জগতের অমঙ্গল হয়, ঝড়, ঝঞ্ঝা, উল্কাপাত, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, মহামারী অনিবার্য্য হয়ে ওঠে,এটা জ্যোতিষ শাস্ত্রের কথা বলে জ্ঞান হয়েছে অবধি শুনে আসছি। আমরা বাঙালী, আমরা বড়ো শান্তিপ্রিয় গো-বেচারা জাতি, তাই আমাদের ধূমকেতু নামটা শুনেই প্রাণটা কেঁপে ওঠে। ভারতের অদৃষ্টে অলক্ষ্যে হয়তো সত্যসত্যই ধূমকেতুর উদয় হয়েছে, তা না হলে আজ এর বুকের উপর দিয়ে এত অমঙ্গল উপদ্রব আর অশান্তির রক্ত-সাইক্লোন বয়ে যেত না। অতএব তোমার এই ধূমকেতু দেখে আমাদের নতুন করে ভয় পাবার তো কিছু দেখি না। যাঁর আদেশে আজ প্রলয় ধূমকেতুর উদয় আর তারই জন্যে অমঙ্গল-শঙ্কায় তাবৎ ভারতবাসী বিত্রস্ত, পথভ্রান্ত, লক্ষ্যভ্রষ্ট আর কেন্দ্রচ্যুত হয়ে ঘুরে মরছে- আমার বিশ্বাস নিশ্চয় এই অমঙ্গল অন্ধকারের পিছনে মঙ্গলময় ভগবান তাঁর অভয় হস্তে মঙ্গলপ্রদীপ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। যখন সকল দেশবাসী আমার সেই মঙ্গল-আলোকের জন্য কেঁদে উঠবে, সকলে এক হয়ে সমস্বরে সেই আলোক-শিখাকে স্মরণ করবে, তখনই সত্য সুন্দর শিব সমস্ত অমঙ্গল আঁধার অপসারিত করে তাঁর মঙ্গল-প্রদীপ নিয়ে ধরায় ধরা দিতে আসবেন। চিরদিন দুঃখের পর সুখ, আাঁধারের পর আলো, কান্নার পর হাসি, বিরহের পর মিলন অনির্বচনীয় আনন্দ দান করে থাকে; এর একটা বাদ দিলে অন্যটার তীব্রতা ও উল্লাস উপলব্ধি করা যায় না। তাই, আমরা মায়ের জাত, তোমার ধূমকেতুর রুদ্র জ্বালা দেখে অমঙ্গল-আশঙ্কায় কেঁপে উঠব না। কেন না, মঙ্গল-দীপ সাজাবার ভার আমাদেরই হাতে। ধূমকেতু ভগবানের বিদ্রাহী ছেলে।। মা বিদ্রোহী দুরন্ত ছেলেকে শান্ত করবার শক্তি রাখে। অতএব ভয় নেই; তাই বলে অহংকারও কোরো না। কর্ম করে যাও, তোমার যাত্রা শুরু কর, বল মাভৈঃ। তিমিররাত্রির অবসানে যখন অরুণ রাগে তরুণ সূর্য্যের উদয় হবে, তখন তোমার এই ধূমকেতু আলোর সেতু হয়ে আঁধারের পারে নিয়ে যাবে। প্রার্থনা করি যতদিন এই আগুনের শিখা এই ধূমকেতুর প্রয়োজন, ততদিন এ অমঙ্গল মঙ্গলমতে নিরাপদে থাক্।

                                                                                               আশীর্বাদিকা

                                                                                          শ্রীবিরজাসুন্দরী দেবী

শরৎচন্দ্র পণ্ডিত যিনি দাদাঠাকুর নামে পরিচিত, তাঁর জঙ্গিপুর সংবাদে লিখলেন:

ধূমকেতুর প্রতি বিষহীন ঢোঁড়ার অযাচিত আশীর্বাদ

ধূমকেতুতে সওয়ার হয়ে                       আসরে আজ নামল কাজী

                        আয় চলে ভাই কাজের কাজী!

তোর      সাচ্চা কথার আচ্ছা দাওয়াই      পাবে যারা বেইমান পাজি

                        আয় চলে ভাই কাজের কাজী!

হাবিলদার আজ আবিলতার                  কলজে বিঁধে এপার ওপার

চালিয়ে বুলির গোলাগুলি                       জাহির কর তোর গোলন্দাজি।

                          আয় চলে ভাই কাজের কাজী!

কোনটা বদি কোনটা নেকি                    কোনটা খাঁটি কোনটা মেকি

                      দেশের লোকের দেখাদেখি রে।

‘নজর-উলের' তীক্ষ্ম নজর                    খাক করে দিক দাগাবাজি

                       আয় চলে ভাই কাজের কাজী!

ধরিয়ে দে সব অত্যাচারী                      পাকড়া যত হত্যাকারী

                       জোচ্চোরদের দোকানদারি রে।

চোখে আঙুল দিয়ে লোকের                     দেখিয়ে দে সব ধাপ্পাবাজি

                      আয় চলে ভাই কাজের কাজী!

জানিস কলির বামুন মোরা                     কেউটে নই যে আস্ত ঢোঁড়া

                      কাজেই আশিস ফলে থোড়া রে।

মোদের হরি তোদের খোদা                    তোর উপরে হউন রাজি

                      আয় চলে ভাই কাজের কাজী।

২৬শে ভাদ্র,১৩২৯(১২ই সেপ্টেম্বর, ১৯২২) ধূমকেতুর ৮ম সংখ্যায় প্রকাশিত ফজলুল হক সেলবর্সী-এর লেখা:

                                                                                                                             ৩৩, বেনেপুকুর রোড,

                                                                                                                                     কলিকাতা

ভাই কাজী সাহেব,

স্বয়ং বিশ্বকবি যাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ, তাঁকে আমার মতো লোকের ভক্তি নিবেদন করিতে যাওয়াও ধৃষ্টতা।সেই পরম পুরুষকে ধন্যবাদ; আজ মুসলমান বাংলার একটি দৈন্য দূর হইয়াছে। আজ সাহিত্যের পুণ্য আঙ্গিনায় আপনার সমাজ দাঁড়াইবার মত যে স্থানটি পাইয়াছে, তাহা আপনারই দয়ায়। আপনি আমার ভ্রাতা, আপনাকে তোষামদ করিব না। চির অন্ধকারের জীব আমরা, আঁধারে আলোর স্বপ্ন দেথাই আমাদের কাজ। দুর্দিনের 'রাতের ভালে' প্রতিভার আলোক দেখিয়া প্রাণে যে আনন্দ লাভ করিয়াছি, তাহাই একটু ব্যক্ত না করিয়া পারিলাম না।

                                                                                          ফজলুল হক সেলবর্সী

২৯শে ভাদ্র,১৩২৯ সালে (১৫ই সেপ্টেম্বর,১৯২২) ধূমকেতুর নবম সংখ্যায় কবিশেখর কালিদাস রায়ের কাব্যাশিস প্রকিশিত হয়

ভাই নজরুল

তেমার ধূমকেতুকে সাদর আহ্বান করি-

"জাগ ধূমকেতু ধ্বংসের হেতু,

স্বাগত অশিব মহোৎসব,

শিবের শ্মশান, জীবের মশান

স্বাগত অশিব উপ্লব।"

সত্যের জয় হোক। চিত্তের জয় হোক

নিত্যের জয় হোক।

অসত্যের ক্ষয় হোক।

ইতি- তোমার কালী দাদা-

পুনশ্চ- তোমার লেখা পড়ছি আর অবাক হচ্ছি- তুমি নিজেই ধূমকেতু। তোমার লেখনীতে পশুপতের শক্তি।

                                                                             ইতি আশীর্ব্বাদক

                                                                             শ্রী কালিদাস রায়

২রা আশ্বিন,১৩২৯ (১৯শে সেপ্টেম্বর,১৯২২) ধূমকেতুর ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ধূমকেতু সম্পর্কে শ্রী কুমুদরঞ্জন মল্লিক-এর অনুভূতি:

ও কে এলো আলোরথে

ধূমকেতু সারথি,

অঞ্জলি আগুনের

দিয়ে করে আরতি?

তারা সে বীণার মাঝে

বাজের গমক বাজে,

অনলের মাঝে রাজে

সীতা সম ভারতী।

ধূমকেতুর ঐ সংখ্যাতে মিসেস এম. রহমান লিখেছিলেন:

 

                                                                                                                  ৭২ মেছুয়াবাজার স্ট্রীট

শ্রদ্ধাস্পদ 'ধূমকেতু' সারথি!

অনেকদিন আগে আমি আপনাকে খেতাব দিয়াছিলাম 'বাঁধন ছেঁড়া', আজ দিলাম 'সত্য সাধক'। সত্যের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করুন ইহাই প্রর্থনা।

                                                                              মিসেস এম. রহমান

 

তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্র পত্রিকায় ধূমকেতু সম্পর্কে লেখা প্রকাশিত হয়:

বাসন্তী ২রা ভাদ্র,১৩২৯

আলোচনা

আমরা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত 'ধূমকেতু' উপহার পাইয়াছি। ধূমকেতু জাতির ও দেশের বাধা বিঘ্ন জড়তা ধ্বংস করিয়া দেশের নূতন প্রাণের উৎস আনয়ন করুক আমরা এই প্রার্থনা করি। চারণ কবির দেশ- মাতান সঙ্গীত ধূমকেতুর আড়ালে উজ্জ্বল হইয়া ফুটিয়া উঠুক।

পরিদর্শক,১০ই ভাদ্র,১৩২৯

...কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার সাহিত্যে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন। তাঁহার কলমের জোর আছে, তাঁহার কবিতায় তুবড়ি ছুটে-কথায় আগুন জ্বলে-ভাবে বান ডাকে-ভাষায় ঝলক দেয়। তাঁহার লেখনী যেন কশাঘাত খাইয়া বল্গাহীন উন্মত্ত অশ্বের মত ছুটিয়া চলে। ধূমকেতুর পুচ্ছাঘাতে অনেকেরই চমক ভাঙ্গিবে,নেশা অনেকেরই টুটিবে। কাজেই অত্যাচারী সাবধান হউন।

দৈনিক বসুমতী,১২ই ভাদ্র,১৩২৯

বাঙ্গালার নবীন কবি, সুলেখক, সুগায়ক, স্নেহাস্পদ কাজী নজরুল ইসলাম ভায়া ধূমকেতুকে মাঙ্গলিক বেশে সাজাইয়া বাহির করিয়াছেন, ইহাতে ভয়ের কিছুই নাই, কেবল নামটায় যা কিছু। আশা করি নজরুল ইসলাম সাধনায় সিদ্ধি লাভ করিবেন।

Amrita Bazar Patrika, August 30,1922

"...The editor has already made his mark as a powerful poet and some of his recent poems, particularly the 'Bidrohi' are among the most well known in the Bengali literature. The articles from the editorial pen in the 'Dhumketu' fully sustain the reputation of the soldier poet and the collections he has been able to make are in tune with the fire and energy of his own writings. There is something novel, something enthralling in the new venture. We hope the 'Dhumketu' Or comet will not simply be an emblem of destruction in the hands of the soldier poet but will create something that is beautiful, something that is abiding and holy."

তথ্য ঋণ:

১. নজরুলের ধূমকেতু, সংগ্রহ ও সম্পাদনা: সেলিনা বাহার জামান

২. সমকালে নজরুল ইসলাম, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম

৩. নজরুল তারিখ অভিধান, মাহবুবুল হক

৪. নজরুল জীবনী, অরুণকুমার বসু

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এবং সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;