কবি আল মুজাহিদী ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়েছেন উভয় বাংলায়



সাঈদ চৌধুরী
কবি আল মুজাহিদী

কবি আল মুজাহিদী

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা ভাষায় আমার পছন্দের লেখকদের একজন কবি আল মুজাহিদী। তিনি একজন বিশুদ্ধ লেখক ও গবেষক। শিল্প-সাহিত্যের সর্বাঙ্গ স্পর্শ করেছেন সমান দক্ষতায়। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ। তার লেখা আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। তিন দশকেরও অধিক কাল তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন পরে সহকারী সম্পাদক হলেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হয়েছেন।

দশক বিবেচনায় আল মুজাহিদী ষাটের দশকের কবি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও কথাশিল্পী আল মাহমুদের পর কবি আল মুজাহিদী ও কবি আসাদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। এই সৌভাগ্য কবি শামসুর রহমান সহ সমকালীন অনেকের হয়নি।

আল মুজাহিদী সমাজ বিকাশে সামনের কাতারের সৈনিক। কাল ও সমাজ সচেতন বিশ্ববীক্ষণের কবি। স্বভূমি, স্বদেশ এই সমতটের লোকায়িত ঐতিহ্য বন্দিশে আত্মমগ্ন তিনি। ৬০ এর দশকে ছিলেন ছাত্র রাজনীতির অন্যতম পুরোধা পুরুষ। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে রাজবন্দী হয়েছেন। সশস্ত্র এবং বুদ্ধিভিত্তিক সংগ্রাম করেছেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাজ্ঞ তাত্ত্বিক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়।

আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা, স্বাধীনতা ও মানবিকতা আল মুজাহিদীর কবিতায় নানা ভাবে উচ্চারিত, উচ্চকিত হয়েছে। প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল এই কবির চিত্রকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা স্বতন্ত্র ধারায় বহমান। বিস্ময়কর জাগরণের, আবিস্কারের, উদ্ভাবনের জন্য তিনি অগ্রসর পাঠকের হৃদয় ছুয়েছেন।

কবি আল মুজাহিদী

সমাজমনস্ক ও স্বদেশ-আত্মার মানুষ আল মুজাহিদী লেখক হিসেবে ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়েছেন উভয় বাংলায়। অসম্ভব শক্তিশালি তার কল্পনার জগৎ। পৃথিবীর শুভতর, অধুনাতন বার্তা বয়ে বেড়ান তিনি। মানব সম্প্রীতির সমুজ্জ্বল সম্ভাষে স্ফুর্ত। যুদ্ধ বিরোধী, ভালোবাসা, জীবন ও মৃত্তিকা তার কবিতার মূল বিষয়। নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেরে ক্রমবিবর্তন ধারায় এক উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন। কলকাতায় কবি-সাহিত্যিকদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা আমি প্রগাঢ় ভাবে লক্ষ্য করেছি। এমনকি বিলেতেও পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মধ্যে তার বইয়ের কদর রয়েছে।

কবি আল মুজাহিদী সর্ব অঙ্গে কবি। তার শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের প্রাগ্রসর পাঠকের কাছে আনন্দের সংবাদ। মৃত্তিকা এবং মৃত্তিকার মর্মন্তলে চলে যান সাবধানী সন্ধানীর মতো। কবিতার পঙ্ক্তি মালা যেন তার জীবনেরই অঙ্গ। ’হেমলকের পেয়ালা’, ’ধ্রুপদ ও টেরাকোটা’, ’দূত পারাবত’, ’মৃত্তিকা অতিমৃত্তিকা’, ’সমুদ্র মেখলা’, ’কালের বন্দিশে’, ’কাঁদো হিরোশিমা কাঁদো নাগাসাকি’, ’যুদ্ধ নাস্তি’, ’ঈভের হ্যামলেট’, ’সহস্র দিবস সহস্র রজনী’ ’যুদ্ধ বিরোধী কবিতা ও অন্যন্য’ ইত্যাদি গ্রন্থের মাধ্যমে স্পর্শ করেছেন উজ্জ্বল কাব্য রবি। ’ইস্টিশানে হুইসেল’, ’সোনার মাটি রূপোর মাটি’, ’পালকি চলে দুলকি তালে’ কিশোর কবিতার পাশাপাশি ’হালুম হুলুম’ ও ’তালপাতার সেপাই’ ছড়ার বই পাঠকমন জয় করেছে।

কবি আল মুজাহিদী

‘অন্ধকার হয়ে গেল পৃথিবীটা‘ কবিতাটি আল মুজাহিদীর সেই শক্তিশালী জ্যোতির্ময় কাব্যসত্তার প্রতিনিধিত্ব করছে। ’অন্ধকার হয়ে গেলো/ অন্ধকার হয়ে গেলো পৃথিবীটা/ এই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে গেলো মানুষের মুখ/ তবুও উন্মুখ আলোকণা জন্ম নেয়- এই মৃত ভস্মাধারে।/ আগুনের ঝাঁজরা পোড়া মানুষের করোটি-রা/ পড়ে থাকে প্রদোষের নিচে/ এখনো দিগন্ত লাল/ বেলাভূমে ছায়া নামে/ ‘নিসিকি’ সী-বীচে।/ হিরোশিমা কাঁপে। কেঁপে ওঠে/ বারবার। সভ্যতাও ফ্যালে অশ্রুজল;/ নায়াগ্রার প্রপাতের/ চেয়ে, আহা! আরো বেশি অবিশ্রান্ত/ এ শোক প্রবাহি!/ তবু থেমে নেই গান-/ মানুষের পদপাতে/ প্রগতির পথের নির্মাণ;/ তুমি কি আসবে কাল?/ হেসে ক্ষণকাল?/ ভাঙবে এ অন্তরাল?/ দিনের প্রথম আলো হাতে/ দাঁড়াবে উঠোনে/ ধ্বংস্তূপ পড়ে থাক দূরে, বহুদূরে/ আলোকণা আছে আরও এই অন্তপুরে/ প্রিয় প্রকৃতিকা,/ কোথাও যেও না আর ‘অসুর-সংঘাতে’।/ আমি জানি, পৃথিবীতে/ প্রতিদিন সূর্যমুখী ফোটে/ তোমার সূর্যও আশায় আশায়/ জাগে। শুধু জেগে ওঠে। ’

‘আগুন নেভেনি, আগুন নেভেনা ‘ আল মুজাহিদীর হৃদয়স্পর্শী কালজয়ী কবিতা

‘আগুন নেভেনি, আগুন নেভেনা ‘ আল মুজাহিদীর হৃদয়স্পর্শী কালজয়ী কবিতা। ’শান্তিবাদী বললেন, ‘শান্তিই যুদ্ধ থামাতে পারে।’/ যুদ্ধংদেহী দানব বললে, ‘শান্তি নিস্ক্রিয় নিদানপত্র।’/ কবি বললেন, ‘শান্তি একটা ইমেজ।’/ তুমি বললে, ‘শান্তি একটি প্রতিমা।’/ আমরা সকলে ভাঙতে ও গড়তে পারি।/ শিশুরা বললে, ‘তোমরা আগুন নেভাও,/ আমরা ভুল করে আগুনে হাত দিতে পারি।’/ কতিপয় কাপালিক ভীষণ দ্রংষ্টাঘাত করলো/ শিশুটির কোমল শরীরে।/ ঘরে-ঘরে, ভেতর-বাইরে, পৃথিবীর প্রতিটি উনুনে/ হিরোশিমায়, ফিলিস্তিন, কসোভায় আগুন জ্বলছে। / আগুন নেভেনি ব্যাবিলনে।/ আগুন নেভেনা। / আণবিক চুল্লি জ্বলে দিনরাত / ধিকিধিকি।’

’নাগাসাকি সভ্যতার শেষকৃত্যে’ আল মুজাহিদী অসাধারণ সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন। ‘আমরা কি সূর্যকে আবার বলতে পারবো, ‘আমরা এখনও সেই নরকের জ্বলন্ত অঙ্গারে জেগে আছি।’/ মানুষের মড়ার খুলিতে ধ্বংসের আগুন/ আমাদের করোটিতে দজ্জালের খড়গ তুলে ধরা/ আমাদের হৃৎপিণ্ডে দানব বাজাচ্ছে যুদ্ধের দামামা/ তুমি কিন্তু এখনও জ্বলছো মাথার উপর আগের মতোই/ সভ্যতার শেষকৃত্যে তুমি এখনও জ্বলছো।/ প্রেয়সীর পোড়ানো শরীরে কিংবা স্তনবৃন্তে ঝরে পড়েছিলো/ তোমার শেষ রশ্মি। আমি শুধু তোমার আলোর চিহ্ন থেকে চিনে নিতে/ পেরেছিলাম আমার প্রিয়তমার আদল।

সূর্য, আমরা কি তোমাকে আবার বলতে পারবো, ‘আমরা এখনও/ সেই নরকের জ্বলন্ত অঙ্গারে জেগে আছি।’/ আমাদের নির্বাক করোটি/ আমাদের অসহায় হৃৎপিণ্ড/ আমাদের নির্বাসিত স্বাধীনতা/ পৃথিবীর ঘরে ঘরে নিসর্গের লোকালয়ে/ একেকটি মমির মতো জেগে আছে। নাগাসাকি,/তুমি আমার আত্মার ফলক চিহ্নিত সেনোটাফ/ আমাদের শোক আমাদের দুঃখ জেগে থাকে এখানেই/ শোকের মর্মরে নির্মিত এ ম্যুসলিয়াম।/ পৃথিবী, আজ দেখছি তোমার নিজের মঙ্গল চেতনায় তুমি মগ্ন/ আর আমি? প্রেয়সীর জন্য বিলাপ করছি/ আর আমার পিতৃপুরুষের ফসিলের জন্য।/ নাগাসাকি, তুমি বাংলার মৃত্তিকা থেকে কুড়িয়ে নাও/ শতাব্দীর ঝরাপাতা/ এলিজিগুচ্ছ।’

কবি আল মুজাহিদী

সাম্য ও মানবতার জয়গানে বিদ্রোহী কবি নজরুলের চেতনায় আল মুজাহিদী নতুন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। যুদ্ধ বিগ্রহের বিরুদ্ধে তিনি এবং আধুনিক বাংলা কবিতার আরেক দিকপাল শহীদ কাদরী ছিলেন বজ্রকন্ঠ। আল মুজাহিদী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রক্তঝরা সংঘাতের সহৃদয় ব্যাখ্যাদাতাও। তার কবিতা পাঠকের মানস দিগন্তে নতুন আলোর উদ্ভাস। মানবপ্রেমীদের হৃদয়ে তার এই পঙিক্তিমালা বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

যুদ্ধ বিরোধী কবিতা প্রসঙ্গে কবি আল মুজাহিদী বলেন, হিরোশিমা নাগাসাকি এই শব্দযুগল আমার কৈশোর স্মৃতির অন্তর্গত। ষাটের দশকের ফেরারি সময় থেকেই বিশ্বযুদ্ধের বর্বরোচিত ধ্বংস ও রক্তযজ্ঞ সম্পর্কে আমি সচেতন হয়ে উঠতে থাকি। ঐ সময় রাজনৈতিক কারাবাসের মূহুর্তে ‘কাঁদো হিরোশিমা কাঁদো নাগাসাকি’ কবিতাটি রচনা করি। কারামুক্তির পর যুদ্ধের ইমেজের ওপর আরও কবিতা লিখতে শুরু করি। এমনি করে অনেক ক'টা বছরে অনেক ক'টা কবিতা লেখা হয়ে গেলো। ঐ যে বলছিলাম, রাজনৈতিক ফেরারি সময়ে লেখাগুলো খোয়া যায়। আবারও প্রচেষ্টা করি একটি পূর্ণাঙ্গ পান্ডুলিপি তৈরি করতে। উনিশ শ’ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী আমার টাঙ্গাইলের বাসভবন তছনছ করে দেয়।

আর পান্ডুলিপিটি আবার পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। ধ্বংস্তুপ থেকে আর কোনো কিছুই উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি তখন। এ সহস্রাব্দের শুরুতেই পান্ডুলিপিটির কাজ শেষ করতে সমর্থ হই। আগেই বলেছি, হিরোশিমা নাগাসাকি আমার মানসপটভূমিতে আলোড়ন তোলে। জীবনের প্রায় প্রতি পদক্ষেপেই। বাইরের বস্তুবিশ্বের থেকে কবির জগত কি আলাদা? কখনোই নয়। চেতনা, অবচেতনা নিয়েই কবির জগত। আত্মার অনন্ত নির্দেশেই কবির জীবনযাত্রা। কবি এই পৃথিবীর ভিতরই আরেক পৃথিবী নির্মাণ করেন। নান্দনিক, সুন্দরতর, শুভতর পৃথিবীলোক। কবি সে উজ্জ্বল প্রজ্বল পটদিগন্তলোকের বাসিন্দা করতে চান পৃথিবীবাসিদেরও। প্রতিটি মানুষই যেন নিজ নিজ পৃথিবীর সৃষ্টির স্রষ্টা। আর সেই সঙ্গে এর বাসিন্দাও।

জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, এই মনের ও মহাপ্রাণনের পৃথিবীর অস্তিত্ব তাদের কাব্যের ভিতর। আমরা বাস্তব বিশ্ব ও সমাজ পরিসর থেকে বিমুখ হতে পারিনা। বস্তুপুঞ্জ ও সময়ের মুখোমুখি আমরা সকলেই নিরন্তর। পৃথিবীর অন্ধকার যেমন আচ্ছন্ন করে, পৃথিবীর আলো আভা, উজ্জ্বলতাও তেমনি উচ্চকিত করে আমাদের। দৈশিক ও বৈশ্বিক অবক্ষয়, ধ্বংস, বিনাশ আক্রান্ত করে। এ গ্রহে, এ মর্ত্যজীবনে সুন্দর ও শুভতাই তো প্রার্থিত, আকাঙ্ক্ষিত।

পৃথিবীর ঘনঘটাঘোর অন্ধকার ও অশুভ অসুরের বিরোধাভাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়- অখণ্ড, অবিভাজ্য মানবতার রক্ষা করার তাগিদে। অসমাপ্ত সুদীর্ঘ বর্বরতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হয়। দাঁড়াতেই হবে শান্তি, সভ্যতা ও প্রগতির নামে। অনিঃশেষ উজ্জ্বল মানবতা ও মানবিকতার স্পন্দন তুলতে হবে। পৃথিবীর মানুষের শিরায় শিরায়, অস্থি মজ্জায়, রক্ত মাংসে। এই অখণ্ড অনুভব থেকেই আমার এই বিনীত প্রয়াস। হিরোশিমা নাগাসাকি ধ্বংসের নৃশংসতায় এ আমার প্রতিবাদ।

সাম্রাজ্যবাদীদের বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা ও বর্বরতার বিবর কোটর থেকে মনুষ্যত্বকে রক্ষা করার অনুভব মাত্র এটা। এ আমার কাব্যিক অনুভূতি ও অভিব্যক্তি। পারমানবিক বোমা ফাটানোর বিরুদ্ধে অসন্তোষবহ্নি। ভিতরের কৃষ্ণাগ্নি বলা যেতে পারে। পারমাণবিক, আণবিক অনিশ্চয়তার বিপরীত মেরুতে আমরা দাঁড়াবো চিরদিন, চিরকাল। হিরোশিমার অন্ধকার নাগাসাকির অভ্রভেদী আর্তির পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনো হয়না। পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর স্থায়ী শান্তি ও অবস্থানের আকাঙ্খায় আবার প্রাণিত হবো আমরা। যুদ্ধের বর্বরতা বন্ধ করতে অটল হিমাচল হবো আমরা। আমরা মা শিশু সহোদর সহোদররা স্বপ্ন ও সান্নিধ্য অনুভব করবো। মনুষ্যত্বের অমরতার জয়গান গাইবো। একত্রে, একই কণ্ঠে।

আল মুজাহিদী একজন সফল কথাসাহিত্যিক। ’প্রপঞ্চের পাখ’ ও ’বাতাবরণ’ গল্প গ্রন্থে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। ‘মানব বসতি’, ’সনেট’, ’আর্কিওপটেরিক্স’, ’সোনাটা স্যোনাটা ও সিলুএট’ এবং ’কালমিতি’ উপন্যাস লিখে কথা সাহিত্যের সব পথই করেছেন মসৃণ। ‘লালবাড়ির হরিণ’ আর টু’পুনের ডায়েরি’র মত কিশোর উপন্যাস নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছে। ’কালের করোটি’, ’মেরুমৈত্রী’, ’যুগান্তরের যাত্রী’, ’নৈতিকতা ও নান্দনিকতা’ প্রবন্ধ গ্রন্থের মাধ্যমে পাঠককে অনায়াসে চেতনার গভীরে টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

যৌবন ও পৌরুষ শাসিত অভিজ্ঞতার কথা সমুদ্র শঙ্খের মত বেজে ওঠে আল মুজাহিদীর কাব্যে এবং গদ্য রচনার পরতে পরতে। ’নৈতিকতা ও নান্দনিকতা’ প্রবন্ধ গন্থে সেই স্বাক্ষর ভাস্বর। বাংলা গদ্য সাহিত্যে এসবই অনন্য সংযোজন।

কবি ও কথাসাহিত্যিক আল মুজাহিদী সাহিত্যের সব শাখাতেই অঘোষিত সম্রাট। সব্যসাচী লেখক হিসেবে সময়কে ধারণ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে লিখেছেন। দলবাজি তার লেখায় প্রাধান্য পায়নি কখনো। ইতিহাস-নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। বরং বোধের জগতে নাড়া দিয়েছে।

কবি আল মুজাহিদী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তার দীপ্ত তারুণ্যেই। ১৯৬৯ সালের প্রাদেশিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগকে বাংলা ছাত্রলীগে রূপান্তরিত করেন। বাংলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব আল মুজাহিদী আইয়ুবের কালো দশকে কারাবরণ করেন বহুবার। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

ভ্রমণপ্রিয় আল মুজাহিদী পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছেন। তিনি যুদ্ধ বিরোধী শান্তি সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। যদিও দেশভ্রমণও তার প্রিয় বিষয়। বহু ভাষায় অভিজ্ঞ আল মুজাহিদীর ব্যক্তিগত শখ বিভিন্ন ভাষা শেখা। উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, নেপালি এসব ভাষা তিনি চর্চা করেন নিয়মিত।

কবি আল মুজাহিদী জাতীয়ভাবে বহু পুরষ্কার অর্জন করেছেন। ২০০৩ সালে একুশে পদক ও ২০১৮ সালে বাসাসপ কাব্যরত্ন পদক লাভ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন, জীবনানন্দ দাশ একাডেমী পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন একাডেমী পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার, শেরে বাংলা সংসদ পুরস্কার, জয়বাংলা সাহিত্য পুরস্কার।

কবি আল মুজাহিদী ১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর নারুচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল হালিম জামালী ও মাতা সাখিনা খান জামালী।

আল মুজাহিদী ১৯৭৩ সালের ২২ জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী পলিন পারভীন। পুত্র শাবিব জামালী আল মুজাহিদী ও কন্যা মারিয়ামা জীবান আল মুজাহিদীকে নিয়ে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন।

ছাত্র জীবনে কবি আল মুজাহিদী নারুচি ফ্রি বোর্ড প্রাইমারী স্কুলে পড়েছেন। তারপর টাংগাইল বিন্দুবাসিনী গভর্নমেন্ট হাই স্কুল ও সিরাজগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাইস্কুলে। কলেজ জীবনে করটিয়া সাদৎ কলেজ, ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। সমাজবিজ্ঞান এবং বাংলা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কবি আল মুজাহিদী বর্তমানে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত দৈনিক আ্যডর পত্রিকার আঞ্চলিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারী কবিদের মতামতের ভিত্তিতে কবিতা বাংলাদেশের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন।

কবি আল মুজাহিদী লিখে যাচ্ছেন অবিরাম। তার ভাষায়, আমি লিখছি আর ভাবছি। পৃথিবীজুড়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এতো নির্যাতন কেন? কী তাদের অপরাধ? আমি লিখছি আর জেগে উঠছি বারবার। হে নবীন, জেগে উঠার সময় এসেছে, নাও হাতে কলম, লিখো মানবতার গান।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সময় সম্পাদক। কবি ও কথা সাহিত্যিক।

   

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;