কল্যাণী কাজীর 'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ'



সোমঋতা মল্লিক
কল্যাণী কাজীর 'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ'

কল্যাণী কাজীর 'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ'

  • Font increase
  • Font Decrease

"আমরা লিখব, পড়ব, শিখব

অজানাকে জানব,

অজ্ঞানতা দূর করে দিয়ে

জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালবো।।"

খুব ছোটবেলায় শেখা এই গান। বয়স বাড়ার সাথে-সাথে গানের কথাগুলো এক-এক রকম ভাবে ভাবায়। সত্যিই, অজ্ঞানতা দূর করার জন্য বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ প্রয়োজনে যেমন কিছু বই পড়া হয়, ঠিক তেমনই শুধুমাত্র ভালোলাগা থেকেই কিছু বই -এর পাতা বার-বার ওল্টাতে ইচ্ছে করে।

'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ’ তেমনই একটি বই। একজন নজরুল প্রেমী হিসেবে এই বই সংগ্রহ করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। হঠাৎই সেই সুযোগ এলো। কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী, যিনি স্বয়ং এই বইটির লেখক, উপহার দিলেন আমাকে। বই-এর শুরুতেই লিখে দিলেন - 'আদরের সোমঋতাকে...'।

এ এক পরম পাওয়া। বইটি হাতে পেয়েই পড়া শুরু করি।

প্রথমে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি বইটির প্রচ্ছদের দিকে। অসাধারণ ছবি কাজী অনিরুদ্ধর। সাদা-কালো প্রচ্ছদ যেন সত্যিই আমাকে সেই সময়ে নিয়ে যায়। এবার আসি উৎসর্গপত্রে–

"যিনি আমার মনে ‘অনির্বাণ’ প্রেম দীপশিখা জ্বেলে সত্য পথে চলার শিক্ষা দিয়েছেন, যাঁর ভালবাসার জোরে আমি সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে পেরেছি–সেই ‘অরিন্দম’ কাজী অনিরুদ্ধ – কে

‘অনিন্দিতা’ কল্যাণীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।"

চমৎকার লেখা – একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, প্রকৃতঅর্থে এই বই কাজী অনিরুদ্ধর প্রতি তাঁর পরিবারের এক বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। বইটির প্রারম্ভে, ‘আমার কৈফিয়ৎ'-এ কল্যাণী কাজী  লিখেছেন–"আমার বড় ছেলে অনির্বাণ দাদু আর বাবার যা-কিছু যেখানে পায় সযত্নে সঞ্চয় করে। তাতে তার দারুণ উত্তেজনা। ও যদি ওর বাবার চিঠিগুলো যত্ন করে না রাখত, তবে আজ আমি হয়তো এই পরিকল্পনা নিতেই পারতাম না। তার এবং আমার কন্যা অনিন্দিতার উৎসাহ এ লেখার পেছনে কম নয়। এছাড়া শ্রী সুজিত নাথের রচনাটি দিতে না পারলে 'অনিরুদ্ধ স্মৃতিকথা' অসম্পূর্ণ থাকত। দাদা ভি. বালসারা, বটুক নন্দী, রজত নন্দী, দীপঙ্কর সেনগুপ্ত, কিশোর সেন, প্রনব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমীর খাসনবীশ-তাঁদের স্মৃতিচারণার ভিতর দিয়ে মানুষ, শিল্পী অনিরুদ্ধর যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা সত্যিই আন্তরিক। কাজী অরিন্দম বাবার যোগ্য উত্তরসূরী। তার লেখার মধ্যেও পিতা অনিরুদ্ধর পরিচয় পাওয়া যাবে। সব্যসাচীর ডায়রিটা পেতে শ্রদ্ধেয় অমিতাভ চৌধুরী এবং কমল চৌধুরীর সাহায্যের জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এই পর্যায়ে মানুষ অনিরুদ্ধ, প্রেমিক অনিরুদ্ধ, পুত্র অনিরুদ্ধ, শিল্পী অনিরুদ্ধর কিছু পরিচয় তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি তারই লেখা চিঠির ভেতর দিয়ে।”

কাজী অনিরুদ্ধ

এভাবেই একান্ত ব্যক্তিগত চিঠিপত্র এবং গুণী মানুষদের স্মৃতিচারণায় বইটির পাতায় পাতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন কাজী অনিরুদ্ধ। খুবই জনপ্রিয় নজরুল সংগীত ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’–এর প্রথম লাইন কে আশ্রয় করে লেখার নামকরণ করা হয়েছে।

শুরুতে উঠে এসেছে কল্যাণী কাজীর বাল্য জীবনের কথা। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে রাঁচিতে বেড়াতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবেই কাজী অনিরুদ্ধর সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ। কল্যাণী কাজীর স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে সেই দিনগুলি- “স্টেশন-এ সপ্রতিভভাবে আমাদের কাছে এসে তিনি আবার আমায় একটা মোটা খাম দিয়ে বললেন – ‘আপনার বাকি গানগুলো এতে আছে’ বোকার মত হেসে বললাম ‘ধন্যবাদ’। খামটা তাড়াতাড়ি হাত ব্যাগে রেখে দিলাম। কেননা ট্রেনে ওঠার আগে গান লেখা যে খাম তিনি আমায় দিয়েছিলেন, তা পড়ে আমার প্রাণ যাবার উপক্রম হয়েছিল। হ্যাঁ, তাতে লেখা ছিল তিনি গভীরভাবে আমায় ভালোবেসে ফেলেছেন। আমার মত একজন সাধারণ মেয়ের কাছে এ খবর ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত। তাই প্রথমে বিশ্বাস করতে মন চাইছিল না। একে শিল্পীর নিছক একটা খেয়াল বলেই মনে হয়েছিল। তাছাড়া রক্ষণশীল পরিবারের কঠোর অনুশাসন উপেক্ষা করে, আমি এ ধরনের সম্পর্ককে কতটা পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারবো, সে বিষয়ে মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। তাই প্রথম দর্শনে ভালবাসলেও তাঁকে সযত্নে এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম তিনি রূপে, গুনে, বুদ্ধি-বিবেচনায় আমার চেয়ে অনেক বড়। কাছাকাছি হলেই তাঁর কথায় সংঘর্ষ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তাঁর সাথে পরিচয়ের মধুর স্মৃতিটা মনের কোণে লুকিয়ে রেখে বন্ধুত্ব পাতাতে চেয়েছিলাম।

গানের চর্চায় কাজী অনিরুদ্ধ

তিনি তাতেও রাজী হননি।তিনি এটাকে আমার অহংকার মনে করে একবার লিখলেন –‘Pearl S.Buck'- এর  This Proud heart পড়ছিলাম। ওর মধ্যে একজায়গায় আছে- ‘At first I want to break your pride and then fall in love with you' খুব সুন্দর লাগল। সত্যি কথা। হঠাৎ আচমকাই তাঁর বন্ধ মনের দরজা অকপটে আমার সামনে খুলে দিয়ে আমার দ্বিধাগ্রস্ত, অর্ধচেতন মনকে চমক দিয়ে জাগিয়ে দিলেন। তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেললাম। মনের দিক দিয়ে অসহায় মানুষটার কাছে থেকে তাঁর সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দেবার জন্যে মন-প্রাণ উন্মুখ হয়ে থাকতো।

কিন্তু সে সুযোগ পেলাম অনেক পরে। অনিরুদ্ধ জোর করে আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে চাইলে কোন শক্তিই আমাকে আটকাতে পারত না। কিন্তু তিনি আমায় যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে কাছে পেতে চেয়েছিলেন, এখানেই তিনি অন্যের থেকে আলাদা, অনেক বড় মাপের মানুষ।”

পরিবারের সঙ্গে কাজী অনিরুদ্ধ

অনেক বাধা পেরিয়ে অবশেষে এই প্রেম পরিণতি পায়। এই সময় কল্যাণী কাজীকে লেখা কাজী অনিরুদ্ধর বেশ কয়েকটি চিঠি বইটিতে স্থান পেয়েছে, সেগুলি পড়লে সহজেই অনুমান করা যায় যে তখনকার দিনে দুই পৃথক ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ভালোবাসার কি সুদৃঢ়বন্ধন থাকলে তবেই এই প্রতিকূল পরিবেশকে অতিক্রম করা যায়।

অবশেষে এলো সেই শুভ দিন- কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ হয়ে কাজী পরিবারে পদার্পণ করলেন- কাজী অনিরুদ্ধর। কলকাতার ১৬ নম্বর, রাজেন্দ্রলাল স্ট্রিটের বাড়িতে শুরু হলো তাঁদের বিবাহিত জীবন।

“ নিনি আমার মায়ের সাথে দেখা করে বলেছিলেন –যে, আমার পড়াশোনা শেষ হলে (এম.এ. পাশ করার পর) তবেই কোনও সিদ্ধান্তে আসবে। কিন্তু বাবা উঠে পড়ে লাগলেন আমায় অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য। ওদিকে দুশ্চিন্তায় মামণি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তখন বাধ্য হয়েই ১৮ বছর পূর্ণ হতেই বাড়ির অমতে আমরা রেজিস্ট্রি করে বিয়েটা সেরে রাখতে চাইলাম।

১৯৫৫ সনের ২৪শে ডিসেম্বর শনিবার দুপুর ২-১৫ মিনিট।

দক্ষিণেশ্বরে বিরজাসুন্দরী দেবীর মেয়ে অঞ্জলি সেনগুপ্ত (জটুমাসিমা ) এবং জামাই অনন্ত সেনগুপ্তর বাড়িতে রেজিস্টার B. K. Roy আমাদের দুজনের পূর্ণ সম্মতিতে বিয়ে দেন। সাক্ষী ছিলেন বীরেন সেনগুপ্ত, অনন্ত সেনগুপ্ত এবং শিবনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিয়ের পর আমরা দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পূজো দিতে গিয়েছিলাম। নিনি এগুলো খুব মানতেন। হাওয়াতে পূজোর ডালা থেকে মালা পড়ে যায়। নিনির খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী জীবনে যখনই কোনো অঘটন আমাদের সংসারে ঘটেছে তখনই তিনি ঐ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। নিনি আর আমার মধ্যে বোঝাপড়া এমনই ছিল যে, আমরা অনেকের অশুভ প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিলাম। রেজিস্ট্রির পর নিজের বাড়িতেই ফিরে এসেছিলাম। সামনেই I.A. পরীক্ষা। পড়াশোনায় মন দিলাম। যথাসময়ে সাফল্যের সঙ্গে I.A. পাশ করে B.A. Class – এ ভর্তি হলাম। এমন সময় আমাদের জন্য চিন্তা করে মামণির শরীরের অবস্থা এত খারাপ হলো যে নিনি একদিন আমায় বলতে বাধ্য হলেন – ‘মা’র যদি কিছু হয়, তোমার আর এ বাড়িতে এসে কাজ নেই’ – তাছাড়া আমার বাড়িতে এত চরম ব্যবস্থা নেওয়া হল যে একদিন বাড়ি ছেড়ে ১৬নং রাজেন্দ্রলাল স্ট্রীটের বাড়িতে মামনির কাছে চলে যেতে বাধ্য হলাম। বাবা-মার আশীর্বাদ ছাড়াই শুরু হল আমাদের বিবাহিত জীবন। সে আরেক কাহিনী। যেমন সুখের, তেমনি রোমাঞ্চকর।”

রাঁচি থেকে কাজী অনিরুদ্ধকে লেখা প্রমীলা দেবীর দুটি চিঠি বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। ‘নিনি’ সম্বোধন করে লেখা এ চিঠি দুটি পড়লেই বোঝা যায় যে–সেই সময় প্রমীলা দেবী তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের উপর কতখানি নির্ভর করতেন। “এই চোখের জলের সঙ্গে নিয়ত প্রার্থনা করছি, তোমার সকল অশান্তি, সব বিঘ্ন দূর হোক। বাবা, হতাশ হয়ো না। কায় মনে ওঁকে স্মরণ কর, যার কৃপায় অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আমাদের ব্যাধির জন্যে কষ্ট কোরো না। অনেকদিন গত হয়েছে। এতে প্রাণ ভয় নেই। তুমি ছাড়া শান্তি পাওয়ার আর কিছু নাই জীবনে। তোমাকে ভালো দেখতে না পেলে এই মৃত্যুহীন প্রাণ অসহায় হয়ে ওঠে। আমারই জন্য এবং যাঁর ছেলে তুমি তাঁর প্রতি কর্তব্যবোধে মন কে সবল রাখো। ওঁর অসুখের প্রথম অবস্থায় তোমারই জন্য কেবল ব্যাকুল হতেন এবং তোমার নাম করতেন। ওঁর প্রতি সকলেরই কর্তব্য আছে, কিন্তু যে তার অর্থ না বোঝে তাকে বলা বৃথা।”

বিলেত থেকে প্রমিলা দেবী চিঠি লিখেছেন পুত্রবধূকেও। চিঠির প্রতিটি লাইনে ঝরে পড়েছে মাতৃস্নেহ।

কল্যাণী কাজীর এই একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার পাশাপাশি এই বইটিতে স্থান পেয়েছে বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের স্মৃতিচারণা – তাঁরা কেউ কাজী অনিরুদ্ধকে পেয়েছেন অত্যন্ত মেধাবী, প্রতিভাবান ও মনোযোগী ছাত্র হিসেবে, আবার কেউ পেয়েছেন সহশিল্পী হিসেবে, অন্যতম গুরু হিসেবে। কাজী অরিন্দমের ‘আমার বাবা’ শীর্ষক লেখাটি নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।লেখাটি শুরু হয় এভাবে – "কাজী অনিরুদ্ধ নামটা উচ্চারণের সাথে সাথে সদা হাস্যময় এক সুপুরুষের চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অজাতশত্রু এই শিল্পী নিপুণ দক্ষতায় বিদেশী যন্ত্র গীটার কে স্বদেশের ঘরে-ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ভাবতে গর্ব হয় এমন একজন মহান শিল্পীর ছেলে আমি...।"

বইটির একেবারে শেষ পর্যায়ে যুক্ত হয়েছে ‘কাজী সব্যসাচীর বাল্য – স্মৃতি’। নজরুল প্রেমীদের কাছে এ এক পরম পাওয়া। কাজী সব্যসাচীর সাবলীল লেখনীতে ফুটে উঠেছে অনেক অজানা পারিবারিক কথা। কাজী অনিরুদ্ধর সংক্ষিপ্ত জীবনীও প্রকাশ পেয়েছে। লেখার পাশাপাশি অনেক দুর্লভ ছবি বইটিতে স্থান পেয়েছে – সাদা-কালো আলোকচিত্রের হাত ধরে আরও একবার ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে বড্ড ইচ্ছে করে।

শুধুমাত্র পারিবারিক জীবন নয়, কাজী অনিরুদ্ধর শিল্পী জীবনের কথাও অত্যন্ত সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে এই বইটিতে। পরিশেষে তাঁর সম্পর্কে যথার্থই বলা হয়েছে – "গীটারযন্ত্রের শিল্প সাধনায় যে ক'জন শিল্পী আজ বাংলার সুরের আকাশে আপন প্রতিভার কিরণে নিজেদের আলোকিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাজী অনিরুদ্ধ। সাহিত্য ও সংগীত জগতের অবিস্মরণীয় প্রাণপুরুষ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠপুত্র কাজী অনিরুদ্ধ নিজের প্রতিভা বলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশী যন্ত্র গীটারকে স্বদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। জন্ম – ১৯৩১ সনের ২৪শে ডিসেম্বর, মৃত্যু – ১৯৭৪ সনের ২২শে ফেব্রুয়ারি। মাত্র ৪৩ বছরের জীবনে তিনি সঙ্গীতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা বিস্ময়কর। তাঁরই স্মৃতিতর্পণ ‘অন্তরঙ্গ-অনিরুদ্ধ’।"

লেখক: সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এবং সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;