সমকালের ইজাজ মিলনসহ ৪ তরুণ লেখক পাচ্ছেন কালি ও কলম পুরস্কার



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সমকালের ইজাজ মিলনসহ ৪ তরুণ লেখক পাচ্ছেন কালি ও কলম পুরস্কার

সমকালের ইজাজ মিলনসহ ৪ তরুণ লেখক পাচ্ছেন কালি ও কলম পুরস্কার

  • Font increase
  • Font Decrease

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য দুই দুইবার ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক’ পাওয়ার পর এবার আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ পাচ্ছেন ইজাজ আহমেদ মিলন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য শাখায় ‘১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং’ গ্রন্থের জন্য ইজাজ মিলনকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে বলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক রেজওয়ানুল কামাল চৌধুরীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কথাসাহিত্যে ‘তিমিরযাত্রা’গ্রন্থের জন্য মোজাফফর হোসেন, গবেষণায় ‘চলচ্চিত্রনামা’গ্রন্থের জন্য মাসুদ পারভেজ ও শিশু-কিশোরসাহিত্যে ‘স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল’ গ্রন্থের জন্য রণজিৎ সরকারকে এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিচাকম-লীর সিদ্ধান্ত অনুসারে এবার কবিতা বিভাগে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ জমা না পড়ায় শুধু চার শাখায় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

দেশের তরুণ লেখকদের সাহিত্যচর্চাকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রদান করে আসছে। নির্বাচিত প্রত্যেক লেকককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়।

আগামী ১৮ জুন সন্ধ্যা ৭টায় অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী লেখদের হাতে আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত ‘ কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রদান করা হবে।  অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট্য কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ ও পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পবিত্র সরকার।

আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ প্রাপ্ত ইজাজ আহমেদ মিলন দৈনিক সমকালের গাজীপুর প্রতিনিধি। ২০১০ সাল থেকে তিনি সমকালে কর্মরত।এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিয়ষক সাংবাদিকতার জন্য প্রবর্তিত বজলুর রহমান স্মৃতিপদক পেয়েছেন দুই দুইবার। ২০০৯ সালে পেয়েছেন সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার।

শাখামুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্য

লেখক: ইজাজ আহমেদ মিলন

বই: ১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং

প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ।

মুক্তিযুদ্ধ শাখায় ১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করে আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০২০ অর্জন করেছেন কবি ও সাংবাদিক ইজাজ আহমেদ মিলন। হাজার বছরের বাঙালির রাজনৈতিক জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির ঐতিহাসিক এই মুক্তিসংগ্রাম এদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়কে অমলিন আবেগে স্পর্শ করে। বাংলার পথে-প্রান্তরে এবং জনমানসে ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য অশ্রুত আবেগমথিত ও বেদনাদীর্ন কাহিনি। ইজাজ আহমেদ মিলনের ১৯৭১: বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ এবং শীর্ষক গ্রন্থটি বাংলাদেশের গাজীপুরের বাড়িয়া এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সেইসব কাহিনির অন্তরঙ্গ রূপচিত্র। ১৯৭১ সালের ১৪ মে হানাদার পাকবাহিনী তিনদিকে বেলাই বিলবেষ্টিত গাজীপুরের হিন্দু অধ্যুষিত বাড়িয়ায় নির্বিচার গণহত্যা চালায়। সাঁতরে কিংবা নৌকা করে কোনোভাবেই কেউ হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। পাকিস্তানি নরপশুদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে এ-এলাকায় শহিদ হন অন্তত দুশো নিরীহ গ্রামবাসী। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের ঘরবাড়ি। এছাড়া এ-গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে লেখক হানাদারদের হাতে নৃশংসভাবে শহিদ পঁচিশজন নারী-পুরুষের অজানা কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এ-গ্রন্থের সবটাই লেখকের নিবিড় অনুসন্ধানের ফল।

ইজাজ আহমেদ মিলন নতুন লেখক নন- তিনি মূলত কবি ও সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি গভীরভাবে অনুসন্ধিৎসু। বতর্মান গ্রন্থটি তাঁর সেই অনুসন্ধিৎসু চেতনার পরিচয় বহন করছে। তাঁর লেখার মান বেশ ভালো- বর্ণনা চিত্তাকর্ষক। এ-বই আমাদের তরুণ গবেষকদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।

শাখা: কথাসাহিত্যে

লেখক: মোজাফ্ফর হোসেন

বই: তিমিরযাত্রা

প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি

কথাসাহিত্য শাখায় তিমিরযাত্রা উপন্যাসের জন্য আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০২০ অর্জন করেছেন তরুণ কথাকার মোজাফ্ফর হোসেন।

মোজাফ্ফর হোসেন প্রতিশ্রুতিশীল নবীন কথাকার- তিমিরযাত্রা তার প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি রেখেছেন প্রাতিস্বিকতার স্বাক্ষর। উনিশশো একাত্তরের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবিক সম্পর্কের অবক্ষয় ও ব্যক্তিক হতাশা-বিচ্ছিন্নতার চালচিত্র নিয়ে নির্মিত হয়েছে মোজাফ্ফরের তিমিরযাত্রা। সমাজ ও পরিবারে আবদ্ধ থেকেও নানামাত্রিক বাস্তবতা ও ব্যক্তিক মানসতার কারণে মানুষ এখন পরস্পরবিচ্ছিন্ন- নৈঃসঙ্গ্যের অতলে মানুষের মনোলোক এখন গভীরভাবে আচ্ছন্ন। তিমিরযাত্রা উপন্যাসের নায়ক এবং অন্য লোকসকল এই গহন-গভীর নৈঃসঙ্গ্যের সংক্রামে আক্রান্ত। মোজাফ্ফর হোসেন জটিল তাত্ত্বিক কাঠামোর আধারে রচনা করেছেন বক্ষ্যমাণ উপন্যাস। তিমিরযাত্রা কেবল কাহিনিবর্ণন নয়- এ-উপন্যাস পাঠককে চিন্তামগ্ন করে, এর পাঠ বুঝে উঠতে দাবি করে পাঠকের মনন ও প্রজ্ঞা। মোজাফ্ফর হোসেনের নির্মেদ গদ্য, সাবলীল ভাষা, আখ্যানে জাদুবাস্তবতা আর পরাবাস্তবতার ছোঁয়া, নিরীক্ষাধর্মী নির্মাণকলা- সব মিলিয়ে কৌতূহলী পাঠককে এ-উপন্যাস নিয়ে যাবে নতুন এক অভিজ্ঞতার আঙিনায়।

শাখা: প্রবন্ধ গবেষণা নাটক

লেখক: মাসুদ পারভেজ

বই: চলচ্চিত্রনামা

প্রকাশক: অক্ষর প্রকাশনী

চলচ্চিত্রনামা গ্রন্থের জন্য প্রবন্ধ-গবেষণা শাখায় আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০২০ অর্জন করেছেন মাসুদ পারভেজ।

চলচ্চিত্র-বিষয়ক তেরোটি প্রবন্ধের সংকলন মাসুদ পারভেজের চলচ্চিত্রনামা। ইতিহাস, ব্যক্তি ও চলচ্চিত্র- এই ত্রিমাত্রিক উপধারায় বিন্যস্ত প্রবন্ধগুচ্ছে উঠে এসেছে চলচ্চিত্রের নানা বিষয় ও প্রবণতা। অতীতে কেমন চলচ্চিত্র নির্মিত হতো বাংলাদেশে, চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন, কেমন হতে পারে আগামীর চলচ্চিত্র - এসব বিষয় বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে চমৎকার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। এখানে আছে ইরানি, কোরিয়ান ও রুশ চলচ্চিত্র সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা - আছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়রীতি এবং আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পে সৈয়দ শামসুল হক ও তারেক মাসুদের অবদান-বিষয়ক আলোচনা। চলচ্চিত্র নির্মাণের বিশেষ কিছু কৌশল নিয়েও চলচ্চিত্রনামায় কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা সন্নিবেশিত হয়েছে। মাসুদ পারভেজের ভাষা বিশ্লেষণাত্মক, ব্যাখ্যা মৌলিকতার পরিচয়বাহী। কৌতূহলী পাঠক এবং চলচ্চিত্র বিষয়ে বিদ্যায়তনিক পর্যায়ে যারা অধ্যয়ন করেন, তাদের কাছে চলচ্চিত্রনামা আদরণীয় হবে বলে আমাদের গভীর বিশ্বাস।

শাখা: শিশু-কিশোর সাহিত্য

লেখক: রণজিৎ সরকার

বই: স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল

প্রকাশক: অধ্যয়ন

স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাসের জন্য শিশু-কিশোর সাহিত্য শাখায় আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০২০ অর্জন করেছেন রণজিৎ সরকার।

রায়না নামের এক প্রবাসী বাঙালি কিশোরীর বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার অনেকান্ত কথায় মুখর রণজিৎ সরকারের স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের একটা স্কুলে ক্যাম্প করে মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার করে- হত্যা করে বহু গ্রামবাসীকে। অবশেষে গ্রামে আসে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা- ধ্বংস করে পাকিস্তানি বাহিনী - স্কুলে উড়িয়ে দেয় বিজয় পতাকা। কৌতূহলোদ্দীপক এই গল্পাংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস। বক্ষ্যমাণ উপন্যাস কৌতূহলী শিশু-কিশোরদের বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে বিস্তার করবে সহযোগের হাত। রায়নার অবয়বে এখানে প্রতিভাসিত হয়েছে বাংলাদেশের অগণন শিশু-কিশোরের স্বপ্নরঙিন মুখচ্ছবি- তাদের স্বপ্ন আর সম্ভাবনার কথা। স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল উপন্যাস বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের সদর্থক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সঞ্চার করবে সহযোগ- এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;