অদ্বৈত-চর্চায় 'এমবেকস' 



ড. রূপকুমার বর্মণ
অদ্বৈত-চর্চায় 'এমবেকস'র জার্নাল 'ভাসমান'।

অদ্বৈত-চর্চায় 'এমবেকস'র জার্নাল 'ভাসমান'।

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা সাহিত্য জগতের অদ্বৈত মল্লবর্মণের (১৯১৪-১৯৫১) নামের সঙ্গে সকলেই পরিচিত। অবিভক্ত বঙ্গদেশের পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় এসে (১৯৩৪) তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি যেসমস্ত সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, তার অনেকগুলিই তাঁর জীবদ্বশায় প্রকাশিত হয়নি। ভারতবর্ষ, নবশক্তি, মোহাম্মদি, দেশ ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর অনেক রচনাই কালের গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছিল। তবে অদ্বৈতের বন্ধু ও অনুরাগীদের প্রচেষ্টায় তাঁর অনেক অপ্রকাশিত রচনার প্রকাশ যেমন সম্ভব হয়েছে তেমনি হারিয়ে যাওয়া অনেক গল্প ও কবিতার পুনর্মুদ্রণও ঘটেছে।

অদ্বৈতের ভাবনা ও সৃষ্টিকে দেশ-বিদেশের পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে যেসব সংগঠন নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল কলকাতার ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি’ [Adwaita Malla Barman Educational and Cultural Society (AMBECS) বা এমবেকস্‌]

১৯৯৪ সালের (১৫ই মে) অদ্বৈত মল্লবর্মণের নামের সঙ্গে যুক্ত এই সংগঠনটি স্থাপন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন মালো বুদ্ধিজীবী। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন  সুশান্ত  হালদার, রণবীর সিংহ বর্মণ,  খগেন্দ্রনাথ হালদার, অরুণ কুমার সরকার, সুবল চন্দ্র হালদার, নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পংকজ কান্তি দাস, জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ বর্মণ, প্রমুখ।

মালোদের মতো পিছিয়ে পড়া সামাজিক গোষ্ঠী রসার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থাপিত এমবেকস্‌-এর প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল ১৯৯০ এর দশকে ভারতে ‘দলিত আন্দোলন’ ও ‘দলিত প্রতর্কের’ বিকাশ। 

প্রসঙ্গত, উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৯০-এর দশকের ভারতের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ‘দলিত প্রতর্কের’ বিকাশের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। প্রথমটি ছিল তাঁর জন্ম শতবর্ষে ড. বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরকে (১৮৯১-১৯৫৬) ‘ভারতরত্ন’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। তাঁর জীবদ্দশায়, এমনকি তাঁর মৃত্যুর তিন দশক পরেও তাঁর (ড. আম্বেদকর) প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান প্রদর্শনে  অ-দলিত মননে অনীহা থাকলেও  ১৯৯০-এর দশকে সেই অনীহা সম্মতিতে রূপান্তরিত হয়। এর সঙ্গে তপশিলি জাতি থেকে ভারতের নবম উপরাষ্ট্রপতি (১৯৯২-১৯৯৭) ও দশম রাষ্ট্রপতিরূপে (১৯৯৭-২০০২) ড. কে. আর. নারায়ননের নির্বাচন দলিত প্রতর্ক বিকাশের সদর্থক পরিবেশ তৈরি করেছিল। তৃতীয়ত, মন্ডল কমিশনের সুপারিশ (১৯৭৮-৮০) মেনে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে সুপ্রীম কোর্টের স্বীকৃতি (১৯৯৩) সারা ভারতে দলিত আন্দোলনের মূল দাবি ও বক্তব্যকে উদ্দীপিত করে তোলে। একইসঙ্গে জাতপাতে বিভাজিত উত্তর প্রদেশে কুমারী মায়াবতীর নেতৃত্বে বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) সরকার গঠন দলিতবাদকে আশাবাদী করে তুলেছিল।

ফলত: দলিতবাদ সম্পর্কিত রচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই ধারা দক্ষিণ ভারতের দলিত খ্রিস্টানদের হাতে শক্তিশালী রূপ ধারন করে। দলিতদের প্রতিবাদগুলোর অপব্যাখ্যার প্রবণতাকে প্রতিহত করার জন্য সেগুলো সচেষ্ট হয়।ঁরা শব্দ চয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারতে দলিতবাদ বিকাশের এরকম পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের দলিত লেখক ও চিন্তাবিদগণ অদ্বৈত মল্লবর্মণকে তাঁদের প্রেরণার উৎস হিসেবে গ্রহণ করেন। ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থার’ পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মালো বুদ্ধিজীবীদের অদম্য উৎসাহে গড়ে ওঠে এমবেকস্‌ এর মতো সংস্থা।

বাংলার মালোরা অবশ্য এর আগেও কয়েকটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ঝল্লমল্ল ক্ষত্রিয় সমিতি’ (১৯১৩) ও ‘বঙ্গীয় মল্ল ক্ষত্রিয় সমাজ উন্নয়ন সভা’ (১৯৩২)। ঝল্লমল্ল ক্ষত্রিয় সমিতির মূল কেন্দ্র ছিল পাবনাতে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ সহ পূর্ববঙ্গ/বাংলাদেশ ও আসামের সর্বত্র এর শাখা তৈরি হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় সংগঠনটি কলকাতা ও ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই দুটি সংগঠন মালোদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর অধিক মাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছিল। এমনকি এই সংগঠন দুটির সক্রিয় সহযোগিতায় মালো সমাজের দুজন বিধায়ক (কংগ্রেসের প্রার্থীরূপে) ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলার বিধানসভায় প্রবেশ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৪৬ সালে ভারতের সংবিধান সভায় (The Constituent Assembly) প্রবেশের সময় ড. বি. আর. আম্বেদকর পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) আরোও তিনজন বিধায়কের সঙ্গে এই দুজন মালো বিধায়কের (ড. ভোলানাথ বিশ্বাস ও  হারান চন্দ্র বর্মন) সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে বাংলা বিভাজনের (১৯৪৭) পরবর্তীকালে পূর্বোক্ত সংগঠনগুলি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলে।

তাই ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের মালোরা গড়ে তোলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ মৎস্যজীবী সমিতি’। এই মৎস্যজীবী সমিতি অদ্বৈত মল্লবর্মণকে প্রচারের আলোকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল। 'লাঙ্গল যার জমি তার' এর আদলে এই সমিতি 'জাল যার জলা তাঁর' নীতি কার্যকর করার জন্য এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার (১৯৭৭-২০১১) প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও মৎস্যজীবীদের 'জাল যার জলা তাঁর' মর্মে দাবির প্রতি কোনও আগ্রহ দেখায়নি।

স্বাভাবিকভাবেই মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের সংগঠক ও বুদ্ধিজীবীগণ বামফ্রন্ট সরকারের দিকে খানিকটা বীতশ্রদ্ধ হয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মনকে সামনে রেখে গড়ে তুললেন এমবেকস্‌।

সূচনা লগ্ন থেকেই এমবেকস্‌ অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত রচনা পুনঃপ্রকাশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। এই সংগঠনের মুখপত্র ‘ভাসমান’-এ অদ্বৈত মল্লবর্মণের অনেকগুলি অপ্রকাশিত কবিতা প্রকাশ করে অদ্বৈতচর্চায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। সুশান্ত হালদার, খগেন্দ্রনাথ হালদার, রণবীর সিংহ বর্মণ ও দ্বিগেন বর্মণের সম্পাদনায় ‘ভাসমান’ পত্রিকা অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি ছোটগল্প পুনঃপ্রকাশ করে অদ্বৈতচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

১৯৯৭ এর ১লা জানুয়ারি 'অদ্বৈত মল্লবর্মণ: জীবন ও সাহিত্য' বিষয়ক আলোচনা সভায় অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) ও সুধী প্রধানের (১৯১২-১৯৯৭) উজ্জ্বল উপস্থিতিতে এমবেকস্‌ অদ্বৈত মল্লবর্মণের স্মৃতিরক্ষা ও তাঁর সৃষ্টির প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিল। এগুলি হলো:

১. প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সমস্ত লেখা সংগ্রহ করে ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণের গ্রন্থাবলী” নামে অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রাপ্ত সমস্ত রচনার প্রকাশনা এবং তার যথাযোগ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা।

২. অদ্বৈত মল্লবর্মণের সব উপন্যাস ও গুরুত্বপূর্ণ রচনা ইংরেজী সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করা।

৩. অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত বিষয়ের চর্চার জন্য ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করা। 

৪. ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রের প্রদর্শন ও প্রচারের ব্যবস্থা করা।

এই ঘোষণাগুলির সবগুলি বাস্তবায়িত না হলেও এমবেক্‌সের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অদ্বৈত মল্লবর্মণের গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ সমূহের পুনঃপ্রকাশ সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও এমবেক্‌স মালো সমাজের দরিদ্র অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের জন্য 'বাসন্তী স্কলারশিপ ফান্ড' [Basanti Scholarship Fund] ও সাধারণ স্কলারশিপ ফান্ড তৈরি করেছে। এমবেক্‌স এর বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক (যথাক্রমে মৃণাল কান্তি বর্মণ ও কাঞ্চন বর্মণ) ও কার্যকরি সমিতির অন্যান্য সদস্যগণ তাঁদের ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

লেখক: ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;