‘সাহায্য নয়, আপনার প্রতি আমাদের দায়িত্ব’

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
স্টেপ আপ সংগঠনের ত্রাণ সামগ্রী

স্টেপ আপ সংগঠনের ত্রাণ সামগ্রী

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব স্থবির করে দিয়েছে জনজীবন। দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সাথে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা। বেড়েছে সাধারণ ছুটি। দিন যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে কর্মহীন মানুষের খাবারের জন্য আহাজারি।

কঠিন এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও খাদ্যের যোগানে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছেন দিনমজুর আর নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে এসেছে।

একইভাবে কাজ করছেন রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ার স্থানীয় কয়েকজন সচেতন যুবক। তারা গঠন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্টেপ আপ’। নিজেদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে অসহায় দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।

দিনের বেলায় খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট করে রাতের বেলায় অসহায় দুস্থদের ঘরের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছেন ওই যুবকরা। ইতোমধ্যে দুই দফায় এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে ৭-১০ দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তারা।

শুধু খাদ্য সহায়তা প্রদানই নয়, এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছেন এই যুবকরা। জাতীয় এই দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এলাকার অগিগলিতে জীবাণুনাশক ছিটানো ও ফেস মাস্ক বিতরণ করেছেন স্টেপ আপ সংগঠনের সদস্যরা। করোনার সংক্রমণ রোধে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া স্থানীয়দের ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারা।

করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এলাকার অসহায় দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন স্বেচ্ছাসেবী এই যুবকরা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেক এলাকার যুবকদের এভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেট করছেন স্টেপ আপ সংগঠনের সদস্যরা

সচেতন ও উদ্যোমী এই যুবক দলের একজন ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স। এলাকার অন্য যুবকদের সঙ্গে নিয়ে অসহায়দের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন রাত-দিন। ‘সাহায্য নয়, আপনার প্রতি এ আমাদের দায়িত্ব’ স্লোগানে তারা লড়ছেন করোনা মোকাবিলার মানবিক বার্তা নিয়ে।

এ ব্যাপারে বার্তা২৪.কম-কে ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স বলেন, আমরা আমাদের এলাকার অসহায় মানুষদের সাহস জোগাতে কাজ করছি। আপনি কিংবা আপনারাও আপনার বাড়ির পাশের অন্তত একটি অসহায় পরিবারকে বলুন না, ‘ভয় নেই’ আপনি আছেন তার পাশে। এমন বৈশ্বিক মহাবিপদে কাউকে সাহায্য নয়, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন যুবক পকেট খরচের টাকা দিয়ে দুই দফায় চাল, ডাল, আলু, তেল, চিড়া, সাবান ও মাস্কসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ওই এলাকার ৫০০টি অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছে। তৃতীয় দফায় আরো ৩০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য দিনের বেলা খাদ্যপণ্য প্যাকেটিং করা হচ্ছে। সবকিছু প্যাকেটিং হলে রোববার রাতে এগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।

জাতীয় এ দুর্যোগময় সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ‘স্টেপ আপ’র সমন্বয়ক ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স। এলাকার নিম্ন আয়ের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারলে করোনা মোকাবিলা সহজ হবে বলে মনে করেন এই যুবক।

   

চেম্বারে ডেকে নিয়ে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ, ভুয়া ডাক্তার গ্রেপ্তার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম নোয়াখালী
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর চাটখিলে ভুয়া ডাক্তারের হাতে এক কলেজ ছাত্রী (১৮) ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

রবিবার (২ জুন) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চাটখিল বাজার থেকে অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে এই ভুয়া ডাক্তারের চেম্বার সীলগালা করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এর আগে, গত রবিবার (২৬ মে ) চাটখিল পৌর বাজারের হাসপাতাল রোডে এই ভুয়া ডাক্তারের নিজস্ব চেম্বারে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার নুর হোসেন পলাশ (৪৫) উপজেলার চাটখিল পৌরবাজারের রক্তিম রোজ মেডিসিন পার্কের মালিক ও পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব গোবিন্দপুরের গনি মিয়া সাব বাড়ির খোরশেদের ছেলে।

ভুক্তভোগী তরুণী অভিযোগে জানান, গত রবিবার (২৬ মে) ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল চারটার দিকে তার কিছু মেডিকেল রিপোর্ট দেখার জন্য তাকে তার চেম্বারে ডেকে নেন নুর হোসেন পলাশ। চেম্বারে যাওয়ার পর তার মাস্ক খুলে তার নাকের কাছে কিছু একটা ধরে তাকে অবচেতন করে তার চেম্বারের পেছনে আলাদা কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

ওই তরুণী বলেন, ‘বারবার পা ধরে ক্ষমা চেয়েও আমি তার হাত থেকে রক্ষা পাইনি। ধর্ষণ শেষে অভিযুক্ত নুর হোসেন আমাকে ছুরি দেখিয়ে এই ঘটনা কাউকে বলতে নিষেধ করেন।’

ভুক্তভোগী শুরুতে ভয়ের কারণে পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখলেও, কয়েকদিন পর চিরকুট লিখে মাকে ঘটনাটি জানান।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, 'আমি ছোট একটা চাকরি করে সংসার চালাই। যে আমার এই এতিম সন্তানকে এভাবে নির্যাতন করছে, আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ইমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

ওই মামলায় সোমবার (৩ জুন) সকালে আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে।

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

আনার হত্যা মামলার তদারক কর্মকর্তাসহ ২৩ পুলিশের বদলি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের কলকাতায় নিহত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার তদন্তে বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে নেপালে অবস্থান করা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমানসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) পদ মর্যাদার ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

কয়েক দিন আগে একই মামলার তদন্তের কাজে ভারতে গিয়েছেন এই কর্মকর্তা। রবিবার (২ জুন) পুলিশ সদর দফতর থেকে তাকে বদলি করা হয়।

শাহিদুর রহমানকে বরিশাল জেলা পুলিশের বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া বদলির আদেশ পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের কর্মকর্তারা হলেন-ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলামকে খুলনা জেলা পুলিশে, এপিবিএনের এ এইচ এম কামরুল ইসলামকে র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আরএমপি এডিসি ড. মো. রুহুল আমিন সরদারকে নোয়াখালীর পিটিসি, ডিএমপির এডিসি রাশেদ হাসানকে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ সার্কেলে, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই সার্কেলের মু. সাইফুল ইসলামকে রাঙ্গামাটি সদর সার্কেলে, মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের মো. আজমল হোসেনকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামার সার্কেলে, একই সার্কেলের মহসীন আল মুরাদকে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলে, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ হোসেনকে পাবনা সদর সার্কেল, রাঙ্গামাটি সদর সার্কেলের মো. জাহেদুল ইসলামকে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সার্কেলে বদলি করা হয়েছে।

বদলির আদেশ পাওয়া সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদের কর্মকর্তারা হলেন- রাজবাড়ীর পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহাকে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার, এসপিবিএনের মো. শাহীনকে রাজবাড়ী পাংশা সার্কেল, ঢাকার ১৩ এপিবি্এনের জান্নাতুল ফেরদৌসকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), সিআইডির লোপামুন্ডু মহাজনকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ডিআইজির কার্যালয়ে, পুলিশ স্টাফ কলেজের মো. আসলাম সাগরকে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)’র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. শাহজাহানকে ডিএমপিতে, সিলেটের আরআরএফের মো. শামছুল আলম চৌধুরীকে ঢাকার পুলিশ টেলিকম সংস্থায়, এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মো. আলী হোসেন খানকে ডিএমপিতে, সাতক্ষীরার তালা সার্কেলের মো. সাজ্জাদ হোসেন মোল্যাকে ডিএমপিতে, র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার হাম্মাদ হোসেনকে সিআইডিতে, কক্সবাজার ৮ এপিবিএনের রসুল আহমদ নিজামীকে র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার এবং র‌্যাবের মো. শামসুল আলম খানকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

একই আদেশে আগামী ৫ জুনের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ৬ তারিখ নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

খুলনায় চাহিদার চেয়ে বেশি ২১ হাজার পশু



ডিস্ট্রিক করেসপনডেন্ট বার্তা২৪.কম খুলনা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা বা কোররবানীর ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখে খুলনা জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুতিতে ব্যস্ত স্থানীয় কৃষক এবং খামারীরা।

এ মৌসুমে খুলনা জেলায় কোরবানির পশু প্রয়োজন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৩টি। এর বিপরীতে খুলনায় মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮শ’ পশু। যা চাহিদার চেয়ে ২১ হাজার ৮৩৫টি পশু বেশি। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় পাঠানো যাবে অতিরিক্ত পশু।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, খুলনা জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮টি পশু। এর মধ্যে গরু ৬৬ হাজার ৯৫৭, ছাগল ৭৪ হাজার ৩৬৪, ভেঁড়া ১৪ হাজার ৮৩৪, মহিষ ৯৭, অন্যান্য ২৬।

অন্যদিকে, খুলনা জেলায় কোরবানির জন্য প্রয়োজন ৫৮ হাজার ৩৫৬টি গরু, ৬৪ হাজার ১৬০টি ছাগল, ১১ হাজার ৮৩২টি ভেঁড়া এবং ৯৫টি মহিষ।

আর খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিপ্ততর সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় প্রায় ১০ লাখ ৫ হাজার ৭৭০টি পশু কোরবানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর বিপরীতে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে এ বিভাগে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮টি, সাতক্ষীরায় প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৫৯টি, বাগেরহাটে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৪১৩টি, যশোরে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬১৭টি, নড়াইলে প্রায় ৫২ হাজার ৫৪৭টি, মাগুরায় প্রায় ৭৮ হাজার ৫৯১টি, মেহেরপুরে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০২টি, কুষ্টিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯টি এবং ঝিনাইদহ জেলায় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪৩১টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এর আগে অর্থাৎ গতবছর কোরবানির ঈদে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১১ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৮টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল। তখন চাহিদা ছিল প্রায় ৮লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮টি পশু।

ডুমুরিয়ার শাহাপুর এলাকার গরু খামারী মোঃ জালাল গাজী জানান, ‘আরো আগে থেকে শাহপুর পশুর হাটে কোরবারিনর পশু আসতেছে। ক্রেতারা মনে করে কম দামে গরু কিনবে। কিন্তু আমরা যারা ছোট গরু কিনে ছয় থেকে ৮ মাস লালন পালন করে গুরু বিক্রি করি, আমরা বুঝতেছি। গবাদি পশুর খাবারের কি পরিমান দাম। সেই তুলনায় গরুর দাম হচ্ছে না। তারপরও সামান্য লাভে গরু বিক্রি করতে হবে।’

খুলনার আঠারো মাইল পশুর হাটের ব্যপারী মোঃ আলাউদ্দিন জানান, ‘শুনছি খুলনায় চাহিদার থেকে গরু বেশি আছে। তারপরও গরুর দাম বেশি। প্রতি হাটে আসছি। দু-একটা করে কিনছি। শহরে পশুর হাট হলে সেখানে বিক্রি করবো।’

খুলনা মহানগরীর ব্যবসায়ী শেখ ইমরান হোসেন যুবরাজ জানান, ‘কোরবানির সময় দেশের বিভিন্ন সময়ে পশুর হাট হয়। খুলনা বিভাগে সব থেকে বড় পশুর হাট হয় নগরীর জোড়াগেটে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) কোরবানির পশুর হাট। লোক মুখে শুনছি, আগামী ১০ বা ১১ তারিখ এ হাট শুরু হতে পারে। আমি নগরীর বাইরে কয়েকটি পশুর হাটে খোঁজ নিয়েছি। সব জায়গায় দাম একটু বেশি। তারপরওতো কিনতে হবে।’

খুলনা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ‘পশুকে কোনো ধরণের হরমোন বা ক্যামিলকেল না খাওয়ানোর জন্য আমরা খামারিদের পরামর্শ দিই। এ ছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সবসময় ছোট, বড় খামারীদেরকে তদারকি করে এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

‘তিনটা বাচ্চার লাইগা থাকার ব্যবস্থা কইরা দেন’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম মোংলা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরের মেঝে। পড়ে আছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবে বেঁচে যাওয়া বাঁশ, কাঠ ও গোলপাতার তৈরি ঝুপড়ি ঘরের কিছু অংশ। সহায় সম্বল হারিয়ে অর্থ সংকটে নতুন করে ঘর তৈরি করতে না পারায় সে ঘরেই তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে আঁকড়ে ধরে বসে আছেন অসহায় বাবা বাবুল শেখ।

ঝড়ের পাঁচ দিন পর সরকার থেকে পাওয়া ১০ কেজি চাল থেকে কিছু চাল অস্থায়ী ইটের তৈরি চুলায় রান্নার জন্য বসিয়েছেন বাবুলের স্ত্রী। ঝড়ের পর এই প্রথম চুলায় আগুন জ্বললো তাদের। ঝড় শেষে এই পাঁচ দিনে মোট দুই বেলা কে বা কারা এসে একবার খিচুড়ি ও একবার বিরিয়ানি দিয়ে গিয়েছিল। নিজেরা না খেয়ে গত দুই দিন ছেলে মেয়ের মুখে সে খাবার তুলে দিয়েছেন বাবুল ও তার স্ত্রী। আজ অনেক দিন পর হয়তো পেটপুরে ভাত খাবেন তারা।

এমনই চিত্র শেলা নদীর তীরে অবস্থিত জয়মনি'র প্রায় সব জেলে পরিবারের। ঝড়ের তান্ডবে সেখানকার প্রায় সবগুলো ঘরই ভেঙে গেছে, কোমড় সমান পানিতে ঘরের মেঝের সঙ্গে আসবাবপত্রও তলিয়ে গেছে। নদীতে মাছ ধরে, বনে ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি যে অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন তার সবকিছুই ভেসে গেছে নোনা জলে।

সুন্দরবন ঘেষা মোংলার জয়মনি ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ সহায় সম্বল রক্ষা করতে ঝড়ের সময় বেশিরভাগ লোকজনই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে পানি বাড়তে থাকায় চোখের সামনে ঘরের সবকিছু ভেসে যেতে দেখেও জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে চলে যেতে হয় স্থানীয়দের।

বার্তা২৪.কমের কথা হয় জয়মনি’র শেলা নদী তীরের বাসিন্দা মো. বাবুল শেখের সঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এর আগে বহুত বড় বড় ঝড় গেছে। কিন্তু, রিমালের মতো এমন তাণ্ডব আগে কহনো দেহি নাই। চোখের সামনে দেখলাম নদীর পানি বাড়তে বাড়তে ঘরে কোমর সমান পানি হইয়া গেল। ডরে ঘর থেইকা বাইরাইতেই দেহি ঘুমানোর খাটটা নদীতে ভাইসা যাইতাছে। সাঁতরাইয়া গিয়া খাটটা আনলাম। আর ঘরের বেড়াগুলা সব উইড়া গেল। টিকতে না পাইরা শেষ পর্যন্ত সাইক্লোন সেন্টারে চইলা গেলাম। পোলাপাইনসহ বউরে আগেই পাঠাইয়া দিছিলাম।'

'ঝড় থামনের পরে আইসা দেহি ঘরের চালঠা কোনওরহম আছে আর ঘরের বাহি বেবাক জিনিসপত্র চাইল, ডাইলসহ হাড়ি পাতিল, থালা-বাসন এমনকি গাত দেওনের জামা কাপড় সব নদীতে ভাইসা গেছে। নিজেগো তো কিছু নাই, মাইনষের তে চাইয়া চাইল, ডাইল আইনা যে বাইত্তে রাইন্ধা খামু তারও তো কোন উপায় নাই। সাইক্লোন সেন্টার থেইকা যে চিড়া মুড়ি দিয়েছিল হেডি-ই পোলাপাইনরে খাওয়াইছি। ছোট ছোট পোলাপাইনগুলারে তো আর না খাওয়াইয়া রাখতে পারুম না।'

ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবুল বলেন, 'দুইদিন না খাইয়া ছিলাম। এরপর কেডা জানি একদিন খিচুড়ি আরেকদিন একবেলা বিরিয়ানি দিয়া গেছিলো। হেইগুলা পোলাপাইনে দুই দিন খাইছে। আমি আর পোলাপাইনের মায় কোনরকম খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইছি। আজকে মেম্বারসাব ডাইকা নিয়া ১০ কেজি চাইল দিসে। আজকে ৬ দিন পর চুলায় আগুল জ্বললো আমগো। এইডা খালি আমগো দুঃখের কথা না, এইহানের সবার একই অবস্থা।'

‘খাওন দাউন যেমন কথা, তিন পোলা-মাইয়া লইয়া নদীর উপরে বিছনা পাতি ছাড়া থাহনের এই কষ্ট কোনভাবেই আর সহ্য হইতাছে না। বাচ্চাগুলা রাইতে খুব ডরায়। পোলাপাইনগুলার দিকে চাইলে বুক ফাইটা কান্দন আহে। এই ঘরটা ঠিক করতে কম কইরা হইলেও ২০ হাজারের দরকার। আমার কাছে তো এক টাকাও নাই। এই পোলাপাইন তিনটারে লইয়া আমি কি করমু। আপনারা আমার পোলা মাইয়াগো থাকার একটু ব্যবস্থা কইরা দেন। সব ঠিক হইলে আমি কাম কইরা আপনাগো টাকা ফিরাইয়া দিমু। আল্লাহর দোহায় লাগে ছোট ছোট এই তিনটা বাচ্চারে আপনারা বাঁচান।’ চোখের পানি ঝড়িয়ে এভাবেই বাবুল শেখ তার আকুতির কথা বলছিলেন বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধির কাছে।

নদী তীরের এই মানুষগুলো যে শুধু খাবারের কষ্ট করছে তা নয়, এখানকার মানুষ সবচাইতে বেশি কষ্ট করছেন সুপেয় পানির অভাবে। বৃষ্টির পানি এবং পুকুরের মিঠা পানি সংরক্ষণ করেই তাদের সুপেয় পানির অভাব পূরণ হয়। কিন্তু, ঝড়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পাত্র এবং মিঠা পানির পুকুর নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে, সুপেয় পানির অভাবে অনেকেই নদী এবং পুকুরের নোনা পানিই পান করছেন। এতে করে বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা।

আব্দুল গফফার শেখ নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'ঘরবাড়ি সব নদীতে চইলা গেছে, আর নাই কিচ্ছু। সংসারে মালামাল কিছুই নেই, সব শেষ। আজকে মেম্বারের কাছ থেইকা ১০ কেজি চাইল পাইছি। এর আগে এক সন্ধ্যা খাইছি বা না খাইয়া রইছি। খাওন না খাইয়া থাকন যায়, কিন্তু পানি না খাইয়া আমরা কেমনে থাকি!। আমগো এইহানে পানির খুব অভাব। বৃষ্টির পানি জমাইয়া রাখছিলাম কিন্তু বন্যায় সব জমানো পানি ভাইসা গেছে। এই নোনা পানি খাইয়া-ই জীবন বাঁচাইতাছি। ঘরবাড়ি ঠিক করনের অর্থকরী নাই। ভাঙ্গা ঘরে বউ বাচ্চা লইয়া দিন কাটাইতাছি। এখন মনে হয় মইরা গেলেই বেশি ভালো হইত। এই কষ্ট আর সহ্য হয় না।’

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে অত্র এলাকার জনপ্রতিনিধ ইউপি সদস্য নাজমুল হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমার ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৬৮০ জন। সে অনুযায়ী ত্রান আসে খুব সীমিত। যে কারণে আমি সবাইকে একসঙ্গে ত্রাণ দিতে পারছি না। ইতিমধ্যে সাড়ে সাতশ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বেসরকারি কোন সংস্থা এখনো পর্যন্ত আমার এই দুর্গম এলাকায় ত্রাণ বা অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। আর ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যাপারে ইতিমধ্যে আমার ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। অনেকেই এসে ঘুরে দেখে গেছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

এদিকে মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জয়মনিসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে একদিনের মধ্যেই ১০ কেজি করে চাল এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছি। যা স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যদের দ্বারা বিতরণ করা হচ্ছে। কেউ যদি এখনো পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে থাকে তা আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যাপারে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;