আত্মসমালোচনা মানুষকে সংশোধনের সুযোগ দেয়



মো. আবদুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম
আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, ছবি : সংগৃহীত

আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আত্মসমালোচনা হলো- নিজের ভালো-মন্দ কাজের জন্য নিজের কাছে নিজে জবাবদিহি করা। মন্দ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং সে কাজটি পরিত্যাগ করে ভবিষ্যতে তা না করার অঙ্গীকার করা। আর ভালো কাজের জন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা এবং তা আগামীতে অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

আল্লামা সাওয়ারদি (রহ.) বলেছেন, ‘মানুষ রাতের কোনো এক সময়ে তার দিনের কাজগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। যদি সেগুলো ভালো ও প্রশংসনীয় হয় তাহলে তা যথারীতি বহাল রাখবে এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ কাজ সামনে এলে তা করে যাবে। আর যদি তার কাজগুলো নিন্দনীয় হয় তাহলে অনুশোচনা করা, লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে আর কোনোভাবেই এসব কাজ করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করা।’-আদবুদ্দুনিয়া ওয়াদ্দি : ৪৫৩-৪৫৪

আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং তা সংশোধন করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘আত্মসমালোচনার অর্থ হচ্ছে, নিজের করণীয় ও বর্জনীয় পৃথক করে ফেলা। এর পর সর্বদা ফরজ ও নফল কর্তব্যগুলো আদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার ওপর সুদৃঢ় থাকা। তিনি আরও বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হলো, প্রতিটি কাজে সর্বপ্রথম আল্লাহর হকসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া; পরে সেই হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হচ্ছে কি-না, সেদিকে লক্ষ্য রাখা।’-আল ফাওয়ায়েদ

আত্মসমালোচনা মুমিনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। এর প্রতি উৎসাহিত করে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য (আখেরাতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা পাপাচারী।’-সুরা হাশর : ১৮-১৯

বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক মুমিনের জন্য আত্মসমালোচনা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের অবশ্যই চিন্তা করা কর্তব্য যে, আখেরাতের জন্য তুমি যা প্রেরণ করেছ তা তোমার জান্নাতের পথ সুগম করছে, না-কি তোমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?’ -মাদারিজুস সালেকিন : ১/১৮৭

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা আত্মসমালোচনাকারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে, শয়তানের কুমন্ত্রণা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তাদের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়।’-সুরা আরাফ : ২০১

হাদিস থেকেও আত্মসমালোচনার ধারণা পাওয়া যায়। শাদ্দাদ বিন আওস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের সমালোচনা করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের কামনা-বাসনার অনুসরণ করে চলে এবং আল্লাহর কাছে বড় বড় আশা পোষণ করে।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৪৫৯

আত্মসমালোচনার গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত ওমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ করো, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হওয়ার পূর্বেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা ওজন করে নাও চূড়ান্ত দিনে ওজন নেওয়ার আগেই। কেননা আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামী দিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদের সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কোনো কিছুই সেদিন গোপন থাকবে না।’-জামে তিরমিজি : ২৪৫৯

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তিকে স্বীয় আত্মার পরিচালক হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আত্মসমালোচনা করতে হবে। যারা দুনিয়াতে আত্মসমালোচনা করে, কেয়ামতের দিন অবশ্যই তাদের আমলের হিসাব সহজ হবে। আর যারা এ থেকে বিরত থাকবে, কেয়ামতের দিন তাদের হিসাব কঠিন ও কষ্টদায়ক হবে।’-আয-যুহদ : ৩০৮

মানুষ আত্মসমালোচনার প্রেরণা আল্লাহর ভয় থেকে লাভ করে থাকে। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে যতবেশি ভয় করে, তার মধ্যে আত্মসমালোচনার মনোবৃত্তি ততবেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়। এ আত্মসমালোচনা দিনে-রাতে যতো বেশি করা যায়, ততোই ভালো। অন্তত প্রতিদিন শেষে রাতে শোয়ার সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কাজগুলো করা হয়েছে তার পর্যালোচনা করা যেতে পারে। এ সময় চিন্তা করা উচিত, দিনে যে কাজগুলো করা হয়েছে- তা যথার্থ ও সঠিক হয়েছে কি-না, যদি যথার্থ ও সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা উচিত। আর যদি কোনো ভুল হয়, তাহলে সে জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।

সর্বোপরি আত্মসমালোচনা মানুষের আত্মসংশোধনের পথকে সুগম করে। ফলশ্রুতিতে যেকোনো মানুষ তার ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার কল্যাণময় পাথেয় লাভ করে।

   

চরিত্রবান তাহাজ্জুদগোজারের মর্যাদা পায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মুমিন তার চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে রোজাদার তাহাজ্জুদগুজার ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে, ছবি: সংগৃহীত

মুমিন তার চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে রোজাদার তাহাজ্জুদগুজার ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, এমন মুমিন, যে নিজের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, এমন মুমিন, যে নির্জনে কোনো পাহাড়ের উপত্যকায় বাস করে, সে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখে। -সহিহ বোখারি : ২৭৮৬

মানুষের উত্তম-অনুত্তম কিংবা সর্বোত্তম হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। তবে প্রকৃত উত্তম মানুষ তারাই, যারা কোরআন-হাদিস তথা আল্লাহ তার রাসুলের দৃষ্টিতে উত্তম। বর্ণিত হাদিসে এরই একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মুমিনের কিছু গুণ হিসেবে হাদিসে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা মুমিনের গুণ। হজরত আবু শুরাইহ খুজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়। জানতে চাওয়া হলো, কে ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, যার অনিষ্ট ও উৎপীড়ন থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। -সহিহ বোখারি : ৬০১৬

হাদিসের উপস্থাপনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) কী প্রতাপ নিয়ে বিষয়টি ইরশাদ করেছেন। কত কঠিন ছিল বলার ভাব! সুতরাং প্রতিবেশীকে নিরপাদে রাখা, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য।

সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সে জান্নাতে যাবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। -সহিহ মুসলিম : ৪৬

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এমন প্রতাপান্বিত ইরশাদ, আর এমন ভয়াবহ হুঁশিয়ারির পরও প্রতিবেশীর সঙ্গে আচরণ সুন্দর করা সত্যিই বড় দুর্ভাগ্যের কথা।

নির্মাণ কাজসহ চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি এবং উচ্চ আওয়াজে গান-বাদ্য বা সঙ্গীত ছেড়ে দেওয়া কতটা অন্যায়মূলক কাজ- এটা সহজেই অনুমেয়। এক কথায় প্রতিবেশীর আরাম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটে, এমন কাজ অন্যায়। এগুলো থেকে বিরত থাকা।

হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সে তো মুমিন নয়, যে নিজে তৃপ্তিভরে আহার করে, আর তার প্রতিবেশী থাকে অনাহারে, অর্ধাহারে। -আল আদাবুল মুফরাদ : ১১২

বর্ণিত হাদিসসমূহে মুমিনের চরিত্রের মহাত্ম্য ফুঁটে উঠেছে। আর এমন মুমিন সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন তার চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে রোজাদার তাহাজ্জুদগুজার ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে। -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৯৮

অর্থাৎ আল্লাহর যে বান্দা নিজের আমল-আকিদা, কর্ম ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সাচ্চা মুমিন হবে, সেই সঙ্গে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হবে, সে যদিও রাতে বেশি নফল নামাজ পড়ে না, বেশি রোজা রাখে না, তবুও সে তার সুন্দর চরিত্রের কারণে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করবে, যে দিনে রোজা রাখে, আর রাতভর নফল নামাজ আদায় করে। -মাআরিফুল হাদিস

;

যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজের ঘোষণা দেওয়া হয়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মাকামে ইবরাহিম, ছবি: সংগৃহীত

মাকামে ইবরাহিম, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দেন। যার বর্ণনা সুরা হজের ২৭ নম্বর আয়াতে রয়েছে।

নির্দেশ অনুসারে হজরত ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা দেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে মানবজাতি! তোমাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। এই আহবান পুরুষের মেরুদণ্ড এবং নারীর জরায়ুতে বিদ্যমান সব ব্যক্তি শুনতে পায়। যারা মুমিন এবং যারা হজ করবে বলে আল্লাহর জ্ঞানে ছিল তারা ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দেয়। -ফাতহুল বারি : ৬/৪০৬

মাকামে ইবরাহিম মূলত সেই সম্মানিত পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করেন; বিশেষত যখন কাবাঘরের দেয়ালের ওপরের অংশ গাঁথতে হয়েছিল। কাবাঘর নির্মাণ শেষ হলে তিনি এখানে দাঁড়িয়েই মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন। -শিফাউল গিরাম : ১/২০৩

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) মাকামে ইবরাহিম সম্পর্কে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে লেখেন, ‘ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন তারা ঘরের তুলনায় কাবার ভিটি উঁচু করেন। ইসমাঈল (আ.) পাথর নিয়ে আসছিলেন এবং ইবরাহিম (আ.) তা দিয়ে নির্মাণ করছিলেন। যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ.) ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য এই পাথরটি নিয়ে এলেন, যেন তিনি তার ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ করতে পারেন।

মাকামে ইবরাহিমের ওপর দুটি পায়ের ছাপ রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

তারা উভয়ে দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ -সুরা বাকারা : ১২৭

আল্লাহ তাদের দোয়াকে এমনভাবে কবুল করেন যে হজরত ইবরাহিম (আ.) যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেন তাকে অমরত্ব দান করেন। ফলে কেয়ামত পর্যন্ত মক্কায় আসা মুসল্লিরা তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। -তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১৬১

মাকাম অর্থ অবস্থান বা দাঁড়ানোর স্থান। মাকামে ইবরাহিম অর্থ ইবরাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। পবিত্র কাবা চত্বরের বিশেষ স্থানকে মাকামে ইবরাহিম বলা হয়, যা হাজরে আসওয়াদ থেকে সাফা-মারওয়ার দিকে ১৪ মিটার এবং জমজম কূপ থেকে ১০.৫ মিটার দূরে অবস্থিত।

মাকামে ইবরাহিমের ওপর দুটি পায়ের ছাপ রয়েছে। ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, আল্লাহ মক্কা নগরীতে ইবরাহিম (আ.)-এর একাধিক স্মৃতি সংরক্ষণ করেছেন। তার একটি হলো- সেই পাথর, যার ওপর ইবরাহিম (আ.) দাঁড়িয়ে ছিলেন। -তাফসিরে তাবারি : ৪/১১

আল্লাহতায়ালা মাকামে ইবরাহিমকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। যার কয়েকটি হলো-

আল্লাহর নিদর্শন : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিম আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ।’ -সুরা আলে ইমরান : ৯৭

নামাজের স্থান : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান বানানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।’ -সুরা বাকারা : ১২৫

তাওয়াফের পর নামাজ : তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করা সুন্নত। ইবনে ওমর (রহ.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।’ -সুনানে নাসায়ি : ২৯৩০

;

‘খুতুবাতে আইয়ূবীর’ মোড়ক উন্মোচন

৯০০ টাকার বই লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
খুতুবাতে আইয়ূবীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এক কপি বই লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

খুতুবাতে আইয়ূবীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এক কপি বই লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একটি বই লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হলো। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই নিলামে অংশ নেন বেশ কয়েকজন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা বইটি পান। বইয়ে দেশ বরেণ্য আলেমদের অটোগ্রাফ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১ জুন) সকাল ৯টায় সাভারের আলমনগরে অবস্থিত মারকাযুত তারবিয়াহ মিলনায়তনে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীর বয়ান সংকলন ‘খুতুবাতে আইয়ূবীর’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

৪৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দেশের জনপ্রিয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল আযহার। মুদ্রিত মূল্য ৯০০ টাকা মাত্র।

খুতুবাতে আইয়ূবীর সম্পাদক মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান এবং টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপন মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানীর যৌথ সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমীন।

খুতুবাতে আইয়ূবীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিদের একাংশ, ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর চৌধুরী, মাওলানা যাইনুল আবিদীন, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমি, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমি, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা আবদুল বাসেত খান, মুফতি মুরতাজা হাসান ফয়েজী মাসুম, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, জহির উদ্দিন বাবর, হুমায়ুন আইয়ুব, মাওলানা মুনীরুল ইসলাম, মাওলানা সালাউদ্দীন মাসউদ, আশিকুর রহমান, মাওলানা শোয়াইব আহমদসহ অনেকই বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ করে বইটির একটি কপি নিলামে তোলার ঘোষণা দেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ। এতে অনেকেই অংশ নেন। পরে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি ইসরাফিল। পরে উপস্থিত অতিথিদের অটোগ্রাফসহ বইটি তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী। দেশের আলোচিত মুফাসসিরে কোরআন।

তার বয়ান শোনার জন্য মানুষ উৎকর্ণ হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় তার যুগান্তকারী বয়ানগুলো সংকলনের দাবি ওঠতে থাকে ভক্তমহল থেকে। অবশেষে তা আলোর মুখ দেখল।

মাওলানা আশিকুর রহমান, মুফতি সালাহুদ্দিন মাসউদ (সম্পাদক, মাসিক কলমদানি) ও মাওলানা শুয়াইব আহমাদ বয়ানগুলো গ্রন্থনা করেছেন। সম্পাদনা করেছেন মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান।

মাওলানা আইয়ূবীর অসংখ্য বয়ান থেকে বাছাই করে অতিগুরুত্বপূর্ণ ২১টি বয়ান ছোট শিরোনামে বিস্তারিতভাবে সংকলন করা হয়েছে গ্রন্থটিতে।

;

আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে ধর্ম পালন করুন



আবদুল ওয়াহাব, অতিথি লেখক, ইসলাম
সঠিক নিয়মে ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে, এটাই ইসলামের নির্দেশ, ছবি: সংগৃহীত

সঠিক নিয়মে ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে, এটাই ইসলামের নির্দেশ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বলা হয়, বাঙালি জাতি অন্য জাতির থেকে একটু বেশি আবেগপ্রবণ। তবে আবেগি হওয়া দোষের কিছু নয়। কিন্তু বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে অতি আবেগি হয়ে কোনো কাজ করলে তা অনেক সময় ভয়ানক হতে পারে। তাই আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্কতা কাম্য।

আমরা জন্মসূত্রে মুসলমান। আমাদের পূর্বপুরুষরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন, তাই আমরাও মুসলিম। মহান আল্লাহতায়ালা, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন, যার মধ্যে সঠিক জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর কোরআন মাজিদের ব্যাখা হিসেবে রয়েছে নবী কারিম (সা.)-এর হাদিস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা ইসলামের পথ থেকে সরে এসে হয়েছি বিপথগামী। ইসলাম ধর্মের সঠিক দিক-নির্দেশনাগুলো আজ আমাদের মধ্যে নেই।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামের মানুষজন ধর্মের প্রতি বেশি আবেগপ্রবণ। গ্রামগুলোতে ঘুরলে দেখা যাবে পাড়ায় পাড়ায় প্রচুর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মসজিদগুলো ফাঁকা। আমাদের মনে হয় বুঝি নামাজ শুধু শুক্রবারের জন্যই। কিন্তু শীতের মৌসুমে শুক্রবারেও মসজিদে মুসল্লির উপস্থিতি খুব কম। এতেই পরিষ্কার যে, আমাদের ঈমান কত দুর্বল। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ফরজ ইবাদত। আর আমরা সেই নামাজ বাদ দিয়ে নিজেদের সাচ্চা মুসলমান বলে পরিচয় দিই।

সমাজে একশ্রেণির লোক আছে যারা ধর্মকে শুধু মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। তারা মনে করে, ইসলাম ধর্ম মসজিদ পর্যন্তই। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়েই একে অন্যকে নিয়ে গিবত ও পরচর্চা শুরু করি। কীভাবে অন্যের বারোটা বাজিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করা যাবে সেই চিন্তায় মগ্ন হই। ইসলাম এটা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

আধুনিকতার নামে আমাদের সমাজ আজ বেপর্দা, অশ্লীলতায় ভরপুর। বাইরে বের হলেই অস্বাভাবিক পোশাকে চলে অবাধ অশ্লীলতা। এমন চিত্র শহরে প্রকট, ইদানীং গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। টিকটক, লাইকি, স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক ইত্যাদি অনলাইন বিনোদন সাইটগুলোতে বোরকা-হিজাব পরা মেয়েদের নোংরামিতে ছয়লাব। এগুলো শুধু ধর্মকেই কলঙ্কিত করছে না বরং সমাজেরও অধঃপতন ঘটাচ্ছে।

ফেসবুক খুললেই দেখা যায় ইসলামি চিন্তাবিদদের শিক্ষামূলক ভিডিও থেকে শত শত ক্লিপ বানিয়ে বিভিন্ন আইডি এবং পেজ থেকে আপলোড করা হয়েছে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে সেগুলোর ভিউ (কতসংখ্যক লোক ভিডিওটা দেখেছে) যদি হয় ৫০ হাজার, তাহলে লাইক, কমেন্ট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মানে অধিকাংশ লোক ভিডিও না দেখে শুধু রিয়্যাক্ট করে পার হয়ে যায়। কিন্তু উচিত ছিল ভিডিওগুলো দেখে সেখান থেকে নিজের ঠিক ভুল যাচাই করা। আসলে আমাদের জানার আগ্রহ কম, মানার আগ্রহ বেশি। আরেক শ্রেণির ধর্মপ্রচারক আছে দেশে, যারা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে।

বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একদিকে সুখবর, মুসলমানদের জন্য আনন্দের, ঠিক তেমনই যথেষ্ট শঙ্কারও। কারণ কাফের-মুশরিকরা ইসলামের লেবাস পরে মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিশ্ব ভ্রাতৃত্বকে নষ্ট করার পায়তারা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। ধর্মকে নিয়ে উসকানিমূলক কোনো বিষয়গুলো যতটা সম্ভব এরিয়ে চলার পাশাপাশি নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এ বিষয়ে ইসলামের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে ইসলাম গোছানো, পরিচ্ছন্ন শান্তির ধর্ম। সবসময় সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করতে হবে। সঠিক নিয়মে ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে। কোরআন মাজিদ অধ্যয়ন করতে হবে, সুন্নত পালন করতে হবে, অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই বিশ্বে সত্যিকারের ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে। আমাদের ব্যক্তিজীবনও সুন্দর হবে এবং পরকালে সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার পাব। তাই আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে ধর্ম পালন করুন।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে নেক হয়ে সঠিক পথ বেছে চলার তওফিক দান করুক।

;