নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আলোচনা সভা

আলোচনা সভা

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে সারাদেশে ১৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার শতকরা ৭১ শতাংশ। মৃত্যুহার বিবেচনা যা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। এ বছর দেশের সাত জেলায় নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) মহাখালী আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ক অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০০১ সালে প্রথম দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ভাইরাসজনিত এ রোগে এখন পর্যন্ত সারাদেশের মোট ৩৪টি জেলায় ছড়িয়েছে। রোগটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৯ জন আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ২৪০ জন।

অনুষ্ঠানে ওয়ান হেলথের কো-অর্ডিনেটর ড. নিতিশ দেবনাথ বলেন, স্বাভাবিকভাবে খেঁজুরের কাঁচা রস খাওয়া রিস্ক ম্যাটার। খেঁজুরের রস কাঁচা খাওয়া যাবে না- এই মেসেজটা আমাদের দিতে হবে। নিপাহ ভাইরাস বাদুড় থেকে খেঁজুরের রস সেখান থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এটা কমপ্লেক্স প্রক্রিয়াতেও ঘটতে পারে। বাদুড়ের খাওয়া ফল শূকর, আর শূকর থেকে নিপাহ মানুষে ছড়িয়েছে- এমন ঘটনাও আছে। এই রোগটি ‘প্যান্ডমিক পটেনশিয়াল’। তাই সতর্ক না হলে দ্রুত বিস্তার করবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) ডা. আবুল হোসেন মঈনুল হোসেন, আমরা যতদিন আইনি বিধির মধ্যে না আনবো তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। খাবেন না বললেই মানুষ খেঁজুরের রস খাবে না তা নয়। এই বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় কিনা তা আইইডিসিআর বিবেচনা করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, আমরা যে তথ্যটা দিয়েছি তা কনফার্ম কেইস। আমরা নিশ্চিত না সমসাময়িক সময়ে যারা মারা গেছেন তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি-না। আমাদের কেইস শনাক্তে আরও জোর দিতে হবে। যেহেতু এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই মানুষের কাছে এর তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে হবে। এর লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা যে কয়টা সার্ভিলেন্স কাজ পরিচালনা করি তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে নিপাহ সার্ভিলেন্স। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিপাহ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আমরা জ্বর ও খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাসে আটকে আছি। মালয়েশিয়া ও ভারতের কারণের সাথে আমাদের মিল নেই। লক্ষণীয় বিষয় খেজুরের রস নেই এমন দেশেও নিপাহ সংক্রমণ ঘটছে। অর্থাৎ অন্য সোর্স থেকেও ঘটছে। তবে আমাদের দেশে এখনও তা পাওয়া যায়নি। কিন্তু হতে পারে না, তেমন নয়।

তিনি আরও বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই দ্রুত শনাক্ত হলেই বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আর যারা বেঁচে যান তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। তারা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অর্থাৎ প্রতিরোধ ছাড়া নিপাহ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আমরা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হই। নিজে না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও যখন রস উৎসব বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে থাকি তখন ঠিকই খাচ্ছি। এটি বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

হাসপাতালে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিপাহ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে চায় না। কেননা সেবাদানকারী ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় হাসপাতাল শাখাকে বলব সকল হাসপাতালে চিঠির মাধ্যমে একটি ওয়ার্ড ডেডিকেটেড করা। যেন রোগীকে আইসোলেটেড করা যায়। আমরা করোনার সময় পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছি। আমরা তা অনুসরণ করতে পারি।

   

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় চাই বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাস্তবভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তামাকের ক্ষতিহ্রাস কৌশল অবলম্বন করতে হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকেরা।

সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘পলিসি ফর প্রোগ্রেস: টুওয়ার্ডস হার্ম রিডাকশন’ গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় ধূমপান ছাড়তে উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য খাতে কার্যকর ও টেকসই পরিবর্তন আনার ব্যাপারে জোর দেন তারা। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন দেশি-বিদেশি শিল্প, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের নীতি প্রণেতা ও বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, টোব্যাকো হার্ম রিডাকশন (টিএইচআর) একটি জনস্বাস্থ্য কৌশল; যার লক্ষ্য হলো প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমানো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে তুলনামূলক কম ক্ষতিকর বিকল্পের ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ক্ষতিহ্রাসের ধারণা অনুযায়ী, ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করা প্রত্যাশিত লক্ষ্য হলেও তা হঠাৎ করে অর্জন করা সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং এখানে প্রয়োজন সরকারি- বেসরকারি খাতের সমন্বয়। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক বিকল্প উপায় গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা কার্যকর পদ্ধতি। একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় টিএইচআর-এর ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ডসহ একাধিক দেশ টিএইচআর গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে এনেছে।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও গ্রিসের পাত্রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো ডা. কনস্টান্টিনোস ফার্সালিনোস বলেন, ধূমপানের ক্ষতিহ্রাসে ভেপিংসহ অন্যান্য কুইটিং টুলস-এর সহযোগিতা নেওয়া উচিত। তুলনামূলক কম ক্ষতিকর বিকল্প ব্যবহারে কমে আসবে ক্ষতির হার। একই সঙ্গে ভেপিংয়ের মতো বৈপ্লবিক একটি প্রযুক্তিক বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিলে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় ব্যাপকহারে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, দীর্ঘদিনের অভ্যাস ত্যাগ করা বেশ কষ্টকর। বিশেষ করে ধূমপানের অভ্যাস হঠাৎ করেই বন্ধ করা যায় না। তামাক ছাড়ার পণ্যগুলোর (কুইটিং টুলস) মাধ্যমে ধীরে ধীরে আসক্তি পুরোপুরি ত্যাগ করা যায়।তিনি আরও বলেন, টিএইচআর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।

বক্তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারে ভেপিং। একে নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এলে রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস হিসেবে এর আবির্ভাব হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান শিকদার বলেন, ‘ধূমপানের হার কমিয়ে আনলে কমে যাবে ধূমপানের কারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ও। পাশাপাশি, টিএইচআর কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ও বাড়ানো সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘টিএইচআরকে রেগুলেশনের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। এ নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে।

বক্তাদের মতে, দেশের চলমান অগ্রগতি বজায় রাখতে ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক নীতি প্রণয়নে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ জরুরি। ক্ষতিহ্রাস সহায়ক পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর মাধ্যমে তা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন লাখ লাখ ধুমপায়ী সিগারেট ছাড়তে উৎসাহিত হবে, তেমনি রাজস্বের নতুন খাত তৈরি হবে।

এ ব্যাপারে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহিম বলেন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ,সুইডেনসহ কয়েকটি দেশ ধূমপানের হার কমাতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার সুফলও পেয়েছে এসব দেশ। জনস্বাস্থ্যের উন্নতি করতে বাংলাদেশকে এসব উদাহরণ আমলে নিতে হবে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এসব দিক বিবেচনায় রাখা জরুরি।

;

দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ২৫ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকে। তবে এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগই জানেন না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিরপুর অডিটোরিয়ামে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আরও বলেন, উচ্চ রক্তচাপ একটি নিরব ঘাতক। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি অন্যতম এবং মারাত্মক ঝুঁকি। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগসমূহ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য জনগণ এবং চিকিৎসকসহ সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করা প্রয়োজন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বক্তব্য রাখেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।

;

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেডিটেশন



ফাহমিদা ইসলাম ফারিয়া ও রাহুমা ইসলাম নাবা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মেডিটেশন হলো মনের ব্যায়াম। নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলন বাড়ায় মনোযোগ, সচেতনতা ও সৃজনশীলতা। মনের স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে। প্রশান্তি ও সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘটায় অন্তর্জাগৃতি।

প্রফেসর ডা. স্টিভেন লরিস নিউরোসায়েন্স গবেষণায় বর্তমান বিশ্বে নেতৃস্থানীয় গবেষকদের একজন। ব্যক্তিজীবনে তিনি খুব সংকটময় একটা সময়ে মেডিটেশন ও ইয়োগা চর্চা শুরু করেছিলেন। অতঃপর সফলভাবে ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠেন। ২০২১ সালে প্রকাশিত তার 'দ্য নো-ননসেন্স মেডিটেশন বুক : অ্যা সায়েন্টিস্ট’স গাইড টু দ্য পাওয়ার অব মেডিটেশন' বইতে তিনি বলেন, 'প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় আমি ঘুম থেকে উঠি। এরপর ইয়োগা করি এবং একঘণ্টা মেডিটেশন করি। এটি সুনিশ্চিতভাবেই স্ট্রেস কমায়। মেডিটেশন হতে পারে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার পরিপূরক।'

আরেক চিকিৎসক প্রফেসর ডা. ডেভিড আর স্যান্ডওয়েস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ্ হেলথের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। ২০১৮ থেকে তিনি মাইন্ডফুলনেস নিয়ে নানাবিধ কার্যক্রমে জড়িত।

তিনি বলেন, 'একবার মৃত্যুপথযাত্রী এক শিশুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। বুঝতে পারলাম, বছর পেরোনোর আগেই হয়তো শিশুটির মা-কে তার সন্তানের মৃত্যুর সংবাদটা জানাতে হবে। উপলব্ধি করলাম, এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে আমি এখনো প্রস্তুত নই। মেডিকেল স্কুলগুলো আমাদের চিকিৎসক হিসেবে দক্ষ করে তুলেছে। কিন্তু শেখায়নি কীভাবে আমরা হারানোর বেদনা, ভুলভ্রান্তির পরাজয়ের মুহূর্তগুলোকে মোকাবিলা করব। ফলে শোক আর অনিশ্চয়তা কখনো কখনো সুনামির মতো ভর করে। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা হাসপাতালে কাজের পর স্থির থাকাও কঠিন। তাই মানসিক স্থিরতার জন্যে চিকিৎসকদের মেডিটেশন চর্চা প্রয়োজন।'

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফিজিশিয়ানস্ ফাউন্ডেশন ২০২৩ সালে একটি জরিপ চালায়। এর তথ্য মতে, প্রতি ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৬ জন বার্ন-আউট বা ক্ষোভে-অবসাদে ফেটে পড়ার মতো অনুভূতিতে ভোগেন প্রায়শই। ৭৫ শতাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী ভোগেন তীব্র বিষণ্ণতায়। ৫৫ শতাংশ বলছেন, তারা হতাশ এবং জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পান না।

উল্লেখযোগ্য একটি জরিপ বাংলাদেশেও হয়েছে। ২০২০ সালে প্রকাশিত দ্য অফিসিয়াল জার্নাল অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ ঢাকার একটি প্রবন্ধে বলা হয়, এদেশের ৪০.৮ শতাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং-এর ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, ডিপ্রেশনের কার্যকরী সমাধান হলো মেডিটেশন। ধ্যানী চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি বেশি মনোযোগী।

২০২০ সালে চীনে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা হয়। এতে ১০৬ জন চিকিৎসককে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপকে আট সপ্তাহব্যাপী মেডিটেশন প্রোগ্রামে যুক্ত করা হয়। আরেকটি গ্রুপ তাদের চিরাচরিত রুটিনেই জীবনযাপন করেন। দেখা গেছে, ধ্যানী চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠেছেন। রোগীর সাথে কথোপকথনে তারা আগের চেয়ে মনোযোগী।

যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার স্কুল অব মেডিসিন এন্ড ডেন্টিস্ট্রির প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ, লেখক ও কমিউনিকেশন এন্ড মাইন্ডফুল প্র্যাকটিস ইন মেডিসিনের শিক্ষক রোনাল্ড এম. এপস্টেইন বলেন, 'চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে যারা মেডিটেশন করেন, তারা রোগীদের সাথে কথা বলায় অধিক মনোযোগী। পেশাগত ত্রুটি শুধরে নিতে আন্তরিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তৎপর। পেশাগত চাপ তাদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না।'

বিশ্ব জুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। শারীরিক মানসিক সামাজিক ও আত্মিক অর্থাৎ সুস্থ থাকতে মেডিটেশন বা ধ্যানের কার্যকারিতা এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত।

পুরো বিশ্বের মত আমাদের দেশেও দিনদিন মেডিটেশনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য বিদ্যমান চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিটেশন যে প্রয়োজন, সেই পরামর্শ এখন চিকিৎসকরা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি যোগ-মেডিটেশনকে স্বাস্থ্যসেবার পরিপূরক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশে ২১ মে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রতিবছর বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে প্রাণায়াম বা দমচর্চা, প্রত্যয়ন পাঠ ও মেডিটেশন চর্চার আয়োজন করে থাকে। গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে দিনটি।

সময় এসেছে নিজের দিকে তাকানোর- আপনি কি রোগী হওয়ার পর মেডিটেশন শুরু করতে চান? নাকি এখনই? আজই সিদ্ধান্ত নিন।

;

ঢামেক হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করা হবে: নাছিম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীতকরণের উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে।

এ ছাড়া হাসপাতালের শূন্যপদে নিয়োগ, নতুন পদ সৃষ্টি, হাসপাতালের মূল প্রবেশ মুখে হকার উচ্ছেদ, হাসপাতালের যুগোপযোগী পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করাসহ নানা বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটি কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার ঐকান্তিক ইচ্ছা, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, সততা ও ভালোবাসার যে নিদর্শন ও আন্তরিকতা, তা বিরল। আমরা যদি তার দিকে তাকিয়ে সবাই একটু একটু করে পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে সে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাছিম বলেন, আমরা চাই, প্রতিটি মানুষই চিকিৎসা পাক। একজন মানুষও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে পতিত হোক, সেটি আমরা চাই না। এটি জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি বৈষম্য দূর করার জন্য, মানুষের দরিদ্রতা কমিয়ে আনার জন্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এবং মানুষের চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো ব্যয় করে যাচ্ছেন।

ঢাকা-৮ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের সব মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার আস্থার জায়গা। বাংলাদেশের কোথাও যে রোগী চিকিৎসা পান না, তিনিও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কখনো ফেরত যান না। নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষের জন্য কাজ করেন। তবে রোগীরা যাতে আরো ভালো স্বাস্থ্যসেবা পান, ডাক্তার নার্সসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেজন্য আরো সচেষ্ট হতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২শ ৫০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১ হাজার ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন এবং ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২ হাজার ৬শ শয্যায় উন্নীত করেন।

বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১শ ২০টি আইসিইউ বেড আছে। এটি যাতে আরো উন্নত ও বিস্তৃত চিকিৎসা সেবা দিতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক কোনো দালাল চক্র থাকবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তাদের নির্মূল করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোনো অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট যাতে না থাকে, সেজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহন করবে।

হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় উল্লেখ করে নাছিম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সেজন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এবং এনজিওর সমন্বয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাহাউদ্দিন নাছিম, ছবি- বার্তা২৪.কম

উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা সম্মিলিতভাবে সবাই কাজ করুন। সরকারের এক্ষেত্রে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ ও চিকিৎসা সেবা যাতে রোগীদের দিতে পারি, সে জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আরো সুনামের জায়গায় ও সমৃদ্ধির জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেশে যারা বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেন, তাদের সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এরা গুজব রটিয়ে ও নানা অপকর্মের মাধ্যমে সব সময় দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করে, তখন দেশবিরোধী অপশক্তির মাথা খারাপ হয়ে যায়৷ এই অপশক্তি বিএনপি-জামাতকে কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।

সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

;