হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ক্যাম্পাস
অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান হলে অবস্থান করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে হলের প্রাধ্যক্ষরা জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা চাইলে হলে থাকতে কোন বাধা নেই।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জরুরি এক সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের আজ বিকেল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
হলে থাকার প্রসঙ্গে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জয় রায় বলেন, আমরা হল ছাড়ছি না। প্রাধ্যক্ষ স্যারও থাকার পক্ষে। তাছাড়া হলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখানে টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের দাবি, পরিবহন ব্যবস্থা যেন অবিলম্বে চালু করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার জানান, প্রশাসন থেকে হল ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, গতকাল হল বন্ধের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যদি হলে থাকতে চায়, মনে হয় না কোন সমস্যা হবে। আমি শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিব।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ জিয়া উদ্দিন বলেন, হল কেন্দ্রিক কোন ঝামেলা না হলে প্রশাসন হলের শিক্ষার্থীদের বের করে দিবে না। তাই শিক্ষার্থীরা চাইলে হলে অবস্থান করতে পারবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে রাতভর বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ৩ জনকে সাময়িক (এক বছর) বহিষ্কার এবং দুইজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
রোববার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে আল-ফিকহ এন্ড লিগাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অপু মিয়ার সাথে র্যাগিং সংক্রান্ত ঘটনার যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির ১৩তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাগর প্রামাণিক (২০২১-২২), একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. উজ্জ্বল এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুদাসসির খান কাফিকে (২০২১-২২) এক বছর তথা দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হলো।
এছাড়াও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকায় অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ মাসুম ও আইসিটি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিসনো আল আসনাওয়ীকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশে বহিষ্কার করা হয়েছে সাময়িকভাবে। তবে তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা যৌক্তিক কিছু পেশ করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে তবে অভিযোগ থেকে খালাস পাবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্ হলের ১৩৬ নম্বর গণরুমে রাতভর বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে সিনিয়র তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এবং আরও দুইজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে অভিযোগের সত্যতা পায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারই প্রেক্ষিতে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির ১৩তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সব বিদায়ই বেদনার! আর এই বেদনার মধ্যে আরেকটু বেদনা যুক্ত হলে তা বহন করা আরো কঠিন হয়ে যায়! ঠিক তেমনই ভারাক্রান্ত মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম ব্যাচের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
২০২৩ সালে বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত এবং দু'বছর আগে একই ব্যাচের ফাবিহা সুহার অকাল মৃত্যুতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বিদায় ক্ষণে!
বিভাগের প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ব্যাচ ছিল ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের।
এসময় সব শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেলেও তাদের সবার কথার মধ্যেই যেন একটা বেদনা বিরাজ করছিল। গ্রাজুয়েশন শেষে আনন্দে বিভোর থাকলেও দিনশেষে তাদের থেকে চিরবিদায় নেওয়া দুই সহপাঠীকে স্মরণ করেছেন বার বার!
শনিবার (১ জুন) ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নওরীন এবং সুহার স্মরণে ‘এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া’ নামে বিশেষ কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে সহপাঠীরা ‘স্টিকি নোটস’ দিয়ে স্মৃতিচারণ করেন দুই সহপাঠীকে।
রওজা নামে এক সহপাঠী লেখেন- ‘নওরীন তুমি আমার প্রথম দিনের বন্ধু। তোমায় খুব মিস করি। আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিক’।
উর্মি নামে আরেক সহপাঠী লেখেন, ‘এমন কোনোদিন নেই যেদিন তোদেরকে মনে করি না আমরা। তোরা ছাড়া নন্দিনী অপূর্ণ। অনেক অনেক দোয়া সোহা এবং নওরীনের জন্য’!
এছাড়াও নাম-পরিচয় ছাড়া তাদের সহপাঠী, জুনিয়ররা ক্ষুদ্র চিরকুট লাগিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তাদের।
কথাগুলো ছিল এমন- ‘হৃদয়ের কাতারে ওঠে ব্যথা, খুঁজে বেড়ায় নওরীন আপুর আভা’, ‘ওপারে ভালো থাকুন আপনারা’, ‘আপনারা এখানে থাকলে পরিবেশটা ভিন্ন হতো’, ‘আপু আপনি ফিনিক্স পাখি হতে চেয়েছিলেন, উড়ে গেলেন দিগন্তে’!
এমন আরো অনেক কথায় তাদের স্মরণ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি, মায়ের ওপর অভিমান করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজবাড়িতে গলায় ফাঁস দেন ফাবিহা সুহা। পরে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও ২০২৩ সালে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় সাভারের আশুলিয়ায় নওরিন নুসরাত ছয়তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
দেশে থেকেই যুক্তরাজ্যের ডিগ্রি অর্জনে দুই প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সই
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ক্যাম্পাস
যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য ও সম্মানজনক ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের (ইউক্ল্যান) সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবি)।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের বাইরে না গিয়ে কম খরচে যুক্তরাজ্যের ডিগ্রি অর্জনের নতুন দ্বার উন্মোচনের লক্ষ্যে দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ চুক্তি সই হয়েছে।
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানে ইউসিবি ক্যাম্পাসে এ উপলক্ষে একটি চুক্তি সই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইউসিবি'র চেয়ারম্যান ও বোর্ড অব ডিরেক্টরস বব কুন্দানমাল এবং ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ক্যাথেরিন জ্যাকসন।
নতুন চুক্তির ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখন থেকে দেশে থেকেই যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, এমপি, ইউসিবি'র পরিচালক জারিফ মুনির এবং এসটিএস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মানস সিং।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান ইউসিবি'র প্রেসিডেন্ট ও প্রভোস্ট অধ্যাপক হিউ গিল।
এ উদ্যোগের প্রশংসা করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি বলেন, ‘শুধুমাত্র দেশেই নয়, পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়োপযোগী দক্ষতায় আমাদের তরুণদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত কর্মশক্তিকে সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। ইউসিবি ও ইউক্ল্যানের মধ্যে অংশীদারিত্ব বৈশ্বিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি অনন্য উদাহরণ। খাতসংশ্লিষ্ট অন্যান্যদেরও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের ডিগ্রি অর্জনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে, ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গঠন করছে। যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে নিবেদিতভাবে কাজ করছে এবং বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরিতে কাজ করছে।
ইউসিবির চেয়ারম্যান ও বোর্ড অব ডিরেক্টরস বব কুন্দানমাল বলেন, ইডসিবি-তে ইউক্ল্যান প্রোগ্রাম অ্যাকাডেমিক সাফল্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের চমৎকার সমন্বয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
ইউসিবি-তে আমরা রূপান্তরমূলক শিক্ষার সুযোগের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব ও উদ্ভাবক তৈরি এবং তাদের পরিচর্যায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা মনে করি, ইউক্ল্যান প্রোগ্রাম বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সহায়তা করবে এবং তাদের শিল্পখাতে প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ উন্মোচন করবে। এ উদ্যোগ যোগ্য শিক্ষার্থীদের জন্য দেশেই মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ তৈরির গুরুত্বকে আরো জোরদার করে তুলবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পরিবহন চত্বরে কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৯টি বাস। অযত্নে পড়ে থাকায় বাসগুলোর চাকা দেবে গেছে মাটির সঙ্গে আর মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে কিছু বাসের।
বাসগুলোকে সচল করা কিংবা নিলামে তুলতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। প্রশ্ন এসে যায়, তবে কি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে অবহেলায় নষ্ট করা হচ্ছে!
পরিবহন দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বাসের নিলামের সময় বাজার মূল্যের থেকে কম দামে কিনতে একটা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে কারণে, সমালোচনার ভয়ে প্রশাসকেরা সাধারণত চান না, নিজের সময়ে নিলাম হোক।
এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ও ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকছিদুল হক।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়েল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পেছনে তিনটা এবং পরিবহন দপ্তর এলাকায় পড়ে রয়েছে আরো ছয়টা অচল বাস।
বাসগুলোর কোনোটির বিভিন্ন অংশের গ্লাস ভাঙা। কোনোটির চাকা মাটির নিচে দেবে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বাসগুলোর ভেতরে-বাইরে জমেছে ধুলো-ময়লার স্তূপ। ধরেছে মরিচা! খসে পড়েছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ! ভেঙে গেছে অনেক সিটও।
পরিবহন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ, ২০১৮ সালে নিলামের মাধ্যমে ৫টি অচল বাস বিক্রি করা হয়। তবে, ওই বাসগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন ৫টি অচল বাস বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছিল ৫ লাখ টাকার বেশি। এর আগের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১-১২ সালের দিকে।
২০১৬ সালের পর থেকে অচল হওয়া গাড়িগুলোই বর্তমানে পড়ে আছে। চেসিস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মূলত গাড়িগুলোকে অপসারণযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, পুরনো বাসগুলোর যন্ত্রাংশ বাজারে না পাওয়া ও জ্বালানি খরচ বেশি, মেরামতের খরচ বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলোকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অনেকদিন ধরে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ও ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকছিদুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাধারণত বেশিসংখ্যক অচল গাড়ি যখন একসঙ্গে জমা হয়, তখন নিলাম ডাকা হয়।
এটা সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর পর পরই হয়। কারণ, ২-১টা গাড়ির জন্য নিলাম প্রক্রিয়ায় গেলে বেনিফিট কস্টের (সুবিধার্থে ব্যয়) দিক থেকে সুবিধা হয় না। আর সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার কিছু প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়া আমরা প্রায় দুই বছর আগেই শুরু করেছি। তারপরও করোনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণেই আমরা এখনো প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি। শিগগিরই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করার দায়টা কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব গাড়ি তো ১০/১৫ বছর ধরে পড়ে থাকে না। দুই-চার মাস আগে অচল হয়েছে, এমন গাড়িও আছে। এছাড়া, একটা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া এবং তার খরচ আর ১০টা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া ও তার খরচ প্রায় এক।
এজন্য দুই-একটা গাড়ির জন্য নিলাম ডেকে খুব একটা সুবিধা হয় না আবার গাড়ির সংখ্যাটা বেশি নাহলে ভালো পার্টিও পাওয়া যায় না।
দু’বছর আগের নিলাম প্রক্রিয়া এখনো শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন সময় লাগে না, এটা ঠিক! কিন্তু এটা তো সরকারি সম্পত্তি। এখানে কোনো খুঁত রেখে কাজ করা যায় না। দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া শেষ করলে, পরে দেখা যায় যে, অনেকে বলবেন, ১০ লাখ টাকার জিনিস ৪ লাখে বিক্রি করা হয়েছে। এজন্য একটু সময় নিয়েই প্রক্রিয়াটা শেষ করা হয়েছে। এখন বিজ্ঞাপন পর্যায়ে রয়েছে।
এবিষয়ে পরিবহন দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিমা আখতার বলেন, ৫ মাস হলো আমি ওখানকার সভাপতি নিযুক্ত হয়েছি। এতদিনেও কেন অচল হওয়া বাসগুলো বিক্রি করা হয়নি, সেটা আমি জানি না। কয়টা বাস অচল হয়ে আছে, সেটাও জানি না। এই সময়ের মধ্যে এরকম (অচল বাস নিলাম) কোনো বিষয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো, বিষয়টা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমি নিজেও অনেক আগে পরিবহন দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। তখন দেখেছি, বাসের নিলামের সময় সিন্ডিকেট করে এমন দরপত্র বলা হয়, যেটা শুনে সবাই হাসবে বা অন্যরকম কিছু ভাববে। তাই, বিশ্বাসযোগ্য দাম না পাওয়া গেলে প্রশাসকদের সমালোচিত হতে হয়, এটা সত্যি!
তিনি বলেন, তাই বলে, এখন বাসগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিতে হবে না, এমন নয়। এগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি গত দেড় বছর ধরে বারবার বলে এসেচি। কারণ, এগুলো ফেলে রেখে তো কোনো লাভ নেই! কিছুদিন পরে দেখা যাবে যে, বাসগুলোর জিনিসপত্র আর কিছুই নেই! আবার জং ধরে নষ্ট হয়ে গেলে দাম আরো কম পাওয়া যাবে! বিক্রি বিলম্ব হওয়ার কারণ বিষয়ে দপ্তরটির উপদেষ্টা কমিটি ভালো বলতে পারবে।