একজন ফিরোজের দিন



জুলিয়ান সিদ্দিকী
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

আগস্ট মাস। এ মাসের একুশ তারিখটি বিশেষ একটি দিন। ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালি দিয়ে বেষ্টন করে রাখা আছে কালো রঙে ছাপানো  তারিখটি। এ দিনটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেদিন যে কোনো মূল্যে ফিরোজকে থাকতে হবে ঢাকায়। সেদিন তার হাত ভাঙুক কি পা ভাঙুক এমন কি ডায়রিয়া হয়ে বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও তাকে যেতে হবে সেখানে। বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে তাকে উপস্থিত থাকতে হবে নগর ভবনের সামনে।

তাদের গ্রামের ফরিদ সাহেব চাকরি করেন সেখানে। অনেক বড় চাকরি। দামী আর ইস্ত্রি করা শার্ট-প্যান্ট, পায়ে দামী চকচকে জুতো পরে তিনি মাঝে মধ্যেই গ্রামে আসেন। লোকজন তাকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। মানুষটি খুবই ভালো। গ্রামের বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে ফিরোজও মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল ফরিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। অনেক অনুনয় করে মা  ফরিদ সাহেবকে বলেছিলেন ছেলের জন্যে একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে। মানুষটি ভালো বলেই হয়তো একজন মায়ের আকুতিতে সাড়া দিতে দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলেন যে, আগস্ট মাসের একুশ তারিখ যেন তিনি ছেলেকে পাঠিয়ে দেন। সেদিন বিকেল চারটার সময় নগর ভবনের গেটে থাকবেন। সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন রতনের গ্যারেজে। পেটে-ভাতে সেখানে কাজ শিখবে আর রাতে সেখানেই ঘুমাবে। কাজ শেখা হয়ে গেলে ভালো বেতন পাবে ফিরোজ। তখন মাতা-পুত্রের খাওয়া-পরার অভাব থাকবে না।

স্কুল মাস্টার রজব ভাণ্ডারীকে জিজ্ঞেস করে ফিরোজ জেনে নিয়েছিল একুশে আগস্ট হতে আর কতদিন বাকি। সেদিনের পর থেকেই মাতা-পুত্র অপেক্ষা করছিল দিনটির জন্যে। দিনটিকে মনে রাখতে বাজার থেকে একটি এক পাতার সরকারি ক্যালেন্ডার কিনে এনেছে দশটাকা দিয়ে। তাতে লাল কালি দিয়ে একটি বৃত্ত এঁকে কালো অক্ষরের তারিখটিকে বন্দী করে দিয়েছেন মাস্টার।

হাটের দিন গাছ থেকে বেশ কটি নারকেল পেড়ে সে নিয়ে গিয়েছিল সিদ্ধেশ্বরী বাজারে। নারকেল বিক্রি করে বাজার থেকে ফিরে আসবার পথে পশ্চিম পাড়ার ছিরিপদ জিজ্ঞেস করেছিল, কিরে ফিরুজ্যা, একুইশ তারিখ হইতে আর কয়দিন?
- দুইদিন বাদেই।
হাস্যোজ্জ্বল মুখেই জানিয়েছিল ফিরোজ।
কিছুটা পথ একই সঙ্গে চলতে চলতে ছিরিপদ আরো বলেছিল, ঢাকা শহরডা অনেক সোন্দর রে! গণশার লগে যোগালির কাম করছিলাম কয়দিন।
- গণশা কইছে আমারে।
- ঢাকা শহরের খারাপ দিক হইল থাকনের জাগার খুব অভাব। এত বড়বড় দলান থাকলে হইব কী, ঘুমান-থাকনের বেশি জাগা নাই। পানি তো কিন্যা খাওনই লাগে, হাগদে মুত্তেও ট্যাকা লাগে!
ফিরোজ কী বলবে ভেবে পায় না। গ্রামে তো এ বাড়ি ও বাড়ি দু-চার পাঁচদিন থাকলেও কেউ কিছু বলবে না। এমন অনেক গেরস্থ আছে যাদের এক-আধটি ঘর বছরের বেশিরভাগ সময় খালিই পড়ে থাকে। একবার গণশার সঙ্গে সে নিজেও ঢাকা শহরের গুলশানে কাজ করতে গিয়েছিল। যে কয়েকটি দিন সেখানে ছিল, রাতের বেলা একটি ভাঙা দালানের বারান্দায় ঘুমাত। তাও কোনো কোনো রাতে চৌকিদার এসে লাঠির গুঁতো মেরে ঘুম ভাঙিয়ে দিত। তখনই সে জেনে গিয়েছিল যে, সত্যি সত্যিই ঢাকা শহর একটি কঠিন জায়গা।

ছিরিপদ নিজের বাড়ির দিকে যাবার আগে ফিরোজের একটা হাত ধরে বলল, তুই ভালোয় ভালোয় কাজ-কাম পাইলে আমার লাইগ্যাও খাইয়া পিন্দা চলনের মতন একটা কিছু ভাও করিস।
- আইচ্ছা আইচ্ছা, তুই চিন্তা করিস না!

আর দুদিন বাদেই একুশ তারিখ। ফিরোজের জীবনে খুব প্রত্যাশিত একটি দিন। ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে তার।

এমনিতেই ফিরোজের মা প্রতিদিন খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ে উঠোন-বার ঝাঁট দেন। রাতভর ঝরে পড়া শুকনো পাতাগুলোকে একখানে জড়ো করে একটি পুরনো বস্তায় পুরে রান্নাঘরে রেখে দেন। আর সেই শুকনো পাতার আগুনেই তাদের দুজনের খাবার রান্নাবান্না হয়ে যায়।

ভোরবেলা মায়ের উঠোন ঝাঁট দেবার শব্দে প্রতিদিনই ঘুম ভাঙে ফিরোজের। কিন্তু আজ কেন যেন মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই জেগে উঠেছে সে। আজকের দিনটার অপেক্ষাতেই ছিল সে। এ দিনটাতেই তাকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে দিয়েছেন ফরিদ সাহেব। দুপুর বারোটার দিকে কুটিলা স্টেশনে এসে থামবে ট্রেন। মিনিট দশেক জিরিয়ে নিয়ে ফের ছুটতে থাকবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। অতটা কম সময়ে টিকেট কাটা, খালি বগি খুঁজে ট্রেনে ওঠা খুবই ঝামেলার বলে মনে হয় তার কাছে। তাই খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বের হলে আগে আগে টিকেট পেতে সুবিধা হয়।

বিছানায় শুয়ে থেকেই সে মায়ের জেগে উঠবার শব্দ টের পায়। অনেক বছর ধরে সে পরিচিত এসব শব্দের সঙ্গে। মায়ের ঘুম ভাঙার পর বিছানায় উঠে বসা। মেঝেতে পা রেখে উঠে দাঁড়ানো। পরনের কাপড় গোছাবার শব্দ। তারপর ছোট ছোট পদক্ষেপে দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়া। হুড়কো খোলা। কাঠের দরজার পাল্লা টানবার সময় লোহার ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দ। পুকুর ঘাটে মায়ের কুলকুচা, গলা খাকারির শব্দ। শ্লথ পায়ে ফিরে আসা। মেঝেতে নামাজের পাটি বিছানো। সব শব্দই আলাদা করে চেনা আছে তার।

অন্যান্য দিন সকাল সকাল কাজে যাবার তোড়জোড় শুরু করলেও আজ কোনো তাড়া নেই বলে কেমন একটা আলসেমিতে পেয়ে বসে তাকে। অন্য দিনগুলোর মতো হাত-পা তেমন ছটফট করে না। মনের ভেতরও নেই কোনো রকম অস্থিরতার দাপানি। হয়তো মায়েরও তেমন কোনো তাড়া নেই আজ। ছেলে শহরে যাবে। সময়টা জানা আছে বলেই হয়তো উঠোন-বার ঝাঁট দেবার শব্দগুলো তেমন একটা জোরালো শোনায় না। ফিরোজ কোনো তাড়া বোধ করে না বলেই হয়তো ফের ঘুমিয়ে পড়ে। এক সময় মায়ের ডাকে দ্বিতীয় ঘুমটা ভেঙে যায় তার। কিন্তু ততক্ষণে বেশ বেলা হয়ে গেছে। সূর্যটাও তেতে উঠেছে অনেকটা। ঘামে ভিজে চিটচিটে হয়ে আছে গলার কাছটা।

ছেলেটা বেলা করে শহরে যাবে বলেই হয়তো মায়ের রান্নার আয়োজনটা অন্যান্য দিনের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন মনে হয়। অন্য সময় প্রতিদিন সকালে পান্তা খেয়ে সে কাজে যেত। আজ পান্তার বদলে নারকেল-চিড়ে আর গুড় দেখতে পেয়ে তার মনটা যেন আরো ভালো হয়ে যায়। বছর বছর গাছে নারকেল ধরলেও তা মাতা-পুত্রের ভাগ্যে খুব কমই জোটে। সংসারের অন্যান্য প্রয়োজনে প্রায় সবগুলোই বেচে দিতে হয়। ছোটবেলা থেকেই নারকেলের নাড়ু তার খুব পছন্দ। কখনো এমনি এমনি একটা দুটো নাড়ু কখনো বা মুড়ির সঙ্গে খেতে চমৎকার।

গুড়-নারকেল দিয়ে চিড়া মেখে খেতে খেতে সে লক্ষ্য করে যে, তার মা একটি গামছাতে কিছুটা শুকনো চিড়া আর কয়েকটি নাড়ু বেঁধে রাখলেন। তারপর তাকে দেখিয়ে বললেন, এইডা লগে লইয়া যাইস কইলাম!

ফিরোজ জানে, ট্রেনে বসে খিদে পেলেও যাতে অযথা পয়সা খরচ করে বাইরের খাবার কিনে খেতে না হয়, তার জন্যেই এমন ব্যবস্থা।

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কুটিলা স্টেশনে এসে অবাক হয়ে যায় সে। অন্যান্য সময় স্টেশনে এত মানুষ কখনো দেখেনি সে। ঈদ আর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের এক দুদিন আগে ছাড়া এমন ভিড় কখনো হয় না। এত মানুষ কেন ঢাকা যাবে বুঝে উঠতে পারে না সে। টিকেট কাটতে গিয়ে দেখে কেউ নেই সেখানে। ট্রেন চলে আসতেই কেমন হুড়মুড় করে লোকজন উঠতে থাকে। বগিগুলোতে জায়গা না পেয়ে জানালায় পা দিয়ে ছাদের ওপর উঠে যেতে থাকে কেউ কেউ। ফিরোজও টিকেট ছাড়া ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে। আস্তে আস্তে ছাদও পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পাশের কয়েকজনের আলাপ থেকে জানতে পারে তারা ঢাকা যাচ্ছে জনসভায় যোগ দিতে। আসলে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়েকে দেখতে, যিনি এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

এতক্ষণে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় ফিরোজের কাছে। কখনো বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, কখনো বা শেখ হাসিনা, কখনো বা প্রধানমন্ত্রী শব্দগুলো তার কানে এসেছে বহুবার। একজনই যে এই তিনটি নামে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত তা সে জানলেও চর্ম চোখে কখনো দেখেনি। একজন নারী হয়ে কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, না জানি তিনি দেখতে কেমন। যদিও মাঝে মধ্যে বাজারে কোনো কোনো পত্রিকায় বা কোনো পোস্টারে ছবি দেখেছে, কিন্তু মন তার ভরেনি। নিজের চোখে সামনাসামনি দেখা আর ছবি দেখার মাঝে অনেক ফারাক বলে বিশ্বাস করে সে। তাই অনেকদিন থেকেই ইচ্ছেটি তার মনের ভেতর ডালপালা ছড়িয়ে শক্ত পোক্ত হয়ে শিকড় গেড়ে বসেছিল। কিন্তু তেমন কোনো সুযোগ সে পায়নি। ট্রেন ছাড়বার আগমুহূর্ত পর্যন্ত লোকজনের টুকরো টুকরো কথায় সে জেনে গিয়েছিল যে, বিকেলের দিকে জনসভায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী। তখনই সে ঠিক করে রেখেছে যে, ফরিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে একবার জনসভায় যাবে। কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চাক্ষুষ করে যাবে একবার।

গ্রামের আকবর সওদাগরের মুখে অনেকবার শুনেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। শেখ হাসিনার কথা। ছোটবেলা থেকেই তাদের নাম শুনে শুনে ভালোবাসতে শিখেছে। শ্রদ্ধা-ভক্তি করতে শিখেছে। আকবর সওদাগরের কাছে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধার পাত্র-পাত্রী, তারা কোনো অংশেই ছোটখাটো মানুষ বা অল্প-স্বল্প ক্ষমতার মানুষ নন। এমন ধরনের মানুষদের সামনে থেকে দেখতে পাওয়াটাও অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে হয় তার কাছে।

চলন্ত ট্রেনের ছাদে হুহু বাতাস ফিরোজের বাবরি চুল নিয়ে খেলা করে। দুষ্টুমি করে চেপে ধরবার মতো চোখের দু পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। ট্রেনের দু পাশ দিয়ে পেছন পানে ধাবমান জনপদ ক্রমশ তাদের এগিয়ে নিয়ে যায় কমলাপুর স্টেশনের দিকে।

কমলাপুর স্টেশনটা অচেনা নয় ফিরোজের কাছে। তারপরও ট্রেনের ছাদ থেকে নামার পর নিজের মনোমতো হাঁটবার সুযোগ পায় না। স্রোতের মতো লোকজন নিজে চলতে চলতে সামনের আর দুপাশের লোকজনকেও যেন ঠেলতে থাকে সমান বেগে। যেন বাধভাঙা স্রোত সামনের ঘরবাড়ি, জমি ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে অবিরাম। সে সঙ্গে হালকা পাতলা হাতাহাতি ঠেলাঠেলি বাকবিতণ্ডা কোনোটাই থেমে নেই। ফলে একটা গমগমে ভাব ফুটে উঠেছে পুরো স্টেশন জুড়ে।

জনস্রোত ছুটে চলেছে দক্ষিণের কাচ লাগানো সদর দরজা লক্ষ্য করে। কিন্তু ডানে বামে বা আগে পেছনে মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না ফিরোজ। চলতে চলতে এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করে স্টেশনের বাইরে। হায় হায়, জনসভায় যাওয়ার জন্যে আসা দলটিকে আর দেখতে পাচ্ছিল না। মনেমনে খানিকটা হতাশ হলেও সে কান রাখে কে কী বলছে সেদিকে। কিন্তু কাউকেই যেন জিজ্ঞেস করবার প্রয়োজন দেখে না। একটি ছোটখাটো মিছিল আসে উত্তর দিক থেকে। নানা রকম শ্লোগানে শ্লোগানে বাতাস কাঁপাচ্ছিল। কিছু না ভেবেই মিছিলে ঢুকে পড়ে সে। যে ভাবেই হোক মিছিল তো জনসভাতেই যাবে। আর সেখানে একবার যেতে পারলে প্রধানমন্ত্রীকেও এক নজর দেখা হয়ে যাবে।

মিছিলের লোকজনের মুখে নানা রকম স্লোগান শুনতে শুনতে আর বিচিত্র সব মানুষের মুখ দেখতে দেখতে কখন যে সে জনসভায় পৌঁছে  যায় বুঝতে পারে না। কিন্তু এরই মাঝে অনেক মানুষ চলে এসেছে। সামনের দিকে বাঁশের ঘেরের ভেতর দুভাগ হয়ে বসে আছে অনেক নারী-পুরুষ। জনসভার সীমানা থেকে অনেকটা দূরে রঙ-বেরঙের শরবত বিক্রি করছে একটি লোক। ফিরোজের ইচ্ছে হয় বের হয়ে গিয়ে এক গ্লাস শরবত খেয়ে আসে। কিন্তু বের হতে গিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে নানা রঙের পোস্টার-ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে আসা নানা দলের ঠেলা ধাক্কায় বের হতে পারে না। নিরুপায় হয়ে সে সামনের সারিতেই মাটিতে বসে পড়ে। পাশের একজন বোতল থেকে পানি খেয়ে সেটা ফেলে রেখেই উঠে পড়ে সামনের দিকে আগায়। সে অবসরে ফিরোজ বোতলটা টেনে নিয়ে পানি খায় আর তখনই চারদিক থেকে মুহুর্মুহু ধ্বনি উঠতে থাকে, শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা!
পেছন থেকে কেউ একজন তার পিঠে খোঁচা দিয়ে বলে, এই মিয়া, চুপ কইরা আছো ক্যান?
ফিরোজ কিছু একটা বলবে বলবে ভাবতেই থেমে যায় শ্লোগান। পেছনের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পায় এরই মাঝে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। আরো পেছনের দিকে অনেক মানুষ হয়তো বসতে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশের উঁচুউঁচু দালানগুলোর ছাদেও মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো দালানের জানালায়ও দেখা যাচ্ছিল মানুষের মুখ।

প্রধানমন্ত্রী আসতে হয়তো এখনো অনেক দেরি। তাই তিনি আসবার আগে আগে সে চিড়া-আর নারকেলের নাড়ুগুলো খেয়ে নিতে পারে। ভাবতে ভাবতে সামনে গামছার পুটলিটা খুলে মেলে ধরে ফিরোজ। একটি নাড়ু মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে একমুঠ চিড়া-মুড়িও মুখে দেয়। আর খেতে খেতেই টের পায় যে, জবর খিদে পেয়েছে। এতক্ষণ মানুষের শ্লোগান, চিৎকার-ঠেলাঠেলিতে কিছু বুঝতে পারেনি। সামনের উঁচু জায়গাটা থেকে কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুসহ আরো অনেকের কথাই হয়তো বলছিল; যার অনেক কিছুই বুঝতে পারে না সে। খানিক বাদেই সেই উঁচু জায়গাটায় অনেক মানুষ উঠে আসে আর তখনই আবার চারদিক থেকে শেখ হাসিনা, জয়বাংলা চিৎকারে বিমূঢ় হয়ে যায় সে।

চারপাশ শান্ত হতেই সে পানি খেয়ে অবশিষ্ট চিড়া-মুড়ি আর নাড়ু পুটলিটা ভালো করে বাঁধে। কাঁধের ব্যাগে সেটা গুছিয়ে রাখতে রাখতে শুনতে পায় মাইকে খুব রাগী রাগী কণ্ঠে কেউ কিছু বলছে। লোকটির পেছনে সার বেঁধে চেয়ারে বসে থাকা মানুষগুলোর মাঝে অনেক ফুল যার পেছনে একজন খুব সুশ্রী মায়ের মতো মায়াবী চেহারার নারী উঠে এসে বসলেন। পাশের লোকটিকে ফিরোজ জিজ্ঞেস করে, শেখ হাসিনা ক্যাডায় গো?
- ওই যে, ফুলগুলার পিছনে দামী চেয়ারটায় বইসা আছেন। মাথায় ঘোমটা, চোখে সোনার চশমা।
তাইলে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কই?
কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেলেও আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না তার। বরং চিৎকার করে লোকটা মাইকে কী কী বলছে তা শুনতেই মনোযোগী হয় আরো। কিন্তু দু একটি শব্দ ছাড়া বেশিরভাগই তার কানে শব্দজট ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

তার আবার চিড়া-মুড়ি খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু ব্যাগে হাত দিলেও চিড়া-মুড়ির পুটলি বের করা হয় না তার। একটি বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে যায়। পরপর আরো কয়েকটি বিকট শব্দ শুনতে পায় সে। তারপরই যেন হাজার বছরের নৈঃশব্দ্য গ্রাস করে তাকে। উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই বুঝতে পারে হাত-পা অসাড় হয়ে আছে। চারপাশ অন্ধকার বলে বুঝতে পারছে না চোখ দুটো খোলা কি বন্ধ। এমন কি এও বুঝতে পারে না, সে বসে আছে কি শুয়ে আছে।

গলাটা বারবার শুকিয়ে আসছিল। পাশেই পানির বোতলটা ছিল কিন্তু হাত নাড়াতে না পারলে বোতল তুলবে কিভাবে? খুবই নিঃশক্তি লাগছিল তার। তাই শুয়ে পড়ে সেখানেই। পানি পিপাসা ছাপিয়ে যেন রাজ্যের ঘুম এসে জাপটে ধরে তাকে।

   

দুই দেশের রং মিলেছে এক দেয়ালে



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রঙের শহর, হাসির শহর ব্যাংকক। দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা শহর ব্যাংকক। ব্যাংককের প্রাণকেন্দ্র সিয়ামেই রয়েছে ব্যাংকক র্আট এন্ড কালচারাল সেন্টার (বিএসিসি)। বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যাংককে বেড়াতে যান, তারা যদি এমবিকে মলের পাশ দিয়ে স্কাই ওয়াক হয়ে তৃতীয় তলায় প্রবেশ করেন তাহলে হাতের ডানে চোখ ফেললেই দেখতে পাবেন বাংলাদেশের রঙের খেলা আর জীবনযাত্রার চিত্র।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গত ২৬ র্মাচ থেকে ব্যাংককের র্আট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও থাই চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘ড্রীম অব কালারস’ বা ‘রঙের স্বপ্ন’ র্শীষক চিত্র প্রর্দশনী। ‘কানেক্টিং টু ল্যান্ডস এন্ড টুপিপলস’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের নিমিত্তেই এই আয়োজন।


তৃতীয় তলার করিডোর ধরে হাঁটতেই চোখে পড়বে শিল্পী মুস্তাফিজুল হকের নিহঙ্গ। ওয়াসি পেপারের ওপর জাপানি ধরনের চিত্রকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ তিনি। ক্যানভাসের ওপর আর্কিলিকের চিত্রকর্ম ‘হর্স’ মনযোগ আকর্ষন করছিল দর্শনার্থীদের। তার চিত্রকর্মের বড় বৈশিষ্ট্য নাটকীয়তা এবং বিষয়ের গভীর উপস্থিতি।

নগরের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী কামাল উদ্দিনের জুড়ি নেই। তবে এখানে ব্যক্তির পোর্ট্রেট নয় বরং পেস্টেলে তবলার রং ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।

আবার থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলার শিক্ষক খাজোনসাক মাহাকুন্নাওয়ানের তুলিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নগরের জীবন। রিকশার সঙ্গে যাত্রীদের ছুটে চলা। সময়কে যেন পাশ কাটিয়ে ছুটে চলছে তার চিত্রকর্ম।


ঢাকার গ্যালারি চিত্রকের ১৮ জন শিল্পী এবং থামাসাত ইউনিভার্সিটির ফাইন অ্যান্ড এপ্লাইড আর্টস বিভাগের ৪ জন শিল্পীর যৌথ অংশগ্রহণে চলছে এই আয়োজন। চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গত ২৬ মার্চ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহা. আব্দুল হাই।

চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, দুটি দেশের ভূমি আর মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে এনেছে এই আয়োজন। চিত্রকর্মের মাধ্যমে যে যোগাযোগ সেটা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং আত্মার যোগাযোগ। শুধু দেশকে চেনায় না, বরং সেখানকার জীবনযাত্রার ধারণা দেয়, মানুষকে কাছে নিয়ে আসে।


ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাসের এই চিত্রপ্রদর্শনীতে রফিকুন্নবী, আব্দুস সাকুর শাহ, সৈয়দ আবুল বার্ক আলভি, শেখ আফজাল, মাহফুজুর রহমান, সুমনা হক, মুনিরুজ্জামান, জহির উদ্দিন, কনক চাপা চাকমা, বিপাশা হায়াত, মোহাম্মদ ইউনুস, সুলেখা চৌধুরী, রেজাউন নবী, কামাল উদ্দিন, পারভীন জামান, সুমন ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুল হক, আহমেদ সামসুদ্দোহার চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

এছাড়াও থাইল্যান্ডের চিত্রশিল্পী খাওজনসাক মাহাকুন্নাওয়ান, ওয়ারাপান সামপাও, জিরাতচায়া ওয়ানচান, প্রারুনরপ প্রিউসোপির চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

ব্যাংকক আর্ট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী শিল্প প্রিয় মানুষের আনাগোনা থাকে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারছেন দর্শনার্থীরা।

;

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসবিদ-দার্শনিক মুঈন উদ-দীন আহমদ খান জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চায় নিমগ্ন এক মনীষীর নাম। বাংলাদেশের বিদ্যাবৃত্তে ক্লাসিক্যাল চরিত্রের শেষ দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। 

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান (১৮ এপ্রিল, ১৯২৫-২৮ মার্চ, ২০২১) নির্জলা তথ্যভিত্তিক ইতিহাসের খোঁজে সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চার কষ্টসাধ্য দিনগুলো অতিবাহিত করেন নি। তিনি মনে করতেন, ইতিহাসের সত্য সন্ধান শুধু তথ্য আর যুক্তি ভিত্তিক নয়। প্রকৃত ইতিহাস মূলত ইতিহাসের দর্শন, ইতিহাসের পুনর্গঠন, কল্পনা, সমকালীন পর্যালোচনা ও ইনটুইশনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সান্নিধ্যে এলে সবাই এই সত্য টের পেতেন যে, ইতিহাস প্রধানত দর্শন ও সাহিত্যের সমধর্মীতায় বর্তমানের জ্ঞানতাত্ত্বিক ও বাস্তবতা ভিত্তিক সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণের এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার অপরিহার্য মাধ্যম। তাঁর স্বকীয় চিন্তার দ্যুতিতে তিনি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা চর্চা ও গবেষণায় একটি বিশিষ্ট ধারার প্রতিভূ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবং একটি পুরো জীবন সম্পূর্ণভাবে বিদ্যাচর্চার ধ্যানজ্ঞানে যাপন করেছেন। আর চট্টগ্রামের নিরিখে তিনি ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চা কাঠামোর আদি নির্মাতাদের অন্যতম। যেমনভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র ড. আবদুল করিম ছিলেন ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠাতা, প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ইংরেজির, ড. আর. আই চৌধুরী রাজনীতি বিজ্ঞানের, তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোবদ্ধ বিদ্যাচর্চা ধারার সূচনাকারী। চট্টগ্রামের আধুনিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের আদি মুঘলদের একজন ছিলেন তিনি।  

তিনি ছিলেন আড়ম্বরহীন জ্ঞানসাধক। নিজস্ব বিদ্যাবলয়ের বাইরে তাঁর কোনও আত্মপ্রচার বা আত্মগরিমা ছিল না। যদিও তাঁর জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার মতো যোগ্য লোকের সংখ্যা তাঁর আশেপাশে খুব বেশি ছিল না, তথাটি যারা তাঁর রচনা খেয়াল করে পড়েছেন এবং তাঁর সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কিংবা অনানুষ্ঠানিক পরিসরে আলাপ, আলোচনা, সংলাপ ও বিতর্কের সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন, কত ভাষা, কত বিষয়, কত তত্ত্ব ও তথ্যাদি সম্পর্কে অনায়াস দক্ষতা ও পা-িত্য ছিল প্রাচ্যদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের এই জ্ঞানতাপসের। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চুনতী গ্রামের আদিবাস আর পুরনো চট্টগ্রাম শহরের রুমঘাটা থেকে এই মান্যবর জ্ঞানবৃদ্ধের কাছ থেকে বিচ্যুরিত দীপ্তি কিছু কিছু অনুভব স্পর্শ করেছে দেশে-বিদেশে তাঁর কর্ম ও গবেষণা ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

তাঁর জ্ঞান, গবেষণা, মনীষা, বুদ্ধির দীপ্তি, বহু ভাষায় পারঙ্গমতা তাঁর সমকালে অন্য কারও মধ্যে বিশেষ পরিলক্ষিত হয় নি। বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চায় প্রবাদপ্রতীম ড. আহমদ হাসান দানি যে তিনজন ছাত্রকে গবেষণায় প্রণোদিত ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান তাঁদের একজন। অন্য দুইজন হলেন আবদুল করিম ও মোহর আলী। এই তিনজনই বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চায় সত্যিকারের মৌলিক অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষাজীবনে প্রথম বিভাগ, স্বর্ণপদক, ফেলোশিপ ও বৃত্তি লাভ করেন একজন মেধাবী ছাত্র রূপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর তিনি মোটেই থেমে থাকেন নি। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কানাডার বিখ্যাত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ফিরে এসে খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ড. আহমদ হাসান দানির তত্ত্বাবধানে ‘ফরায়েজি আন্দোলন’ বিষয়ে পথপ্রদর্শনকারী পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেন। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলের ‘ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এ রাজনীতি বিজ্ঞানের ‘সেমিনার ইন ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্স’ অধ্যয়ন করেন। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রখ্যাত প-িত, ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথের সান্নিধ্যে এসে বহুবিদ্যায় পারদর্শী হন। যে কারণে, পরবর্তী জীবনে তিনি ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাসকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, বিশেষত এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্সের ক্ষেত্রেও নিজের অবদান রাখেন এবং তাঁর গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তাঁর মূল-বিষয়ের বাইরের লোকজনকেও প্রবলভাবে আকর্ষণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন নেতৃস্থানীয় শিক্ষক যথাক্রমে মর্শন বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান বদিউর রহমান এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন শব্বির আহমদ তাঁর অধীনে পিএউচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

গবেষণা তত্ত্বাবধানে তিনি ছিলেন প্রচ- রকমের শুদ্ধতাবাদী। একটি প্রকৃষ্ট গবেষণার জন্য ¯œাতকোত্তর ও এমফিল পর্যায়ের গবেষকদেরও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নিয়োজিত করতেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে গবেষক হিসাবে স্বাধীনভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাঁর সাথে গবেষণার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ড. আফম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, “তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁর অনুমোদন নিয়ে কলকাতা, লক্ষেœৗ, দিল্লি, তুঘলকাবাদ, করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মক্কা ও মদিনা সফর করি।” কোনও মতে একটি ডিগ্রি দিয়ে দেওয়ার অসৎ পন্থার বিপরীতে গবেষণাকে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর করতে তিনি ছিলেন একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শুদ্ধতম তত্ত্বাবধায়ক। শেষজীবনে তাঁর সঙ্গে বা পরামর্শে যারা গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মানস গঠনে ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নির্মাণে তিনি শ্রমবিমুখ ছিলেন না। ঘন্টার পর ঘণ্টা তিনি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা বই-পুস্তক পর্যালোচনায় লিপ্ত হতেন। এমন চিত্র আমি নিজে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত কালে লক্ষ্য করেছি। কখনও নবাগত গবেষকদের তিনি অন্যান্য শিক্ষক ও গবেষকদের কাছে পাঠাতেন। তাঁর রেফারেন্সে একাধিক তরুণ গবেষক আমার কাছে এসে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাঁর রেফারেন্সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে কাজ করেছেন। একটি বস্তুনিষ্ঠ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করতে তিনি তত্ত্বাবধায়ত ও প্রণোদনাদাতা রূপে ছিলেন নিরলস।   

কঠোর তথ্যনিষ্ঠা ও শুদ্ধতার প্রতিফলন ঘটেছে মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের প্রতিটি রচনায়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধগুলো যে কারণে একই সাথে পাঠকপ্রিয় এবং অ্যাকাডেমিক জ্ঞান ভা-ারে মণি-মুক্তা তুল্য। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব ফরায়েজি মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল’ একটি পথিকৃৎ গবেষণা, যা ‘বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস’ নামে ইংরেজি থেকে অনূদিত হয়েছে। যে ফরায়েজি আন্দোলনকে ওয়াহাবি আন্দোলন বা তরিকা-ই-মুহাম্মদীয়া নামেই সবাই জানতো, তিনি তাঁর বহুমাত্রিক চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচিত করেন।  ফারায়েজি আন্দোলন যে কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল বাংলার মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক গতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রথম ও আদি প্রচেষ্টা, তিনিই সর্বপ্রথম তা প্রমাণ করেন। বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে উত্থিত এই আন্দোলনের গণমুখী চরিত্র, ঔপনিবেশিকবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার বিরোধী মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াকু মানসিকতার বিষয়াবলী তিনি ঐতিহাসিক তথ্য ও ধর্মতাত্ত্বিক মাত্রায় আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে উপস্থাপন করেন। বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ ও বৃহৎ ক্যানভাসে গবেষণার কৃতিত্বে তিনি এই বিষয়ে এবং ঔপনিবেশিক বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস বিনির্মাণের পথিকৃৎ প্রাণিত স্বরূপে সর্বমহলে সম্মানীত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে প্রকাশিত মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের গ্রন্থ ও প্রবন্ধে তিনি তাঁর মৌলিকত্বের ছাপ রেখেছেন। প্রতিটি লেখাতেই তিনি নিজস্ব চিন্তা ও বিশ্লেষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর লেখায় দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি বহুবিদ্যার প্রকাশ ঘটেছে। শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও গবেষণার বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাধারাকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত করার প্রয়াস। তিনি ছিলেন ধ্রুপদী দার্শনিকদের মতো সংলাপ-প্রবণ ব্যক্তিত্ব। কেউ আগ্রহী হলে কিংবা কারো প্রতি তিনি আগ্রহী হলে তাঁকে বা তাঁদেরকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হতেন। তিনি তথাকথিত অ্যাকাডেমিশিয়ানদের মতো বইয়ের পাতার শুকনো অক্ষরে বন্দি ছিলেন না, জ্ঞানবৃত্তের মানুষের সঙ্গে প্রাণবন্ত সংলাপ ও সংশ্লেষের মাধ্যমে সদা জীবন্ত ছিলেন। চট্টগ্রামে তো বটেই, বৃহৎ বঙ্গদেশে খুব কম সংখ্যক প-িতই এমন ছিলেন, যারা জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় অন্যকে প্রণোদিত করার ক্ষমতা ধারণ করতেন। ঢাকায় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এবং চট্টগ্রামে ড. আবদুল করিম, ড. আর. আই. চৌধুরী ছাড়া কম প-িতই ছিলেন, যারা শিক্ষার্থীদের প্রাণিত করার ক্ষেত্রে মনীষী মুঈন উদ-দীন খানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

জ্ঞানের সঞ্চার ও বিস্তারে তাঁর অসীম কষ্ট সহিষ্ণুতা, আগ্রহ ও বিনয় তাঁকে ক্লাসিক্যাল যুগের প্রাচীন জ্ঞানতাপসের আধুনিক প্রতিচ্ছবিতে পরিণত করেছিল। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে এসে আমি তা স্পষ্টভাবে অনুভব করি। আমি তাঁর সরাসরি ছাত্র ছিলাম না। এবং বয়সের দিক থেকে তিনি ছিলেন আমার চেয়ে কয়েক প্রজন্ম অগ্রগামী। তথাপি অশীতিপর বয়সে এসেও তিনি আমার কোনও লেখার প্রতি আগ্রহী হলে নিজে ফোন করে জানিয়েছেন। ডেকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিষয়টিকে তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে আরও সমৃদ্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেসব আলোচনায় জ্ঞানতত্ত্ব ও তুলনামূলক দর্শন সম্পর্কে তাঁর অতলস্পর্শী পা-িতের দীপ্তিমান প্রভার আঁচ পাওয়ার বিরল সুযোগ আমার হয়েছে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছিল, বহু তরুণকে তিনি গবেষণার দিক-নির্দেশনা ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মধ্যে পথ প্রদর্শনের একটি বিরল গুণ ছিল। আর ছিল জ্ঞানকে অকাতরে ছড়িয়ে দেওয়ার উদার মানসিকতা, যা আজকের অ্যাকাডেমিক প্রতিযোগিতার পঙ্কিল ও সঙ্কীর্ণমনা ধারার প্রেক্ষিতে অকল্পনীয় বিষয়। বড় মন ও মুক্ত মানসিকতার কারণে তিনি ‘বাংলাদেশের লিলিপুট প-িতদের সমাবেশে’ মহীরূহ-সম ব্যক্তিত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন।   

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের মতো বিটপী ব্যক্তিত্বকে দৃশ্যপটে রেখে আজকের ক্ষুদ্রতর পরিসরে আলোচনা করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানের ঊন-মানুষ ও ঊন-মানসিকতার পরিম-লে তাঁর মতো বড় মানুষের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। তিনি এবং তাঁর সমগোত্রীয়রা শেষ মুঘলের মতো দৃশ্যপট থেকে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রেখে গিয়েছেন ধ্রুপদী ঐতিহ্য, ব্যক্তিত্বের দীপ্তি ও বিভা। তিনি ছিলেন প্রথম প্রজন্মের আধুনিক বাঙালির হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে সকল অগ্রণী প-িত, গবেষক ও শিক্ষাব্রতীগণের শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বল প্রতিনিধি, যারা  জাগতিক প্রাপ্তির আশায় জ্ঞানের সাধনা করেন নি। জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাচর্চার নিতান্ত আবশ্যক পরিসীমার বাইরেও তাঁরা সচরাচর যান নি। তাঁদের নিতান্ত আবশ্যক বস্তুর তালিকায় সর্বাগ্রে ছিল জ্ঞানচর্চা, বিদ্যার্জন ও গ্রন্থপাঠ। বিষয় ভিত্তিক প্রয়োজনীয় বইয়ের বাইরেও অন্য বিষয় সংক্রান্ত রচনা তাঁরা পড়তেন আনন্দ ও কৌতূহল নিবৃত্তির সুতীব্র আকর্ষণে। কারও কারও পুস্তক সংগ্রহ আর রোজগারের মধ্যে কোনও ভারসাম্য থাকতো না। জাগতিক উন্নতির বিষয়গুলোকে তাঁরা তুচ্ছ বিবেচনা করে অবজ্ঞা করেছেন। ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরীর মতে, “যে জীবনে বৈষয়িক উন্নতির সম্ভাবনা বিরল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ সত্যিই সারস্বত-কর্মে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বর্তমানের বিশ্লেষণপ্রবণ গবেষণার ধারা তখনও প্রবল হয় নি। কিন্তু অনেক গবেষণাই গভীর পা-িত্যের ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হতো।” মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান সম্পর্কে এই বক্তব্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আত্মমগ্ন ধ্যানীর মতো সারা জীবন তিনি জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থেকে গভীর পা-িত্যের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু নিজেই নন, প্রণোদিত করেছেন পরবর্তী বেশ কিছু প্রজন্মের উৎসাহী তরুণদের, যাদের অনেকেই বিদ্যাচর্চায় লিপ্ত রয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে ইতিহাসের আরেক মহান সাধক যদুনাথ সরকারের কিছু কিছু বিষয় তুলনীয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রবল পরিশ্রম, জ্ঞান তৃষ্ণা এবং অনুসন্ধান। যদুনাথের বিশ্লেষণের নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও ইতিহাসচর্চায় তিনি সর্বজনমান্য আচার্য। তিনি নিজের কর্ম ও জীবন আলোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি করতেন: “পথের প্রান্তরে করি নাই খেলা/শুধু বাজায়েছি বসি সারাবেলা/ছিন্নতন্ত্রী বীণা।” মনীষী প্রফেসর ড. মুইন উদ-দীন আহমদ খানও সারাজীবন জ্ঞানচর্চার বাঁশরী বাজিয়েছেন। একটি আস্ত জীবনকে উৎসর্গ করেছেন জ্ঞানের সাগরে অবগাহনের মাধ্যমে। বিদ্যার্চচাকে পেশাগত পরিম-লে জিম্মি না করে জীবন ও যাপনের মূলমন্ত্রে পরিণত করেছিলেন তিনি। আর সব কিছুই তিনি করেছেন নিজের সুমৃত্তিকা ও মানুষকে কেন্দ্র করেই। জীবনের পর্বে পর্বে নানা দেশে, নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও তিনি অবশেষে ফিরে এসে আলোকিত করেছেন প্রিয় মাটির প্রিয় মানুষদের, প্রিয় জনপদকে। জীবনের দিনগুলোর মতোই মৃত্যুর পরেও তিনি আলোর দিশারী হয়ে দেদীপ্যমান রয়েছেন জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যামুখী অভিযাত্রীদের চৈতন্যের মর্মমূলে।  

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম  সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

জাফরানি



শরীফুল আলম । নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভাবছি এই বৈশাখের প্রথম পলাশটা আমি তোমাকেই দেবো
প্রথম চুম্বনটাও তোমাকে।
একটা দীর্ঘ শীত পাড়ি দিয়ে এসেছি,
তোমার খোঁপায় লাল গোলাপ দেবো বলে
চোখে কাজল, কপালে কাল টিপ
এই সব দেয়ার আগে কিছুটা খুনসুঁটি তো হতেই পারে ,
তুমি অনন্যা বলে কথা
তোমাকে উৎকণ্ঠা ও বলা যায়
কিম্বা সুনীলের কবিতা, অসমাপ্ত শ্রাবণ
তুমি আমার ওয়াল্ড ভিউ
তুমি আস্ত একটা গোটা আকাশ
চুরমার করা তুমি এক পৃথিবী ,
কখনো তুমি মুক্ত বিহঙ্গ, সুদূরের মেঘ
তুমি কখনো শান্ত মোহনা, কখনো মাতাল স্রোত
ভরা শ্রাবণ, শরতের স্তব্ধতা তুমি ,
তুমি কখনো আমার সুখের আর্তনাদ ।

আমি সমুদ্র, আমি ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠি
দিগন্ত রেখায় আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার ফোনের গ্যালারিতে
ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে ,
আমি প্রলেপ বানাতে জানিনা
তাই ফাগুণের রঙকে আমি টকটকে লাল বলি
সিজোফ্রেনিক কে পুরোনো রেকাবি বলি
মূলত তুমি এক হরিয়াল ছানা
আড়ালে চিঁ চিঁ ডাক, উঁকি মার জাফরানি ।

আমার ভাললাগার টুনটুনি
এই শ্রাবণ ধারায় স্নান শেষে
চল ঝিলিমিলি আমরা আলোয় ঢেউ খেলি
ভালোবাসলে কেউ ডাকাত হয় কেউবা আবার ভিখারি ।

;

আকিব শিকদারের দু’টি কবিতা



আকিব শিকদার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যোগ্য উত্তর

‘তোমার চোখ এতো ডাগর কেন?’
‘স্বর্ণ দিনের স্বপ্নঠাসা দুচোখ জুড়ে।’

‘তোমার বুকের পাঁজর বিশাল কেন?’
‘সঞ্চয়েছি স্বদেশ প্রীতি থরেথরে।’

‘তোমার আঙুল এমন রুক্ষ কেন?’
‘ছদ্ধবেশীর মুখোশ ছেঁড়ার আক্রোশে।’

‘তোমার পায়ের গতি তীব্র কেন?’
‘অত্যাচারীর পতন দেখে থামবে সে।’

অনন্তকাল দহন

ঝিঝির মতো ফিসফিসিয়ে বলছি কথা আমরা দুজন
নিজেকে এই গোপন রাখা আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

বাঁশের শুকনো পাতার মতো ঘুরছি কেবল চরকী ভীষণ
আমাদের এই ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানো আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তপ্ত-খরায় নামবে কবে প্রথম বাদল, ভিজবে কানন
তোমার জন্য প্রতিক্ষীত থাকবো আমি আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তোমার হাসির বিজলীরেখা ঝলসে দিলো আমার ভুবন
এই যে আগুন দহন দেবে আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

;