দলে নতুন সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে কৌশলী আওয়ামী লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর এখন ঘর গোছাতে মনোযোগী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
সংগঠনকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দলে 'নতুন রক্ত' সঞ্চালন, আগামীর নেতৃত্ব তৈরি, বিশাল তারুণ্যের আবেগের সঙ্গে আদর্শিক সম্মিলন ঘটানোসহ কয়েকটি লক্ষ্য পূরণে দলে নতুন রিক্রুটমেন্ট অর্থাৎ নতুন সদস্য সংগ্রহ শুরু করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ।
কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসের ২১ তারিখ থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে সম্প্রতি ৭০ বছরে পদার্পণকারী দলটি। আগামী অক্টোবরে সম্ভাব্য ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগ পর্যন্ত একযোগে সারাদেশে এ অভিযান চালানো হবে। এরই মধ্যে এ কার্যক্রমের বিষয়ে চিঠি দিয়ে তৃণমূলকেও নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্র।
*পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে দেখা হবে ব্যক্তি ইমেজ*টার্গেট নারী ও নতুন ভোটার*জায়গা হবে না দুর্নীতিবাজ, মাদকাসক্তদের |
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা বলছেন, এবারের সদস্য সংগ্রহ অভিযান সফল ও গ্রহণযোগ্য করতে বেশ কিছু কৌশল হাতে নিয়েছে দলটি। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তথ্যভাণ্ডার গঠন করা হবে। নারী ও নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের সদস্য হতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। অন্য দিকে, স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গিবাদে জড়িতদের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ, মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্তদেরও জায়গা হবে না দলে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি নতুন সদস্যের টার্গেট নিয়ে সদস্য সংগ্রহের এ অভিযান চালানো হবে।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ শুরু করার জন্য কেন্দ্রের চিঠি পেয়েছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে নির্ধারিত ফরমে দেওয়া ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ত্রি-বার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ সদস্য হতে পারবেন। তবে উপধারায় কারা সদস্য হতে পারবেন, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী নয়, নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারী বা বাতিলকৃত ব্যক্তি নয়; অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়; ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি বা পেশায় বৈষম্যে বিশ্বাস করে না; আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থি কোনো সংগঠনের সদস্য নয়-এমন ব্যক্তিরা সদস্য হতে পারবেন। এ ধারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকা ও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
অতীতে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শ তথা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের সদস্য না করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হলেও এবার বিষয়টি নিয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগের নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করে- এমন তরুণ ও মেধাবীদের দলে জায়গা দেওয়া হবে। প্রাধান্য দেওয়া হবে, বিগত নির্বাচনে যারা দলের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন তাদের।
সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির পরিবারের কেউ যদি অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাতেও আপত্তি থাকবে না। পারিবারিক ঐতিহ্যের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে পরিবারের কেউ যদি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন সে ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো এবং ডাটাবেজ করা হচ্ছে। পরিকল্পিত সাংগঠনিক অবস্থাকে সুসংহত করার জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে জুলাই থেকে আবার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’
সদস্য সংগ্রহ অভিযান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, এবার সদস্য নবায়নের চেয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহে গুরুত্ব দেওয়া হবে। জেলা, উপজেলা শাখা নিয়মাবলী মেনে সদস্য সংগ্রহের বই করবে এবং সদস্য সংগ্রহ করবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সরকার গঠন করার পর ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ সাত বছর বিরতি দিয়ে ২০১৭ সালের ২০ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগঠনের সদস্য পদ সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করার পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। তবে উদ্বোধনের ছয় মাস পরেই গতি হারায় এ কার্যক্রম। এ সময়ে ৭৮টির মধ্যে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা সদস্য সংগ্রহের কাগজপত্র কেন্দ্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। সদস্য সংগ্রহে স্থবিরতার কারণ হিসেবে ষোড়শ সংশোধনীর রায়, বন্যা ও রোহিঙ্গা পুনর্বাসনকে সামনে আনে কেন্দ্র।