রিভিউ

‘মায়াবতী’ হোঁচট খেলো চিত্রনাট্য ও সংলাপে



রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, অতিথি লেখক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
রিভিউ ‘মায়াবতী’, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রিভিউ ‘মায়াবতী’, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিনেমা নাম: মায়াবতী
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: অরুণ চৌধুরী
অভিনয়: নুসরাত ইমরোজ তিশা, ইয়াশ রোহান, ফজলুর রহমান বাবু, আব্দুল্লাহ রানা, আবিদ রেহান, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আফরোজা বানু প্রমুখ।
প্রযোজনা: আনোয়ার আজাদ ফিল্মস
মুক্তির তারিখ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রেটিং: ৫.৫/১০

ঢালিউডে ভোলবদল প্রায়ই হয়। নতুন ভাবনার নতুন পরিচালক নতুন গল্পের সিনেমা নিয়ে হাজির হন। নতুন ভাবনার সিনেমা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।

অরুণ চৌধুরী পরিচালিত সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মায়াবতী’ সিনেমাটি সেরকম একটি সিনেমা। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। আর সেই বিষয়টি হলো, নারীর ‘না’ বলার অধিকার। অর্থাৎ কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। তার ‘না’ মানেই ‘না’। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘নো মিনস নো’।

এই প্রতিপাদ্যে বলিউডে ‘পিঙ্ক’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। সেখানে মিনালকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি করতে গেলে আত্মরক্ষার তাগিদে আক্রমণকারীদের বোতল ছুঁড়ে মারেন তিনি।

তবে এখানে ‘মায়াবতী’কে সম্পূর্ণ মৌলিক সিনেমা হিসেবে ধরতে চাই। মৌলিক সিনেমা হিসেবেই সিনেমাটির ময়নাতদন্ত করা যাক।

 



‘মায়াবতী’র প্রেক্ষাপট
সিনেমাটির কাহিনী মায়াকে নিয়ে শাখা প্রশাখা গজিয়েছে। শিশু মায়াকে গ্রামের দুই স্ত্রীওয়ালা বয়স্ক লোক বিয়ে করতে চায়। তখন মায়ার মা রাজি হয় না। সেকারণে সে মায়াকে গ্রামের এক মামার সাথে শহরে পাঠিয়ে দেয়। মামা মায়াকে নিয়ে এসে দৌলতদিয়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেয়।

তখন গানের শিক্ষক মাতাল খোদা বক্স মৃধা যৌন লালসা পূরণের জন্য মায়ার ঘরে যায়। মায়া তখন মায়ের শিখিয়ে দেয়া ‘ছেড়ে দে নৌকা যাব মদিনায়’ গানটি গাওয়া শুরু করে। কারণ, তার মা বলেছিল, বিপদ আসলে গানটি গাইতে। মায়া গান গাইলে তার গলা শুনে মুগ্ধ হয় খোদা বক্স মৃধা। সঙ্গে সঙ্গে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে যৌনপল্লীর রানিকে বলে, মায়াকে সে গান শেখাবে। কোনো পুরুষের মনোরঞ্জন যেন তাকে দিয়ে না করানো হয়।

 

এভাবে মায়া যৌন পল্লীতে বেড়ে ওঠে। বড় হয়ে সে যৌনপল্লীর বাইরের একটি গেরস্থ বাড়ির ছেলে ইকবালের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ইকবালের মাও মায়াকে তার ছেলের হবু স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়।

একদিন মায়া শহরে গান গাইতে গেলে সেখানে মায়া তার ওস্তাদ খোদা বক্স মৃধার খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ে। আকবর আলী জোর করে মায়াকে শ্লীলতাহানি করতে গেলে মায়া তাকে মোমদানি দিয়ে আঘাত করে। সেজন্য আকবর আলীর সহযোগী বাদশা আলম খোদা বক্স মৃধাকে খুন করে।

মূলত, খোদা বক্সকে খুন ও মায়াকে ধর্ষণের ইচ্ছা ছিল অনেক বছর আগে থেকে। মায়া যখন ছোট ছিল তখন তাকে ছুঁতে গেলে খোদা বক্স মৃধা রেগে গিয়ে বাদশা আলম ও আকবর আলীকে থাপ্পড় মারে। পরবর্তীতে আদালতে মায়া নির্দোষ প্রমাণিত হয়। যদিও মায়া সমর্থন পেয়েছে দেশের মিডিয়া ও সমাজকর্মীদের।

প্রচারণায় নারী মুক্তির বিষয়টি বলা হচ্ছিল। কিন্তু নারী মুক্তি আসলে কিসে হয়? নিজ অথবা পুরুষের বন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়া। মায়া চরিত্রটি শুরু থেকেই বন্দী ছিল। শেষে যখন সে মামলা থেকে রেহাই পেলো, গানের প্রস্তাব নিয়ে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আইয়ুব মজুমদার আসল তার কাছে। সে গান রেকর্ডিং করল। এর মাধ্যমে মায়া রেড লাইট এলাকা থেকে রেহাই পেলো। কিন্তু এটাকে কি নারী মুক্তি বলা হবে? বেঁচে থাকতে তার ওস্তাদ তাকে কখনো মুক্তি দেয়নি। একবারও বলেনি, রেড লাইট এলাকা থেকে দূরে গিয়ে গানের চর্চা করতে। মায়াও কখনো চেষ্টা করেনি। তাহলে? এখানে কেবল একটি সমান্তরাল ঘটনা এগিয়ে গেছে।



অভিনয়
সিনেমার প্রথমার্ধে বেশ ভালো লেগেছে। সুন্দরভাবে একটি গল্প এগিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এই সিনেমায় সব জাঁদরেল অভিনয়শিল্পীর মেলা বসেছিল। কিন্তু সব অভিনেতা পর্যাপ্ত অভিনয় করার সুযোগ পাননি। পুরো ছবি জুড়ে তিশা, ইয়াশ, ফজলুর রহমান বাবু, আফরোজা বানু, আব্দুল্লাহ রানা ও আবিদ রেহানের উপস্থিতি বেশি ছিল।

এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার বড় পর্দায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। এর আগে তারা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজও করেছেন। কিন্তু বড় পর্দায় তিশার বিপরীতে ইয়াশ! এই অসমবয়সী জুটি অনেকের হজম না হবার কথা। বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশ-নেপাল ক্রিকেট ম্যাচের মতো। কিন্তু পৃথকভাবে তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বভাবসুলভ অভিনয় করেছেন। যদিও অজ্ঞাত কারণে তাদের রসায়নটা জমে ওঠেনি। তিশা যখন ইয়াশের গালে চুমু খেয়েছে, তখন মনে হয়েছে খালা তার ভাগ্নেকে স্নেহের চুমু দিয়েছে। ইয়াশের চরিত্রটি রোমিও টাইপ চরিত্র। পুরো ছবিতে তার শুধু লুতুপুতু প্রেম করে সময় কেটেছে। প্রেমিক হিসেবে ইয়াশ ঠিকঠাক ছিল।

 

ওদিকে ফজলুর রহমান বাবু মাতাল গানের শিক্ষকের চরিত্রে মানিয়ে গেছেন বেশ। খল চরিত্রে আব্দুল্লাহ রানা শুরু থেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ছবির শেষ দিকে তিনি কিছু একটা কাণ্ড ঘটাতে যাচ্ছেন। এই যে আগে থেকে দর্শক বুঝে যাচ্ছে, এটা অভিনেতার ব্যর্থতা। তবে রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশীদকে ব্যবহার করতে পারেনি পরিচালক। এই দুই জাঁদরেল অভিনেতার উপস্থিতি ছিল বিরতির পর। তবে বিরতির আগে রাইসুল ইসলাম আসাদ কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য দেখা দিয়েছেন।

রাইসুল ইসলাম আসাদকে হাজির করা হয়েছে বয়স্ক উকিল হিসেবে। তার ধীর গতির কথা বলা। প্রতিপক্ষের উকিলকে কাউন্টার করতে না পারা সত্যিই হতাশার। যদিও এ সবকিছুর অধিকাংশ দায়ভার বর্তায় চিত্রনাট্যের ওপর। গ্রামের মামা চরিত্রে অভিনয় করা কাজী রাজুর অভিনয় ভালো লেগেছে। পর্দায় তার স্বল্প উপস্থিতি হলেও অভিনয়, মুখের অভিব্যক্তি ছিল প্রশংনীয়।

পরিচালনা ও চিত্রনাট্য
এই সিনেমা চিত্রনাট্য কোনো আহামরি গল্পের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়নি। যৌনপল্লীর সাধারণ একটি গল্পকে বাড়তি রঙ মিশিয়ে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার ফলে পুরো চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছে অযাচিত দৃশ্যের সমাহার।

নারীর বলা ‘না’কে যেন সবাই শ্রদ্ধা করে, সেটার আলোকে পুরো চিত্রনাট্য। তবে এই ছবিতে এই ‘না’কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ছবির একদম শেষ দিকে গিয়ে। শুরুর দিকে ‘না’ শব্দটিকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো মজবুত দৃশ্য চোখে পড়েনি। যদিও তিশা প্রথমে একবার ইয়াশকে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তিনি এসব (শরীর বিক্রি) কাজ করেন না। ইয়াশও তাকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি এসব কাজ করেন না। নারীর ‘না’কে শ্রদ্ধা করেন। তবে এটা যথেষ্ট নয়। প্রতিপাদ্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শুরু থেকে ঘটনার অবতারণ করতে হয়, যেটার শেষ দেখতে গাঁটের টাকা খরচ করে টিকিট কেটে আসা দর্শক শেষ দৃশ্য অবধি বসে থাকবেন।

তিশা যখন প্রথম গান গাইতে ট্রাকে চড়ে বসেন তখন পথে যেতে যেতে তার ছোটবেলার ট্র্যাজেডির কথা মনে পড়ে। সেগুলো ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়। ওই সময়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়া, ফ্ল্যাশব্যাক দেখানোর কোনো যথার্থ কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিশা যখন গ্রামে যান। নিজ ভিটায় যান। তখন যদি এসব ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যের অবতারণা হতো তখন মানানসই হতো। কিংবা কোনো একদিন নিজের জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে ইয়াশকে বা তার মা আফরোজা বানুকে নিজের মর্মান্তিক অতীতের কথা বলতেন তাহলে সেটা বেমানান হতো না।

 

তাছাড়া কোনো কোনো গেরস্ত বাড়ির ছেলে অবাধে যৌন পল্লীতে ঘুরে বেড়ানো, মাকে যৌনপল্লীর মেয়েকে ভালোবাসার কথা বললে সহজে মেনে নেয়া- এসব বাস্তবের সাথে বড্ড বেমানান। পরিচালক বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন কিনা বলতে পারছি না। বিষয়ভিত্তিক সিনেমার ক্ষেত্রে এমন কাহিনী দেখানো চোখে লেগেছে।

আর হ্যাঁ, শুরুতে যৌন পল্লীতে শিশু মায়ার ঠোঁটে, মুখে ফজলুর রহমান বাবুর হাত বোলানো দৃষ্টিকটু লেগেছে। শিশুদের শরীরে এভাবে হাত বোলানো পর্দার এপারে কতিপয় মানুষদের উৎসাহিত করবে। কারণ, আজকাল শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসা বেড়ে চলেছে।
বিরতির পর সিংহভাগ অংশ জুড়ে ছিল আদালত। এই ছবিটি যে বলিউড ‘পিঙ্ক’ ছবির অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে সেই ছবিতে কোর্টের দৃশ্যের কথা একবার ভাবুন। সেখানে কোর্টে যে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল তার ছিঁটেফোটাও ‘মায়াবতী’ ছবির কোর্টে পাওয়া যায়নি। বাদী পক্ষের উকিল তানভীর হোসেন প্রবাল যেভাবে কোর্টে কথা বলেছেন তাতে মনে হয়েছে তিনি বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিচ্ছেন। নতুবা কবিতা আবৃতি করছেন। আর রাইসুল ইসলাম আসাদ তো কথাই বলতে পারেন না। একটা কোর্টের দৃশ্য জমিয়ে রাখতে যেরকম যুক্তি, তর্ক উপস্থাপন করা উচিত তার পুরোটাই ছিল অনুপস্থিত।

বাদী পক্ষের উকিল তানভীর হোসেন প্রবাল তিশার ‘নূন্যতম’ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ‘সর্বোচ্চ’ শাস্তি, নূন্যতম নয়। আর মামলা রায় হয়ে যাওয়ার পর জজ কিভাবে মামলা ‘বাতিল’ করে দেন সেটা বোধগম্য নয়। যেখানে রায় হয়ে যায়, সেখানে মামলা বাতিল হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।



আবার এই ছবিতে মায়ার পক্ষে যখন সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলো তখন ঢাকার কিছু আন্দোলনের স্থিরচিত্র ব্যবহার করা হয়। অথচ আলাদা করে দৃশ্য ধারণ করলে আরও বাস্তবিক হতে পারত। টিভিতে যখন নীরব উপস্থাপন করছেন তখন তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন ‘আর জে নীরব’ বলে।

এক কথায় বলা যায়, পরিচালক ছবিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে গুবলেট পাকিয়ে ফেলছেন। একজন সিনিয়র চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অরুণ চৌধুরীর এই বিষয়গুলো খেয়াল করার উচিত ছিল।

সঙ্গীত ও আবহ, ক্যামেরা ও সম্পাদনা
সিনেমাটির আবহ সঙ্গীত হতাশ করেছে। দৃশ্য উপযোগী আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার হয়নি। সম্পাদনাও যাচ্ছেতাই। চিরকুটের গাওয়া গানটি অর্থবহ ছিল। সুরও বুকে লেগেছে। কিন্তু তিশার লিপ সিং মেলেনি । অন্যান্য গানেও তিশার লিপ সিং মেকি মনে হয়েছে। যার ফলে, গানের দৃশ্য বিরক্ত বাড়িয়েছে। ক্যামেরার কাজ ছিল ড্রোন কেন্দ্রিক । অপ্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। সাসপেন্স দৃশ্যের সময় যেভাবে ক্যামেরা ওয়ার্ক ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কম্বিনেশন দরকার, তা ছিল না। সবমিলিয়ে তথৈবচ একটি অবস্থা।

 

 

শেষের কথা
মুক্তির আগে ‘মায়াবতী’ ছবির প্রচারণা উদাহরণ হয়ে থাকবে। শুধ সিনেমা নির্মাণ নয়, প্রচারণাও ফ্যাক্ট; বিষয়টি অনুধাবন করতে শেখাবে। একথা স্বীকার করতেই হবে, ‘মায়াবতী’ একটি ভিন্ন ধারার সিনেমা। ভালো নির্মাণের চেষ্টা করেছেন পরিচালক। তবে এধরনের সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে চোখ কান খোলা রাখতে হয়। দায়সারা কাজ গ্রহণযোগ্য নয়। একটু সচেতন হলে ছবিটি বাংলাদেশের মাইলফলক হতে পারত। আশাকরি গুণী নির্মাতা অরুণ চৌধুরী তার আগামী সিনেমাগুলোতে এসব ভুল ত্রুটি শুধরে নিবেন। চলচ্চিত্রের দুর্দিনে তার মতো পরিচালকের প্রয়োজন।


লেখক: রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, সাংবাদিক, সারাবাংলা ডট নেট

   

নিউইয়র্কে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসবে সোহানা সাবা



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
সোহানা সাবা /  ছবি : নূর এ আলম

সোহানা সাবা / ছবি : নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে ‘সুচিত্রা সেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। আজ ও আগামীকাল (২০ ও ২১ এপ্রিল) জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।

বাংলাদেশ ও ভারতের ৩৯টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে এই উৎসবে। এছাড়াও রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন ও জমকালো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। এতে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী সোহানা সাবা।

সোহানা সাবা /  ছবি : নূর এ আলম

তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সুচিত্রা সেন আমাদের প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে কতোখানি জায়গজুড়ে আছেন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অনেকের আমারও অনুসরনীয়। সেই মহানায়িকার নামে চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে, তাও আবার যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে- সবমিলিয়ে এমন সম্মানজনক আয়োজনে আমাকে আমন্ত্রন জানানোতে খুব গর্ব অনুভব করছি।’

ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

সোহানা সাবা ছাড়াও চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, তমা মির্জাসহ অনেক জনপ্রিয় তারকারা অংশ নিচ্ছেন এই উৎসবে। অনুষ্ঠানের প্রতিটি আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। কোনো প্রবেশ ফি বা টিকেট নেই।

;

মেহজাবীনের আরেক নারীকেন্দ্রিক সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
বড় পর্দায় ‘প্রিয় মালতী’ হয়ে হাজির হবেন মেহজাবীন

বড় পর্দায় ‘প্রিয় মালতী’ হয়ে হাজির হবেন মেহজাবীন

  • Font increase
  • Font Decrease

নাটক, বিজ্ঞাপন ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দারুণ সফল মেহজাবীন চৌধুরী। তবে বড়পর্দায় প্রিয় অভিনেত্রীকে দেখার আগ্রহ ভক্তদের দীর্ঘদিনের।

এ বছরই সেই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে জানা গেছে, বড়পর্দার জন্য করা মেহজাবীনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাবা’।

এবার নিজের জন্মদিনেই সিনেমা হলের জন্য করা দ্বিতীয় সিনেমার ঘোষণা দিলেন এই জনপ্রিয় তারকা! শঙ্খ দাশগুপ্তের পরিচালনায় এবার বড় পর্দায় ‘প্রিয় মালতী’ হয়ে হাজির হবেন মেহজাবীন চৌধুরী। ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি এ বছরের কোনো একটা সময় মুক্তি দেয়া হবে সিনেমা হলে।

গত ১৯ এপ্রিল অর্থাৎ মেহজাবীনের জন্মদিনেই ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো এক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সিনেমাটির ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রযোজক আদনান আল রাজীব আর মেহজাবীন খুব ভালো বন্ধু!

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘জন্মদিনে সিনেমার ঘোষণাতা আমার জন্য খুব স্পেশাল। এই সিনেমায় দর্শক ভিন্ন এক মেহজাবীনকে দেখতে পাবে। এমন একটা টিমের সাথে কাজ করতে পেরে নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’

প্রথমেই মঞ্চে আসেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা দম্পতি। মেহজাবীনকে নিয়ে দেন মজার কিছু তথ্য। তিশা বলেন, ‘মেহজাবীন তার জেনারেশনের সবচেয়ে পাওয়ারফুল অভিনেত্রী। সে একইসঙ্গে দারুণ গোছানো একজন মানুষ। সে আমার বোনের মতো, কারণ আমার কোন আপন বোন নেই।’

এরপর মঞ্চে আসেন আশফাক নিপুন ও এলিটা করিম দম্পতি। তারাও জানান মেহজাবীনকে নিয়ে মজার কিছু তথ্য। আশফাক নিপুন বলনে, ‘মেহজাবীন অভিনয়ে নিজেকে যেভাবে গড়েছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা দম্পতি

ফ্রেম পার সেকেন্ড-এর প্রযোজক আদনান আল রাজীব বলেন, ‘‘প্রিয় মালতী’র গল্পটা একদম ইউনিক। এই গল্পটা শঙ্খ (পরিচালক) যখন আমাদের সাথে শেয়ার করে তখনই সবাই পছন্দ করি। এমন গল্প আমরা কখনও দেখিনি। সেই সাথে মেহজাবীন এই সিনেমার সাথে যুক্ত হওয়াতে এই সিনেমায় অন্য একটা মাত্রা যোগ হয়েছে।’

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘এই সিনেমার সাথে থাকতে পারাটা আমার জন্য খুব ইমোশনের। কাছের মানুষজন নিয়ে একটা সিনেমা নির্মাণ করার আনন্দটা ভাষার প্রকাশ করার না। গুণী পরিচালক, গুনী অভিনেত্রীসহ দুর্দান্ত একটা টিম এই সিনেমার সাথে যুক্ত হয়েছে। সিনেমা হলে দর্শকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানোটা এখন আমাদের অপেক্ষা।’

পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ফিল্ম মেকিংটা আমার কাছে সব সময় কষ্টের কাজ মনে হয়। তবে ‘প্রিয় মালতী’ কাজটা আমার জন্য একদম সহজ করে দিয়েছে দুই প্রযোজক। আমি শুধু নির্মাণ ও গল্প নিয়েই ভেবেছি। সেই সাথে যাদেরকে কাস্ট হিসেবে চিন্তা করেছি তাদেরকে সাথে পেয়েছি।’

আশফাক নিপুন ও এলিটা করিম দম্পতি

মেহজাবীন এর সাথে এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, শাহজাহান সম্রাট, রিজভী রিজুসহ আরও অনেকে। গত বছরের সেপ্টম্বর-অক্টোবরের দিকে হয়েছে এই সিনেমার শ্যুট। ঢাকা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারণ করা হয়েছে দৃশ্য।

সিনেমা ঘোষণার পাশাপাশি কেক কেটেও উদযাপন করা হয় মেহজাবীনের জন্মদিন। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নুসরাত ইমরোজ তিশা,আশফাক নিপুন, এলিটা করিম, মোস্তফা মন্ওয়ার, জেফার রহমান, রাকা নওশীন নাওয়ার সহ আরও অনেকে। সেই সাথে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকবৃন্দ, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফিল্মি ফিচার, ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির সদস্যরা।

সিনেমা ঘোষণার পাশাপাশি কেক কেটেও উদযাপন করা হয় মেহজাবীনের জন্মদিন

 

;

কানে লড়বে আদনানের স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘র‌্যাডিক্যালস’



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
আদনান আল রাজীব ও  ‘র‌্যাডিক্যালস’-এর পোস্টার

আদনান আল রাজীব ও ‘র‌্যাডিক্যালস’-এর পোস্টার

  • Font increase
  • Font Decrease

এক যুগ ধরে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন নির্মাণে অনবদ্য দক্ষতা দেখিয়ে আসছেন আদনান আল রাজীব। অল্প বিস্তর যে সব ফিকশন নির্মাণ করেছেন, সেগুলোও দর্শকের দারুণ সাড়া পেয়েছে। এখন তিনি কোক স্টুডিও বাংলা সিজন থ্রি’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই সিজনের গানগুলোর ভিডিও নির্মাণের দায়িত্ব পড়েছে তার কাঁধে। এরইমধ্যে প্রথম গান ‘তাঁতি’ নির্মাণ করে কুড়িয়েছেন প্রশংসা।

এবার আদনানের কর্মযজ্ঞ পেরলো দেশের গণ্ডি। তাও কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো প্রখ্যাত আঙিনায়! কানের সমান্তরাল বিভাগ ‘ক্রিটিকস উইক’-এর ৬৩তম আসরে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হলো আদনান আল রাজীব প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘র‌্যাডিক্যালস’। এটি আদনানের সঙ্গে সহ-প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের আরেক নির্মাতা তানভীর হোসেন। ফলে কানসৈকতে আবারও লাল-সবুজ পতাকার প্রতিনিধিরা আমন্ত্রণ পেলেন। আগামী মাসে এই আয়োজনে দুই জনই অংশ নিতে যাবেন।

আদনান আল রাজীব

‘র‌্যাডিক্যালস’ মূলত ফিলিপাইনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন আরভিন বেলারমিনো। প্রযোজনায় ক্রিস্টিন ডে লিয়ন। আদনান আল রাজীব ও তানভীর হোসেনের সঙ্গে এটি সহ-প্রযোজনা করেছেন ডমিনিক ওয়েলিনস্কি।

কান উৎসবের সমান্তরাল বিভাগে নির্বাচিত হওয়াটা সম্মানের হিসেবে দেখছেন আদনান আল রাজীব। তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়। একজন প্রযোজক কিংবা নির্মাতা হিসেবে এটা অনেক বড় অর্জনের মতো। যদিও সামনে আরও অনেকটা পথ আমরা হাঁটতে চাই ছবিটি নিয়ে। যেটার শুরু মাত্র হলো।’

 ‘র‌্যাডিক্যালস’-এর দৃশ্য

ফিলিপাইনের সংস্কৃতি মোরগ-নাচের একটি প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘র‌্যাডিক্যালস’। এর নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা সেই দেশেরই। এতে ঢাকার দুই তরুণের ভূমিকা মূলত কী? জানতে চাইলে আদনান আল রাজীব বলেন, ‘আমাদের ভূমিকা অনেক। ছবিটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা জুড়েই ছিলাম আমরা। মূলত নির্মাতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা শুরু থেকে এখনও এগিয়ে চলেছি। শুটিং শেষের পর নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের কাজ শেষ। আর আমাদের মূল কাজ শুরু সেখান থেকেই। যার শুরুটা হচ্ছে কান-এর মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব থেকে, সেটাই হচ্ছে আমাদের বড় অর্জন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও অনেকদূর। দেখা যাক কানে কতটা মান রাখতে পারি।’

আদনান আল রাজীব

কান উৎসবের আরেক সমান্তরাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে ২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ নির্বাচিত ও পুরস্কৃত হয়। এর অনেক বছর পর ২০২১ সালে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নেয়। এটি দেখানো হয় আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে।

;

ভেবেছিলাম খুব বেশি হলে ৫০ ভোট পাবো : নিপুণ



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিপুণ আক্তার /  ছবি : ফেসবুক

নিপুণ আক্তার / ছবি : ফেসবুক

  • Font increase
  • Font Decrease

গতকাল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক (২০২৪-২০২৬) মেয়াদের নির্বাচন। এ মেয়াদের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা সভাপতি মিশা সওদাগর। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।

নির্বাচনে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে ফল ঘোষণার পরে ডিপজলকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন পরাজিত এই প্রার্থী।

নিপুণ আক্তার /  ছবি : ফেসবুক

সাংবাদিকদের নিপুণ বলেন, ‘ডিপজল ভাইয়ের বিপক্ষে মাত্র ১৬ ভোটে হারবো সেটা আমি চিন্তাও করিনি। আমি ভেবেছিলাম ডিপজল সাহেবের সঙ্গে আমি যখন দাঁড়াবো, খুব বেশি হলে ৫০ ভোট পাবো।’

এই নায়িকা বলেন, ‘আমার ২৬টা ভোট নষ্ট হয়েছে, ২০৯টি ভোট আমি পেয়েছি। যেখানে ডিপজল ভাই পেয়েছেন ২২৫টি ভোট। শিল্পী সমিতির ভাই-বোনেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারা আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে এত সম্মান দেওয়ার জন্যে আমি তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে মন্তব্য করে নিপুণ আরও বলেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই ২০২৪-২৬ নির্বাচন যারা পরিচালনা করেছেন তাদের। আমার মনে হয় আমার টার্মে থেকে আমি খুব সুন্দর একটি নির্বাচন পরিচালনা করেছি।’

নিপুণ আক্তার /  ছবি : ফেসবুক

গতকাল শুক্রবার চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গনে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। চলে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণের পর ভোট গণনা শুরু হয় রাত আটটায়। রাতভর গণনা শেষে সকাল পৌনে ৭টার দিকে দিকে প্রাথমিকভাবে ভোট ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু।

;