তৈমুর লঙ : ঘোড়ার পিঠে বিশ্ববিজয় (পর্ব-২)



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

  • Font increase
  • Font Decrease

 ● পর্ব-১ পড়তে ক্লিক করুন

১৩৮৬ সাল। ক্ষমতায় আরোহণের দেড় দশক পেরিয়ে গেছে তৈমুরের। একসময়ের সর্বস্বহারা যাযাবর ব্যক্তিটি নিজের যোগ্যতা দিয়ে পরিণত হয়েছেন ছোটখাটো এক রাজ্যের অধিপতিতে। কিন্তু অল্পে তুষ্ট হওয়া তৈমুরের স্বভাবে ছিল না। তাই পুনরায় অভিযানে বের হলেন। রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো আজারবাইজান এবং জর্জিয়ার ওপর। হাতে এলো গিলান, শিরওয়ান এবং লেসজিওয়ানের মতো পার্শ্ববর্তী বহু অঞ্চল।

কারা কুয়ুনলু বংশের ক্ষমতা তখন কারা ইউসুফের হাতে; রাজধানী ভ্যান। অপরিণামদর্শী এই শাসক তৈমুরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তৈমুর তাকে পরাজিত করে রাজধানী দখল করেন। কারা ইউসুফ পলায়ন করে আশ্রয় নেয় অটোম্যান সুলতান প্রথম বায়েজিদের দরবারে। তৈমুর কিন্তু থেমে থাকলেন না। তৎকালীন মুজাফফারীয় বংশ শাসন করছিল ফারস্- অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। শাসনকর্তা জয়নুল আবেদিনকে বশ্যতা স্বীকার করার আহবান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করলেন তৈমুর।

নিষ্ঠুরতার অবতার

জয়নুল আবেদিন তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি মনে হয় এবার করলেন। তিনি তৈমুরের দূতকে বন্দী করে রাখলেন। অপমান মনে করে তৈমুর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিলেন মূল নগরী ইসপাহান। একরকম বিনাযুদ্ধে দখল করে নিলেন তা। বাড়িয়ে দিলেন করের পরিমাণ; কিন্তু শীঘ্রই বিদ্রোহী হয়ে উঠল জনগণ। অতর্কিত আক্রমণে হত্যা করা হলো তৈমুরের তিন হাজার সৈন্যকে। নিহতদের মাঝে তৈমুরের প্রিয় আমীরও ছিলেন।

যুদ্ধের মাঠে তৈমুরের নিষ্ঠুরতা প্রবাদকেও হার মানায়


ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন তৈমুর। বের করলেন তার সবচেয়ে নৃশংস রূপ; যা ইতিহাসে ভীতি তৈরি করে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। প্রত্যেকটি সৈন্যকে নির্দেশ দেয়া হলো, খণ্ডিত মাথা নিয়ে ফিরে আসতে। অনুগত সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ইসপাহানবাসীর ওপর। চলল নির্বিচার গণহত্যা। এই হত্যাকাণ্ডে প্রায় সত্তর হাজার ইসপাহানবাসী নিহত হন। মৃতের মাথা দিয়ে তৈরি করা হলো সুউচ্চ মিনার। প্রতিশোধ নিয়ে তৈমুর উদাহরণ সৃষ্টি করলেন—তার সাথে টক্কর দেবার পরিণাম কেমন হতে পারে।

হাফিজ ও তৈমুর: কবি বনাম সম্রাট

নৃশংসতা দেখে ভয়ে মাজাফফারীয় বংশের সকল যুবরাজ আত্মসমর্পণ করল। কেবল শাহ মানসুর পালিয়ে আত্মগোপন করতে সমর্থ হয়। তৈমুর সেখান থেকেই রওনা হলেন সিরাজ দখল করার প্রত্যাশায়। একরকম বিনা বাধায় নিয়ন্ত্রণে এলো সিরাজ। মসজিদে মসজিদে শুক্রবারে তার নামে পঠিত হতে থাকল খোৎবা। ঠিক এই সময়েই দেখা মেলে বিখ্যাত কবি হাফিজের। প্রচলিত আছে, হাফিজের একটি কবিতার প্রতি তৈমুর আকৃষ্ট হয়ে তাকে দরবারে আহবান করেন। কবিতাটি ছিল—
“আগার আঁতুরকে সিরাজী বাদসত্ আরাদ্ দেলে মারা,
বাখালে হিন্দুয়াশ বো বোখশাস্ সমরকন্দ ও বুখারা রা;”
বা,
“সিরাজবাসিনী প্রিয়ার গালের ছোট্ট এক তিলের তরে
বোখরা-সমরকন্দ রাজ্য নির্দ্বিধাতে আসব ছেড়ে।”

ফারসি সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি হাফিজ


তৈমুর হাফিজের প্রতি কটাক্ষের চাহনিতে বলেছিলেন—“আমি এত যুদ্ধ আর এত রক্ত ঝরিয়ে বোখরা আর সমরকন্দকে প্রতিষ্ঠিত করেছি অপার সৌন্দর্য দিয়ে। আর তুমি কিনা কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এই সবকে অপমান করো কবিতায়!” হাফিজ পরিস্থিতি টের পেয়ে অসংকোচে বললেন, “দূরদৃষ্টিহীনতার জন্যই তো আজ আমার এই দুর্দশা। এজন্যই আপনি রাজা আর আমি কবি।” বুদ্ধিদীপ্ত জবাবে তৈমুর চমৎকৃত হয়ে তাকে পুরস্কৃত করলেন।

চোখ এবার রাশিয়ায়

পারস্য বিজয় সম্পন্ন হলে তৈমুরের নজর পড়ল গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের দিকে। ঠিক এই সময়টাতে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক ছিলেন মামাই। অন্যদিকে হোয়াইট হোর্ডের শাসনকর্তা ছিলেন উরুস খান। তৈমুর একটা সুযোগ খুঁজছিলেন মাত্র। সেই সুযোগটাই এনে দিল ক্রিমিয়ার মোঙ্গল সামন্তরাজ তকতামিস। গোল্ডেন হোর্ড থেকে পালিয়ে এসে তিনি তৈমুরের আশ্রয় আর সহযোগিতা চাইলেন।

চেঙ্গিস খানের এই বংশধরকে তৈমুর প্রথমে আশ্রয় দিলেন; অতঃপর উরুস খানের দখল থেকে উদ্ধার করতে সাহায্য করলেন। পরপর দুইবার সংঘর্ষ চালিয়েও তকতামিস তার কাছে পরাজিত হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে উরুস খানের মৃত্যু ঘটলে তকতামিসই গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকারীতে পরিণত হলেন। অভিযান চালিয়ে মামাইকে পরাজিত করে রাজধানী সরাই দখল করলেন তিনি।

তকতামিরে অপরিণামদর্শী আচরণই তার পতন ডেকে আনে


তকতামিস ক্ষমতায় এসেছিল তৈমুরের সহযোগিতায়। তথাপি সিংহাসনে বসার পর স্বেচ্ছাচার শুরু করে দিল। প্রকাশ পেতে থাকল চারিত্রিক অন্ধকার দিকগুলো। যাদের সহযোগিতায় তকতামিস রাজ্য পেয়েছে, সেইসব সামন্ত রাজাদের কাছেই কর দাবি করে বসলেন তিনি। অনেকেই দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করায় দগ্ধ এবং বিধ্বস্ত করে ফেললেন মস্কো। এই ঘটনার পর তকতামিসের দম্ভ বেড়ে গেল আরো কয়েকগুণ। তৈমুরের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে আক্রমণ করে বসলেন তাব্রিজ।

পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তকতামিসও বেড়ে গিয়েছিল অনেক বেশি। তাব্রিজ আক্রমণের পর দশদিন ধরে লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালানো হলো। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হস্তগত করে ফিরে গেল মোঙ্গল নেতা। সংবাদ শুনে মর্মাহত তৈমুর তাকে একটা শিক্ষা দেবার স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রায় দুই লাখ সৈন্যসমেত আক্রমণ করলেন গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যে। তকতামিসের হাড়ে কাঁপুনি লাগল এবার। তৈমুরের কাছে পাঠালেন সন্ধির প্রস্তাব।

কিন্তু তৈমুর ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন তকতামিসের দুরভিসন্ধি। তাই শত্রুর শেষ রাখতে নেই-মন্ত্রেই স্থির থাকলেন। ভল্গা নদীর সন্নিকটে তেরেক নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হলো দুই বাহিনীর মধ্যে। পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন তকতামিস। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, এই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। একজন মোঙ্গল নেতাকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করে বিজয়ী তৈমুর ফিরে আসেন। কিন্তু বছর তিনেক পরেই তকতামিস আবার সৈন্য সংগঠিত করে আক্রমণ করে বসে। এবার আর তৈমুর থামলেন না। নেহায়েত অপ্রস্তুত থাকার পরেও রণনিপুণতার মধ্য দিয়ে পরাজিত করলেন তকতামিসকে। আর এর মধ্য দিয়ে দেড়শত বছরের গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটল। তকতামিসের বাহিনীর অর্ধেক যোগ দিল তৈমুরের সাথে, আর অর্ধেক পালিয়ে গেল ক্রিমিয়া, আদ্রিয়ানোপল ও হাঙ্গেরির বিভিন্ন স্থানে।

আরো একবার পারস্য

১৩৯২ সাল। পারস্যের রাজনৈতিক অবস্থায় তখন সংকট চলছে। তৈমুর বিষয়টা লক্ষ্য করেই অস্ত্রাবাদ ও আমুলের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে খুররামাবাদ, শুসতার এবং কালাসফিদ দখল করে নিলেন। গত অভিযানে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া মুজাফফারীয় যুবরাজ শাহ মনসুর চার হাজার সৈন্যসহ তার গতিপথ রোধ করে দাঁড়াল। তৈমুরের ত্রিশ হাজার সৈন্যের সামনে প্রবল সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেও পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলেন। শাহ মনসুরকে বন্দী এবং হত্যা করা হয় পরের বছর ১২৯৩ সালে। সিরাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো তার একচ্ছত্র আধিপত্য।

এই দফায় সিরাজ আর বাগদাদ তার নিয়ন্ত্রণে এলো


সিরাজের পর বাগদাদকে পদানত করাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। বিশেষ করে তাকরিত দুর্গে হাসান নামের এক দস্যু সর্দার বেশ উপদ্রব করছিল। তৈমুর তাকরিত দখল করে তার সমস্ত অধিবাসীকে হত্যার আদেশ দিলেন। আর সেই সাথে অধিকারে আনলেন কালাত নামের আরো একটি দুর্গ।

বিচ্ছিন্ন অভিযাত্রা

১৩৯৪ সালে তৈমুর নিজের অভিযাত্রার গতিমুখ ঘোরান মস্কোর দিকে। সীমাহীন ধ্বংস আর হত্যার মধ্য দিয়ে দখল করেন ককেশাস অঞ্চলের অস্ত্রাখান। তারপর একে একে অধিকারে এলো সমুদ্র তীরবর্তী ভেনিস, জেনোয়া, বাস্ক, কাটান প্রভৃতি নগরগুলিও। হাজির হলেন বিস্তৃত সাইবেরিয়া পেরিয়ে আলবুর্জ পর্বতমালার কাছে। এই বিজয়ের পর তার কাছে পদানত হলো উত্তরাঞ্চল, উরাল, কাস্পিয়ান সাগর, পারস্য ও ককেশাস।

তৈমুর পরিণত হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হিসাবে


এই মুহূর্তে তৈমুর কোনো নামমাত্র রাজা নয়; ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিণত সম্রাট। যিনি বাকি পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছেন নিজের হাতের মুঠোতে আনার জন্য। তখনও ভারত এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ বাকি। তখনও বাকি তার রূপকথাতে পরিণত হওয়ার আখ্যান। সেই গল্প হবে পরবর্তী পর্বে।

● পর্ব-৩ পড়তে ক্লিক করুন

   

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;