ট্রুডোকে মেলানিয়ার চুমু : বিশ্বজুড়ে আলোড়ন শরীরী ভাষার বিশ্লেষণ



ফিচার ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
এই সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি

এই সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/27/1566911386705.jpg

ফ্রান্সের বিয়ারিটজে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলন জি-সেভেন। তবে, সম্মেলনের বিষয়বস্তু বা বিশ্বনেতাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের ‘চুমু-কাহিনী! ছবিতে দেখা গেছে, স্বামীর হাত ধরা অবস্থায় মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন। ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প চোখ নিচু করে রেখেছেন। চেহারাও বেশ বিমর্ষ। এই বিষয়টিই আলোড়ন তুলেছে বিশ্বজুড়ে, ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, মেলানিয়া-ট্রুডোর চুমুর ছবিটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। টুইটারে এটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনাও। ছবিটি নিয়ে একেকজন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ছবিতে ট্রলও করা হচ্ছে ট্রাম্পের বিমর্ষ চেহারা নিয়ে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মোহনীয় ভঙ্গিতে ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন বা খেতে যাচ্ছেন মেলানিয়া। ওই মুহূর্তে মার্কিন ফার্স্টলেডির ভঙ্গিতে অনেকেই ট্রুডোর প্রতি তার মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন।

এ নিয়ে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, জাস্টিন ট্রুডোকে দেখে মনে হচ্ছে জি-৭ সম্মেলনে কেবল মেলানিয়াকে খুঁজে পেয়েছেন। এর সঙ্গে তিনি ‘হ্যাসট্যাগ মেলানিয়ালাভসট্রুডো’ যোগ করে দিয়েছেন।

আরেকজন লিখেছেন, ‘মেলানিয়া যখন স্বামীকে পিছনে রেখে ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন, তখন সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।’

লোনি লাভ নামের এক কমেডিয়ান লিখেছেন, ‘সব ধরনের ঝুঁকি নিতে এক পায়ে খাঁড়া মেলানিয়া।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘মেলানিয়াকে দোষ দেওয়া যায় না! ট্রুডোর আবেদনই এমন।’

ডিয়ান ওবায়দাল্লাহ নামে আরেকজনের আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ছবি দেখে মনে হচ্ছে মেলানিয়াও কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিমানের কথা ভাবছেন।

অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ট্রুডোর ব্যক্তিত্বই এমন; পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির হাত ধরেও তাকে চুমু খেতে মন চায়!

বিশ্বনেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের একসাথে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরাগুলো। সামিটের ইতি টানতে আয়োজিত এই ‘ফ্যামিলি ফটো’ সেশনে ট্রুডোর প্রতি মার্কিন ফার্স্ট লেডির এই ‘হৃদ্যতাপূর্ণ উষ্ণতা’ যেন অত্যন্ত বিশেষ একটি মুহূর্ত। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন কূটনৈতিক আয়োজনে এ ধরনের ছবি যে একটা ফ্রেমবন্দি হবে, তা কেউ ধারণাও করেননি। দুজনের উষ্ণতাপূর্ণ চাহনি আর আচরণ যেন আরো অনেক কিছুই প্রকাশ করে।

মেলানিয়া আর ট্রুডোর এই ভঙ্গিমা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তাদের শরীরী ভাষা। যেমনটা তাদের আচরণের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিখ্যাত শরীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ প্যাটি উড। আসুন দেখা যাক কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি—

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/27/1566912171604.jpg
মার্কিন শারীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ প্যাটি উড


হাত ধরে থাকা: ট্রুডো আর মেলানিয়ার মুখের দিকেই বেশিরভাগ মানুষ তাকিয়ে থাকলেও নিচে কিন্তু মেলানিয়া ঠিকই ধরে রেখেছেন স্বামীর হাত। এটা দুজনের মধ্যকার আবেগপূর্ণ ভালোবাসা প্রকাশ করে। স্ত্রীর হাতের কয়েকটি আঙ্গুল ট্রাম্প এমনভাবে ধরে রয়েছেন যেন তিনি স্ত্রীর আঙুলগুলোকে ওপরের দিকে টানছেন। ট্রাম্প তার বুড়ো আঙুল দিয়ে ধরেছেন মেলানিয়ার হাত। কিন্তু মেলানিয়ার বুড়ো আঙুল ট্রাম্পের হাত জড়িয়ে নেই। কাজেই এখানে দুজন হাত ধরে আছেন দেখা গেলেও আসলে কিভাবে ধরে আছেন তা বুঝতে হবে। আর এ ধরার প্রক্রিয়াটি সময়ের সাথে বদলেছে। আরো দেখতে হবে, অন্যান্য জুটিদের হাত ধরা আর তাদেরটা ধরার মধ্যে পার্থক্যটা কী।

ট্রাম্পের সঙ্গে মেলানিয়ার অবস্থান: জুটি হিসেবে তাদের অবস্থানটাও বিবেচ্য। ট্রাম্পের সাথে মেলানিয়ার শারীরিক সংস্পর্শ নেই। যদিও দুজনের হাত স্পর্শ করে রয়েছে। দুজনের পুরো হাতের অবস্থান দেখে বোঝা যায়, ট্রাম্পের হাত মূলত মেলানিয়ার হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

ট্রুডো এবং মেলানিয়ার অবস্থান: ট্রুডো ও মেলানিয়ার দূরত্ব ৮ ইঞ্চির মতো হবে। কাজেই তারা খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন। এই দূরত্বের মধ্যে অন্তরঙ্গতা তৈরি হতে পারে। ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি দূরত্ব থাকলেই সৃষ্টি হতে পারে অন্তরঙ্গতা। মেলানিয়া ট্রুডোকে চুমো না খেয়ে সরে যেতে চাইছেন না। সাধারণত এ ধরনের অভ্যর্থনামূলক আচরণের ক্ষেত্রে নারীদের নিম্নাংশ এবং বুক কিছুটা দূরে থাকে। এই ভঙ্গিকে বলা হয় ‘সোশাল আর্ক’। এ জাতীয় সামাজিক অভ্যর্থনার সময় মূলত দেহের যৌন স্পর্শকাতর অংশগুলোকে দূরে রাখতে হয়।

মেলানিয়ার মোহনীয় দৃষ্টি: মেলানিয়া কিভাবে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে আছেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউরোপিয়ান নারী-পুরুষরা পারস্পরিক অভিবাদন জানাতে পরস্পরকে চুমু খেতে পারে। এ সময় সাধারণত মেয়েদের দু চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ছবিতে মেলানিয়ার চোখ বন্ধ নেই। এমনকি ট্রুডোর চোখের পাতার অবস্থান দেখেও বোঝা যায় তাদের চোখ বন্ধ নেই। তবে, দৃষ্টির ভঙ্গিটা কিন্তু বেশ মোহনীয় মেলানিয়ার। আসলে মেলানিয়া সুখানুভূতি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি ট্রুডোকে চুমু খেতে আন্তরিকভাবে ইচ্ছুক। কাজটি করতে মেলানিয়ার মুখ প্রস্তুত, তার গলা উঁচু হয়ে উঠেছে। তার ঠোঁট চুম্বনের জন্যে প্রস্তুত। আর চাহনি তো কথাই নেই। দুজনের এই ছবি কোনো রোমান্টিক উপন্যাসের প্রচ্ছদ হতে পারে।

ট্রাম্পের অভিব্যক্তি: ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মেলানিয়া ট্রুডোকে একটা আবেদনময়ী চুমু দিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু স্বামীর হাত ধরে থেকেই তিনি কাজটি করতে চলেছেন। কিন্তু তার এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে। রীতিমতো জনতার মঞ্চে মেলানিয়া ঠিক এ কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তাই, এটা বুঝে ক্ষোভের সাথেই নিচে তাকিয়ে ট্রাম্প।
ট্রাম্পের চিবুক খেয়াল করুন। তার ঠোঁটের দিকে তাকান। চোখ দুটো বন্ধ, ভ্রুজোড়া দেখলে বোঝা যায় তার মধ্যে টেনশন কাজ করছে। তার চোখে এবং মুখে কিছু তীর্যক ভাঁজ পড়েছে যা আসলে ক্ষোভের প্রকাশ করে।

তবে উডের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত নন আরেক শরীরী ভাষা বিশারদ জুডি জেমস। তার মতে, দাম্পত্য জীবনে যথেষ্ট সুখী ট্রাম্প আর মেলানিয়া। ওই ছবিতে ভিন্ন কোনো বার্তা পাওয়ার সুযোগ নেই।
জুডি জেমসের মতে, ক্যামেরার যে ‘অ্যাংগেল’ থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে, সেটাই আসলে হইচই ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;