আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

দাসপ্রথার বিস্তার ও বিলোপের ইতিহাস



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

একসময় গবাদী পশুর মতোই হাটে-বাজারে কেনাবেচা হতো মানুষ। দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হতো তাদের। ঊনিশ শতকের শেষার্ধ্ব থেকে পুরো দুনিয়ায় দাস ব্যবসা বিলুপ্ত হতে শুরু করলেও, দাসপ্রথার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এই বর্বর প্রথাকে উচ্ছেদ করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামও চলে এসেছে অনেকদিন ধরে। সেই আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে, দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটে দাসপ্রথার। এই অমানবিক প্রথার অবসানকে চিহ্নিত করতে এবং প্রথাটির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৮ থেকে প্রতিবছর ২৩ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479459852.jpg
◤ সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করেছে দাস প্রথার বিলোপ ◢


আজকের দিনে সারা দুনিয়াজুড়ে যে সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো ব্যাপারগুলো এত আলোচিত বিষয়, সেই পথে বিশ্ববাসীকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল দাস প্রথার বিলোপের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি। আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—মানবপাচার, যৌনদাস, জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে ও যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯১ সালে বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকান অঞ্চলে প্রথমে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। এরপর যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে, ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তারপরেও এখনো বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479489579.jpg
◤ পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যগুলো গড়ে উঠেছে দাসদের ঘাম, রক্ত ও ত্যাগে ◢


প্রাচীন দাসপ্রথাটি এখনো বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীতে এবং বিভিন্ন পরিবারে। মানবসভ্যতার ইতিহাস অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ সালে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম ক্রীতদাস প্রথা চালু হয়। এর হাজারখানেক বছর পর থেকে এই প্রথা মিসর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষে। মিশরের গ্রেট পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যও তৈরি করা হয় দাসদের কাজে লাগিয়েই। এর অনেক পরে চীনে এই কু-প্রথাটি জেঁকে বসে। পিরামিডের মতোই চীনের মহাপ্রাচীরও নির্মিত দাসদের ঘাম, রক্ত ও কষ্টের ইতিহাস দিয়েই। ৮০০ হতে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস এবং ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে শুরু হয় ক্রীতদাস প্রথার মারাত্মক বিস্তার। এভাবে প্রায় বিশ্বজুড়েই একসময় ছড়িয়ে পড়ে এই ভয়াবহ কু-প্রথাটি।

কুখ্যাত ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা

দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে প্রচলিত ছিল দাস ব্যবসা। দাস ব্যবসার খুবই মন্দ রূপটি দেখা গিয়েছে মধ্যযুগে ‘ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা’য়। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর মানবজাতির ইতিহাস বদলে দেওয়া একটা দিন বলা যেতে পারে। ওইদিন ভারতের মাটিতে পৌঁছেছেন মনে করে আমেরিকা মহাদেশের মাটিতে পা রাখেন নাবিক কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। এরপর থেকেই, ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের মতো ইউরোপীয়রা ছুটে আসতে শুরু করল সদ্য আবিষ্কৃত এই মহাদেশে। স্থানীয় আদিবাসীদের একটু একটু করে সরিয়ে দিয়ে দখল করতে লাগল তাদের জমি। ইউরোপে অভাব ছিল প্রচুর পরিমাণে আবাদযোগ্য জমির। তাই, বিপুল পরিমাণে ফাঁকা আবাদী জমি পেয়ে যেন হাটে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেল তারা। শুরু হলো ব্যাপক কৃষিকাজ, কিন্তু বাড়ল স্থানীয়দের ওপর অত্যাচার। কিন্তু সমস্যা হলো উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো বিশাল দুটি মহাদেশের হাজার হাজার মাইল অনাবাদি জমি আবাদ করার মতো জনবল তাদের ছিল না। সেই সমস্যা সমাধানে আফ্রিকা থেকে লাখ লাখ কালো মানুষ ধরে আনা হলো কৃষি জমিতে কাজ করানোর জন্য। আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে আমেরিকায় দাস ধরে আনা হতো বলে ইতিহাসে তা পরিচিত ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’ হিসাবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479521413.jpg
◤ দাস ব্যবসার ঘৃণিত ও ভয়াবহতম রূপ দেখা গিয়েছে ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’-এ ◢


ইউরোপ থেকে দাসভর্তি প্রথম জাহাজটি আমেরিকায় পৌঁছায় ১৫০২ সালে। সেটি ছিল এক স্প্যানিশ জাহাজ। শুরুর দিকে দাস ব্যবসা পুরোপুরি ছিল পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশদের হাতে। সময়ের সাথে সাথে সমানতালে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে আরম্ভ হওয়া দাস ব্যবসা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে চলতে থাকে। এই সময়ে দাস বানিয়ে ধরে আনা হয়েছিল আফ্রিকার প্রায় দেড় কোটি থেকে দুই কোটির মতো নারী, পুরুষ ও শিশুকে। যাদের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগই মারা পড়েছিল সমুদ্র পথে নিয়ে আসার সময়, তাদের ওপর করা অত্যাচারে কিংবা ক্ষুৎপিপাসা ও রোগ শোকে। প্রায় ৮০ লক্ষের মতো দাস আনা হয়েছিল শুধু ব্রাজিলেই। ৪০ লক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে। বাকিদের পাঠানো হয়েছিল হাইতি ও অন্যান্য ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোতে।

মূলত দাস ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল যেটা বিস্তৃত ছিল সেনেগাল থেকে অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত। দাস ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ছিল বেনিন, টোগো এবং নাইজেরিয়ার পশ্চিম উপকূলে। তাই এলাকাগুলোকে স্লেভকোস্ট বা দাসের উপকূল বলা হতো। যুদ্ধবন্দী, অপরাধী, ঋণগ্রস্ত ও বিদ্রোহীদেরকে স্থানীয় আফ্রিকানদের কাছ থেকে দাস হিসেবে কিনে নিত ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষকেও দাস ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে দাস হিসাবে বেচে দিত। মোট ৪৫টি ছোট বড় জাতিগোষ্ঠি থেকে দাস ধরে আনা হতো। এদের বেশিরভাগই ছিল আদিবাসী বা আফ্রিকার স্থানীয় সংস্কৃতির অনুসারী।

দাসদের ধরে আনা হতো জোর করে। তাই তাদের বাধ্য করার জন্য বিভিন্ন রকম অত্যাচার করা ছিল দাস ব্যবসায়ীদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার ওপর বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা পড়ত সমুদ্র পথে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময়। জাহাজগুলোতে খরচ বাঁচানোর জন্য গাদাগাদি করে মানুষ ওঠানো হতো। থাকত না স্যানিটেশনের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত খাবার। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিত হতো আমেরিকায় নিয়ে আসার পর। সেখানকার সিজনিং ক্যাম্পগুলোতে মারা পড়ত ডায়রিয়া ও আমাশয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ দাস। অনেকে এই অপমানের গ্লানি থেকে বাঁচতে পালানোর সময় মারা পড়ত, কেউবা করত আত্মহত্যা। দাসরা বিবেচিত হতো প্রভুর সম্পত্তি হিসাবে। যদিও সুদূর অতীত থেকেই দাসপ্রথা চলে আসছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, তবে কোথাও এর অমানবিকতা আমেরিকান দাসপ্রথাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আমেরিকান ভূমি মালিকদের কাছে দাসরা ছিল কেবল কৃষি কাজের মাংসল যন্ত্র।

শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর অর্থনীতি ছিল দাস নির্ভর। উত্তর আমেরিকার তুলা এবং ব্রাজিল ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনি ছিল ইউরোপের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রধান অর্থকড়ি ফসল। ভারত থেকে আনা চা পান করার জন্য ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনির কদর তখন সারা ইউরোপ জুড়ে। চিনির বৈশ্বিক বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তখন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। বলা হয়ে থেকে আমেরিকার কার্পাস তুলা থেকেই নাকি সূচনা হয়েছিল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের। আর সেই তুলা থেকে বানানো সাদা কাপড়ের নীল জোগান দেওয়া হতো আমাদের দেশ থেকেই। সে আরেক নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। তবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে দাস ব্যবসার অর্থনৈতিক আবেদন কমে যেতে থাকে। তাই উনবিংশ শতক থেকে বিভিন্ন জায়গায় দাবি উঠতে থাকে দাস প্রথা বিলোপ করার।

দাসপ্রথা উচ্ছেদে আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা

রাষ্ট্রীয়ভাবে দাস প্রথা সর্বপ্রথম বিলুপ্ত ঘোষণা করে ইংল্যন্ড ১৮০৭ সালে। তারপর একে একে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হতে থাকে দাস ব্যবসা। সর্বশেষ দেশ হিসাবে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিল ব্রাজিল ১৮৩০ সালে। তবে অবৈধ দাস ব্যবসা বন্ধ হতে ১৮৬০ এর দশক পর্যন্ত সময় লাগে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ও দাসপ্রথা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৮৬১ সালে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলমান বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল এই গৃহযুদ্ধ। লিংকনের জন্য তখন চ্যালেঞ্জ—এই যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা, কিন্তু প্রধান সমস্যাটি ছিল চাইলেই দাসপ্রথা দূর করতে পারতেন না তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479550757.jpg
◤ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা উচ্ছেদে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা হয়ে আছে চির-স্মরণীয় ◢


শত শত বছর ধরে চলে আসা দাসপ্রথা আমেরিকার সংবিধান প্রণয়ণের সময় পৃষ্ঠপোষকতা পায় এবং লিংকনের আগে কোনো প্রেসিডেন্টই সংবিধান সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যের যেহেতু স্বাধীনতা রয়েছে নিজস্ব আইন প্রণয়নের, তাই ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্য থেকে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। কিন্তু কট্টর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদ এত বেশি ছিল যে তারা দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে কোনো ভূমিকা নেয়নি, যা এই গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।

গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে লিংকনের প্রাধান্য ছিল বিদ্রোহ দমন করা। তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে এমনটিই প্রতীয়মান হয়। ৬ আগস্ট, ১৮৬১ সালে তিনি একটি আইন পাশ করেন যা পরিচিত ‘কনফিসকেশন অ্যাক্ট’ নামে। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহে যারা সমর্থন জুগিয়েছিল তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেহেতু দাসদেরকেও সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো, তাই এই আইন পাশের এক বছরের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি দাস ছাড়া পায়। কিন্তু এসব দাসেরা তাদের মালিকের কাছ থেকে ছাড়া পেলেও তারা আদৌ মুক্ত ছিল কিনা এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো মালিকের দাসে পরিণত হতে পারত কিনা তা এই আইন ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাই এই আইন তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে যে রাজনৈতিক সমর্থনের দরকার ছিল তা এটি আদায় করতে সক্ষম হয়।

তাই বলা যায় যে, যুদ্ধ যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছিল আব্রাহাম লিংকনের প্রভাব। প্রথমে তিনি শুধুমাত্র আমেরিকাকে একত্র করতে চাইলেও যখন তার কাছে সুযোগ এসেছে দাসদের মুক্ত করে এতদিনের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার, তিনি কাজে লাগিয়েছেন সেই সুযোগ। এই রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই তাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। এভাবে, ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হয় দাসপ্রথা।

উপমহাদেশে দাসপ্রথা

দাসপ্রথা বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল এই বাংলা তথা উপমহাদেশেও। ১৮৬২ সালের হিসাবে আসামে ছিল ২৭,০০০ ও চট্টগ্রামে ছিল ১,২৫,০০০ দাস। দাম ছিল গড়ে কুড়ি টাকা। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দাস ছিল এখানকারই নিজস্ব অধিবাসী। কিছু বিদেশি ক্রীতদাসও আসত। কলকাতাতে প্রতিবছর আসত প্রায় ১০০ ভিনদেশি দাস। ১৮৩০ সালের এক সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অযোধ্যার নবাব চড়া দামে কিনেছিলেন ৫ জন সুন্দরী বিদেশি মেয়ে আর ৭ জন ভিনদেশী পুরুষ। দাম পড়েছিল কুড়ি হাজার টাকা। পলাতক ক্রীতদাস ধরে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণারও নজির রয়েছে অনেক। ব্রিটিশ ওয়ারেন হেস্টিংস তো রীতিমতো নিয়ম করে দিয়েছিলেন কোনো দাস কেনার সময় আদালতে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। কলকাতায় এই ফি ছিল দাসপ্রতি ৪ টাকা ৪ আনা। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দাসই হয় দুর্ভিক্ষের কারণে নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছিল অথবা ছিল নিচু শ্রেণীর মানুষ, কিংবা ছেলে ধরার হাতে ধরা পড়া বাচ্চারা। বাংলার সুলতানেরা অবশ্য আফ্রিকা, তুর্কিস্তান, পারস্য আর চীন থেকেও কিনে আনাতেন দাস। ১৮৩০-এর শতকের শেষভাগে আফ্রিকা থেকে আনা ‘হাবসী’ আর ‘কাফ্রি’ ক্রীতদাসদের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। হিন্দু সমাজে টাকা দিয়ে কেনা দাসদের ডাকা হতো ‘ক্রীতদাস’ বা ‘দাস’ নামে আর মেয়ে ক্রীতদাসের নাম ছিল ‘দাসী’। মুসলিম সমাজে পুরুষ ক্রীতদাসদের নাম ছিল ‘গোলাম’ বা ‘নফর’ আর মেয়ে ক্রীতদাসের পরিচয় ছিল ‘বাঁদী’ নামে। তাছাড়া সুন্দরী বাঁদীদের দাম আর চাহিদাও বেশি। মহাজনদের দেনা শোধ করতে না পেরেও অসংখ্য মানুষ নিজেদের বিক্রি করে দিত দাস হিসেবে। সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম আর ঢাকা অঞ্চলে ১৮৩৯ সালের আইন কমিশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ওখানকার এক-পঞ্চমাংশ মানুষই ছিল ক্রীতদাস। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে এসে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ হতে থাকে। আমাদের এই অঞ্চলে ১৮৪৩ সালের পাঁচ নম্বর অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধের পথটি সুগম হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479583055.jpg
◤ দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হলেও বাস্তবে এখনো বিভিন্নরুপে মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে করা হচ্ছে বাধ্য ◢


‘দাসত্ব’ বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের ‘অস্থাবর সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা। এই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ব্যক্তিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্থান বা মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের শ্রমের কোনো মজুরীও নেই। অতীতে কোনো কোনো সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করাও আইনসঙ্গত ছিল। সেইসব বর্বরতা থেকে মানবজাতি বেরিয়ে এসেছে। তবে ক্রীতদাস প্রথার যে আধুনিক রূপান্তর, দরকার তার থেকে মুক্তির উপায় বের করা। মানব-সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সুসভ্য জাতিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই। এই প্রেক্ষাপটে যে কোনো ধরনের দাসপ্রথাই যাতে জাতির সেই অগ্রযাত্রার পথকে কলঙ্কিত না করতে পারে, প্রত্যাশা হোক এমনটাই।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;