ব্যর্থতা এড়িয়ে চলার কৌশল
পৃথিবী চষে এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না যে জীবনে সফল হতে চায় না। মানুষ আমৃত্যু ছুটতে থাকে সফলতার পেছনে। অধরা সফলতা ধরা দেয় না। দিনের শেষে পেছনে ফিরে তাকালে সবটা জুড়েই শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিচ্ছুটি দেখা যায় না। মনে পড়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে করা একটা ভুল কাজের কথা, একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু পেরিয়ে আসা সেইসময় আর নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনা যায় না। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিংবা আবেগের বশে করা ভুলগুলো শোধরানোর তেমন কোনো উপায় থাকে না তখন।
তাই সচেতন হতে হয় সময় থাকতে। অল্প কিছু বিষয় খেয়াল করে চলতে পারলে হতাশা কাটিয়ে অর্জন করা যায় সফলতা, অন্তত এড়ানো যায় বড় ধরনের ব্যর্থতা—
সিদ্ধান্ত গ্রহণে হোন সতর্ক নিন বিশেষজ্ঞ-পরামর্শ
মানুষের জীবনের যে কোনো একটি সিদ্ধান্ত তার জীবন বদলে দিতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে হতে হবে সতর্ক। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নির্দিষ্ট বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন কারো সাথে করতে হবে পরামর্শ। ভরসা করা যায় এমন মানুষদের কাছ থেকে নিতে হবে দিকনির্দেশনা। তারপর বিকল্পগুলো থেকে সম্ভাব্য উত্তম বিকল্পকে গ্রহণ করা। এতে করে ভুল সিদ্ধান্তের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে যাদের থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে তাদের ব্যাপারেও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
ইতিবাচক মানুষদের সাথে মিশুন
চারপাশ যদি নেতিবাচক মানুষদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে তাহলে আপনার মধ্যেও সেই প্রভাব সংক্রমিত হবে। একসময় নিজেও আপনি হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। তাই নিজেকে চাঙ্গা রাখতে সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষদের সাথে চলাফেরা করুন।
আজকের কাজ আজকেই করাকে নিয়ম মানুন
মানুষ স্বভাবতই কাজ করতে চায় কম, পেতে চায় বেশি ফল। আর এটাই ডেকে আনে সমস্যা। কাজকে ফেলে রাখে কাল করব পরশু করব ভেবে। কিন্তু সেই কাল-পরশু আর আসে না। তাই এই ক্ষেত্রে নিয়ে আসা উচিত বড় একটা পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের শুরু হওয়া উচিত নিজের ঘর থেকে। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে নিজের এলোমেলো বিছানা ঠিক করুন সবার আগে। একটু পরে করবেন মনে করে ফেলে রাখবেন না। নিজের জীবন গোছানোর কাজ শুরু করুন নিজের বিছানা থেকে। চাকরির জন্য সিভিটা আপডেট করা দরকার? এখনই করুন। কাল কাল করে করে ডেট চলে গেলে আর আপডেট করেইবা কী করবেন?
নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোন
যে যত বেশি দায়িত্ববান, সে তত বেশি সফল। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে। আপনার কাজ আপনার জন্য অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না। হতে হবে সময়সচেতন। ব্যক্তিচরিত্র থেকে খামখেয়ালি কমিয়ে আনতে হবে। নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তবেই ধরা দেবে অধরা সফলতা।
দুশ্চিন্তার কারণগুলো এড়িয়ে চলুন
মানুষ যখন হতাশায় থাকে, চোখের সামনে কোনো পথ খোলা নেই, তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অশুভ আশঙ্কার ছায়া দেখতে পায়। মূলত নিরুপায়বোধ ও অসহায়ত্ব থেকেই শুরু হয় দুশ্চিন্তা আর ছাড়িয়ে যায় মাত্রা। দুশ্চিন্তা বেশি হলে অনেকে ভালোমন্দের জ্ঞান হারান। কী করবেন, কী করবনে না বুঝে উঠতে পারেন না। অনেকে নিজেকে তিলে তিলে অসুস্থ করে তোলেন এই দুশ্চিন্তার মাধ্যমে। এরফলে সমাধানের বদলে জড়িয়ে পড়েন আরো বড় সমস্যায়। তাই কোনো কাজে ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা পুরোপুরি গ্রাস করার আগেই নিজেকে আবার কাজে লাগিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতা মানুষের জীবনে থাকেই। পৃথিবীতে যত সফল মানুষ দেখা যায় প্রত্যেকেই নিজেদের সফল করেছেন ব্যর্থতা থেকে টেনে তুলে। নিজেকে শান্ত রেখে সমস্যা না বাড়িয়ে উপায় বের করার কাজে লেগে যেতে হবে। তবেই দুশ্চিন্তা পালাবে জাদুঘরে।
অবান্তর কল্পনা থেকে বের হয়ে আসুন
আমার এক বন্ধু আছে। যে সবসময় এটা ভাবত—এই যে বিল গেটস কিংবা জাকারবার্গ, এরা এত টাকার মালিক, কেউ যদি তাকে দুই তিন কোটি টাকা দিয়ে দেয় তবে তো তাদের কোনো সমস্যা হবার কথা না। এই কল্পিত ধারণা তাকে কোনো কাজেই মনোনিবেশ করতে দিত না। সাবধান থাকবেন, কল্পনার এমন জগত আপনার জন্য কোনোদিনই কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। রূপকথার কোনো আলাদীন এসে আপনার ইচ্ছা পূরণ করে দেবে না। তাই ক্ষতিকর কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে নিজেরই বাস্তবতায়।
রাগা বারণ
কারো কারো ক্ষেত্রে এমন হয় যে, পান থেকে চুন খসলেই রাগ উঠে যায়। হয়তো বন্ধুবান্ধবরা মিলে কোথাও ট্যুর প্ল্যান করছেন, হুট করে সামান্য বিষয়ে রাগ করে নিজেকে ট্যুর থেকে প্রত্যাহার করে নিল। আবার কেউ আছে যাদের কোনো কিছুই পছন্দ হয় না। কক্সবাজার যেতে চায় না যেহেতু সেখানে তো শুধু পানি, পানি দেখার কী আছে। বান্দরবান যেতে যেতে চায় না কারণ সেখানেও তো শুধু পাহাড়। উঠতে বসতে এমন রেগে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে। কারণ রাগত আপনি অন্যকে যে কথাগুলো বলেন তার ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একে তো নিয়ন্ত্রণশূন্য এক নিজেকে প্রদর্শন করা হয় এতে, তার-ওপর হয়তো আপনার জীবনে সেই ব্যক্তির প্রয়োজন দেখা দেবে একদিন। কিন্তু সেদিন তো তারই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সময়। রাগের ব্যাপারে সচেতন না হলে ধরে নিন আপনি ব্যর্থ হতে যাচ্ছেন।