রোমান পোলান্‌স্কি : সেলিব্রেটি স্ক্যান্ডালের মোক্ষম উদাহরণ



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
রোমান পোলান্‌স্কি

রোমান পোলান্‌স্কি

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণভোমরা হলিউডের জন্য হলেও বিশ্বের অন্যতম রোমাঞ্চকর গল্পের নগরী হিসেবে লস এঞ্জেলসকে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু ’৭০-এর দশকের এই শহর ছিল সেলিব্রেটি স্ক্যান্ডাল দ্বারা অন্ধকারাচ্ছন্ন। যৌন বিকারগ্রস্ততা, মাদকাসক্তি প্রভৃতি ছিল হলিউড পাড়ার পরতে পরতে।

রোমান পোলান্‌স্কি তেমনই একজন সেলিব্রেটি যার ঝুলি নানাবিধ স্ক্যান্ডালে পরিপূর্ণ। তিনি একাধারে সফল একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, এমনকি লেখক। তবে আজ তিনি পৃথিবীবাসির কাছে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেই সমধিক পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত। বহুমুখী প্রতিভাধর এই প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক তার এই এক জীবনে কুড়িয়েছেন অসংখ্য সুখ্যাতি, জীবন তাকে দু হাত ভরে দিয়েছে এবং তিনিও দু হাত পেতে সেসব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তার জীবনের এই আলোয় ঝলমলে অধ্যায়ের ঠিক বিপরীতেই রয়েছে এক ভয়ংকর কালো অধ্যায়। আর সেই কালো অধ্যায়ের সূত্র ধরেই বলায় যায়, রোমান পোলান্‌স্কির জীবনই হলো ‘সেলিব্রেটি স্ক্যান্ডাল’-এর মোক্ষম উদাহরণ।

এই বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ১৯৩৩ সালের ১৮ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু তার বেড়ে ওঠা পোল্যান্ডে। মা বুলা (জন্মনাম কাৎজ-প্রৎজেবর্স্কা) এবং বাবা রিসজার্ড পোলান্‌স্কি ছিলেন যথাক্রমে চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর্য নির্মাতা। পোলান্‌স্কির বাবা ইহুদি এবং পোল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। পোলান্‌স্কির মা রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং রোমান ক্যাথলিক হিসেবে বেড়ে ওঠেন, তিনি মূলত অর্ধ-ইহুদি বংশধর ছিলেন। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566144369603.jpg
◤ পোলান্‌স্কির বিখ্যাত চলচ্চিত্র দ্য পিয়ানিস্ট ◢


পোলান্‌স্কি পোল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম শহর উচের ন্যাশনাল ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনা করেন। তাঁর চলচ্চিত্রে পদার্পণ একজন অভিনেতা হিসেবে। ১৯৫০-এর দশকে আন্দ্রজেয় ভায়দার ‘পোকোলনি’ (প্রজন্ম, ১৯৫৪) এবং একই বছর সিলিক স্টার্নফেল্ডের ‘জাকজারোয়ানি রোভার’ (জাদুকরী বাইসাইকেল) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে অভিনেতা পোলান্‌স্কির অভিষেক ঘটে।

চলচ্চিত্র পরিচালনায় পোলান্‌স্কির অভিষেক হয় ১৯৫৫ সালে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রোভার’ (সাইকেল) নির্মাণের মধ্যদিয়ে। রোভার একটি আধা-আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র এবং এখানেও পোলান্‌স্কি অভিনয় করেন।

রোভারে তিনি তার বাস্তব জীবনের একটি সহিংস চক্রের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে দেখানো হয়েছে এক কুখ্যাত ক্রাকো ফেলোন ইয়ানুশ ডিজুবা, পোলান্‌স্কির সাইকেল বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু পরিবর্তে ডিজুবা তাকে মারধর করে এবং তার টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। বাস্তব জীবনে পোলান্স্কির মাথার খুলি ফাটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সে গ্রেফতার হয় এবং আরো আটটি অপরাধের মধ্যে তিনটি হত্যার জন্য তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। উচে পড়াশোনার সময় আরো বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি তাকে স্বীকৃতি এনে দেয়, বিশেষ করে ‘ডভায় লুডজি জ শাফাঁ’ (১৯৫৮) এবং ‘গডাই স্পাডায়া আনিওউ’ (১৯৫৯)। তিনি ১৯৫৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

ক্যারিয়ারের সোপানগুলি অবলীলায়, অত্যন্ত সফলতার সাথে ছুঁতে পারলেও তার দাম্পত্য জীবনের যাত্রাটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। অভিনেত্রী বারবারা ল্যাস ছিলেন এই পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালকের প্রথম স্ত্রী। যিনি পোলান্‌স্কির ‘হোয়েন অ্যাঞ্জেলস ফল’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তারপর এই জুটি ১৯৫৯ সালেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কিন্তু ১৯৬১ সালে মাত্র দু বছরের ব্যবধানে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তারপর তিনি আবারও ১৯৬৮ সালের ২০ জানুয়ারি অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে (২৪ জানুয়ারি ১৯৪৩-৯ আগস্ট ১৯৬৯) বিবাহ করেন। শ্যারন টেইটও ছিলেন একজন সুঅভিনেত্রী।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566144309583.jpg
◤ অভিনেত্রী ও প্রথম স্ত্রী বারবারা ল্যাসের সঙ্গে পোলান্‌স্কি ◢


কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! রোমান পোলান্‌স্কির ক্যারিয়ার যখন খ্যাতির তুঙ্গে, ১৯৬৯ সালে সাড়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে মাত্র ২৬ বছর বয়সে চার্লস ম্যানসনের অনুসারীরা হত্যা করে। স্ত্রীকে হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন এই উঠতি চলচ্চিত্র পরিচালক। পরবর্তীকালে দীর্ঘ এক বিরতির পর ১৯৮৯ সালে ইম্যানুয়েল সিনার সাথে তৃতীয়বারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি একজন ফরাসি অভিনেত্রী।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566144429916.jpg
◤ অভিনেত্রী ও দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারন টেইটের সাথে পোলান্‌স্কি ◢


১৯৭৭ সালে রোমান পোলান্স্কি মাত্র ১৩ বছর বয়সী কিশোরী সামান্থা গেইমে’র সাথে যৌন সংসর্গে জড়িয়ে পড়েন, যখন তার বয়স ৪৩ বছর। ১০ মার্চ সামান্থার মা সুসানের তৎপরতায় পোলান্স্কিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পোলান্স্কি জনসম্মুখে অপরাধ স্বীকার করেন এবং ইউরোপে পালিয়ে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে, এজন্য তিনি আর ফেরত আসেননি এবং ইউরোপ থেকেই চলচ্চিত্র পরিচালনা অব্যাহত রাখেন।

তবে শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্য যে, সামান্থার সাথে আজও রোমান পোলান্‌স্কির যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ আছে। জানা যায়, পোলান্‌স্কি ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ায় সামান্থা খুশিই হয়েছেন এবং তিনি তাকে ক্ষমাও করে দিয়েছেন। কারণ তিনি চান না পোলান্‌স্কির বাকি জীবন জেলে কাটুক। এদিকে রহস্যজনকভাবে সামান্থা পোলান্‌স্কিকে ধর্ষক কিংবা যৌননিপীড়ক কিংবা শিশুকামী হিসেবে চিহ্নিত করতে নারাজ। সামান্থার ভাষ্যমতে, “আমি কখনোই তাকে পেডোফাইল বলব না। আমি যেটা বলতে পারি তা হলো, তিনি নিতান্তই ভুলবশত চরমতম খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছেন। এবং, আমি তাকে তখনই পেডোফাইল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতাম, যদি তিনি তার পরবর্তী জীবনেও এই একই ধরনের কাজ অব্যাহত রাখতেন।”

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566144560460.jpg
◤ সামান্থা গেইম ◢


তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন রোমান পোলান্‌স্কিকে গ্রেফতার করা হয় এবং এই গ্রেফতার নিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম হয়। রোমান পোলান্‌স্কির পক্ষে হলিউডের অসংখ্য নামজাদা সেলিব্রেটি, ইউরোপের শিল্পীগোষ্ঠী, এমনকি রাজনীতিকরা সমবেত হয়। তারা এই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে কথা বলে। এদিকে তার গ্রেফতারের ঘটনার পর আমেরিকার জনমত পোলান্‌স্কির বিপক্ষে গেলেও ইউরোপ এবং পোল্যান্ডের অগনিত মানুষ ছিল তার পক্ষে। আর এভাবেই এ-যাত্রায়ও আইনের বেড়াজাল থেকে পার পেয়ে যান রোমান পোলান্‌স্কি।

রোমান পোলানস্কি পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ
• জ উ ভজি (১৯৬২)
• রিপালসন (১৯৬৫)
• কুল-দে-সাক (১৯৬৬)
• দ্য ফিয়ারলেস ভ্যাম্পায়ার কিলার্স (১৯৬৭)
• রোজামারিস বেবি (১৯৬৮)
• ম্যাকবেথ (১৯৭১)
• হোয়াট? (১৯৭২)
• চায়নাটাউন (১৯৭৪)
• লা লোকাতায়ার (১৯৭৬)
• তেস (১৯৭৬)
• পাইরেটস (১৯৮৬)
• ফ্র্যান্টিক (১৯৮৬)
• বিটার মুন (১৯৯২)
• ডেথ অ্যান্ড দ্য মেইডেন (১৯৯৪)
• দ্য নাইন্থ গেট (১৯৯২)
• দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২)
• অলিভার টুইস্ট (২০০৫)
• দ্য ঘোস্ট রাইটার (২০১০)
• কার্নেজ (২০১১)
• লা ভেনাস অ লা ফরুর (২০১৩)
• দাপ্রেস উন হিস্তোয়ার ভ্রাই (২০১৭)

পোলান্‌স্কি পরিচালিত ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ চলচ্চিত্রটিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং এটিই কেবল একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে। পোল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মীত এই দ্য পিয়ানিস্ট ২০০২ সালে মুক্তি পেয়েছিল।

পোল্যান্ডের এক ইহুদি পিয়ানো বাদকের ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ নামের আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। দ্য পিয়ানিস্ট কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া তিনটি ক্ষেত্রে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে : সেরা অভিনেতা, সেরা পরিচালক এবং সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্য। এছাড়া ফ্রান্সের সেজার পুরস্কার লাভ করে তিনটি ক্ষেত্রে : সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা চলচ্চিত্র। এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি। অ্যাড্রিয়েন ব্রডিই একমাত্র মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা যিনি ফ্রান্সের সেজার পুরস্কার জিতেছেন।

রোমান পোলান্‌স্কি শৈশবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিজ চোখে অবলোকন করেছিলেন, হয়তো সেজন্যই তার দ্য পিয়ানিস্টের নির্মাণশৈলি ছিল এত বেশি জীবন্ত। কাল পরিক্রমায় বিশ্ব রোমান পোলান্‌স্কিকে ভুলে যেতে পারে, কিন্তু দ্য পিয়ানিস্টকে কখনো ভুলতে পারবে না।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;