ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির যুগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয়ার্ধ্ব শেষে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিট। ৪-৪ অ্যাগ্রিগ্রেটেড স্কোরলাইনের ম্যাচে অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভাব রাহিম স্টার্লিংয়ের। সার্জিও আগুয়েরোর মাপা পাস জালে জড়িয়েই ভোঁ-দৌড়ে পৌঁছালেন কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে। তবে ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারল না তার দল। প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করল আগুয়েরোর অফসাইড, তাতে শেষ চারে পা রাখল টটেনহাম হটস্পার।

গেল মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে এই প্রযুক্তির বিতর্কিত প্রয়োগ দুই-দুইবার কপাল পুড়িয়েছে তারকায় ঠাসা ক্লাব ম্যানসিটির। বলা হচ্ছে বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর নিয়ে—মাঠে রেফারিদের ভুল বা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এড়াতেই যার আবিষ্কার এবং ব্যবহার।

ন্যূনতম হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ কল্যাণ’—এই মূলমন্ত্রে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভিএআর-সংক্রান্ত চূড়ান্ত আইন পাশ হয় ২০১৮ সালে। গোল সিদ্ধান্ত, পেনাল্টি সিদ্ধান্ত, সরাসরি লাল কার্ড, ভুল খেলোয়াড়ের ওপর চাপানো সিদ্ধান্ত বদল—ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মতো এই চারটি ঘটনা পুনর্বিবেচনায় সাহায্য নেওয়া হয় ভিএআরের। ভিডিও অপারেশন রুমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ রেফারিদের সমন্বয়ে গড়া ভিএআর টিম মাঠে দায়িত্বরত রেফারির নেওয়া পুনর্বিবেচনাযোগ্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই পর্যবেক্ষণ করতে থাকে, আর তাতে কোনো ভুল শনাক্ত না হলে নিজের ইয়ারফোনে সেটি জানতে পারেন ম্যাচ রেফারি। এই ‘সাইলেন্ট চেক’ খেলা চলাকালীন সময়ের কোনো বিলম্ব ঘটায় না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231324737.jpg

◤ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় ভিএআর টিমের সাথে যোগাযোগ করেন মূল রেফারি ◢

 

অন্যদিকে ভিএআর-এর হস্তক্ষেপে সময়ক্ষেপণ হয় তখনই, যখন মাঠের সিদ্ধান্তের যথার্থতা সরাসরি বিচারে ব্যর্থ হয় ভিএআর টিম। এসময় মূল রেফারি নিজ কানের দিকে ইঙ্গিত করে জানান দেন চলমান পর্যালোচনার বিষয়টি।

তবে অফসাইড সিদ্ধান্ত অথবা ডি-বক্সের ভেতরের/বাহিরের ফাউল সংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন ভিএআর দ্বারাই নিস্পত্তি সম্ভব, তেমনিভাবে একটি প্রাথমিক ফাউল কল বা লাল কার্ড প্রদর্শনের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের ভার বর্তায় মূল রেফারিরই ওপর। মোটকথা, সব অবস্থাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে ভিএআর টিমের পরামর্শ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা রাখেন মূল রেফারি।

এই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে। প্রতিটি ম্যাচে, প্রতিটি ভেন্যুতে এই যুগান্তকারী পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার দেখা যায়নি আগের কোনো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের সর্বমোট ৩৩৫টি ঘটনায় নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যবহৃত হয় ভিএআর, ম্যাচপ্রতি গড়ে যার দরকার পড়ে প্রায় ৭ বার। এরমধ্যে মূল রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তে বদল এসেছে মোট ১৪ বার।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231412600.png
◤ জার্মানি-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার ম্যাচে ভিএআর নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়ার ২য় গোলটি ◢

 

তবে সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় কম তোলেনি ভিএআর। প্রযুক্তিগত নানা ক্রুটির পাশাপাশি ম্যাচের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোয় এর যথাযথ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়েও বেশ প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মতে, স্পষ্টতা ও ধারাবাহিকতার অভাবই এখন পর্যন্ত ভিএআর-এর মূল দুর্বলতার জায়গা। প্রায় একই ধরনের ঘটনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিন্নতা ভিএআর-এর ব্যবহারকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি স্বচ্ছতার অভাবও ভোগাচ্ছে দলগুলোকে। ভিএআর টিম ও মূল রেফারির মধ্যকার কথোপকথন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার মতো নানা সুপারিশ প্রত্যাখান করেছে ফিফা রেফারি কমিটি। এক ঝটকায় পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্ত কিংবা বারবার স্বাভাবিক ছন্দে বাধাসৃষ্টি ও সময়ক্ষেপণ ম্যাচের সৌন্দর্য ব্যহত করছে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান পণ্ডিত ও বোদ্ধারা।

ক্লাব পর্যায়ে দুই ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট ও সর্বমোট আঠারটি ঘরোয়া লিগে আরো আগেই পা রেখেছে ভিএআর। প্রথমবারের মতো এই মৌসুমে আলোচিত প্রযুক্তিটির আগমন ঘটছে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লীগে। ‘গোললাইন টেকনোলোজি’র পর ভিএআরই হতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত সংযোজন। লিগের প্রধান কার্যনির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্সের মতে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও বিতর্কের সম্ভাবনা মেনে নিয়েই এর ব্যবহারে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছেন তারা। সময়ক্ষেপণের মাত্রা কমানোই এই মুহূর্তে মাস্টার্সের মূল লক্ষ্য। এরপরই প্রাধান্য পাচ্ছে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231471639.jpg

◤ স্টার্লিং-আগুয়েরোর বাঁধভাঙ্গা উদযাপন থামিয়ে দেওয়া সেই অফসাইড সিদ্ধান্ত ◢

 

সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণকালে মূল রেফারি ও ভিএআর টিমের কথোপকথন ও পদক্ষেপ প্রদর্শিত হবে মাঠের বড় পর্দায়। এক্ষেত্রে পর্দাহীন দুই ভেন্যু ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং অ্যানফিল্ডে ব্যবহৃত হবে স্কোরবোর্ড ও পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএ)। এছাড়াও সময়ক্ষেপণ ঠেকাতে পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়গুলোর সর্বোচ্চ একটি মান নির্ধারণের নির্দেশ পেয়েছেন রেফারিরা, যাতে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত তারা যেন ঘন ঘন পিচ-সাইড রিভিউ থেকে বিরত থাকেন এবং খেলার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখেন।

তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিএআর-এর স্বাভাবিক ব্যবহারে আসছে পরিবর্তন। অফসাইড পর্যবেক্ষণে প্রিমিয়ার লিগের টিভি রিপ্লে-তে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা থ্রি-ডি লাইনের সাহায্য এখন ভিএআর টিমও নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্যামেরার সাহায্য নিয়েও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না গেলে মাঠে দায়িত্বরত রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231609215.jpg
◤ এভারটনের গুডিসন পার্কের বড় পর্দায় ভিএআর বার্তা ◢

 

অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রাখছে প্রিমিয়ার লিগ। ফুটবলের নতুন রুলবুক অনুযায়ী পেনাল্টি কিকের সময় গোলরক্ষকের নিজ লাইনের বাইরে বিন্দুমাত্র নড়াচড়ায় পুনরায় পেনাল্টি কিক হবার বিধান থাকলেও প্রিমিয়ার লিগ বলছে, ‘চোখে পড়ার মতো’ নড়াচড়া ছাড়া একজন গোলরক্ষকের স্বাভাবিক পেনাল্টি সেভ তারা বাতিল করবে না।

শুধু মাঠের খেলোয়াড়েরাই নন, ভিএআর-এর ব্যবহারে দর্শকরাও প্রভাবিত হবেন ব্যাপকভাবে। স্পষ্টতই ভাটা পড়বে গোল-পরবর্তী বাঁধভাঙ্গা উদযাপনে, যেখানে পরোক্ষভাবে জায়গা নেবে ভিএআর রিভিউ-এ গোলটাই বাতিল হবার শঙ্কা। এছাড়া রেফারির প্রত্যক্ষ অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলোর পুনর্বিবেচনা বড়পর্দায় দেখা গেলেও গোল অনুমোদন/বাতিলের ক্ষেত্রে সেই পর্যালোচনা চলবে সমর্থকদের অজান্তেই।

এর পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ভিএআর চেকের আহ্বানে হলুদ কার্ড প্রাপ্তির বিধান থাকছে খেলোয়াড়-ম্যানেজার উভয়ের জন্য। রেফারির স্বাভাবিক যোগাযোগ কর্মকাণ্ড ও পর্যবেক্ষণ ব্যাহত করলে যা রূপ নিতে পারে লাল কার্ডের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231674894.jpg
◤ দুই মৌসুম আগে এফএ কাপে নরউইচের বিপক্ষে বহিষ্কৃত হন চেলসির আলভারো মোরাতা ◢

 

এসব কিছু বিশ্লেষণে বলা যায়, ভিএআর-এর আগমনে এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে মোট গোলসংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাই জোরালো। তবে এর সদ্ব্যবহারে লিগ আসলেই প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাবেক ও বর্তমান নানা ফুটবল তারকা। ভিএআর-এর ব্যবহার ভুলক্রুটির পাল্লা আরো ভারী করবে বলেই মনে করছেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ড ফুলব্যাক পল পার্কার। চেলসি উইংব্যাক মার্কোস আলোনসোর কাছে যেমন বিভ্রান্তির আরেক নাম এই ভিএআর। একইভাবে বোর্নমাউথের ক্যালাম উইলসন মনে করেন, প্রিমিয়ার লিগের সবটুকু বিনোদনে জল ঢেলে দেবে এই প্রযুক্তি। পেপ গার্দিওলা, মাউরিসিও পচেত্তিনোরা ভিএআর নিয়ে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করলেও এর অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যান্য অনেক কোচ। তবে ভিএআরকে খেলাটির স্বাভাবিক একটি অংশ হিসেবে মনে করতে হলে যে আরো অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন, সে কথা বলাই বাহুল্য।

   

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;

আনন্দবাজার পত্রিকার সেই অবিস্মরণীয় সম্পাদকীয় ‘পাক বিধান’



সম্পাদকীয় বিভাগ, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক যে দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়, স্বল্প সময়েই এর প্রবক্তাদের উচ্চাশা কোটি কোটি অধিবাসীদের দুরাশায় পরিণত হয়। বিশেষ করে পূর্ববঙ্গকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়, তা পাকিস্তানি শাসকদের সীমাহীন অবিচার আর দুঃশাসনে এক নব্য ঔপনিবেশিক শাসনের চরিত্র ধারণ করে। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ ধ্বনিতে মোহিত করা অধুনা পূর্ববঙ্গবাসীর আকাঙ্খা বছর গড়াতেই দুঃস্বপ্নের রূপ নেয়। শুরু হয় নব্যঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে নিজেদের স্বাধিকার আদায়ের প্রাণান্তর চেষ্টা। আমরা জানি, পূর্ববঙ্গের ন্যায্যতা প্রশ্নে উদাসীন পিন্ডির শাসকদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে গড়ে উঠা প্রতিরোধ আন্দোলন ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবির মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি পায়। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে পরবর্তী বছরগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে বাংলা। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ‘মুক্তিযুদ্ধে’ ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে ও দুই লক্ষ নারীদের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয় চূড়ান্ত মুক্তি।

আজ ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমরা জানার চেষ্টা করব ঊনসত্তরের উত্তাল দিনগুলিতে স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল বাঙালি জাতি কি আত্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মুক্তিসংগ্রামের পথে ধাবিত হয়েছিল। ১০ চৈত্র ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ (২৪ মার্চ ১৯৬৯) কলকাতার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ তাদের সম্পাদকীয় পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছে সেই সময়কার দৃশ্যপট। স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ আয়োজনে বার্তা২৪.কম পুনঃপ্রকাশ করছে আনন্দবাজার পত্রিকার সেই অবিস্মরণীয় সম্পাদকীয়।

গত চার মাস ধরিয়া পাকিস্তানে যে তুলকালাম কা- চলিয়াছে নানা জন নানা ভাবে তাহার ব্যাখ্যা করিতে চাহিবেন এটাই স্বাভাবিক। কেহ বলিতেছেন, পাকিস্তান আর একটি বিয়াফ্রা বা ভিয়েৎনাম সৃষ্টি হইতে চলিয়াছে। মৌলানা ভাসানিরও মনে হয় তাহাই অভিমত, তিনি গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়াছেন, বলিয়াছেন, সে মহৎ কর্মে কুড়িলক্ষ পাকিস্তানীর জান কোরবানি করিতে তিনি তৈয়ার। লারকানরি আমুদে-যুবা ভুট্টো ‘প্লেবয়’ হিসাবে খ্যাত হইলেও আগুন লইয়া খেলায় কতখানি মাতিবার সামর্থ্য রাখেন, সে বিষয়ে অনেকেরই বিলক্ষণ সন্দেহ। বিশেষতঃ, পশ্চিম পাকিস্তানে শুধু ফৌজীদের ঘাঁটি নয়, মওদুদি তথা মোল্লাদেরও ছাউনি পড়িয়াছে। শুধু ভুট্টোর ধারণা নাকি পাকিস্তানে ‘বিপ্লব’ চলিয়াছে, এবং এ বিপ্লব যদিও অন্তরে ঐশ্লামিক, লক্ষ্যে-সমাজতান্ত্রিক।

চারিদিকে সকলের মুখে মুখে যখন ‘‘বিপ্লবের’’ ফুলঝুরি, তখন পাক-আইনমন্ত্রী সৈয়দ মহম্মদ জাফর অনায়াসে প্রস্তাবিত শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিগুলিকেও আখ্যা দিতে পারিতেন-‘‘বিপ্লব’’। একসঙ্গে শাসনতন্ত্রের নব্বুইটি অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের চিন্তা আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চয়ই প্রকৃতিতে বিপ্লবাত্মক। ১৯৫৮ সনের অক্টোবরে আয়ুব যখন আচমকা গদীয়ান হন , সে ঘটনা অন্যের চোখে বিশুদ্ধ সামরিক অভ্যুত্থান হইলেও পাকিস্তানে বলা হয় ‘অক্টোবর রিভলিউশন’, আইনমন্ত্রী নির্দ্বিধায় ফেডারেল ব্যবস্থা নামক বিলটির নাম দিতে পারিতেন ‘‘মার্চ রিভলিউশন’’-আয়ুব এক জনমে দুইটি বিপ্লবের কৃতিত্ব লাভ করিতেন!

জাফর সাহেব আয়ুব খাঁর তরফ হইতে যে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের কথা শুনাইয়াছেন তাহার সারমর্মঃ পাকিস্তান এক যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হইবে। সরকার পরিচালনা করিবেন মন্ত্রিসভা; তাহার শীর্ষে থাকিবেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিও থাকিবেন একজন, তবে তিনি থাকিবেন রবার স্ট্যাম্প মাত্র। তাঁহাকে নির্বাচন করিবেন রাজ্য আইনসভার সদস্যবৃন্দ। অন্যরা সকলে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে নির্বাচিত হইবেন, ইত্যাদি কথাবার্তার ধরণ দেখিয়া মনে হইতে পারে চৌদ্দমাস ধরিয়া বিস্তর কাঠখড় পোড়াইয়া মাথা খাটাইয়া ১৯৬২ সনে আয়ুব যে শাসনতন্ত্র তাঁহার দেশকে উপহার দিয়েছিলেন সেটির খোলনলচে বুঝি সবই পাল্টাইতে চলিয়াছে। বলা হইয়াছে পরিকল্পিত নূতন শাসনতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যÑইহা এককেন্দ্রীয় নয়, ফেডারেল বা যুক্ত রাষ্ট্রীয়; দ্বিতীয়ত ইহাতে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার স্বীকৃত, তৃতীয়ত স্বীকৃত জনসাধারণের ভোটাধিকারের দাবিও।

শেষোক্ত অধিকারটি নিশ্চয়ই পাক নাগরিকদের কাছে মস্ত পাওনা, এক যুগেরও পরে তাঁহারা একটি মৌলিক অধিকার পাইতে চলিতেছেন। এবিষয়ে পুনর্বিবেচনা করিয়া দেখিবার জন্য আয়ুব অবশ্য ১৯৬৩ সনে একটি কমিশন বসাইয়াছিলেন। তাহারাও বলিয়াছিলেন-প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার মানিয়া লওয়া সঙ্গত। আয়ুব তাহাতে রাজী হইতে পারেন নাই, আর একটি কমিটী বসাইয়া সিদ্ধান্তটিকে নিজের পছন্দসই করাইয়া লইয়াছিলেন। আইনমন্ত্রী জাফর বলিয়াছেন-আগামী মাসেই জাতীয় পরিষদে একটি ‘বিল’ আনিয়া সকলকে ভোটের অধিকার দেওয়া হইবে। ‘‘ঠগের বাড়ির নিমন্ত্রণ: না আঁচাইলে বিশ্বাস নাই’Ñতবু মনে হইতেছে নীট লাভ এইটিই।

যুক্তরাষ্ট্রের যে রূপরেখা মিলিয়াছে তাহাতে মনে হয়, খোল নলচে পালটাইলেও কলকেতে সেই পুরনো তামাকই পুড়িবে। নলটি প্রেসিডেন্টের নয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখে লাগানো থাকিবে-এই যা। প্রথমত, পশ্চিম পাকিস্তানের ‘এক ইউনিট’ কর্তার ইচ্ছায় অতঃপর দুই হইবে হয়তো কিন্তু জনসাধারণের ইচ্ছা অনুযায়ী ‘বহু’ হইতেছে না। দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় সংসদে সব ত্যাগের সমনাধিকার , অর্থাৎ চলতি নিয়মই বহাল থাকিবে, আসন জনসংখ্যার অনুপাতে বন্টিত হইতেছে। ফলে পূর্বের উপর পশ্চিমীদের আধিপত্য থাকিয়াই যাইবে।

পাক শাসনতন্ত্রে অমুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অধিকার নাই, নয়া-শাসনতন্ত্রে বাঙালী মুসলমানের পক্ষে সে সম্ভাবনা সামান্য। সাত কোটি বাঙালীর উপর পাঁচ কোটি পশ্চিম পাকিস্তানীর শাসন শোষণ চলিতেই থাকিবে। বিশেষত, পাক সামরিক বাহিনীতে বা দেশরক্ষা ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি মিলে নাই। পাকিস্তানের সামরিক খরচ বাজেটের শতকরা ষাট ভাগের বেশী সেখানে টাকা দিতে হয় পূর্ব পাকিস্তানকেও কিন্তু বাহিনীতে তাহার ভূমিকা নামমাত্র। পশ্চিম পাকিস্তান তাহার আসল বল হাতের ওই মুগুরটি হাতছাড়া করিবে কি?

খাঁটাইয়া দেখিলে সন্দেহ থাকে না, আয়ুব স্বায়ত্বশাসনের ধোঁকা দিতেছেন মাত্র। যে আঞ্চলিক স্বাধীনতার কথা জাফর শুনাইয়াছেন, অন্য ভাষায় পুরনো শাসনতন্ত্রেও সে-সব প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের দুই অঙ্গে বৈষম্য তবু বাড়িয়াছে বই কমে নাই। মোটকথা শেখ মুজিবর রহমান যে ছয়দফা চাহিয়াছিলেন তাহার সামান্যই দেওয়ার উদ্যোগ দেখা যাইতেছে। শেখ মুজিবর তাহার ইঙ্গিত পাইয়াই গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফলকে আখ্যা দিয়াছিলেন-শূণ্য। তিনি এবং তাঁহার দল নাকি একটি বিকল্প ফেডারেল শাসনতন্ত্রের খসড়া রচনা করিতেছেন।

আগামী মাসে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে তাহা উত্থাপিত হইবে। তদানুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানে গঠিত হইবে চারিটি রাজ্য, পূর্বে একটি। কেন্দ্রীয় আইনসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মানিয়া লওয়া হইবে। সরকারী ‘‘বিল’’ এবং এই বেসরকারী ‘‘বিল’’-দুইয়ের ভাগ্যই কিন্তু এখন অবধি অনিশ্চিত। আয়ুবের মতলব নাকি-যাবতীয় পরিবর্তনের প্রস্তুতি আগামী বছর ২৩ মার্চের মধ্যে শেষ করা-এক যুগ পরে প্রেসিডেন্টের তখনই বানপ্রস্থে যাত্রার ইচ্ছা। তাঁহার দ্বিতীয় বাসনা, সব পরিবর্তনই নিয়মতান্ত্রিক পথে হোক। কিন্তু অনেকেই আশঙ্কা করিতেছেন, পাক জাতীয় পরিষদের সম্মতি লইয়া শাসনতন্ত্র সংশোধন সম্ভব নাও হইতে পারে।

দুই পাকিস্তানেরই প্রতিনিধি সংখ্যা সেখানে সমান, সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়ুব কি প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পাইবেন? আর মুজিবুরের ‘‘বিল’’ যদি পাস হইয়া যায়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা কি তাহা মানিয়া লইবেন? সুতরাং লক্ষণ দেখিয়া মনে হয় না পাকিস্তানের সংকট কাটিবার মুখে। বরং মনে হইতেছে, প্রকৃত সংকট ক্রমে আরও ঘনাইয়া আসিতেছে। দিশাহারা আয়ুব পশ্চিম পাকিস্তানে গভর্নর বদল করিয়াছেন, পূর্ব-পাকিস্তানেও মোনেম খাঁর বদলে নূতন গভর্নর নিযুক্ত হইয়াছেন হুদা।

পশ্চিম হইতে পুবে সৈন্য আমদানির কথাও শোনা যাইতেছে। পাকিস্তান কোন্ পথে চলিয়াছে? বিলাতের একটি কাগজ বলিতেছে-বিচ্ছিন্নতার পথে। নূতন শাসনতন্ত্রে জোড়াতালির যতো চেষ্টাই করা হোক, একটি সত্য আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট, ধর্মীয় ঐক্য খানিকদূর অবধি কাজে লাগে, বেশীদূর নয়। যদি তাহা না হইত তবে লাহোর অধিবেশনের আটশ বছর পরে, পাকিস্তান-স্বপ্নের তথাকথিত ঐতিহাসিক জন্মতারিখের দুইদিন আগে পাক নেতাদের এই মেকি ‘ফেডারেল-ইজম’ এর স্তোকবাক্য শুনাইতে হইত না!

প্রকাশকাল: সোমবার ১০ চৈত্র ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ (২৪ মার্চ ১৯৬৯): আনন্দবাজার পত্রিকা

সংগ্রহ: আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম

ঋণস্বীকার: ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা।

;