জার্মান বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে এক ভারতীয় বীরের উপাখ্যান



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
পাইলট ইন্দ্রলাল রায়

পাইলট ইন্দ্রলাল রায়

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র চার মাস আগের ঘটনা। ফ্রান্সের আকাশে জার্মান বিমানবাহিনীর সঙ্গে দুঃসাহসিক ‘ডগ ফাইটে’ নিমগ্ন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর তরুণ ফাইটার পাইলট ইন্দ্রলাল রায়। এসময় তিনি একটি জার্মান জঙ্গী বিমানকে আক্রমণ করে ভূপাতিত করেন, যেটি ছিল তার নবম শিকার। ৯ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই, টানা ১০ দিনে নয়টি জার্মান বিমানকে বিধ্বস্ত করেন তিনি। মাত্র ১৩ দিনে, ১৭০ ঘণ্টার লড়াইয়ে এমন সাফল্য পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তার এই বিরল কৃতিত্বের জন্য তাকে ‘ফ্লাইং এস’ পদকে সম্মানিত করা হয়েছিল। যদিও এই খেতাব পাওয়ার জন্য সাধারণত পাঁচটি শত্রু বিমান ঘায়েল করাই যথেষ্ট, সেখানে তিনি খতম করেছিলেন নয়টি! আজ এই অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অকুতোভয় বীর সেনানীর প্রয়াণ দিবস।

ইন্দ্রলালের ডাক নাম ছিল ল্যাডি, এ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ১৮৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় ল্যাডির জন্ম। ল্যাডি হলেন সেই সময়ের নামকরা ব্যারিস্টার, কলকাতার পাবলিক প্রসিকিউশন্স-এর ডিরেক্টর প্যারীলাল রায় ও ললিতা রায়ের সন্তান। প্যারী আবার ছিলেন বরিশাল জেলার লাকুটিয়া অঞ্চলের জমিদার। তিনি বিশ্বাস করতেন, “ভারত যেহেতু ব্রিটিশ অধ্যুষিত এলাকা, সেহেতু ব্রিটিশদের সাথে দ্রুত তাল মিলানোর জন্য ভারতীয়দের উচিত ইংরেজি ভাষা এবং ওদের আচার-ব্যবহার শেখা।” সন্তানদেরকে ইংরেজদের আদব-কায়দা শেখানোর জন্য তিনি তাঁর বাড়িতে একজন ইংরেজ গভর্নেসও নিয়োগ করেছিলেন।

পরবর্তীতে ইংরেজির প্রতি প্রবল আস্থা থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ১৯০১ সালে তার ছয় সন্তান ও স্ত্রীকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন। পরেশ, ইন্দ্র ও ললিত, তিন ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন হ্যামারস্মিথে, সেন্ট পল বয়েজ স্কুলে। আর লীলাবতী, মীরাবতী এবং হীরাবতী, তিন মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন সেন্ট পল স্কুল অব গার্লস-এ। এদিকে প্যারীলাল ছিলেন যথেষ্ট স্বাস্থ্যসচেতন। তাই কলকাতায় থাকাকালীন তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি তার ছেলেদেরকে সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া এবং সাইকেল চালানো শিখিয়েছিলেন। ঠিক সে কারণেই পড়াশোনার পাশাপাশি রাগবি এবং সাঁতারে ছিল ল্যাডির তুখোড় পারদর্শিতা। ল্যাডির বড় ভাই পরেশও ছিলেন স্কুলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন এবং তাকেই বলা হয়, ইন্ডিয়ান বক্সিংয়ের জনক।

বাবা প্যারীলাল চাইতেন, পড়াশোনা শেষ করে বড় ছেলে পরেশ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে ভারতীয় প্রশাসন বিভাগে চাকরি করবে। কিন্তু ১৯১৪ সাল, পরেশ তখন কেমব্রিজের ইমানুয়েল কলেজ থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন এবং আই এস এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনি গিয়ে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। পরেশের তখন ১৫ বছর বয়স। বড় ভাইকে দেখে অনুপ্রাণিত হন ল্যাডি। তিনি ঠিক করেন, পড়াশোনার পর্ব শেষ করে তিনিও বড় ভাইয়ের মতো সেনাবাহিনীতে যোগ দিবেন। আর তখন থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রস্তুতি গ্রহণসরূপ স্কুলে ক্যাডার ফোর্সে যোগ দেন ল্যাডি।

ল্যাডি ছিলেন দারুণ মেধাবী এবং তার সেই উজ্জ্বল মেধার স্বাক্ষর হিসেবে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই তিনি লাভ করেন বেশ কয়েকটা বৃত্তি। তিনি সর্বশেষ অর্জন করেন মর্যাদাপূর্ণ ব্যালিওল বৃত্তি এবং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু তার চোখে তখন আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন হাতছানি দিচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেন, পাইলট হবেন।

স্বপ্নকে ছোঁয়ার জন্য তিনি অক্সফোর্ডে পড়তে না গিয়ে ‘রয়্যাল ফ্লায়িং করপস’-এ যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার কমজোরি দৃষ্টিশক্তির জন্য তিনি বাদ পড়ে যান। তারপর তিনি বিক্রি করে দেন তার প্রিয় মোটর সাইকেলটি, সেটা বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি দেশের সবথেকে ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞদের একজনের শরণাপন্ন হন এবং চোখের চিকিৎসা করান। এরপর তিনি আবার রয়্যাল ফ্লায়িং করপস-এ আবেদন করেন এবং এবার তিনি কৃতকার্য হন।

১৯১৭ সালের ৪ এপ্রিল তিনি যোগ দেন তার স্বপ্নের রয়েল ফ্লাইয়িং করপস-এ। এই ফ্লাইং কোর থেকে ১৯১৭ সালের ৫ জুলাই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন ১৮ বছর বয়সী ল্যাডি। ল্যাডির একমাত্র লক্ষ্য ছিল জার্মান যুদ্ধ বিমানকে ধরাশায়ী করা। ভেন্ড্রোম-এ প্রশিক্ষণ, টার্নবারি-তে বন্দুক চালনা শিক্ষা ইত্যাদি পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ওই বছরই অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মাত্র ১৮ বছর বয়সী ল্যাডি অর্থাৎ ইন্দ্রলাল রায় বিমান বাহিনীর ৫৬ স্কোয়াড্রনে যোগ দেন এবং পোস্টিং হয় ফ্রান্সের ভাদোম-এ। তার সদা হাস্যোজ্জল মুখ এবং বাকপটু স্বভাবের জন্য তিনি ছিলেন সকলের কাছে প্রিয়।

এর কিছুদিন পরই ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এসই ফাইভ বিমানে করে আকাশে উড়ছিলেন ইন্দ্র। কিন্তু আচমকা তার বিমানকে লক্ষ্য করে এক জার্মান যুদ্ধবিমান অতর্কিতে হামলা চালায়। নো ম্যানস ল্যান্ডে ভেঙে পড়ে তার বিমান। কথিত আছে, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ইন্দ্রলালকে। এমনকি তার দেহ রাখা হয় মর্গে। কিন্তু হঠাৎ মর্গের দরজায় ভেতর থেকে ধাক্কা। মর্গের ভেতর থেকে এমন ধাক্কা উপস্থিত সকলের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত এবং ভীতিপ্রদ। দরজার ভেতর থেকে কোনো অতিপ্রাকৃত আত্মা না, ধাক্কা দিচ্ছিলেন স্বয়ং ইন্দ্র। অলৌকিকভাবে কিংবা নাটকীয়ভাবে হলেও, সেবারের মতো বেঁচে যান ইন্দ্র।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563457602275.jpg
ভারত সরকার ইন্দ্রলাল রায়ের জন্মশত বার্ষিকীতে তার সম্মানে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে ◢

 

ইন্দ্রলাল ছবি আঁকতেন চমৎকার। অসুস্থতার সময় অনেকগুলো স্কেচ করেছিলেন তিনি। অদ্ভুতভাবে তার সবগুলোই ছিল যুদ্ধবিমানের ছবি। কিন্তু ইন্দ্রলাল ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও তৎক্ষণাৎ বিমান চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি তাকে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ইন্দ্রও তখন নাছোড়বান্দা, তিনি না শুনতে নারাজ। অতঃপর তিনি ক্যাপ্টেন জর্জ ম্যাকরয়-এর তত্ত্বাবধানে নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ নিলেন, পুরনো ছন্দে নতুন করে ফিরে আসার জন্য কষ্ট-ক্লেশ করতে থাকেন। ফিরেও এলেন, আরো বেশি আত্মপ্রত্যয় নিয়ে। ১৯১৮ সালের ২২ জুন ৪০ নম্বর স্কোয়াড্রনে সাময়িক লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন এবং তিনি বদ্ধপরিকর।

৬ জুলাই, ১৯১৮। দীর্ঘ সাত মাস পর আবারও বিমান নিয়ে ইন্দ্রলাল উড়ে যান যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রথম দিনেই তিনি পরাজিত করেন এক জার্মান বিমান। এই জয়ের ছবি তিনি এঁকে রেখেছিলেন তাঁর আঁকার খাতায়। ছবিটির তলায় লিখে রাখেন “৬ জুলাই, ১৯১৮। ৫.৪৫ এএম এন ই অফ আরাস, হ্যানওভার রানার, ২ সিটার, শট ডাউন বাই আই এল রায়।” তিনদিন ধরে চলা যুদ্ধে তিনি সর্বমোট নয়টি জার্মান বোমারু এবং ফাইটার প্লেন বিধ্বস্ত করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় বিমান চালক, যিনি টানা ১৭০ ঘণ্টা বিমান চালানোর রেকর্ড গড়েছিলেন।

কিন্তু এর তিনদিন পর, ২২ জুলাই ১৯১৮ তারিখে ফ্রান্সের আকাশে জার্মান বিমানবাহিনীর সাথে এক সম্মুখ যুদ্ধে তাঁর এসই-৫এ বিমানটি ফ্রান্সের জার্মান অধিকৃত এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। জার্মান সেনারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে সেখানেই সমাহিত করে। কথিত আছে, তাঁর অসাধারণ বীরত্বের কথা মনে রেখে সেই জার্মান শত্রুসেনারাও তিনি যেখানে পতিত হয়েছিলেন, সেখানে ফুলের তোড়া রেখে আসে। ল্যাডির কমান্ডিং অফিসার তার যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে তার মা ললিতা রায়কে একটি চিঠি লিখে জানান, “নয়টা জার্মান বিমানকে ইন্দ্রলাল একা পরাস্ত করেছেন। প্রত্যেক অফিসার তার প্রশংসা করেছেন। সকলের কাছে তিনি খুব জনপ্রিয়ও ছিলেন। আমি নিশ্চিত, তিনি তার এই সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত হবেন।”

এবং ওই বছরই রয়্যাল ফ্লায়িং কর্পস-এর নাম বদলে হয় দ্য রয়্যাল এয়ার ফোর্স। ১৩ দিনে নয়টি জার্মান যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাকে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর তরফ থেকে মরণোত্তর ‘ডিস্টিংগুইশড ফ্লাইং ক্রস’ (DFC) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি এই সম্মান পেয়েছিলেন। তার মানপত্রে লেখা হয়েছিল, “(ইন্দ্রলাল রায়) ভীষণ সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক অফিসার, যিনি ১৩ দিনে নয়টি জার্মান বিমানকে পরাস্ত করেছেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছেন।”

ভারত সরকার ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্দ্রলাল রায়ের জন্মশত বার্ষিকীতে তার সম্মানে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। এছাড়া ফ্রান্সে তাঁর সমাধির ওপর বাংলা ও ফরাসি ভাষায় গৌরবগাঁথা লেখা হয়েছে, “মহাবীরের সমাধি সম্ভ্রম দেখাও, স্পর্শ করো না।” কলকাতায় তার নামে একটি সড়ক আছে। ভবানীপুরে ইন্দিরা সিনেমাহলের কাছে যে সড়কটির নাম ‘ইন্দ্র রায় রোড’।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;